ভরসা ফুরোয়নি এখনও

এদিকে বাংলাদেশ শেষ ষোলতে যে দুজন প্রতিযোগীর কাছে হেরেছিলেন পরে তারাই এই ইভেন্টের স্বর্ণ জিতেছিলেন। তাহল তো বলাই যায়, আসরের সেরা দুই খেলোয়াড়ের কাছেই হেরেছে রোমান-দিয়া জুটি। মিক্সড ইভেন্টে পাওয়া ফল নিশ্চিত করেই একক ইভেন্টে কাজে লাগাবেন রোমান সানা ও দিয়া সিদ্দিকী। নিজের সেরাটা দিতে পারলে অলিম্পিকে নতুন ইতিহাস রচিত হবে বাংলাদেশের। সেই অপেক্ষাই এখন।

অলিম্পিক গেমসে সময়ের হিসাবে বাংলাদেশের যাত্রা ২৭ বছরের। ১৯৮৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলস অলিম্পিক থেকে ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ হিসেবে খ্যাত গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে অংশ নিয়ে আসছেন বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদরা। গত নয়টি আসরে ৪৩ জন লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা বিশ্বের সেরা এই আসরে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

এবার টোকিও অলিম্পিকে চারটি ডিসিপ্লিনে বাংলাদেশের ছয় ক্রীড়াবিদ অংশ নিচ্ছেন। আর্চার রোমান সানা ও দিয়া সিদ্দিকী, সাঁতারু আরিফুল ইসলাম ও জুনাইনা আহমেদ, শুটার আবদুল্লাহ হেল বাকি এবং অ্যাথলেট জহির রায়হান নিজ নিজ ডিসিপ্লিনে সেরার মঞ্চে প্রমাণের লড়াইয়ে ব্যস্ত। এরই মধ্যে যদিও শুটার বাকি অলিম্পিক থেকে বিদায় নিয়েছেন। বাকিরাও হয়তো বিদায় নিবেন নিজস্ব নিয়মে।

অন্তত:পক্ষে পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশের অলিম্পিক অংশগ্রহনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে বছরের পর বছর ধরে। এবার যে এর ব্যতিক্রম হবেনা সেই গ্যারান্টি দিতে পারছেনা। তবে আর্চারির রিকার্ভ মিক্সড ইভেন্টে শেষ ষোলতে উঠে কিছুটা হলেও চমক দেখিয়েছেন রোমান-দিয়া জুটি। কারণ বাংলাদেশী ক্রীড়াবিদদের পক্ষে মূল আসরে খেলাটা অনেকটাই স্বপ্নের মতো। এবার সেই বাঁধা কাটিয়েছেন রোমান-দিয়া।

কোয়ালিফাই রাউন্ড শেষে মূল আসরে খেলার যোগ্যতা অর্জন করা একজন বাংলাদেশির জন্য বিশেষ কিছু। যদিও তারা শেষ ষোল’র পর এরচেয়ে বেশিদুর যেতে পারেনি। এখন একক ইভেন্টে লড়াইয়ের পালা। ২৭ জুলাই দুজনেই মাঠে নামছেন নিজেদের সেরা প্রমাণ করতে। যদিও এর বাইরে বাংলাদেশের মতো এত জনসংখ্যার দেশ হিসেবে অলিম্পিকে কোন পদক না পাওয়ার বিষয়টি অনেকের কাছেই আশ্চর্য ঠেকে।

১৯৮৪ সালে বাংলাদেশের অভিষেক আসরে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করা অ্যাথলেট সাইদুর রহমান ডন কিছুটা হলেও হতাশা প্রকাশ করে বলেছিলেন, ’জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের যে অবস্থান তাতে করে অলিম্পিকের মতো আসরে পদক না জেতাটা আশ্চর্যের মধ্যেই পড়ে। আমাকে বিভিন্ন দেশের মানুষের কাছে এর জবাবও দিতে হয়।’

জনসংখ্যার দিক থেকে এতটা ঘনত্বের হওয়ার পরও বাংলাদেশের অলিম্পিক আসরে পদক না জেতাটা সপ্তমাশ্চর্যর চেয়ে কম নয়! তবে এখনো আশার আলো হয়ে আছে রোমান সানা ও দিয়া সিদ্দিকী। ২৩ জুলাই প্রথমদিনই রিকার্ভ এককেও রোমান ও দিয়া নকআউট পর্বে খেলার সুযোগ পেয়েছেন। রোমানের প্রতিপক্ষ যেখানে ব্রিটেনের টম হল অন্যদিকে দিয়া খেলবেন বেলারুশের কারিনা দিওমিনস কায়ার বিপক্ষে।

বাছাইপর্ব পেরিয়ে মূলপর্বে খেলে এরই মধ্যে বাংলাদেশকে একটা উচ্চতায় নিয়ে গেছেন এই দুজন। মিক্সড ইভেন্টের পর এবার এককে তারা কি করতে পারেন সেটাই দেখার বিষয়। এর আগে শেষ ষোলতে জায়গা করায় অলিম্পিকে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো পদক জয়ের স্বপ্ন দেখছিল। যদিও আসরের এই ইভেন্টের সেরা দুই প্রতিযোগীর কাছে হারতে হয়েছে দুই লাল সবুজ তীরন্দাজদের।

