মাঝে মাঝে হড়কে যাওয়াই জীবন
আর্জেন্টিনা সেমিফাইনালে পৌঁছাল। কাতারে তখন মোটামুটি মাঝরাত। এই মাঝরাতে তিতে জানিয়েছেন, তিনি আর ব্রাজিল কোচ নন। অতীত। ২০১৬ থেকে চলে আসা জার্নির একটা বেখাপ্পা ইতি। যেন কোনও থিয়েটার ওয়ার্কশপের পর ‘তোমায় দিয়ে কিস্যু হবে না’ শুনে ব্যাজার মুখে বাড়ি চলে আসা। টোন-টিটকিরি আর ব্যঙ্গ-বিদ্রুপে ভরে থাকা গোটা সন্ধ্যায় আর্জেন্টিনার জয় একটু হলেও চেয়েছিলাম। হাজার হোক, লাতিন আমেরিকার দেশ। চাই কাপ সেখানেই আসুক, অনেককাল আসেনি। ২০ বছর তো কাটল। ইউরোপের মৌরসিপাট্টায় একটু আঘাত তো লাগুক।
আর্জেন্টিনা সেমিফাইনালে পৌঁছাল। কাতারে তখন মোটামুটি মাঝরাত। এই মাঝরাতে তিতে জানিয়েছেন, তিনি আর ব্রাজিল কোচ নন। অতীত। ২০১৬ থেকে চলে আসা জার্নির একটা বেখাপ্পা ইতি। যেন কোনও থিয়েটার ওয়ার্কশপের পর ‘তোমায় দিয়ে কিস্যু হবে না’ শুনে ব্যাজার মুখে বাড়ি চলে আসা। টোন-টিটকিরি আর ব্যঙ্গ-বিদ্রুপে ভরে থাকা গোটা সন্ধ্যায় আর্জেন্টিনার জয় একটু হলেও চেয়েছিলাম। হাজার হোক, লাতিন আমেরিকার দেশ। চাই কাপ সেখানেই আসুক, অনেককাল আসেনি। ২০ বছর তো কাটল। ইউরোপের মৌরসিপাট্টায় একটু আঘাত তো লাগুক।
ফুটবল একটা শাস্ত্র। অনেক টেকনিক্যাল দিক, পর্যালোচনা, বইপত্র রয়েছে যেমন নানান বিষয়েরই থাকে। সেই পয়েন্ট অফ ভিউ ধরলে বলা যায় ফুটবল একটা সাবজেক্ট। যাকে পড়া যায়, কিছু সময় পরীক্ষাও নেওয়া যায়। আবার সবকিছুকে বাদ রেখে ফুটবল হয়ে যাচ্ছে কোটি কোটি মানুষের বেঁচে থাকার একটা হাতিয়ার। একটা অস্ত্র টাইপ। ক্রাচে ভর দিয়ে হাঁটা একটা মানুষ তার প্রিয় দল গোল করলে একবার অন্তত নিজের পায়ে উঠে দাঁড়াতে চায়। পারে না। হেরে যাওয়ার মধ্যে একটা আর্ত ব্যাপার আছে।
ব্যাকুলতা আছে। দু’চোখ বন্ধ হওয়ার আগে একটু জলে ভেজা আছে। এই যে আমরা, যারা সমর্থক তারা দিনের শেষে প্রিয় দলের জয় চাই। বিদায় ক’জন চায়! হঠাৎ বিদায় এসে জানান দেয় যে সে এসে গেছে। আর নিস্তার নেই। এই যে চলে যাচ্ছি, আর আসব না, আবার সেই অপেক্ষার প্রহর গোনা – এসব তুচ্ছ মনে হয়। আর ভাল লাগে না।
মানুষকেই ধরে রাখা যায়, তো প্রিয় দলের জয়! জয়োন্মাদরা রাত জেগে ফুটবল দেখে, তাকে জাপটে ধরে বাঁচে, ভালবাসে। কখনও আঘাত পায়। কখনও কখনও আঘাতের তীব্রতা এতটাই বেশি হয়ে দাঁড়ায়, সামনে নিজের প্রিয় দল সম্পর্কে কেউ খানিক খিস্তি করলেও হাসিমুখটা বেরিয়ে আসে। হয়তো, সে ঠিকই বলছে। সত্যিই তাই হবে ঘটনাটা। হেরে যে গেছি।
হেরে যাওয়ার মধ্যে যে বিষণ্ণতা কাজ করে, তার শূন্যতার মান মাপতে যাওয়া বোকামি। কষ্ট থাকবে কষ্টের মতো, আবার কোনও নতুন আনন্দ এসে তাকে পূরণ করবে। নিজের প্রিয় দলের হার হলেও তার রেশ কেটে যাবে, হয়তো। জানা নেই। এত গদগদ কথা বলি না। ইচ্ছে হয় না। মনে রেখে দিই। সময় সময় স্ফুলিঙ্গের মতো বেরিয়ে আসে। হয়তো নিজের প্রিয় দল হেরেছে বলেই।
আসলে আজকের এই হারের যন্ত্রণা তীব্র। অনেকদিন রেশ থাকবে। আজকে উল্টোদিকে অতিমানব আর অতি প্রিয় মদ্রিচকে নিয়েও কিছু বলার সামর্থ্য নেই। বলতে ভাল লাগে না। সবকিছুই কেমন ওলটপালট হয়ে গেছে। আর্জেন্টিনা সমর্থকরা যে আনন্দটা পাবে, যে ভাস্ট খুশিটা নিয়ে ঘুমোতে যাবে, ঐ একই ঘুম আমিও চেয়েছিলাম। পাইনি। সবাই সবকিছু পায় না, তবু, কিছু তো পায়। আমরা এ জীবনে আসল সময় হার ছাড়া আর কিই বা পেয়েছি!
বললাম কিছু কথা। মনটা পাথরের মতো ভারী। জানিনা আবার কবে ঐভাবে সোল্লাসে ‘গোল’ বলে চেঁচিয়ে উঠব। স্ক্রিনের দিকে ঠায় তাকিয়ে থাকব একটা, স্রেফ একটা জয়, একটা গোল দেখব বলে। ব্রাজিল হেরে গেছে। যেমন এরিকসন হেরে গেছিল। বাকিটা না হয় না বলাই থাক। সব খামতি একদিনে ঢাকতে নেই যে। ব্রাজিল আজ হেরে গেল। এই টিমটা, যাকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি কনফিডেন্ট ছিলাম। যাকে মনে হচ্ছিল ফার্স্ট হবেই সে থার্ড-ফোর্থও হল না। একইরকম কষ্টের একটা তীব্রতা।
যাক। যা গেছে, তা যাক। ছবিটা থাকুক। ক্লাসের সবচেয়ে সেরা ছাত্রটাও মাঝে মাঝে এমন হড়কে যায় তো, হড়কে যাওয়াই জীবন।