ক্রিকেট ফ্যান্টাসি: লারা এবং কয়েকজন

ত্রিনিদাদ ও ক্রিকেটের রাজপুত্র ব্রায়ান লারা, লারাকে নিয়ে কাব্যিক লেখা তো হয়েই থাকে। তা তাঁর মতো 'ক্রিকেট কবি' তা দাবিও করেন। কিন্তু আজ খানিক নিরস বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করি, লারা যদি একটি কাল্পনিক আক্রমণ খেলতেন তাহলে কি হতো

সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান বাছতে বসলে একটি যুক্তি সর্বদা দেয়া হয়, ‘দুটি আলাদা প্রজন্মর তুলনা চলতে পারেনা।’ তা যুক্তিটা অকাট্য। কিন্তু ক্রিকেট রোমান্টিকের মন তা মানে না। সে মনে মনে ভাবে, শচীন টেন্ডুলকার যদি মার্শাল, রবার্টস পেতেন, তাহলে কি একই গড় ধরে রাখতে পারতেন?

বা ভিভ যদি বডিলাইন সিরিজে খেলতেন, তাহলে বোথাম-উইলিস দের মতো ভোস বা লারউডকেও কি চুইং গামের মতো ছিবড়ে করে ফেলতেন? ডন ব্র্যাডমান যদি আজ খেলতেন তাহলে তাঁর গড় কত হতো? তা এরকমই এক ফ্যান্টাসি নিয়ে এলাম আজ।

ত্রিনিদাদ ও ক্রিকেটের রাজপুত্র ব্রায়ান লারা, লারাকে নিয়ে কাব্যিক লেখা তো হয়েই থাকে। তা তাঁর মতো ‘ক্রিকেট কবি’ তা দাবিও করেন। কিন্তু আজ খানিক নিরস বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করি, লারা যদি একটি কাল্পনিক আক্রমণ খেলতেন তাহলে কি হতো? কাল্পনিক আক্রমণটি রান্না করা হয়েছে তেল, মশলা, ঝাল, টক সবের সংমিশ্রণে যথাসম্ভব নিখুঁত ভাবে। কে কে রয়েছেন এই চার বোলারের আক্রমণে? একজন প্রচণ্ড গতির বোলার। আমি বেছে নিই জেফ থমসনকে। কেন থমসন?

কারণ আধুনিক ট্রেনিংয়ের বহু সরঞ্জাম ও পরিকাঠামো থেকে বঞ্চিত হয়েও, দিনের শেষে নিয়মিত ভাবে দু পাত্তর মেরেও তিনি ঠিক ততটাই জোরে বল করতেন, যা অদূর অতীতের শোয়েব আখতার, শেন বন্ড বা বর্তমানের ক্যাগিসো রাবাদা, উমরান মালিকরা করেন। এবং শোয়েব বা বন্ডের তুলনায় অনেক বেশি ক্রিকেট তিনি খেলেছেন এতো জোরে বোলিং করেও। বোলিং গাড়ির দ্বিতীয় চাকা হিসেবে বেছে নিলাম রিচার্ড হেডলিকে। জেফ থমসনের ঝালের আদর্শ পরিপূরক হেডলির ‘স্বাদমতো নুন’। তৃতীয় জন হিসাবে একজন বাঁ-হাতিকে চাইছিলাম যাঁকে ব্রায়ান লারা খেলেননি।

টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে সেরা দুই বাঁ-হাতি, ওয়াসিম আকরাম ও অ্যালান ডেভিডসন। প্রথমজনকে লারা খেলেছেন। দ্বিতীয় জনকে আমি দেখিনি। যাঁদের খেলেননি তাঁদের মধ্যে সম্ভ্রম জাগানো নাম বলতে মোহাম্মদ আমির ও শাহীন আফ্রিদি। আমির নিজের সেরা সময়টা ক্রিকেটই খেলতে পারেননি। আফ্রিদি এখনও নতুন। অগত্যা বাঁ-হাতির আশা ছেড়ে দিয়ে নিয়ে এলাম ডেল স্টেইনকে।

ওয়াসিম আকরামকে স্বয়ং সৌরভ গাঙ্গুলি বলতেন ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। ডেল স্টেইনকেও দেবার জন্যে এর থেকে উপযুক্ত উপাধি মাথায় আসছে না। এবার বাকি রয়েছে স্পিনার। বিশ্বের সর্বকালের দুই সেরা স্পিনারকে লারা গুলে খেয়েছেন ধারাবাহিক ভাবে। কাজেই যাকেই নিয়ে আসি, তিনি শুরু করবেন পিছিয়ে থেকে। তাই বর্তমানের সবচেয়ে চিন্তাশীল বোলার রবি চন্দ্রন অশ্বিনকে রাখলাম আক্রমণে। তিনি উইকেট না পেলেও, অন্যরকম ভাবে দলকে সাহায্য করতে পারবেন।

