সাদা বলের অবিস্মরণীয় ম্যাচ!

ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের সর্বশেষ এই বিশ্বকাপ আসর জমেছিল বেশ। তবে এমন একটা শেষ বোধহয় ক্রিকেটবিশ্ব কল্পনাও করেনি। এ যেন শেষ, তবু রেষ রয়ে যায়। আজ এতদিন পর এসেও সেই শেষ বল গুলো মনে পড়লে গায়ে কাঁটা লাগে, শিহরিত হয়। মনে হয় গোটা দুনিয়ায় শুধু একটাই শব্দ প্রতিধ্বনিত হয় - ‘ক্রিকেট, ক্রিকেট, ক্রিকেট…’ কিংবা ‘ক্রিকেট আজও গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা!’

ক্রিকেট বিধাতা ফলাফল দিতে নারাজ। তবুও ক্রিকেটের অদ্ভুত, অজানা এক নিয়মে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হলো ক্রিকেটের আদি সাধকদের। সে যাই হোক, কোটি ক্রিকেট অনুরাগী জানে জিতেছিল সেদিন ক্রিকেটই। জিতেছিল সেদিন নিউজিল্যান্ডও।

ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের সর্বশেষ এই বিশ্বকাপ আসর জমেছিল বেশ। তবে এমন একটা শেষ বোধহয় ক্রিকেটবিশ্ব কল্পনাও করেনি। এ যেনো শেষ, তবু রেষ রয়ে যায়। আজ এতদিন পর এসেও সেই শেষ বল গুলো মনে পড়লে গায়ে কাঁটা লাগে, শিহরিত হয়। মনে হয় গোটা দুনিয়ায় শুধু একটাই শব্দ প্রতিধ্বনিত হয় – ‘ক্রিকেট, ক্রিকেট, ক্রিকেট…’ কিংবা ‘ক্রিকেট আজও গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা!’

এবার অবশ্য ফাইনালের আগেই নিশ্চিত হওয়া গিয়েছিল যে নতুন চ্যাম্পিয়ন পেতে চলেছে ক্রিকেট বিশ্ব। এর আগের এগারো আসরের কোনোটাতেই শিরোপা হাতে তোলেনি ইংল্যান্ড কিংবা নিউজিল্যান্ড। দারুণ এক দল নিয়েই বিশ্বকাপ খেলতে এসেছিল ইংল্যান্ড। তাছাড়া ঘরের মাঠের বাড়তি সুবিধা তো আছেই। তবুও ফাইনাল ম্যাচে কাউকে এগিয়ে রাখা যায়না।

তারপরও ক্রিকেট বোদ্ধারা বেঁছে নিয়েছিলেন ইংল্যান্ডকেই। তাঁর কারণ হয়তো নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের অফ ফর্ম। তাছাড়া কেন উইলিয়ামসন ও রস টেলরের উপর বেশি মাত্রায় নির্ভরশীল ছিল দলটি। ওপেনার মার্টিন গাপটিল পুরো টুর্নামেন্টেই নিজেকে হারিয়ে খুঁজছিলেন। সত্যিই সেদিন ইংল্যান্ড জিতেছিল। তবে বোদ্ধারা এর কৃতিত্ব নিতে নারাজ। কেননা তাঁরাও জানে, জিতেছিল সেদিন নিউজিল্যান্ডও।

তবে একটা সময় নিউজিল্যান্ডের দিকেই ম্যাচটা হেলে গিয়েছিল। ২৪২ রানের টার্গেটও ফাইনাল ম্যাচে এক মহাসাগর হয়ে উঠেছিল। ৮৬ রানে ৪ উইকেট  হারানো ইংল্যান্ডের জন্য লড়াই করে যাচ্ছিলেন বেন স্টোকস ও জস বাটলার। ১৯৬ রানে বাটলার আউট হবার পর দ্রুতই প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন ক্রিস ওয়োকসও । শেষ ৪ ওভারে তখনো ৩৯ রান প্রয়োজন ইংল্যান্ডের। একাই শেষ অবধি লড়ে গেলেন স্টোকস।

শেষ ওভারে প্রয়োজন ১৫ রান। নিউজিল্যান্ডের প্রয়োজন দুটি উইকেট। প্রথম বলে সিঙ্গেল নেয়ার সুযোগ থাকলেও নিজের উপর ভরসা রাখলেন স্টোকস। বাকি পাঁচটা বল তিনিই খেলতে চান। হয় ইতিহাস গড়বেন, নয়তো ইতিহাসের খলনায়কের চরিত্রই মাথা পেতে নিবেন। তবে পরের বলেও রান বের করতে না পারায় শেষ ৪ বলেও দরকার ১৫ টি রান।

পুরো ক্রিকেট বিশ্বের হৃদস্পন্দন যখন শোনা যাচ্ছে, বাইশ গজে দাঁড়িয়ে স্টোকস নিজে সময় নিলেন। হাতের গ্লাভসটা খুলে আবার শক্ত করে পরে নিলেন। বাইশ গজটাও আবার একটু দেখে নিলেন। কোথাও কোনো খাঁদ আছে কী! অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বলটাকে স্লগ স্যুইপ করে সীমানা পাড় করলেন। ঠিক ৭৩ মিটার লম্বা ছয়। এরপরের বলটা নিয়ে ক্রিকেট বিশ্ব মহাকাল তর্ক করে যেতে পারে।

বাই চারটি রান কী সত্যিই দেয়ার কথা ছিল। হয়তো ছিল। নিয়ম তাই বলে বোধহয়। তবু কেন উইলিয়ামসন কিংবা মার্টিন গাপটিলদের চোখ সেই নিয়ম মানতে চায়না। কিংবা সুপার ওভারেও ক্রিকেটের এত বড় নিয়মের বইটা হার মানেনি ইংল্যান্ড কিংবা নিউজিল্যান্ডের কাছে? শেষ পর্যন্ত বাউন্ডারি নিয়মে সমানে সমানে লড়েও ট্রফিটা উঠলো  ইংল্যান্ডের হাতেই।

তবে লর্ডসের সেই আনন্দ আয়োজন ছড়িয়ে পড়েছিল শত কোটি ক্রিকেটপ্রেমীর হৃদয়ে। কয়েকটা বাউন্ডারি, একটা রান, একটা সুপার ওভার কিংবা একটা ফাইনাল ম্যাচ সব সেদিন তুচ্ছ। সেদিন জয়ধ্বনি ক্রিকেট বিধাতার। কেননা তিনি জানেন, জিতেছিল সেদিন ক্রিকেট, জিতেছিল সেদিন নিউজিল্যান্ডও।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...