Social Media

Light
Dark

ঝড়ের বেগে ২০০’র পথে

বলা হয়, টেস্ট ক্রিকেটটা নাকি ধৈর্যের খেলা। একজন ক্রিকেটারের জন্য আসল পরীক্ষা টেস্ট ক্রিকেট। এখানে কে কম বলে বেশি রান করছে তা দেখা হয় না। দেখা হয়, কে সবচেয়ে বেশি বল খেলছে। কে কত লম্বা সময় ধরে ব্যাটিং করতে পারে।

তবে এমন কিছু ব্যাটসম্যানও আছেন, যাদের কাছে টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা হালের টি-টোয়েন্টি সবকিছুই যেন একই। টেস্ট ক্রিকেটটাকেই অনেকে টি-টোয়েন্টি বানিয়ে দ্রুততম ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন অনেকে। এই তালিকায় আছে অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, বীরেন্দ্র শেবাগ, নাথান অ্যাস্টল, ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ও হার্শেল গিবসের মতো বড় বড় নাম।

কম বল মোকাবেলা করে বা কম সময়ে যারা দ্রুততম  ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন তাদের নিয়ে আলোচনা করা যাক-

বলের হিসাব

  • নাথান অ্যাস্টল ( নিউজিল্যান্ড)

এই কিউই ক্রিকেটার ৮১ টা টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন। রান করেছেন হাজার চারেকের উপরে।  টুকটাক বোলিংও করতেন। তাঁর একটা রেকর্ড এখনও অক্ষুণ্ণ রয়ে গেছে। ঠিক ১৯ বছর আগে একটা রেকর্ড করেছিলেন। টেস্ট ক্রিকেটে দ্রুততম ডাবল সেঞ্চুরি করার রেকর্ড। সবচেয়ে কম বল খেলেই। মাত্র ১৫৩ বল খেলেছিলেন। সময় নিয়েছিলেন মাত্র ২১৭ মিনিট। ২০০২ সালে ক্রাইস্টচার্চে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করেছিলেন ২২২ রান। যা তাঁর ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। টেস্টে চতুর্থ ইনিংসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের মালিকও এই কিউই ব্যাটসম্যান।

  • বেন স্টোকস (ইংল্যান্ড)

টেস্ট ক্রিকেটের শীর্ষ অলরাউন্ডার। শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবেই স্টোকস যেকোনো দলে জায়গা পেতে পারেন। বোলার হিসেবেও কি নয়?

টেস্ট ক্রিকেটে দ্বিতীয় দ্রুততম ডাবল সেঞ্চুরিয়ান তিনি। ইংল্যান্ডের ইতিহাসে তো প্রথম। ২০১৬ সালে কেপটাউনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে এমন কীর্তি গড়েন তিনি। খেলেছিলেন মাত্র ১৬৩ বল।

  • বীরেন্দ্র শেবাগ (ভারত)

ক্রিকেট বিশ্বের সম্ভবত সবচেয়ে  ভয়ংকর ওপেনার ছিলেন। তাঁর কাছে টেস্টও যেন টি-টোয়েন্টি। ইতিহাসের একমাত্র ক্রিকেটার যিনি টেস্টে পাঁচটা দ্রুততম ডাবল সেঞ্চুরির মালিক। এরমধ্যে তিনটাই বিদেশের মাটিতে। তাঁর সবচেয়ে দ্রুত ডাবল সেঞ্চুরিটা মাত্র ১৬৮ বলে!

টেস্টে দ্রুততম ট্রিপল সেঞ্চুরির মালিকও তিনি। মাত্র ২৭৮ বলে করেছিলেন। দ্রুততম ‘২৫০’ রানের রেকর্ডও তাঁর। শচীন টেন্ডুলকারের পর দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডেতেও ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন। টেস্টে ট্রিপল ও ওয়ানডে ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন মাত্র দু’জন ক্রিকেটার। এরমধ্যে বীরেন্দ্র শেবাগও একজন। আরেকজন ক্রিস গেইল।

  • ব্রেন্ডন ম্যাককালাম (নিউজিল্যান্ড)  

ক্রিকেটে যার নিখাদ ভদ্রলোক ভাবমূর্তি।  ব্যাট হাতে নামলে যেন ঠিক তাঁর বিপরীত। রীতিমত বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন। বোলারদের উপর চড়াও হন।

২০১৪ সালে শারজায় তা হাড়েহাড়ে  টের পেয়েছিল পাকিস্তানি বোলাররা। তাঁদের পিটিয়ে ডাবল-সেঞ্চুরি করেছিলেন ম্যাককালাম। মাত্র ১৮৬ বলে।

  • হার্শেল গিবস (দক্ষিণ আফ্রিকা)

