ক্লাবের ভবিষ্যত নিয়ে এখনই বেশ সচেতন রিয়াল মাদ্রিদ। মিডফিল্ডার কাসেমিরো, লুকা মদ্রিচ ও টনি ক্রুসরা গত এক দশকে আকাশ ছোঁয়া সাফল্য এনে দিয়েছিল ক্লাবটিকে। তবে ক্লাব ম্যানেজম্যান্ট জানে খুব বেশি দিন এই তিনজন রিয়ালের মাঝমাঠ সামলাতে পারবেন না। চোখ রাখতে হবে ভবিষ্যতে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই তাই কয়েক মৌসুম ধরেই মূল একাদশে প্রায়ই দেখা যায় ফেদেরিকো ভালভার্দেকে। একই কারণে গত বছর রেনেঁ থেকে রিয়াল দলে টেনেছে এডুয়ার্ডো কামাভিঙ্গাকে। কামাভিঙ্গার পথ ধরে এবার আরেক ফরাসি মিডফিল্ডার গায়ে চাপিয়েছেন অল হোয়াইট জার্সি। ফরাসি ক্লাব মোনাকো থেকে প্রায় ১০০ মিলিয়ন ইউরোতে রিয়ালে এসেছেন অরেলিয়েন শুয়েমেনি।
নিজের স্বাগত অনুষ্ঠানে ১৮ নম্বর জার্সি পরেই হাজির হয়েছেন এই বাইশ বছর বয়সী মিডফিল্ডার। আগে বিভিন্ন পর্যায়ে দলগুলোতে ৮ নম্বর জার্সি পরেই খেলেছিলেন শুয়েমেনি। কিন্তু রিয়াল মাদ্রিদে টনি ক্রুস অনেক আগ থেকেই ৮ নম্বর জার্সি পরেন। আর তাই ৮ এর বদলে ১৮-কে পছন্দ করেছেন ফ্রেঞ্চ তরুণ।
কিন্তু শুয়েমেনির এই ১৮ নম্বর পছন্দ করা দেখে রিয়াল–সমর্থকদের মনে শঙ্কা জাগার কথা। কিন্তু কেন, সে গল্পটা জানা যাক। আসলে রিয়ালের ১৮ নম্বর জার্সি গায়ে সফল হওয়ার উদাহরণ যে বলতে গেলে নেই-ই!
২০০৪ সালে নিউক্যাসল ইউনাইটেড থেকে ইংলিশ সেন্টারব্যাক জোনাথন উডগেটকে দলে টেনে সবার চোখ কপালে তুলেছিল রিয়াল। জোনাথন সেবার বেছে নিয়েছিল ১৮ নম্বর জার্সি। তৎকালীন কোচ হোসে আন্তোনিও কামাচো আস্থা রেখেছিলেন এই সেন্টারব্যাকের ওপর। কিন্তু উডগেট কোচের আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি।
উডগেটের মতো একই ভাগ্য বরণ করতে হয়েছিল ফরাসি রাইটব্যাক হুলিয়েন ফবার্টকে। তিনিও যে গায়ে জড়িয়েছিলেন ১৮ নম্বরের অলহোয়াইট জার্সি। ওয়েস্ট হ্যাম থেকে ধারে আসা এই রাইটব্যাকও পারেননি বিশেষ কিছু করে দেখাতে। আর তাই এক বছরের মেয়াদ শেষ করেই সংক্ষিপ্ত এক রিয়াল-অধ্যায় সমাপ্ত করতে হয়েছে তাঁকে।
ছয় বছর বার্সেলোনায় খেলার পর চুক্তি শেষে ফ্রি দল বদলে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার হ্যাভিয়ের সাভিওলা। ১৮ নম্বর জার্সির ভার তার কাঁধে তুলে দিয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। এক মৌসুমে ১৭ লিগ ম্যাচে ৪ গোল করেই থেমে যায় সাভিওলার রিয়াল-ক্যারিয়ার।
তবে রিয়ালের ১৮ নম্বর জার্সি গায়ে সবচেয়ে বড় ‘ফ্লপ’ খুব সম্ভবত আন্তোনিও কাসানো ও লুকা জোভিচ। ইতালির নতুন ত্রাতা মানা হতো কাসানোকে। কিন্তু চুক্তিসংক্রান্ত জটিলতার কারণে প্রতিভাবান এই ফরোয়ার্ডকে ধরে রাখতে পারেনি এএস রোমা। মাত্র পাঁচ মিলিয়ন ইউরোতে রিয়ালে নাম লেখান এই ইতালিয়ান। তাকেও দেওয়া হয়েছিল ১৮ নম্বর জার্সি।
রিয়ালে পাঁচ মৌসুম থাকলেও দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে নিজেকে কখনো প্রমাণ করতে পারেননি। কিটক্যাট চকলেটের লোভ সামলাতে না পারা কাসানোর জীবনযাত্রার ধরন, আচার-ব্যবহার নিয়েও প্রশ্ন ছিল অনেক। শেষমেশ ২০০৮ সালে নিজের দেশের ক্লাব সাম্পদোরিয়াতে চলে যান কাসানো।
সে তুলনায় স্ট্রাইকার লুকা জোভিচের উদাহরণটি সাম্প্রতিক। আইনট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে ছয় কোটি ইউরোর বিনিময়ে রিয়ালে নাম লেখানো জোভিচ শুরুতে খেলতেন ১৮ নম্বর জার্সি পরে। এই সার্বিয়ান কখনোই কোচদের আস্থার পাত্র হতে পারেননি।
জোভিচের সতীর্থ মারিয়ানো দিয়াজের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। তিনিও লস ব্ল্যাঙ্কোসদের ১৮ নম্বর জার্সি গায়ে জড়িয়েই ব্যর্থদের কাতারে নাম লিখিয়েছেন।
সর্বশেষ গেল মৌসুমে রিয়ালের ১৮ নম্বর জার্সি পরেছিলেন গ্যারেথ বেল। অবশ্য বেল আগে ১১ নম্বর পরেই খেলতেন। কিন্তু মাঝে এক মৌসুম ধারে টটেনহামে চলে যাওয়ার কারণে বেলের ১১ নম্বর জার্সিটা স্প্যানিশ উইঙ্গার মার্কো আসেনসিওকে দিয়ে দেয় রিয়াল। ধারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর বেল রিয়ালে ফিরলেও আসেনসিওর কাছ থেকে ১১ নম্বর জার্সিটা আর ফিরে পাননি। তাই বেলকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল ১৮ নম্বর জার্সিতে।
আর এই ১৮ নম্বর জার্সি গায়ে মৌসুমে খেলার তেমন সুযোগই পাননি বেল; পুরো মৌসুমে বিতর্কও পিছু ছাড়ে নি ওয়েলস তারকা’র। এবার চুক্তি শেষে বেল বিদায় নিয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদ থেকে। ১৮ নম্বর জার্সি’র নতুন মালিক হয়েছে শুয়েমেনি।
জার্সি নম্বরের সাথে মাঠের খেলায় পারফরম্যান্সের সম্পর্ক নেই বললেই চলে। তারপরও রিয়ালের ১৮ নম্বর জার্সিতে মিশে আছে অভিশাপের গন্ধ। জার্সির নতুন মালিক শুয়েমেনি যদি রিয়ালে সফল হতে চান তবে তাকে ভাঙ্গতে হবে এই অভিশাপ-বলয়। দেখার বিষয়, তিনি সেটা পারেন কিনা। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা সব মাদ্রিদ ভক্তদের সমর্থন অবশ্য তার সাথেই আছে।