অ্যাটলেটিকোর মায়ার বাঁধনে সিমিওনে আটক

স্প্যানিশ ক্লাব অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের তখন নাজুক অবস্থা। লিগ শিরোপা তো দূরে থাক, লা লিগার পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষ চারেই থাকতে পারতো না ক্লাবটা। ব্যর্থতার বৃত্তে আটকে থাকা সেই ক্লাবকে শিখরে তোলার জন্য ২০১১ সালে প্রধান কোচ হিসেবে আসলেন দিয়েগো সিমিওনে। 

স্প্যানিশ ক্লাব অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের তখন নাজুক অবস্থা। লিগ শিরোপা তো দূরে থাক, লা লিগার পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষ চারেই থাকতে পারতো না ক্লাবটা। ব্যর্থতার বৃত্তে আটকে থাকা সেই ক্লাবকে শিখরে তোলার জন্য ২০১১ সালে প্রধান কোচ হিসেবে আসলেন দিয়েগো সিমিওনে।

না। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ ডাগআউটে এসেই সবকিছু বদলে ফেলতে পারেননি তিনি। তাঁর অধীনে ২০১১-১২ মৌসুমে লিগে পঞ্চম হলো অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। তবে দলের ফুটবলারদের মধ্যে সেবার কিছু একটা ঢুকিয়ে দিলেন। সিমিওনের সেই টোটকাতেই পরের মৌসুমে তৃতীয় হলো অ্যাটলেটিকো।

তবে এমন তৃতীয় হওয়া তো সাফল্যের মানদন্ড নয়। বড়জোর উন্নতির একটা মাপকাঠি হতে পারে। সিমিওনে সেই মৌসুমেই দলকে প্রথম সাফল্য এনে দিলেন। নগর প্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদকে হারিয়ে সেবার ফাইনালে হারিয়ে কোপা দেল রে’র শিরোপা জিতে নেয় অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ।

সিমিওনের শিরোপা ক্ষুধা তখন থেকেই বাড়তে শুরু করে। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদকে নিয়ে এবার বড় স্বপ্নের পথে পা বাড়ালেন সিমিওনে। লা লিগায় তখন বার্সা, রিয়ালের দাপট। এক মৌসুমে বার্সা জিতে তো, পরের মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদ। দিয়েগো সিমিওনে সেই রীতিই ভেঙ্গে দেওয়ারই কাজ করলেন। বার্সা রিয়াল আধিপত্যে চোখ রাঙানি দেওয়া শুরু করলো তাঁর দল অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ।

২০১৩-১৪ মৌসুমে অবশেষে আসলো লা লিগার শিরোপা। সে মৌসুমের অর্ধেকেরও বেশি সময় পর্যন্ত শীর্ষেই ছিল বার্সেলোনা। কিন্তু মৌসুম শেষের ঝলকানিতে সে বার বার্সা আর রিয়ালকে পেছনে ফেলে শিরোপাটা জিতে নেয় অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ।

কোপা দেল রে, লা লিগা জেতার সেই ২০১৪ সালেই সুপার কোপাও জিতে নেয় সিমিওনের অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। স্পেনজয়ের এবার অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদকে নিয়ে সিমিওনে চোখ রাখলেন ইউরো জয়ের স্বপ্নে।

মধ্যম সারির এক ক্লাবকে নিয়ে ছুটলেন সেই স্বপ্ন পূরণের পথে। ২০১৩-১৪ মৌসুমে সেই স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়েও গিয়েছিলেন। উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে নক আউট পর্বে একে একে এসি মিলান, বার্সেলোনা, চেলসিকে হারিয়ে ফাইনালে উঠলো অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ।

ফাইনালে প্রতিপক্ষ রিয়াল মাদ্রিদ। ঐতিহ্য কিংবা নামের ভারে রিয়াল মাদ্রিদের ধারের কাছেও ছিল না অ্যাটলেটিকো। তবে সেই অ্যাটলেটিকোই ম্যাচের ৩৬ মিনিটে প্রথম লিড নেয়।

ম্যাচের প্রায় শেষ মুহূর্ত পর্যন্তই লিড ধরে রেখেছিল অ্যাটলেটিকো। সবাই মোটামুটি নিশ্চিতই যে ম্যাচটা অ্যাটলেটিকোই জিততে যাচ্ছে। কিন্তু হঠাতই ম্যাচের শেষ মুহূর্তে রামোসের গোলের সমতায় আসে রিয়াল মাদ্রিদ। এরপর ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। আর শেষের এমন গোলে পরে আর  ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি সিমিওনের অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। অতিরিক্ত সময়ে আরো ৩ গোল করে শেষ পর্যন্ত টুর্নামেন্টটা জিতে নেয় রিয়াল মাদ্রিদ।