বোলারদের জন্য রীতিমত আতঙ্কের নাম ছিলেন। আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে ছয় বলে যে  ছয় ছক্কা মারা যায় তা প্রথম দেখিয়েছিলেন এই হার্ডহিটার ব্যাটসম্যান। পরে তাঁর রেকর্ডে যুবরাজ সিংও ভাগ বসিয়েছেন। টেস্টে ২০০৩ সালে পাকিস্তানী বোলারদের উপর একবার তাণ্ডব চালিয়েছিলেন গিবস।  কেপটাউনে পাক বোলারদের ঘুম হারাম করে তুলে নিয়েছিলেন দ্বি-শতক। মাত্র ২১১ বলে।

  • অ্যাডাম গিলক্রিস্ট (অস্ট্রেলিয়া) 

বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। কিংবদন্তি ওয়াসিম আকরাম একবার বলেছিলেন, ‘গিলক্রিস্টকে বোলিং করে কোনোদিন স্বস্তিতে থাকতে পারবেন না। ওভারের সেরা বলটাও সীমানা ছাড়া করতে পারে সে।’

বোলারদের ত্রাস ছিলেন এই অজি উইকেটরক্ষক।টেস্টে অষ্টম দ্রুততম ডাবল-সেঞ্চুরি তাঁর। ২১২ বল খেলেছিলেন। ২০০২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানসবার্গে এমন কীর্তি গড়েছিলেন তিনি।

  • ইয়ান বোথাম (ইংল্যান্ড) 

সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডারদের একজন।  টেস্টে ক্রিকেটে অনেক স্মরণীয় কীর্তি আছে তাঁর।আশির দশকে ভারতে বিপক্ষে দ্য ওভালে এমনই এক কীর্তি করেছিলেন। টেস্টে নবম দ্রুততম ডাবল-সেঞ্চুরি করেছিলেন।

  • ক্রিস গেইল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

ক্রিস গেইল নামটাই যথেষ্ট। তাঁর সম্পর্কে নতুন করে বলার কী দরকার! ব্যাট হাতে যিনি বোলারদের খুন করতে পারেন। টেস্টে ট্রিপল,  ওয়ানডেতে ডাবল-সেঞ্চুরি করতে পেরেছেন মাত্র দুইজন ক্রিকেটার। তাদের একজন তিনি। ২০১০ সালে গলে শ্রীলংকার বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন মাত্র ২২১ বলে!

সময়ের হিসাব

টেস্টে দ্বি-শতক করতে কম সময় নিয়েছেন কিংবদন্তি স্যার ডন ব্রাডম্যান, নাথান জন অ্যাস্টল,  স্টেনলি ম্যাকেবি, ভিক্টর ট্রাম্পার প্রমুখরা।

  • স্যার ডন ব্রাডম্যান (অস্ট্রেলিয়া)

সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে মানা হয় তাঁকে। যার ব্যাটিং গড় ৯৯.৯৪! যেকোনো খেলায় এমন ঈর্ষনীয় সাফল্য সম্ভবত আর কারও নেই। ১৯৩০ সালে এই অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটিং মাস্টারক্লাস  ডাবল-সেঞ্চুরি করেছিলেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। যা সময়ের হিসেবে সবচেয়ে দ্রুততম।মাত্র ২১৪ মিনিটে দ্বি-শতকে পৌঁছান তিনি। শুধু তাই নয়, একই সময়ে, একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে আরও একটা ডাবল করেছিলেন মাত্র ২৩৪ মিনিটে।

  • স্টেনলি ম্যাকেবি (অস্ট্রেলিয়া) 

এই অজি ব্যাটসম্যান ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৯৩৮ সালে নটিংহ্যামে এক অনবদ্য ইনিংস খেলেছিলেন। ২৩২ রানের ইনিংস খেলেছিলেন মাত্র ২২৩ মিনিটে।  এরমধ্যে শেষ ৭২ রান করেন ২৮ মিনিটে। স্যার ডন ব্রাডম্যান এটা তাঁর জীবনে দেখা সেরা ইনিংসে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন।

  • ভিক্টর ট্রাম্পার (অস্ট্রেলিয়া) 

 

ভিক্টর ১৯১১ সালে অ্যাডিলেডে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২১৪ রান করেছিলেন।  যা সময়ের হিসেবে চতুর্থ দ্রুততম টেস্ট ডাবল-সেঞ্চুরি।

  • ওয়ালি হ্যাম্যন্ড  (ইংল্যান্ড) 

এই ইংলিশ কিংবদন্তি ক্রিকেটারের ২২ টা আন্তর্জাতিক শতক আছে। তাঁর প্রথম শ্রেণীর ক্যারিয়ার আরও সমৃদ্ধ।  ৫০ হাজারের মতো রান এবং ১৫০ এর উপরে সেঞ্চুরি আছে। ১৯৩৩ সালে অকল্যান্ডে কিউইদের বিপক্ষে  ডাবল করেছিলেন মাত্র ২৪০ মিনিট ক্রিজে থেকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link