চামড়ার ভাঁজে, তারুণ্য বাসা বাঁধে

টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে কঠিন কাজগুলোর একটি ফাস্ট বোলার হওয়া। লম্বা রানআপ, ধারাবাহিকভাবে ঘণ্টায় ১৩০-১৪০ কিলোমিটার গতিতে বোলিং করা, আর নিখুঁত লাইন-লেংথ ধরে রাখা - টানা পাঁচদিন ধরে এসব কাজ করে যাওয়া মোটেও সহজ নয়। তাই সাদা পোশাকে পেসারদের অবসরও নিতে হয় অল্প বয়সে।

টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে কঠিন কাজগুলোর একটি ফাস্ট বোলার হওয়া। লম্বা রানআপ, ধারাবাহিকভাবে ঘণ্টায় ১৩০-১৪০ কিলোমিটার গতিতে বোলিং করা, আর নিখুঁত লাইন-লেংথ ধরে রাখা – টানা পাঁচদিন ধরে এসব কাজ করে যাওয়া মোটেও সহজ নয়। তাই সাদা পোশাকে পেসারদের অবসরও নিতে হয় অল্প বয়সে।

কিন্তু গল্পটা বদলে যাবে যদি ফাস্ট বোলারের নাম হয় জেমস অ্যান্ডারসন। প্রায় দুই দশক ধরে এসব কঠিন কাজগুলো অনায়েসে করছেন তিনি; বলের পর বল করে যাচ্ছেন ক্রিকেটের বাইশ গজে। কাগজে কলমে বয়সটা চল্লিশ, কিন্তু তাঁর কাছে সেটা শুধুই একটি সংখ্যা। পরিসংখ্যান দেখলে আপনার মনে হবে অ্যান্ডারসন বুঝি বয়সের সাথে সাথে তরুণ হয়ে উঠছেন। 

ইংলিশ কিংবদন্তি আসলেই তরুণ হয়ে উঠছেন। ৩০ বছর বয়স হওয়ার পরে জেমস অ্যান্ডারসন শিকার করেছেন ৩৮৯ উইকেট। খুব শীঘ্রই প্রথম বোলার হিসেবে ৩০তম জন্মদিন পালনের পর থেকে ৪০০ উইকেট নেয়ার মাইলফলক অর্জন করবেন তিনি।

টেস্ট ইতিহাসে মাত্র ছয়জন বোলার ত্রিশের কোটা পেরোনোর পরে ২০০ উইকেট নিতে পেরেছেন অথচ অ্যান্ডারসন ৪০০ উইকেটের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে; পার্থক্যটা যে কাউকে মোহিত করতে বাধ্য।

শুধু তাই নয়, বয়স ৩৫ হওয়ার পর থেকে জিমির সংগ্রহ ১৭৭ উইকেট। শুধুমাত্র কিংবদন্তি পেসার কোর্টনি ওয়ালশ ১৮০ উইকেট নিয়ে তাঁর সামনে আছেন। তবে খুব বেশিদিন উইন্ডিজ ক্রিকেটার এই রেকর্ড ধরে রাখতে পারবেন না। 

বয়স বাড়ার সাথে সাথে যে শুধু উইকেট তুলে নিচ্ছেন ব্যাপারটি তেমন নয়। আগের তুলনায় অনেক দ্রুত ব্যাটসম্যানকে পরাস্ত করছেন অ্যান্ডারসন। আর এর প্রভাব পড়েছে তাঁর স্ট্রাইক রেট এবং বোলিং গড়ের উপর।

২৪ বছর পর্যন্ত জেমস অ্যান্ডারসনের বোলিং গড় ছিল ৩৭.৯২; ২৫ বছর থেকে ২৯ বছর পর্যন্ত তাঁর বোলিং গড় ২৮.৪৭; ৩০ থেকে ৩৪ বছরের সময় সেটা ছিল ২৫.৪৫। আর ৩৫ পেরুনোর পর মাত্র ২১.৩৯।

পুরো ক্যারিয়ারে ৬৫৭ উইকেট পাওয়া জেমস অ্যান্ডারসন ৩০ বছর বয়সের পর নিয়েছেন ৩৮৯ উইকেট। শতাংশের হিসেবে যা ৫৯%। এমন পরিসংখ্যানে ইংলিশ এই পেসারের চেয়ে উপরে আছেন পাঁচজন। এদের মধ্যে সবার উপরের নামটা রঙ্গনা হেরাথের।

মুত্তিয়া মুরালিধরনের অবসরের পর নিজেকে পুরোপুরি মেলতে ধরেছিলেন হেরাথ। নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারের ৯১.৯ শতাংশ উইকেট তিনি পেয়েছেন ৩০ এর পরেই। এছাড়া কোর্টনি ওয়ালশ, ল্যান্স গিবস, রিচার্ড হ্যাডলি, অ্যালান ডোনাল্ডরা আছেন সেরা পাঁচে। 

অন্যদিকে বয়সের হিসেব ৩০-এ না করে, ৩৫ ধরলে জেমস অ্যান্ডারসন আছেন তালিকায় দুই নম্বরে। বয়সের কাঁটা ৩৫ পার হওয়ার পরে ১৭৭ উইকেট নিয়েছেন জিমি; পুরো ক্যারিয়ারের ২৬.৯ শতাংশ উইকেট। অন্যদিকে সবার উপরে আছেন কোর্টনি ওয়ালশ। তিনি পুরো ক্যারিয়ারের ৩৪.৭% উইকেট পেয়েছেন ৩৫তম জন্মদিনের পরে। 

এছাড়া বিদেশের মাটিতেও আরো শানিত হয়ে উঠেছেন জিমি। একটা সময় শ্রীলঙ্কার মাটিতে তাঁর বোলিং গড় ছিল ৪০ এর উপরে, অথচ গত পাঁচ বছরে সেটা অর্ধেকে নেমে এসেছে। প্রায় একই ঘটনা ঘটেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্ষেত্রেও। ৩৮ বোলিং গড় ছিল ২০১৭ সালের আগে, কিন্তু গত কয়েক বছর সেটা ২০ এর কাছাকাছি।

ভারতের মাটিতে বোলিং গড়ের পরিবর্তন না হলেও বিশ্বের সব মাঠেই বয়সের সাথে সাথে উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে জেমস অ্যান্ডারসনের বোলিং এভারেজ। 

এছাড়া ইকোনমিক্যাল বোলিংয়েও নজর কেড়েছেন ইংরেজ পেসার। এমন উন্নতির আসল কারন সাধনা। ক্রিকেট দুনিয়ার রঙিন দিকটি পাশে সরিয়ে সাদা পোশাকে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন জেমস অ্যান্ডারসন। ক্যারিয়ার যত দীর্ঘ হয়েছে তত সমৃদ্ধ হয়েছে তাঁর বোলিং অস্ত্রের ভাণ্ডার।

মজা করে বলাই যায়, পঞ্চাশ বছর পর্যন্ত খেললে হয়তো আরো বাড়বে জিমির উইকেট সংখ্যা, কমবে বোলিং গড় আর স্ট্রাইক রেট। তিনি জেমস মিশেল অ্যান্ডারসন, হয়তো সেই ওয়াইনের বোতলের মতই; যার স্বাদ সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে।

– ইএসপিএন ক্রিকইনফো অবলম্বনে

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...