সিমিওনের সেই দুর্ভাগ্যের মুহূর্তের পুনরাবৃত্তি আবারো ঘটেছিল। ২০১৫-১৬ মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগে আবারো ফাইনালে ওঠে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। এবারও সেই বাঁধার নাম রিয়াল মাদ্রিদ। দুর্ভাগ্য বোধহয় একেই বলে। এবার টাইব্রেকার নামক দুর্ভাগ্যে আটকে গিয়ে শিরোপা হাতছাড়া করে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। তিন মৌসুমের মাঝে দুইবার ফাইনালে ওঠেও চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা ছোঁয়া হলো না দিয়েগো সিমিওনের।

তবে চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা না জেতা হলেও অ্যাটলেটিকোকে দুইবার উয়েফা ইউরোপা কাপ শিরোপা জিতিয়েছেন সিমিওনে। এ ছাড়া লা লিগায় বার্সা রিয়াল সাম্রাজ্যে আরো একবার লিগ শিরোপা জিতিয়েছেন আর্জেন্টাইন এ কোচ।

আর দলগত সাফল্যের সেই ধারাবাহিকতায় ব্যক্তিগত অর্জনের পাল্লাও ভারী করেছেন সিমিওনে। লা লিগার সেরা কোচ নির্বাচিত হয়েছেন তিন বার। এ ছাড়া ২০১১-১২ মৌসুমে ইউরোপের সেরা কোচ নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।

সিমিওনের দলে মেসি কিংবা রোনালদোর মতো তারকা ফুটবলার ছিলেন না। কিন্তু দলের সীমিত শক্তি নিয়েও সিমিওনে ধারাবাহিকভাবে প্রতিপক্ষকে চ্যালেঞ্জ জানাতেন নিয়মিত। এক কিংবা দুই মৌসুমের সফলতায় হয়তো ফ্লুক হিসেবেই গণ্য করা যেত। কিন্তু সিমিওনে দলকে সফলতা এনে দিয়েছেন ধারাবাহিকভাবে।

হ্যাঁ। আরাধ্য চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা জেতাতে পারেননি। সেই অপূর্ণতা কিছুটা কি পোড়ায় সিমিওনেকে? সেটা অজানা। তবে সেই অপূর্ণতা আর শত পূর্ণতায়, মধ্যম একটা ক্লাবকে তিলে তিলে গড়ে তোলার কারিগর হয়েই অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদকে বিদায় বলছেন সিমিওনে। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের সাথে তাঁর এক যুগের দীর্ঘ সম্পর্কের সমাপ্তি ঘটছে এই মৌসুম শেষেই।

যে অবস্থায় তিনি ক্লাবের দায়িত্ব নিয়েছিলেন, আর যে অবস্থায় তিনি দলকে রেখে যাচ্ছেন- তার মাঝে যেন ব্যবধানটা আকাশ পাতাল। এক যুগ আগের সেই অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ এখন যেকোনো টুর্নামেন্টেই শিরোপার জয়ের উদ্দেশ্যেই খেলে। মিডিওকোর একটা ক্লাব এক যুগের ব্যবধানে হয়ে উঠেছে ইউরোপের অন্যতম সেরা ক্লাব। ক্লাবকে এমন অবস্থায় রেখে যাওয়ার তৃপ্ততা হয়তো সিমিওনেরও আছে। কারণ তাঁর হাত দিয়েই যে গোটা ক্লাবটার হালচাল বদলে গিয়েছে।

অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের হয়ে সিমিওনের পথচলাটা শেষ হচ্ছে। তবে কোচ সিমিওনের অধ্যায়টা এখানেই শেষ হচ্ছে না। এবার হয়তো নতুন কোনো ক্লাবের ডাগআউটে দেখা মিলবে সেই চিরায়ত খ্যাপাটে সিমিওনের। তাঁর হাত দিয়েই হয়তো বদলাবে অন্য কোনো ক্লাবের হালচাল। অবশ্য সিমিওনের নতুন গন্তব্য কোথায় হচ্ছে, তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরো কিছুদিন।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...