তুমি কোন পথে যে এলে

স্প্যানিশ-ফ্রেঞ্চ কোনো পত্রিকা, কাছের মানুষজন কেউই কোনো সদুত্তর দিতে পারছেন না এ প্রশ্নের। কেউ কেউ তো সকাল বেলা রিয়ালের নতুন কোচ নিয়োগ দিয়ে বিকেলবেলা বলছেন জিনেদিন জিদান থাকছেন। জিদান কি সত্যিই থাকছেন না চলে যাচ্ছে? আর চলে গেলে তার পেছনে কারণটা ঠিক কী?

জিনেদিন জিদান থাকছে নাকি না? প্রশ্নটা রিয়াল মাদ্রিদ দল ও সমর্থকদের কাছে বেশ প্রকট। শুধু তাঁদের জন্যই না, ফুটবল বিশ্বের কাছেও বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

স্প্যানিশ-ফ্রেঞ্চ কোনো পত্রিকা, কাছের মানুষজন কেউই কোনো সদুত্তর দিতে পারছেন না এ প্রশ্নের। কেউ কেউ তো সকাল বেলা রিয়ালের নতুন কোচ নিয়োগ দিয়ে বিকেলবেলা বলছেন জিনেদিন জিদান থাকছেন। জিদান কি সত্যিই থাকছেন না চলে যাচ্ছে? আর চলে গেলে তার পেছনে কারণটা ঠিক কী?

রিয়াল মাদ্রিদের জন্য মৌসুমটা খুব একটা খারাপ যায়নি। রিয়াল মাদ্রিদ সুঅর্থকদের অন্তত সেটাই ধারণা। ধারণা করাটাও ভুল কিছু নয়, এই মৌসুমে বেশ বাজে অবস্থা থেকেই মৌসুম শেষ করেছেন জিনেদিন জিদান। মৌসুমের মাঝামাঝি এসে কাস্তিয়া থেকে খেলোয়াড় এনে খেলা লেগেছিল রিয়াল মাদ্রিদের। সে শঙ্কট জিদান উৎরে গিয়েছেন ভালোভাবেই। চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমি-ফাইনাল, শেষদিন পর্যন্ত লা লিগার শিরোপার জন্য লড়াই করা, সবটাই করে দেখিয়েছেন জিদান। কিন্তু এতকিছুর পরেও মৌসুমটা ঠিক রিয়াল মাদ্রিদময় হয়নি।

স্প্যানিশ জায়ান্টদের প্রতি মৌসুমে লক্ষ্যই থাকে সকল শিরোপা জেতা। সকল শিরোপা নিজেদের করে নেওয়া। কিন্তু এই মৌসুমটা সেদিক দিয়ে সফল হয়নি রিয়ালের। গত ১ দশকে এমন মৌসুম দেখেনি রিয়াল। ২০০৯-১০ মৌসুমে শেষ এরকম ট্রফিলেস মৌসুম কাটিয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ।

এরপর থেকে এই প্রথম ট্রফিলেস মৌসুম কাটাতে হলো তাদের। তাও আবার ক্লাব লিজেন্ড জিনেদিন জিদানের অধীনে। বিষয়টা নিয়ে আর যেই খুশি হন না কেন, জিনেদিন জিদান হতে পারছেন না। নিজের ক্লাবকে শিরোপা ছাড়া মৌসুম কাটাতে কেই-বা দেখতে পারেন।

শেষদিনে লিগ হারিয়ে তাই বিরক্তবদনেই প্রেসের সামনে এসেছিলেন জিদান। আর সেখানেই ঘোষণা দিয়েছিলেন, থাকবো নাকি থাকবো না সেটার সিদ্ধান্ত আমিই জানাবো। আমি কিছুদিন সময় নিয়ে বোর্ডের সাথে বসে ঠিক করবো আমার জীবনের পরবর্তী অধ্যায়।

জিনেদিন জিদানের জন্য এই অধ্যায়টা খুবই জটিল। প্রথমত তিন ছর আগে বেশ ভালো অবস্থানে থেকে রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়েছিলেন তিনি। টানা তিন চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতে রাজার বেশে। ৮ মাসের মাথাতে ফেরত এসেছেন রিয়াল মাদ্রিদকে আবারও পুনরায় আগের অবস্থানে ফেরত আনার জন্য।

