মিডল অর্ডারের স্থপতি

দুই ভাই দুভেন্দু তিলকারত্নে এবং রাভিন্দু তিলকারত্নে। দুইজনেই শ্রীলঙ্কার হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলছেন। দুই জমজ ভাই মূলত অলরাউন্ডার হিসেবে খেলে থাকেন। বাবা শচীন টেন্ডুলকারের বিরাট ফ্যান হওয়ায় দুই ছেলের নাম রাখেন দুভেন্দু শচীন তিলকারত্নে ও রাভিন্দু শচীন তিলকারত্নে। এই দুই ছেলের বাবা হলেন শ্রীলঙ্কার ১৯৯৬ বিশ্বকাপজয়ী দলের অন্যতম সদস্য হাসান তিলকারত্নে। দুই ছেলেকেও নিজের মতো ক্রিকেটার হিসেবে গড়ে তুলতে সেরাটাই দিচ্ছেন হাসান।

দুই ভাই দুভেন্দু তিলকারত্নে এবং রাভিন্দু তিলকারত্নে। দুইজনেই শ্রীলঙ্কার হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলছেন। দুই জমজ ভাই মূলত অলরাউন্ডার হিসেবে খেলে থাকেন। বাবা শচীন টেন্ডুলকারের বিরাট ফ্যান হওয়ায় দুই ছেলের নাম রাখেন দুভেন্দু শচীন তিলকারত্নে ও রাভিন্দু শচীন তিলকারত্নে। এই দুই ছেলের বাবা হলেন শ্রীলঙ্কার ১৯৯৬ বিশ্বকাপজয়ী দলের অন্যতম সদস্য হাসান তিলকারত্নে। দুই ছেলেকেও নিজের মতো ক্রিকেটার হিসেবে গড়ে তুলতে সেরাটাই দিচ্ছেন হাসান।

১৪ জুলাই, ১৯৬৭। শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোতে জন্ম নেন হাসান তিলকারত্নে। বড় শহরে জন্ম নেওয়া হাসান ক্যারিয়ারে বেশ অল্প বয়সেই ক্রিকেটকে আপন করেন নেন। ছোট বেলা থেকেই শ্রীলঙ্কার জার্সি গায়ে খেলার প্রবল ঝোঁক তাকে টেনে আনে জাতীয় দলে। ইসিপাথানা কলেজের হয়ে খেলার সময় ১৯ বছর বয়সী হাসান পেয়ে গেলেন দারুন এক সুযোগ।

১৯৮৬ সালে গলে ইংল্যান্ড ‘বি’ দলের বিপক্ষে ম্যাচে সুযোগ পান হাসান। সুযোগটা লুফে নিয়েই চাপের মুখে দলের পক্ষে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি জুড়ে দেন। তাঁর দুর্দান্ত ব্যাটিং তখন লঙ্কান ক্রিকেটের অনেকেরই মন ছুঁয়ে যায়। এরপর আর খুব বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি হাসানকে। শারজাহতে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডেতে ডাক পেয়ে যান তরুন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হাসান।

১৯৮৬ সালে ওয়ানডে অভিষেকের তিন বছরের মাথায় ১৯৮৯ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরে টেস্ট দলে ডাক পান হাসান। তখন ননদেস্ক্রিপ্টস ক্লাবের হয়ে খেলতেন তিনি। তাঁর সাথে দলে ডাক পান তারই ক্লাব ক্রিকেটের আরেক সতীর্থ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান গামিনি বিক্রমাসিংহে।

দু’জনেরই অপেক্ষা প্রথম টেস্ট অভিষেকের। হাসানকে ছাপিয়ে প্রথম টেস্টের একাদশে সুযোগ পেলেন বিক্রমাসিংহে! প্রথম টেস্টটা সাইড বেঞ্চেই কাটাতে হয় হাসানকে। তবে বিক্রমাসিংহের ইনজুরিতে দ্বিতীয় টেস্টে ব্রিসবেনে কপাল খুলে যায় হাসানের! অজিদের বিপক্ষে ব্রিসবেন টেস্টে অভিষিক্ত হন হাসান।