রিকার্ভের মিক্সড ইভেন্টে টোকিওর ইয়ুমেনোশিমা পার্কের আর্চারি গ্রাউন্ডে রোমান ও দিয়াকে শুরু থেকে বেশ আত্মবিশ্বাসী মনে হচ্ছিল। জিতলেই পদকপ্রাপ্তির আশাটা আরও উজ্জ্বল হবে, এমন সম্ভাবনায় দাড়িয়ে ছিলেন তারা। কিন্তু এবার আর জয় এলোনা। দক্ষিণ কোরিয়ার শক্তিশালী জুটি আনসান ও কিম জেডিওকের সঙ্গে পেরে উঠেননি তারা। ৩৮-৩০, ৩৫-৩৩, ৩৯-৩৮ পয়েন্টে দারুণ লড়াই করে হেরে গেলেন রোমান-দিয়া জুটি। ম্যাচের স্কোরই বলছে তারা কতটা গা ঘেষে লড়াই করেছেন।

এর আগে গত মে মাসে সুইজারল্যান্ডের লুজানে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের স্টেজ-২ এর ফাইনালে উঠে বাংলাদেশকে রৌপ্য পদক এনে দিয়েছিলেন। রোমান-দিয়া জুটি হারলেও এটিই ছিল বাংলাদেশের সেরা অর্জন। ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশের প্রতিযোগীরা অংশগ্রহনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলেন। শুধু কি তাই, প্রতিবারই হিটেই বিদায় নেওয়ার লজ্জাটা যেন দিনে দিনে ভারি হচ্ছিল। এমনকি কেউ কেউ প্রতিযোগিতায় নিজেকে অযোগ্য বলে ঘোষিত হয়েছেন। এমন লজ্জা থেকে রক্ষা করেছেন রোমান-দিয়া জুটি।

বাংলাদেশকে এখন আর বাছাইপর্ব কিংবা হিটের দল বলে গালি দিতে পারবেন না প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়রা। এর আগে ক্যারিয়ার সেরা স্কোর করে টোকিও অলিম্পিক গেমস আর্চারীর মিক্সড ইভেন্টের শেষ ষোলতে জায়গা করে নিয়েছিলেন রোমান সানা-দিয়া সিদ্দিকী জুটি। গেমসের প্রথম দিনে দিয়া তার ক্যারিয়ার সেরা ৬৩৫ স্কোর করে রিকার্ভ র‌্যাঙ্কিং রাউন্ডে ৩৬তম হওয়ার ঠিক দুই ঘন্টা পর রোমানও তার ক্যারিয়ার সেরা ৬৮৬ স্কোর অতিক্রম করতে না পারলেও ৬৬২ স্কোর করে ১৭তম স্থান লাভ করেন।

যার সুত্র ধরে অলিম্পিকে শীর্ষ ১৬ দেশের মধ্যে থেকে মিক্স্রড দ্বৈতে খেলার টিকিটও নিশ্চিত করেন তারা। রোমান-দিয়ার সম্মিলিত স্কোর ছিল ১২৯৭। কানাডাকে দুই পয়েন্টে পেছনে ফেলে শেষ দল হিসেবে বাংলাদেশ নকআউট পর্বে খেলার সুযোগ পায়। অলিম্পিকের মতো আসরে নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে না পারলে সাফল্য পাওয়ার কোন সুযোগই থাকেনা। সে কারণেই শুরুর দিকে আত্ববিশ্বাসী শুরুর পাশাপাশি কিছুটা স্নায়ুচাপেও ভুগেছিলেন এই দুজন।

এই যেমন প্রথম দুই সেটে হেরে রোমান-দিয়া জুটি তৃতীয় সেটে ৩৮ স্কোর করে ম্যাচে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তবে প্রথম দুই সেট টানা হারায় কোরিয়ার অলিম্পিকের কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়া ছিল সময়ের অপেক্ষা মাত্র। যা জার্মান কোচ মার্টিন ফেডেরিক ম্যাচ শেষ হওয়ার পর বলেছিলেন, ‘মূলত প্রথম দুই সেট হারের পর তৃতীয় সেটে আর ফেরা হয়নি। কোরিয়ানরা তাদের অভিজ্ঞতার পুরোটা দিয়েই ম্যাচটা দিতে নেয়। মিক্সড ইভেন্টে পাওয়া সাফল্যে একক ইভেন্টে রোমান-দিয়া দুজনেই ভাল করবে বলেই আমার বিশ্বাস।’

এদিকে বাংলাদেশ শেষ ষোলতে যে দুজন প্রতিযোগীর কাছে হেরেছিলেন পরে তারাই এই ইভেন্টের স্বর্ণ জিতেছিলেন। তাহল তো বলাই যায়, আসরের সেরা দুই খেলোয়াড়ের কাছেই হেরেছে রোমান-দিয়া জুটি। মিক্সড ইভেন্টে পাওয়া ফল নিশ্চিত করেই একক ইভেন্টে কাজে লাগাবেন রোমান সানা ও দিয়া সিদ্দিকী। নিজের সেরাটা দিতে পারলে অলিম্পিকে নতুন ইতিহাস রচিত হবে বাংলাদেশের। সেই অপেক্ষাই এখন।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...