আবু জায়েদ রাহি, প্রত্যাবর্তন নাকি সমাপ্তি

ভৌগোলিক কারণেই বাংলাদেশ স্পিন নির্ভর ক্রিকেট শক্তি। মানসম্মত পেসার খুঁজে পাওয়াই এখানে কঠিন, আর বলে কয়ে সুইং আদায় করতে পারেন এমন বোলার তো রীতিমতো সোনার হরিণ। নতুন বল দুইদিকেই সুইং করাতে পারেন, এমন একজন পেসারের অপেক্ষায় বাংলাদেশ ক্রিকেট পার করেছিল লম্বা সময়। অবশেষে সেই অপেক্ষা ফুরিয়েছে, আবু জায়েদ চৌধুরী রাহির মাঝে মিলেছে সুইং করার সামর্থ্য।

ভৌগোলিক কারণেই বাংলাদেশ স্পিন নির্ভর ক্রিকেট শক্তি। মানসম্মত পেসার খুঁজে পাওয়াই এখানে কঠিন, আর বলে কয়ে সুইং আদায় করতে পারেন এমন বোলার তো রীতিমতো সোনার হরিণ। নতুন বল দুইদিকেই সুইং করাতে পারেন, এমন একজন পেসারের অপেক্ষায় বাংলাদেশ ক্রিকেট পার করেছিল লম্বা সময়। অবশেষে সেই অপেক্ষা ফুরিয়েছে, আবু জায়েদ চৌধুরী রাহির মাঝে মিলেছে সুইং করার সামর্থ্য।

রাহি শুধু সুইং করাতেই পারেন এমনটাও নয় বরং নিয়ন্ত্রণও করতে জানেন ভাল ভাবে। বাংলাদেশ সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি মর্তুজা একবার বলেছিলেন, আবু জায়েদ রাহি বাংলাদেশের একমাত্র বোলার, যে বল করার আগেই বলতে পারে এটা ইনসুইং নাকি আউটসুইং।

সিলেটের আবহাওয়া তুলনামূলক পেসার বান্ধব, সেই শহরে জন্মগ্রহণ করেন আবু জায়েদ রাহিও শুরু করেন পেস বোলিং। এরপর ধীরে ধীরে জায়গা করে নেন ঘরোয়া ক্রিকেটে; একবার অবশ্য ক্রিকেট ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন বিদেশে, তবে ব্যাট বলের খেলাটার টানে আবারও ফেরেন দেশের মাটিতে।

প্রত্যাবর্তনটা মনমতো হয়েছিল আবু জায়েদ রাহির। বিপিএল, এনসিএলে পারফর্ম করে চলে এসেছিলেন লাইমলাইটে, ২০১৮ সালে টি-টোয়েন্টি ও টেস্ট ফরম্যাটে আন্তর্জাতিক ক্যাপও পেয়ে যান তিনি।

এই রাহির হাত ধরেই প্রথম টেস্ট ক্রিকেটে শক্ত পেস আক্রমণ গড়ে তোলে বাংলাদেশ। এরপর তরুণ শরীফুল, ইনজুরি থেকে ফেরা তাসকিন আহমেদ আর ইবাদত, খালেদরা যোগ দিয়েছেন পেস-বিপ্লবে। কিন্তু শুরুর পথপ্রদর্শক আবু জায়েদ রাহি হারাতে শুরু করেন পথের দিশা। একাদশের ফার্স্ট চয়েজ বোলার হয়ে যান ব্যাক আপ সদস্য।

একাধিক সিরিজে স্কোয়াডে থাকার পর একসময় দল থেকে বাদই পড়ে যান আবু জায়েদ রাহি। তাঁর পরিবর্তে রেজাউর রাজা, মুশফিক হাসানদের উপর ভরসা করতে শুরু করেছে নির্বাচকরা।

অবশ্য এমন অনাকাঙ্খিত বাদ পড়ার যৌক্তিক কারনও আছে। আবু জায়েদের শক্তির জায়গা সুইং হলেও দুর্বলতা আছে গতিতে। আধুনিক ক্রিকেটে একজন পেসার হিসেবে যেখানে সবার লক্ষ্য থাকে ঘন্টায় ১৪০ কিমিতে বল করার সেখানে রাহির বলের গতি ১৩০ ছুঁই ছুঁই। ধীর গতির এই সুইং ডেলিভারিগুলো ব্যাটসম্যানদের চাপে ফেলার জন্য যথেষ্ট হয় না।

পরিসংখ্যানের হিসেবে অবশ্য এখনো দেশসেরা বোলারদের একজন আবু জায়েদ রাহি। কিন্তু পরিসংখ্যান আর অভিজ্ঞতায় এগিয়ে থাকা সত্ত্বেও এখন জায়েদকে বিবেচনায় আনা হচ্ছে না, কেননা দলের আশেপাশে থাকা পেসারদের গতি রাহির চেৈ ঢ়ের বেশি। অবশ্য শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বেই সুইংয়ের চেয়ে বলের গতিকে প্রাধান্য দেয়া হয় বেশি।

আর তাই জাতীয় দলের জার্সিতে ফিরতে চাইলে ঠিক এখানটায় কাজ করতে হবে তাকে। নিজেকে ভেঙেচুরে আবার গড়তে হবে। সেক্ষেত্রে রাহির সামনে আদর্শ হতে পারেন তাসকিন আহমেদ। একটাসময় গতিময় বোলিং করেও ব্যাটারদের চাপে ফেলতে পারতেন না তাসকিন, অথচ লম্বা সময় পর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ফেরা তাসকিন এখন বিশ্বসেরা পেসারদের মাঝে একজন।

সহজ ভাষায় বললে, নিজের সুইং ঠিক রেখে বোলিংয়ে আরো পাঁচ-সাত কিংবা দশ কিমি গতি বাড়াতে পারলে হয়তো ব্যাটসম্যানদের চাপে ফেলতে সক্ষম হবেন আবু জায়েদ রাহি। আর সেটা করতে না পারলে দলে ফেরাটা তাঁর জন্য প্রায় অসম্ভব।

২০১৮ সালের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে অভিষিক্ত আবু জায়েদ রাহি প্রশংসা কুড়িয়েছেন কিংবদন্তি ফাস্ট বোলার ইয়ান বিশপের। কিন্তু এখন সেসব অতীত; যে সম্ভাবনা নিয়ে রাহির আগমন ঘটেছিল সেটা হারিয়ে যাওয়ার পথে।

নিজেকে আবারো ফিরে পাওয়ার চাবিকাঠি আবু জায়েদ রাহির হাতেই। দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই চালিয়ে গেলে হয়তো তাসকিন, ইবাদতদের মতই নতুন রাহিকে পাবে বাংলাদেশ, সেজন্য অবশ্য থাকতে হবে জেদ।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...