হাসানের জন্য বেশ বড় সুযোগ ছিলো নিজেকে প্রমাণ করার। তিনি নিজেকে মেলে ধরার ফলে দলে সেট হয়ে যান দ্রুতই। অপরদিকে, ইনজুরিতে কপাল পুড়ে বিক্রমাসিংহের। হাসানের লম্বা টেস্ট ক্যারিয়ারের যাত্রাটা এখান থেকেই শুরু।

নিজের অভিষেক ইনিংসেই ডাকের লজ্জায় পড়েন তিনি! তবে এর দুই ইনিংস বাদেই তুলে নেন নিজের মেইডেন ফিফটি। ভারতের বিপক্ষে চন্দিগড়ে মেইডেন ফিফটির দিনে অবশ্য তাঁর দল হেরে যায়। এরপর ১৯৯২ সালের ডিসেম্বরে কলম্বোতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৯৩ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলে দলকে জয় এনে দেন হাসান।

তার ঠিক তিন মাস পর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে একই ভেন্যুতে আরেকটু দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন তিনি। তিনি যখন ব্যাটিংয়ে নামেন তখন দলের রান ৪ উইকেটে ৩৩০। সেখান থেকে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে ৯৩ রানের অনবদ্য এক ইনিংস খেলেন তিনি। তাঁর দুর্দান্ত ইনিংসে ৪৬৯ রানের পুঁজি পায় শ্রীলঙ্কা। লঙ্কানরা ওই ম্যাচে ৫ উইকেটের জয় তুলে নেয়। ওই বছর আট টেস্টে ৫৩.৮৯ গড়ে ৪৮৫ রান করেন হাসান!

দলে নিজের জায়গা ধরে রাখতে সবসময়ই নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন হাসান। ক্যারিয়ারে ২০০ ওয়ানডে খেললেও ২ টির বেশি সেঞ্চুরির দেখা পাননি তিনি। তবে আছে ১৩টি ফিফটি। তার দুই ওয়ানডে সেঞ্চুরিই এসেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। ১৯৯৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১০৪ রানের ইনিংস খেলার পথে প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরির দেখা পান হাসান। তাঁর দুর্দান্ত ইনিংসের পরেও বাকিদের ব্যর্থতায় ৪৬ রানে হেরে যায় লঙ্কানরা।

এরপর এক বছর বাদেই ১৯৯৪ সালে হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মেইডেন টেস্ট সেঞ্চুরির দেখা পান হাসান। এক বছরের মাথায় নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান এবং অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও সেঞ্চুরি করেন তিনি। পরবর্তীতে ১৯৯৫ সালের অক্টোবরে শারজাহতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩৩৪ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে দারুণ এক সেঞ্চুরি উপহার দেন হাসান। ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার পথে শেষ ওভারে তিনি আউট হলে মাত্র চার রানে হেরে যায় লঙ্কানরা! ১৯৯৬ সালে মাত্র তিন টেস্ট খেললেও ১ সেঞ্চুরি আর ১ ফিফটিতে ৭১.৩৩ গড়ে রান করেন তিনি।

এরপর ১৯৯৬ বিশ্বকাপের সেই ঐতিহাসিক আসর! যেখানে প্রথমবার শিরোপা জিতে নেয় লঙ্কানরা। অর্জুনা রানাতুঙ্গার অধীনে দুর্দান্ত এক টুর্নামেন্ট খেলে লঙ্কানরা। সেই টুর্নামেন্টেও উইকেটের পেছনে অবদান রাখার পাশাপাশি ব্যাট হাতেও দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন হাসান।

গ্রুপ পর্বের চতুর্থ ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে দুর্দান্ত ব্যাট করেন হাসান। যেখানে শচীনের ১৩৭ রানের অনবদ্য ইনিংসে ২৭১ রানের বড় লক্ষ্যমাত্রা দাঁড় করায় ভারত। জবাবে ব্যাট করতে নেমে অধিনায়ক রানাতুঙ্গার সাথে ১৩১ রানের হার না মানা জুটি গড়ে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন হাসান। হাসানের ৯৮ বলে ৭০ রানের ইনিংসে ৬ উইকেটের জয় পায় লঙ্কানরা।

