‘তোমার ওপর ফালতুই নষ্ট করলাম ওটা!’

গ্যালারি উত্তাল, টিভির সামনে বসে উত্তাল আমরাও। যে সময়ের কথা বলছি তখন হামেশাই প্রথম দশ রান উঠতে পাঁচ ওভার লেগে যেত, দু'শোর ওপর স্কোর মোটামুটি ম্যাচ উইনিং স্কোর।তৃতীয় বলে বোঝা গেল মার্শাল কেন মার্শাল। অফ স্ট্যাম্পের অল্প বাইরে পড়ে ভেতরের দিকে মিসাইলের গতিতে কাট করে বলটা নড়িয়ে দিল শ্রীকান্তের অফ আর মিডল স্ট্যাম্প।

ক্রিকেট প্রেমীদের মধ্যে ফ্রেডি ট্রুম্যানের নাম শোনেননি এরকম মানুষ প্রায় নেই। অনেকেই ওনাকে ইংল্যান্ডের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ফাস্ট বোলার মনে করেন (হ্যাঁ, এখনও)। তবে ফাস্ট বোলার যখন, মেজাজও যে একটু তিরিক্ষি হবে সেটা আশা করাই যায়। বিশেষ করে ট্রুম্যান বিখ্যাত ছিলেন নিজের ‘ওয়ান লাইনার’-এর জন্য।

ম্যাচটা ছিল ক্যাম্ব্রিজ ইউনিভার্সিটির দলের সঙ্গে। এক ছোকরাকে আউট করে ট্রুম্যান দৃপ্ত পায়ে ফলো থ্রুর পর হেঁটে যাচ্ছেন। ‘বলটা দারুণ ছিল ফ্রেডি!’ ব্যাট বগলে প্যাভিলিয়নের পথে হাঁটার আগে আউট হওয়া ব্যাটসম্যান কমপ্লিমেন্ট জানাল।

‘জানি! তোমার ওপর ফালতুই নষ্ট করলাম ওটা!’ ট্রুম্যানের বিরস বদনে উত্তর। মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা বোধহয় একেই বলে!

এবার ফাস্ট ফরওয়ার্ড করে কয়েক দশক এগিয়ে আসি। ভারত ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যে একদিনের ম্যাচ। ম্যাচের প্রথম বল করার জন্য বল হাতে মন্থর গতিতে বোলিং মার্কের জন্যে হেঁটে যাচ্ছেন ম্যালকম মার্শাল নামের এক ফাস্ট বোলার। ইনি আবার শুধু ওয়েস্ট ইন্ডিজেরই নয়, পৃথিবীর সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ফাস্ট বোলারের অন্যতম।

ব্যাট হাতে স্ট্রাইক নেওয়ার জন্যে তৈরি কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্ত নামের মারকাটারি ব্যাটসম্যান। যারা ওনার খেলার সঙ্গে পরিচিত নন তাঁদের জানিয়ে রাখি উনি মোটামুটি বীরেন্দ্র শেবাগের ছোট সংস্করণ – বল দেখলেই মার লাগাও – মোটামুটি এই ছিল ওনার ক্রিকেট দর্শন। সে বোলারের নাম মার্শালই হোক আর ইমরানই হোক।

প্রথম বল! মার্শালের বিদ্যুৎগতির বাউন্সার ধেয়ে গেল শ্রীকান্তের মাথার দিকে। একটু পিছিয়ে গিয়ে সপাটে হুক করলেন শ্রীকান্ত। স্কয়ার লেগের ওপর দিয়ে বল উড়ে গিয়ে পড়ল গ্যালারিতে। ম্যাচের প্রথম বলেই ছয়! বোলারের নাম মার্শাল!

দ্বিতীয় বল! এবার মাথা নয়, বুকের দিকে ধেয়ে গেল মার্শালের গোলা। তৈরি ছিলেন শ্রীকান্তও – আবার ঝলসে উঠল ওনার ব্যাট। হুকের জায়গায় পুল, ছয়ের জায়গায় চার রান।

কোমরে হাত দিয়ে শ্রীকান্তকে কিছুক্ষণ জরিপ করলেন মার্শাল। শ্রীকান্তের অবশ্য ভ্রুক্ষেপ নেই – উনি সূর্য দেবতাকে চোখ মারতে ব্যস্ত (সুযোগ পেলেই নানারকম মুখভঙ্গি করা ছিল ওনার মুদ্রাদোষ)।

গ্যালারি উত্তাল, টিভির সামনে বসে উত্তাল আমরাও। যে সময়ের কথা বলছি তখন হামেশাই প্রথম দশ রান উঠতে পাঁচ ওভার লেগে যেত, দু’শোর ওপর স্কোর মোটামুটি ম্যাচ উইনিং স্কোর।

তৃতীয় বলে বোঝা গেল মার্শাল কেন মার্শাল। অফ স্ট্যাম্পের অল্প বাইরে পড়ে ভেতরের দিকে মিসাইলের গতিতে কাট করে বলটা নড়িয়ে দিল শ্রীকান্তের অফ আর মিডল স্ট্যাম্প। আকাশের দিকে ব্যাট ছুঁড়ে সেটা লুফে প্যাভিলিয়নের দিকে হাঁটা দিলেন শ্রীকান্ত।

ধারাভাষ্যকার অবশ্য জানালেন যে মার্শালের সেই বলে আউট হয়ে শ্রীকান্তের লজ্জিত হওয়ার কোনো ব্যাপার নেই। কারণ, সেই অফ কাটার সম্ভবত ব্র্যাডম্যানও ঠেকাতে পারতেন না।

শ্রীকান্ত বলেননি কিন্তু যদি প্যাভিলিয়নের দিকে হাঁটা দেওয়ার আগে উনিও বলতেন, ‘ওয়েল বোউলড ম্যাকো!’ তাহলে মার্শালও সম্ভবত উত্তর দিতেন, ‘আয়ে! বাট ইট ওয়াজ ওয়েস্টেড অন দি চিকা!’

 

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...