বাবর, বিরাটের ব্যাটিং টেকনিক নিয়ে ব্যবচ্ছেদ কম হয় না। কে কার চেয়ে ভাল ক্রিকেটিং শট খেলেন, সেটিও এখন বহুল চর্চিত বিষয়। তাছাড়া, সাদা বলের ক্রিকেটে বাবর আজম বিরাট কোহলিকে কখনও ছাপিয়ে যাবেন কিনা সেই সম্ভাবনার চিত্রও এঁকে ফেলেন অনেকে।
বাবরও অবশ্য ছুটছেন। বছর জুড়েই রানের ফোয়ারা ছুটে তাঁর ব্যাটে।
তবে বিশ্বকাপে এসেই যেন নিজের ছায়া হয়ে আছেন বাবর আজম। অন্যদিকে টানা দুই ম্যাচে দুই ফিফটিতে বিরাট কোহলি বলতে গেলে হয়ে উঠেছেন একদম ‘অপরাজেয়’। দুই ম্যাচ মিলিয়ে ১৪৪ রান করেছেন, গড়টাও ঠিক ১৪৪! কারণ বিরাট কোহলিকে এ বারের আসরে এখন পর্যন্ত আউটই করা যায়নি।
বিরাট কোহলি যতটা উড়ছেন, বাবর আজমের পারফর্ম্যান্স গ্রাফও ঠিক ততটাই নিম্নগামী হচ্ছে। এশিয়া কাপ থেকেই রয়েছেন অফফর্মে। মাঝে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে রানের দেখা পেয়েছিলেন, তবে সেটা তাঁর স্বরূপে ফেরার মত নয়।
আরও নির্দিষ্ট করে বললে, ভারত-পাকিস্তান মহারণে প্রায়ই যেন বাবর আজম বড্ড বেশি নিষ্প্রভ থাকেন। আর এখানেই যেন বিরাটের সাথে তাঁর বড় একটা ব্যবধান তৈরি হয়ে যায়। সম্প্রতি এক গণমাধ্যমে বিরাটের সাথে বাবরের এই পার্থক্য নিয়েই কথা বলেছেন ওয়াকার ইউনুস, মিসবাহ উল হক এবং শোয়েব মালিক।
এ নিয়ে মিসবাহ বলেন, ‘বিরাট অন্য ধরনের ক্রিকেটার। ও উইকেটে অনেক সময় কাটাতে পছন্দ করে। একবার যদি ও ১৫/১৬ টা বল খেলে ফেলে তাহলে সে স্ট্রাইক রেট বাড়ানোর সাথে প্রতিপক্ষ বোলারদের জন্যও হয়ে ওঠে বিপদজনক। বাবরকে এই ব্যাপারটায় শিখতে হবে। ৬ ওভার পরও বাবরের স্ট্রাইক রেট কমতে থাকে। কিন্তু ম্যাচ উইনিং ইনিংস খেলতে হলে, অবশ্যই বিরাটের মত প্লান এক্সিকিউট করে খেলতে হবে।’
বাবর-বিরাট প্রসঙ্গে শোয়েব মালিক বলেন, ‘দুজনই ওয়ার্ল্ড ক্লাস। তবে বিরাট কোহলি জানে কিভাবে খেলাটা নিজের আয়ত্বে রাখতে হয়। সে নিজের ইচ্ছামত গ্যাপ খুঁজে খেলতে পারে। এ জন্য তাঁর সফলতার হারও বেশি।
শোয়েব মালিকের সাথে সুর মিলিয়ে ওয়াকার ইউনুস বলেন, ‘বিরাট কখনোই বোলারদের উপরে চড়াও হতে ভয় পায় না। সে কব্জির ব্যবহারটা নির্ভয়ে প্রয়োগ করতে পারে। কিন্তু বাবর সাধারণত একটু রয়ে শয়ে খেলতে পছন্দ করে। ও সাধারণত ঐ ভাবে বোলারদের উপর চড়াও হয় না।’
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও যোগ করে বলেন, ‘কোনো সন্দেহ নেই বাবর আজম দারুণ একজন ব্যাটার। তবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আপনাকে বোলারদের ওভার দ্য টপে খেলতে হবে। আপনি যদি এক বা দুই নম্বরে ব্যাট করেন তাহলে আপনাকে অবশ্যই ঝুঁকি নিতে হবে। গ্যাপ খুঁজে বের করতে হবে। নাহলে আপনি প্রচুর ডট বল খেলবেন এবং নিজের উপরে চাপ বাড়াবেন।’
ব্যাটিং ফর্ম এবং দলের অবস্থা মিলিয়ে বাবর আজম এখন একটু ব্যাকফুটেই রয়েছেন। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ হারের পর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও পরাজয়ের শামিল হয়েছে তাঁর দল। টানা দুই ক্লোজ ম্যাচ হেরে তাই তাদের সেমিতে ওঠার পথটাও হয়ে গিয়েছে কঠিন। এর মধ্যে নিজ দেশের গ্রেটদের কাছ থেকেও নিজের অধিনায়কত্ব নিয়ে বাবরকে প্রায়ই শুনতে হচ্ছে কটুকথা। সাবেক পেসার শোয়েব আখতার তো অকপটে বলেই দিয়েছেন, বাবর পাকিস্তানের অধিনায়ক হিসেবে যোগ্য না।
নানা আলোচনা সমালোচনার মধ্যে একটা গুঞ্জন অবশ্য এখন ভেসে বেড়াচ্ছে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরেই নাকি অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিবেন বাবর! সেটির সত্যতা অবশ্য মিলবে সময় গড়ালেই। তবে ক্রিকেট ক্যারিয়ারে যে বাবর এই মুহূর্তে একটা বাজে সময় পার করছেন সেটি নিশ্চিতভাবে বলাই যায়।
কিন্তু, একজন ক্রিকেটারের মানসিক দৃঢ়তা কতটুকু সেটিও প্রমাণ হয়ে যায় এমন সময়েই। বিরাট কোহলিও এমন সময়ের মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন। আবার স্বরূপে ফিরেছেনও। বাবর আজমকেও সেই পথের অন্বেষণে এগিয়ে যেতে হবে। মাঠের বাইরের সব চাপের মুখে নুয়ে পড়লে ফলটা বরং তাঁর প্রতিকূলেই যেতে পারে। বাবর তাঁর ক্যারিয়ারে নিশ্চয় এমনটা চাইবেন না।