ক্রিকেটের চায়নাম্যান দাপট

ইংলিশ ক্রিকেটার ওয়াল্টার রবিনসকে এই চায়নাম্যান শব্দটির প্রবর্তক গন্য করা হয়। একবার তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলতে গিয়ে সম্মুখীন হন এমনই এক বা-হাতি লেগ স্পিনারের। খেলোয়াড়টির নাম এলিস এডগার আচং, ডাকনাম পুস।

ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার খ্যাতনামা অ্যাশেজ সিরিজ৷ বল হাতে শেন ওয়ার্ন। ছুঁড়ে দিলেন বল ইংলিশ ব্যাটসম্যান মাইক গ্যাটিং এর উদ্দেশ্যে। বল পিচ করলো লেগ স্ট্যাম্পের একটু বাইরে। স্বভাবতই ধরণা এই বল লেগ সাইড থেকে বড়জোড় মিডল স্ট্যাম্প পর্যন্ত আসতে পারবে। গ্যাটিং তা ভেবেই লেগ-মিডল স্ট্যাম্প গার্ড করে বলটি খেলার চেষ্টা করলেন। কিন্তু না বলটি টার্ন করে গিয়ে আঘাত করলো অফ স্ট্যাম্প। আর বিশ্ব দেখলো ‘দ্য গ্রেটেস্ট বল অব দ্য সেঞ্চুরি’।

ধরুন তো এমনই দুর্ধর্ষ লেগ স্পিন করলো কেও কিন্তু তা বা হাতে। কতটাই না দুষ্কর হবে একজন ব্যাটসম্যানের জন্যে এমন একজন লেগ স্পিনারের বল খেলা যিনি কি না বা-হাতি। এ সকল স্পিনারদের একটা নাম রয়েছে ‘চায়নাম্যান’। এর পেছনেও একটা মজার ঘটনা রয়েছে।

ইংলিশ ক্রিকেটার ওয়াল্টার রবিনসকে এই চায়নাম্যান শব্দটির প্রবর্তক গন্য করা হয়। একবার তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলতে গিয়ে সম্মুখীন হন এমনই এক বা-হাতি লেগ স্পিনারের। খেলোয়াড়টির নাম এলিস এডগার আচং, ডাকনাম পুস। এই এলিস আচং অফ স্ট্যাম্পের বাইরে থেকে একটি বল স্পিন করিয়ে ডান হাতি ব্যাটসম্যান রবিনসকে আউট করে দেন।

বলটা স্পিন করে ভেতরের দিকে অগ্রসর হয়। প্যাভিলনে ফিরে যাবার সময় রবিনস আম্পায়ারকে বলে যান ‘ফ্যান্সি বিয়িং ডান বাই আ ব্লাডি চায়নাম্যান’। বোলার এলিস আচং শারীরিক গড়ন ও মুখ অবয়ব দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ানদের মতো হওয়ায় তিনি হয়ত সেই মন্তব্যটি করেন৷ তবে সেখান থেকেই এই বা-হাতি লেগ স্পিনারদের নামকরণ করা হয় চায়নাম্যান।

তারপর থেকে বহু চায়নাম্যান স্পিনারদের আগমন ঘটে ক্রিকেটের ইতিহাসে৷ তাদের মধ্যেই সেরা পাঁচজন সম্পর্কে খানিকটা জেনে নেওয়া যাক।

  • স্যার গ্যারি সোবার্স (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

ক্রিকেট ইতিহাস সেরা অলরাউন্ডার হিসেবে গন্য করা হয় ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান কিংবদন্তি স্যার গ্যারফিল্ড সোবার্সকে। তিনি অসাধারণ ব্যাটসম্যানের পাশাপাশি ছিলেন একজন ধূর্ত চায়নাম্যান বোলার। তার ক্রিকেটীয় ক্যারিয়ারে তিনি ৩৪ গড়ে নিয়েছেন ২৩৫ উইকেট। ৮৪ টেস্ট খেলেন তিনি তাঁর ক্যারিয়ারে। সমান তালে পারফরম করেছেন ব্যাট হাতেও।

  • কুলদ্বীপ যাদব (ভারত)

ক্রিকেটারদের আঁখড়া ভারত। আর তাদের একটা চায়নাম্যান থাকবে না তা কি করে হয়? তাদের এই আক্ষেপ ঘুঁচিয়েছেন কুলদ্বীপ যাদব। সাম্প্রতিক সময় অন্যতম সেরা চায়নাম্যান তিনি। লাইন-লেন্থ ঠিক রেখে বলে ভেরিয়েশন আনতে পারেন এই খেলোয়াড়। ক্রিকেটের ছোট্ট সংস্করণে বেশ কার্যকরী তিনি। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) এর নিয়মিত মুখ কুলদ্বীপ যাদব। ভারতের হয়ে বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতাও রয়েছে তাঁর।

  • ব্র্যাড হগ (অস্ট্রেলিয়া)

ব্যাড হগ, সম্ভবত চায়নাম্যান হিসেবে সবচেয়ে বেশি আলোড়ন সৃষ্টিকারী খেলোয়াড় তিনিই। ২০০৩-০৭ অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলেন অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলের। দাপিয়ে বেড়িয়েছেন বিশ ব্যাশ, আইপিএল সহ নানান ফ্রাঞ্চাইজ ভিত্তিক টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট।

  • পল অ্যাডামস (দক্ষিণ আফ্রিকা)

অদ্ভুত কতরকমই না বোলিং অ্যাকশন দেখে এই ক্রিকেট বিশ্ব। তবে সবথেকে আলাদা, সবথেকে অদ্ভুত বোলিং অ্যাকশনের এক চায়নাম্যান দক্ষিণ আফ্রিকার পল আডামস। ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপে তাঁর আগমন ঘটে। তাঁর রীতিমত ভুতুড়ে বোলিং অ্যাকশনে তাঁকে পরিচিত করিয়ে দেয় পুরো বিশ্বের সাথে৷ একে তো চায়নাম্যান বোলারদের বল খেলতে পারা দায়, তার উপর পল অ্যাডামসের এমন অদ্ভুতুরে ‘ফ্রগ ইন আ ব্লাডার’ বোলিং অ্যাকশন দূর্বিষহ করে তুলেছিল ব্যাটসম্যানদের ক্রিকেটীয় জীবন।

  • লক্ষ্মণ সান্দাকান (শ্রীলঙ্কা)

শ্রীলঙ্কান চায়নাম্যান বোলার লক্ষ্মণ সান্দাকান একজন সম্ভাবময়ী বোলার। তিনি উভয়দিকে বল ঘোরাতে পারেন এবং টপ স্পিন করার অসাধারণ দক্ষতা রয়েছে এই বোলারের। যেকোন খেলার মোর ঘুরিয়ে দিতে পারে তার এই বোলিং দক্ষতা। এখন পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার হয়ে খেলা ১১ টেস্টে ৩৭ উইকেট শিকার করেছেন এই বোলার। তার মধ্যে ২০১৮ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তৃতীয় টেস্টে ৫ উইকেট উল্লেখযোগ্য।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...