Social Media

Light
Dark

কপিলস ডেভিলস ও ফ্রিথের গিলে ফেলা লেখা

১৯৮৩ সালে প্রুডেনশিয়াল বিশ্বকাপের তৃতীয় আসরের আগে উইজডেন ক্রিকেট মান্থলির সম্পাদক ডেভিড ফ্রিথ একটা প্রিভিউ লিখলেন। সেখানে বিশ্বকাপের জন্য স্বাভাবিকভাবেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে রাখলেন পরিষ্কার ফেভারিটের কাতারে, ইংল্যান্ড বা পাকিস্তানেরও কিছুটা সুযোগ আছে বলে মতামত দিলেন। আরও লিখলেন, আসরে অংশ নেয়া বাকি কয়েকটা দলের বিশ্বকাপ জেতার ক্ষমতা নেই, যার মধ্যে ছিল কপিল দেবের ভারতও।

টুর্নামেন্ট শুরুর আগে দ্বিমত করার উপায় ছিল না। কারণ ১৯৭৫ এর বিশ্বকাপে পূর্ব আফ্রিকার বিপক্ষে এক ম্যাচ জিতলেও বাকি ম্যাচগুলোতে বড় ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল ভারত৷ পরের আসরে তো সবগুলো ম্যাচেই পরাজিত হয় তারা, এমনকি সহযোগী দেশ শ্রীলঙ্কাও (শ্রীলঙ্কা তখনো টেস্ট খেলুড়ে দেশ হয়নি) হারিয়ে দিয়েছিল ভারতকে। এমন পরিস্থিতিতে ভারতকে নিয়ে বাজি ধরার কেউ স্বাভাবিকভাবেই ছিল না।

ফ্রিথ তাঁর লেখায় ভারতকে নিয়ে লিখেছিলেন যে, এবার মন লাগিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটটা না খেলতে পারলে বরং পরের বিশ্বকাপ থেকে অন্য দলগুলোকে সুযোগ দেয়ার জন্য তারা জায়গা ছেড়ে দিক, নাম প্রত্যাহার করুক।

এক চ্যারিটি ম্যাচে ডেভিড ফ্রিথ

যাই হোক, তিরাশির বিশ্বকাপে কী হয়েছিল তা সবারই জানা। কোয়ার্টার ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া, সেমিফাইনালে ইংল্যান্ড ও ফাইনালে ১৮৩ রানের পুঁজি নিয়েও ম্যাচ জিতে লর্ডসে কাপ উঁচিয়ে ধরেছিল ‘কপিলস ডেভিলস’।

ডেভিড ফ্রিথ ভারতের প্রতি ঘৃণা থেকে কিছু লিখেননি। বরং লিখেছিলেন পেশাদারিত্বের জায়গা থেকে এবং ভারতের বিশ্বকাপ জয়ে তিনিও যার পর নাই খুশিই হয়েছিলেন।

ঘটনা এখানে শেষ হয়ে গেলেই ভালো হত। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সিতে থাকা মান সিং নামের এক ভারতীয় ভদ্রলোক সেই লেখার জন্য তখনো ফুঁসছিলেন ফ্রিথের উপর। তিনি উইজডেন ক্রিকেট মান্থলির কাছে চিঠিতে লিখলেন, ‘একজন ভক্ত-সমর্থক হিসেবে আমিও কখনো আশা করিনি যে ভারত বিশ্বকাপ জিতবে৷ কিন্তু কখনোই এতদূর এগিয়ে তাদেরকে বিশ্বকাপ ছেড়ে দিতে বলতাম না। বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনাকে আপনার কথা ফিরিয়ে নেয়া উচিত। আমি চাই আপনি আপনার লেখাটা গিলে ফেলুন। তাহলে আমি আপনাকে আগের মতো উচ্চ মর্যাদায় রাখবো আর নিয়মিত উইজডেন ক্রিকেট মান্থলি পড়ে যাব।’

বিশ্বকাপজয়ী কপিল দেব

চূড়ান্ত পেশাদার ডেভিড ফ্রিথ ঠিক করলেন, মান সিং যা বলেছেন তাই করলেন। লর্ডসের প্রেসবক্সে বসে নিউজপ্রিন্ট পয়জনিংয়ের ঝুঁকি নিয়েও ফ্রিথ তার লেখা প্রবন্ধের কাগজটা গিলে ফেললেন। কাগজ-কালি হজম করার জন্য পরে পান করলেন এক গ্লাস ওয়াইন।

উইজডেন ক্রিকেট মান্থলির পরবর্তী সংখ্যায় মান সিংয়ের লেখা চিঠি আর ডেভিড ফ্রিথের নিজের লেখা গিলে ফেলার ছবি প্রকাশিত হয়।

এমন দৃষ্টান্ত ক্রিকেটে বা অন্য কোনো খেলায় আছে কিনা, তা আমার জানা নেই।

ক্রিকেট লিখিয়ে হিসেবে ডেভিড ফ্রিথের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে অবশ্য কোনো সন্দেহ নেই। সাবেক অজি ক্রিকেটার আর্চি জ্যাকসনের জীবনী, ক্রিকেটারদের আত্মহত্যা নিয়ে ‘সাইলেন্স অব দ্য হার্ট’, বিতর্কিত বডিলাইন সিরিজ নিয়ে ‘বডিলাইন অটোপসি’সহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বই লিখেছেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link