এ তো গেল বোলিং আক্রমণ। এবার আসি কোন ব্রায়ান লারা? ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৬ এর লারা? নাকি ২০০৩ পরবর্তী অসম্ভব ধারাবাহিক লারা? এই প্রশ্নে আমার ভোট ১৯৯৪ এর লারার দিকেই। যদিও লারা তখনও পুরোপুরি পরিণত নন, কিন্তু তাঁর সেরা সময় ওটাই। ওই সময়টা লারা যেমন পেরেছেন, যাকে পেয়েছেন চরম বিক্রম মিশ্রিত লাবণ্যে রান করে গেছেন। ২০০৩ পরবর্তী লারা অনেক হিসেবি। মানে যতটা হিসেবি হওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব।

অনেক খাজনা হলো। এবার আসি আসল বাজনায়। খেলা হচ্ছে মেলবোর্নে। হালকা স্যাঁতস্যাঁতে পিচ। আকাশ একেবারে অগাস্ট মাসের লন্ডনের মতো না হলেও, ভালোই মেঘলা। লারা নেমেছেন যখন, স্কোর ২০ রানে ২ উইকেট। ১০ ওভারে। স্টেন সবে স্পেল শেষ করেছেন। তাঁর প্রান্তে আসবেন থমসন।

স্যার রিচার্ড হ্যাডলি টিম মিটিংয়ে বলেই দিয়েছেন অন্তত আট ওভারের আগে নতুন বল ছাড়বেন না। লারা হেডলিকে প্রথম দিকে দেখেশুনে খেলবেন। কারণ হেডলি জাতীয় বোলাররা লারাকে সারা জীবন জ্বালিয়েছেন। উদাহরণ ম্যাকগ্রা বা পলক।

থমসনকে বরং শুরুর দিকে কিছুটা আগ্রাসী খেলবেন। দুই একটা এলোমেলো শটও আশ্চর্য নয়। কিন্তু থমসনের পেস লারা উপভোগ করবেন। এরপর আসবেন অশ্বিন। হ্যাডলির প্রান্তে। লারা প্রথম ওভারটা দেখবেন। যদি পিচের তলার স্যাঁতস্যাঁতে ভাব হালকা টার্ন নিয়ে হাজির হয়! যদি বল ঘোরে তাহলে বলের মেরিটে খেলবেন। কিন্তু আশা করা যায়, মেলবোর্নের মতো শক্ত পিচে কব্জির জোর ছাড়া শুধু আঙুলের জোরে প্রথম দিন বল ঘোরানো খানিক মুশকিল।

লারা তাই অশ্বিনকে অল-আউট খেলবেন। সুইপ, স্টেপ-আউট, কাট সবই থাকবে অশ্বিনের জন্য বরাদ্দ। কিন্তু সবচেয়ে মনোগ্রাহী লড়াই হবে যখন ঠিক লাঞ্চের আগে থমসনের প্রান্তে ফিরবেন স্টেন। তিন স্লিপ, এক গালি ও এক শর্ট লেগ নিয়ে আসবেন স্টেন। স্টেনকে খেলতে লারাকে তাঁর খেলা পরিমার্জন করতে হবে। মিডল লেগে পিচ করে কোনাকুনি বলগুলো ছাড়তে হবে দেখেশুনে। মিডল লেগে পিচ করে যে বলগুলো আবার ভিতরে ঢুকবে সেটার জন্যও তৈরি থাকতে হবে লারাকে।

কোনটা ছাড়বো আর কোনটা খেলবো, এই বিবেচনাটা প্রখর হতে হবে। আবার যখন তখন বাউন্সারও আসতে পারে। শর্ট লেগে একজন অপেক্ষারত। আগে থেকে ধরে ফেললে বাউন্সারে পুল মারবেন। কিন্তু সমস্যা হবে সেটা না পারলে। ছাড়বেন না খেলবেন ভাবতে ভাবতেই বল তাঁর গলার কাছে। লারার সম্ভাব্য ঘাতক হিসাবে স্টেন বা হেডলির বাইরে কাউকে ভাবা যাচ্ছে না। ওই কোনাকুনি বলটাই! থমসনকে খেলে দেবেন। পেস লারার প্রিয় খাদ্য। স্পিনও মেলবোর্নের পিচে তেমন ঘাতক হবে না।

  • চূড়ান্ত রায়

হ্যাডলি ও স্টেনের প্রথম স্পেল টা যদি খেলে দিতে পারেন, তবে বড়ো রান আসার প্রবল সম্ভাবনা । বল পুরোনো হলে মেলবোর্নের শক্ত পিচ লারার স্বর্গরাজ্য। আর রিভার্স সুইং ব্যাপারটায় স্টেন ছাড়া এই আক্রমণে কেউই ততটাও পারদর্শী নন।

লারা সবচেয়ে বেশি করুণাধারা বর্ষাবেন সম্ভবত থমসন ও অশ্বিনের প্রতি। তবুও থমসন যেহেতু থমসন, ইনিংসের শুরুতে দুর্বল মুহূর্তে একটা বিষাক্ত বাউন্সারে আচমকা মৃত্যু হলেও হতে পারে। মোদ্দা কথা, চূড়ান্ত রায় এটাই, যদি প্রথম দুই ঘণ্টা লারা টিকে যান, তবে ক্রিকেট দেবতারা স্বর্গ থেকে নেমে এসে পুষ্পবৃষ্টি করার মতো ব্যাটিং দেখার একটা সম্ভাবনা রয়েছে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...