আর্জেন্টাইন দু:স্বপ্নের নেপথ্যে…
ম্যাচশেষে লিওনেল মেসি বলেন, 'কোন অজুহাত দিব না। আমাদের আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এই দলটি শক্তিশালী এবং পূর্বে তা প্রমাণিত হয়েছেও।
২০২২ বিশ্বকাপের আসরে আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে সৌদি আরবের জয়ের গল্প বিশ্বকাপের ইতিহাসে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বিশ্বকাপ যাত্রার সূচনাটা একদম যাচ্ছেতাই হয়েছে লিওনেল মেসির দলের।
শুরুর এই ধাক্কার পর বিশ্বকাপের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে আর্জেন্টিনাকে মেক্সিকো ও পোল্যান্ডের বিপক্ষে অবশ্যই জিততে হবে। দ্বিতীয়ার্ধে সৌদি আরবের আকস্মিক প্রত্যাবর্তন ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অঘটনের জন্ম দেয়।
অথচ এই আর্জেন্টিনা টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত ধারায় এই আসরে পা রেখেছিল। আর এই ম্যাচের আগ অবধি অকপটে সবাই আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে রেখেছিল। ম্যাচের শুরুটাও ইতিবাচক ছিল আর্জেন্টিনার জন্য। মেসির প্রথম দিকের গোল সত্ত্বেও, দ্বিতীয়ার্ধে সালেহ আল–শেহরি এবং সালেম আল–দাওসারির গোল দুইটি খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
আর ওদিকে সৌদির গোলবার আগলে দুর্গের ন্যায় দাঁড়িয়েছিলেন মোহাম্মদ আল-ওয়াইস। এই গোলরক্ষককে ভেদ করে গোলের জন্য মরিয়া আর্জেন্টিনার সব চেষ্টাই বিফলে গেল। সাত-সাতবার সেভ করেন মোহাম্মদ আল-ওয়াইস।
আর্জেন্টিনার ভক্ত-সমর্থকরা এই ম্যাচের পর বেশ হতাশ হয়েছেন নি:সন্দেহে। শুধু কি আর্জেন্টিনার ভক্তরাই, দলটির খেলোয়াড়দের কথাই ভাবুন তো। অন্তত শক্তিমত্তায় নিজেদের সমমান কিংবা ভাল দল নয়, রীতিমতো পিছিয়ে পড়া একটি দলের মত হারের লজ্জা হজম করতে হয়েছে। তাও বিশ্বকাপের মত একটি মঞ্চেই।
আর্জেন্টিনার এমন হারের জন্য দলটির বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়কে দুষছেন ফুটবল বোদ্ধারা। আর্জেন্টিনার রক্ষণ ভাগ ঠিকমত দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো, নিকোলাস ওটামেন্ডি এবং রোমেরোর ভুল আর সৌদি আরবের দারুণ ফিনিশিংয়ে গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ জোড়া গোল হজম করে। রড্রিগো ডি পল, যাকে ভাবা হচ্ছিল মিডফিল্ডে দারুণ ভূমিকা রাখবেন তিনিও পারেননি। অথচ তাঁর অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের সংস্করণকেই জাতীয় দলে সবাই আশা করছিলেন।
এমনকি আর্জেন্টিনার ম্যানেজার লিওনেল স্ক্যালোনির কৌশলও কাজে আসেনি। খেলার ট্যাক্টিক পরিবর্তনের জন্য মাঝে তিনটি পরিবর্তন এনেছিলেন তিনি। লিয়ান্দ্রো পারেদেস, পাপু গোমেজ এবং ক্রিশ্চিয়ান রোমেরোকে উঠিয়ে দিয়ে লিসান্দ্রো মার্টিনেজ, এনজো ফার্নান্দেজ, জুলিয়ান আলভারেজকে মাঠে নামানো হয়েছিল। এদিকে ম্যাচজুড়ে রড্রিগো ডি পল তাঁর নামের প্রতি সুবিচারে ব্যর্থ হওয়া স্বত্বেও শেষ পর্যন্ত স্কালোনির তাঁকে মাঠে রাখার সিদ্ধান্তটিও সমালোচিত হচ্ছে।
এই ম্যাচের আর্জেন্টাইন ফুটবলারদের সব চেষ্টাই যেন অপর্যাপ্ত ছিল। কিছুতেই ফলাফল আসছিল না। মেসি যেন একাকী চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন, তাও সেই চেষ্টাও মেসিসুলভ ছিল না। ওদিকে লাউতারো মার্টিনেজ যেন অফসাইডেই কেবল গোল করতে সক্ষম হচ্ছিলেন। সৌদি আরবের হাইলাইন ডিফেন্স আল আলবিসেলেস্তেরাদের দু:স্বপ্নের কারণ হয়ে উঠেছিল। যার জন্য লাউতারো মার্টিনেজ, ডি মারিয়া ও মেসি গোলের চেষ্টা করলেও সফল হতে পারেনি।
ম্যাচ ৯০ এর জায়গায় ১০৯ মিনিটে গড়ালেও, পুরো সময়েই আর্জেন্টিনার কোন কৌশল, বা আর কোন ফুটবলার সফলকাম হতে পারেনি। ম্যাচশেষে লিওনেল মেসি বলেন, ‘কোন অজুহাত দিব না। আমাদের আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এই দলটি শক্তিশালী, এবং পূর্বে তা প্রমাণিত হয়েছেও। এটি এমন একটি পরিস্থিতি, বিগত অতীতে আমরা মুখোমুখি হইনি। এবার আমাদের দেখিয়ে দিতে হবে যে এটি আসলেই একটি দারুণ দল।’
মেসি আর্জেন্টাইন ভক্ত সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমি ভক্ত-সমর্থকদের আমাদের উপর আস্থা রাখার আহ্বান জানাই। এই দলটি তাঁদের হতাশ করবে না।’
মেসি তাঁর প্রতিশ্রুতির প্রমাণটা মাঠেই দিক। ফুটবলের জাদুতে সারাবিশ্ব ফের মাতোয়ারা হয়ে উঠুক। টুর্নামেন্টের ফেবারিট ভাবা আর্জেন্টিনা স্বরূপে ফিরে বাকী ম্যাচগুলোতে জৌলুস দেখাতে পারবে, সেটাই একমাত্র প্রার্থনা বিশ্বব্যাপী আর্জেন্টাইন ভক্ত- সমর্থকদের। এবারে বিশ্বকাপটা যে এই দলটির জন্য, মেসির জন্য, আর্জেন্টাইন ভক্ত সমর্থকদের জন্য বড্ড গুরুত্বপূর্ণ।