অভিষেক এবং ইতিহাস

এরপর ক্রিজে এলেন অভিষিক্ত অ্যাগার, যার ব্যাটিংটাও বাঁহাতি। দলকে লড়াইয়ে রাখবার সেরা পন্থাই বেছে নিলেন, ‘আক্রমন’।  শেষ পর্যন্ত ১০১ বলে ১২ টি বাউন্ডারি ও ২ ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে ৯৮ রান টিকে কোনো মাপকাঠিতেই সম্ভব নয়, শুধু অনুভব করতে হয়।  দ্রুত শতরানের চেষ্টায় ব্রডের বলে পুল করতে গিয়ে যখন মিড উইকেট বাউন্ডারিতে গ্রেম সোয়ানের হাতে ধরা পড়ে ফিরে আসছেন তখন পিছনে তৈরি করে দিয়েছেন রেকর্ড, ইতিহাস, তবুও একাদশের একাদশতম ব্যাটসম্যান হিসেবে এখনো অধরা শতরানটা হলোনা।

ক্রিকেট যারা দেখেন, খোঁজ খবর রাখেন তাদের কাছে অ্যাশেজের যৌক্তিকতা নতুনভাবে বলে দিতে হয়না। অ্যাশেজ নিয়ে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড ক্রিকেটাদের ও সমর্থকদের আবেগ, উদ্দীপনা ( তবে শুধু ওনাদের নয়, আপামর ক্রিকেট প্রেমীদের ) যা দেখি, তা দেখে মনে হয় আমাদের দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশের মধ্যে নিয়মিত যদি এমন হতো!

ক্রিকেট নিয়ে কয়েকবছর আগে যে আবেগ, উদ্দীপনা ছিল অন্তত: আমার মধ্যে, তার ছিটেফোঁটাও এখন প্রায় অবশিষ্ট নেই। তার নানা রকম কারণ অনেকেই অনুধাবন করতে পারেন। তবে খোঁজ রাখিনা এমনটা নয়। আসলে আগে সময় থাকতো, বিভিন্ন রকমের খেলা দেখা হতো, এখন আর সেটি হয়ে উঠে না। এই প্রসঙ্গে সেই সময়ের ক্রিকেট বিশ্বের খেলা দেখানোর কয়েকটি ক্রিকেট চ্যানেলের নাম মনে পড়ে যায় – ইএসপিএন, স্টার স্পোর্টস, পরে স্টার ক্রিকেট ( এই চ্যানেলটা তো প্রায় সবসময়ই দেখতাম), নিও ক্রিকেট, টেন স্পোর্টস, পরে টেন ক্রিকেট। এইসব চ্যানেলেই অ্যাশেজের ও বিভিন্ন টেস্ট সিরিজ সহ ক্রিকেটের স্বাদ চেটেপুটে খেয়েছি।

শেষ ১৪-১৫ বছরে অ্যাশেজে ভালো ভালো ইনিংসের অভাব নেই।। ওদিকে ইয়ান বেল, কেভিন পিটারসেন, অ্যালিস্টেয়ার কুক, জোনাথন ট্রট, জো রুট, বেন স্টোকস (অনেকেই মিস করে গেছি হয়তো) তো এদিকে রিকি পন্টিং, শেন ওয়াটসন, মাইকেল ক্লার্ক, ডেভিড ওয়ার্নার, স্যান্ডগেট থেকে ফিরে আসা স্টিভ স্মিথ, ব্র‍্যাড হ্যাডিন আরও কত! তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে।

তবে সেই সব অসাধারণ ইনিংসকে দূরে সরিয়ে বেছে ২০১৩ অ্যাশেজে, নটিংহ্যামে প্রথম টেস্টে অভিষিক্ত ১১ নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে অ্যাশটন অ্যাগারের ইনিংসটা আলাদা গুরুত্ববহ।

সিরিজ শুরুর আগে প্রাথমিক স্কোয়াডে বাঁ-হাতি স্পিনার (এখন তো অলরাউন্ডার হিসেবে স্বীকৃতি পান) অ্যাগারের সুযোগ হয়নি। দলে স্পিনার বলতে ছিলেন বর্তমানে কিংবদন্তির পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়া নাথান লিঁও। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া ‘এ’ দলের হয়ে ভালো করায় লিঁও ব্যাকআপ হিসেবে স্কোয়াডে। আর সেখান থেকে প্রথম টেস্টেই একেবারে অভিষেক, স্বপ্নের মতো।

টসে জিতে ইংল্যান্ড অধিনায়ক অ্যালিস্টার কুক ব্যাট করবার সিদ্ধান্ত নিলে পিটার সিডল, স্টার্ক ও প্যাটিনসনের পেসে ২১৫ তোলে। অ্যাগার কোনো উইকেট পাননি, ৭ ওভার হাত ঘুরিয়ে। জবাবে ব্যাট করতে নেমে নিয়মিত ব্যাবধানে উইকেট হারিয়ে ৩৪ ওভারে ৯ উইকেটে ১১৭, এক দাঁড়িয়ে শুধু ফিলিপ হিউজ( এই ইনিংসেও নট আউট ছিলেন শেষ পর্যন্ত ৮১ রানে।) আর অর্ধশতরান করেছেন কেবল স্মিথ। উল্টোদিকে আগুন ছোটাচ্ছেন অ্যান্ডারসন, ব্রড, ফিনরা।

এরপর ক্রিজে এলেন অভিষিক্ত অ্যাগার, যার ব্যাটিংটাও বাঁহাতি। দলকে লড়াইয়ে রাখবার সেরা পন্থাই বেছে নিলেন, ‘আক্রমন’।  শেষ পর্যন্ত ১০১ বলে ১২ টি বাউন্ডারি ও ২ ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে ৯৮ রান টিকে কোনো মাপকাঠিতেই সম্ভব নয়, শুধু অনুভব করতে হয়।  দ্রুত শতরানের চেষ্টায় ব্রডের বলে পুল করতে গিয়ে যখন মিড উইকেট বাউন্ডারিতে গ্রেম সোয়ানের হাতে ধরা পড়ে ফিরে আসছেন তখন পিছনে তৈরি করে দিয়েছেন রেকর্ড, ইতিহাস, তবুও একাদশের একাদশতম ব্যাটসম্যান হিসেবে এখনো অধরা শতরানটা হলোনা।

তবে শেষ উইকেটে সবচেয়ে বেশি রানের পার্টনারশিপ সেদিন হয়েছিল। পরের বছর যদিও কাকতলীয় ভাবে ওই নটিংহ্যামেই খাঁদের দলকে বাঁচিয়ে এই রেকর্ড ভেঙে ছিলেন রুট ও অ্যান্ডারসন জুটি।

পরের ইনিংসে দুটো উইকেট পেয়েছিলেন অ্যাগার। তবে দল খুব কাছে এসে হেরেছিল কিংবদন্তি অ্যান্ডারসনের কাছে, দুই ইনিংসে ৫ টি করে মোট ১০ উইকেট নিয়ে। এরপর অ্যাগারও টেস্ট ক্যারিয়ারকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি( লিঁও বড়ো কারণ এটার )। তবে বর্তমানে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে প্রায় নিয়মিত সুযোগ পান। যাই হোক এই ইনিংসটি ভুলতে পারবো না। এমন আরও ইনিংস আসুক যে কোনো ধরনের ক্রিকেটে এটাই কামনা।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...