কিন্তু সে লক্ষ্যে এসে যদি মাঝপথেই দায়িত্ব ছেড়ে দেন সেটা কি ভালো দেখাবে? অবশ্যই না। সেই সাথে জিদান বারবার বলেছেন রিয়াল মাদ্রিদে আসা তার জীবনের সেরা সিদ্ধান্ত। আর সেখান থেকেই দলকে বিপদে ফেলে চলে যাওয়াটা জিদানের মতন লোকের কাছ থেকে আশা করা যায় না। যে কারণে রিয়াল মাদ্রিদে জিদানের থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

কিন্তু মুদ্রার অন্যপিঠে আছে রিয়াল বোর্ডের সমস্যা। এমনিতেই সুপার লিগ নিয়ে বেশ বিপাকে আছে রিয়াল। ইউয়েফা থেকে করা মামলার ফলে চ্যাম্পিয়নস লিগ পজিশন হারাতে হতে পারে রিয়ালকে। এমনিতেই লাভের মুখ না দেখা রিয়াল সেদিক দিয়ে আরো অর্থ হারাবে। তাছাড়াও চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলতে না পারা বড় ধরণের প্রভাব ফেলবে দলের মোর‍্যালের উপরে। খেলোয়াড়েরা খেলতে চাইবে কীনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠবে।

অন্যদিকে রিয়াল মাদ্রিদের বর্তমান অবস্থাও খুব একটা ভালো নয়। ম্যাচের শেষদিনে সমর্থকেরা মনে মনে বিদায় বলে দিয়েছে পাঁচ-পাঁচজন খেলোয়াড়কে। রামোস, ভাজকেজের মতন খেলোয়াড়ের চুক্তি বাড়ানো হচ্ছে না। এখনও দোটানায় তাদের রিয়াল ক্যারিয়ার। রামোস আর ভাজকেজকে জিদানের থেকে ভালো কে চিনেন?

ভাজকেজ ছিলেন জিদানের সকল সমস্যার সমাধান। যখনই প্রয়োজন পরলো, কাজের কাজী হয়ে যেতেন ভাজকেজ। আর রামোস তো জিদানের ভরসা। ডিফেন্সে তার মতন খেলোয়াড়কে পাওয়া যে কারোর সৌভাগ্য। ভারানে, যাকে জিদান নিজে নিয়ে এসেছিলেন রিয়ালে, নতুন চ্যালেঞ্জের জন্য ছাড়তে চাইছেন রিয়াল। মার্সেলো, ইসকো; জিদানের ওল্ডগার্ড, যাদের উপর ভর করে রিয়ালকে নিয়ে জিতেছেন তিন চ্যাম্পিয়নস লিগ; তারাও দল ছাড়ার খুবই কাছাকাছি। আগামী মৌসুমে যদি জিনেদিন জিদান রিয়ালের বেঞ্চে থাকেন, তবে তাকে থাকতে হবে এদের ছাড়াই।

সেই সাথে যুক্ত হয়েছে বাজে মেডিক্যাল টিম। এই মৌসুমে মোট ৬৯ ইঞ্জুরির সম্মুখীন হয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। এমনও দিন গিয়েছে জিদান মাঠে নেমেছেন বেঞ্চে কোনো ভালো ব্যাকআপ ছাড়াই যুব দলের খেলোয়াড়দের নিয়ে। আগের মেয়াদের ফিজিক্যাল ট্রেইনার অ্যান্তোনিও পিন্টাসকে হারিয়ে জিদানকে কাজ করতে হয়েছে গ্রেগরি দুপান্তের সাথে। আর যার আগমনের পর থেকেই একের পর এক চোটে পছেন রিয়াল খেলোয়াড়েরা। দুই বছরে চোট থেকে বেরই হতে পারেননি জিদানের প্রিয় খেলোয়াড় ইডেন হ্যাজার্ড।

সব মিলিয়ে রিয়াল মাদ্রিদ বোর্ড ও দলের সামগ্রিক অবস্থার উপর বেশ বিরক্ত জিনেদিন জিদান। না হওয়ারটাই অস্বাভাবিক হতো। এত সমস্যার পরেও যে রিয়ালের তরী এ পর্যন্ত এনেছেন, তার জন্য ধন্যবাদ প্রাপ্য জিদানের। ক্লাব সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ তাই করছেন।

জিদানের সাথে এ সপ্তাহেই কথা বলতে বসবে রিয়াল বোর্ড। আর তাতেই নিশ্চিত হবে রিয়ালে জিদানের ভবিষ্যৎ। জিদান থাকছেন কী না, সে প্রশ্নের উত্তর হয়তো এখন দেওয়া সম্ভব নয়, তবে জিদান আর রিয়ালের মিটিং পুরো রিয়ালকে খোলনচালে বদলে দিবে তা পরিষ্কার বোঝাই যাচ্ছে। 

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...