১৯৯৯ এর বিশ্বকাপের আগে এক সেঞ্চুরি আর চার ফিফটি করলেও বিশ্বকাপের পরই দল থেকে বাদ পড়েন তিনি। ১৯৯৬ বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ের পর হঠাৎ দলের পারফরম্যান্স নিচে নামতে থাকে লঙ্কানদের। পরবর্তীতে ৯৯ এর বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বেই বাদ পড়ে লঙ্কানরা। ওই টুর্নামেন্টে মাত্র এক ম্যাচ খেলার সৌভাগ্য হয় হাসানের।

এরপর দলের বাজে পারফরম্যান্সের পর শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট (এসএলসি) দলকে ঢালাওভাবে সাজাতে নতুনদের সুযোগ দিতে চাইলো। হাসান নিজেও বুঝতে পারলেন তাকে এবার জায়গা হারাতে হবে। এরপরই দল থেকে বাদ পড়লেন! কিন্তু তিনি জানতেন দলকে দেওয়ার মতো তার মধ্যে অনেক কিছুই আছে এখনো।

দুই ফরম্যাটেই নিজের জায়গা হারিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরে যান তিনি। এরপর ঘরোয়া ক্রিকেটে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়ে ২০০১ সালের ভারতের বিপক্ষে হোম সিরিজে আবারো দলে কামব্যাক করেন তিনি।

ওই সিরিজের তৃতীয় টেস্টে লঙ্কান গ্রেট মুত্তিয়া মুরালিধরন ৮ উইকেট শিকার করেন! সেখানে ব্যাট হাতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেন হাসান। চার ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরিতে প্রথম ইনিংসে লঙ্কানরা ৬১০ রানের পাহাড়সম রান সংগ্রহ করে। হাসান তিলেকারত্নের অপরাজিত ১৩৬ রান সেদিন প্রমাণ করেছিলো তিনি ফুরিয়ে যাননি।

এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হোম সিরিজে টেস্টে নিজের ক্যারিয়ার সেরা ২০৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন হাসান! ওই সিরিজেই ক্যারিবিয়ান তারকা ব্রায়ান লারা ১৩০ বলে ২২১ রানের এক বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন। ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে হাসানের ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির ম্যাচে লঙ্কানরা প্রথম ইনিংসে বড় লিড পায়। ওই ম্যাচে ১০ উইকেটের বড় জয়ে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নেয় লঙ্কানরা।

২০০৩ সালে টেস্ট ও ওয়ানডে দুই ফরম্যাটেই অধিনায়কের দায়িত্ব পান হাসান। তাঁর অধিনায়কত্বে ১০ টেস্টে মাত্র ১ জয় পায় লঙ্কানরা। এমন হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পর ২০০৪ সালে অধিনায়ক হিসেবে তাঁর শেষ সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হোম সিরিজে ৩-০ তে হারে লঙ্কানরা। কলম্বো টেস্টে অপরাজিত ৭৪ করার পরেও তাকে অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় এবং সেটাই ছিলো ক্যারিয়ারে হাসানের খেলা শেষ টেস্ট! এরপর আর সাদা পোশাকে সুযোগ পাননি এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান।

হাসান দলে থাকায় লঙ্কানদের বড় সুবিধাই ছিলো বটে। তাকে আউট করতে প্রতিপক্ষের বোলাররা হিমসিম খেতো। অনেক ক্ষেত্রেই তাঁর উইকেট নিতে ব্যর্থ হতো প্রতিপক্ষের বোলাররা। ২০০ ওয়ানডেতে ৪০ বার অপরাজিত ছিলেন হাসান! ২৯.৬০ গড়ে ওয়ানডেতে ৩৭৮৯ রান করেন তিনি। ৮৩ টেস্টে ৪২.৮৭ গড়ে ৪৫৪৫ রান সংগ্রহ করেন তিনি। ২০০৫ সালে হাসান তিলকারত্নে ক্রিকেটকে বিদায় জানান।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...