দুর্বিষহ দিন অপেক্ষা করছে ঋষাভ পান্তের জন্যে। টেস্ট ক্রিকেটে নিজের আলাদা একটা জায়গা তৈরি করে ফেলেছেন তিনি। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে ঋষাভের সাদা বলের ক্যারিয়ার হুমকির মুখে। নিজের জন্যে একটা কুয়ো খুরছেন প্রতিনিয়ত। সময় ফুরিয়ে যায়নি। কিন্তু পরিবর্তন নিয়ে আসা ভীষণ জরুরি।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের দলে নেই ঋষাভ পান্ত। খালি চোখে দেখে মনে হতে পারে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে তাকে। দশটি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন তিনি। স্বাভাবিকভাবেই বিশ্রামের কথাই মাথায় আসবে। কিন্তু রঞ্জি ট্রফিতে দিল্লির হয়ে খেলতে বলা হয়েছে তাকে। এই বিষয়টি ভিন্ন এক বার্তা দিচ্ছে বটে।
মূলত বড় শট খেলার সময় নিয়ন্ত্রণের অভাব ঋষাভের জন্যে কাল হয়ে দাড়াচ্ছে। টেস্ট ক্রিকেটে অবশ্য সেই সমস্যা চোখে পড়ে না। এমনকি রবীচন্দ্রন অশ্বিনের মতে রক্ষাণাত্মক শট খেলার দিক থেকে ঋষাভ অন্যতম সেরা। সমসাময়িক খেলোয়াড়দের মধ্যে লেগ বিফোর আর বোল্ড আউট তুলনামূলক কম হয়েছেন ঋষাভ।
সব ফরম্যাট মিলিয়ে লেগ বিফোর ও বোল্ড মিলিয়ে মোটে ১১ বার আউট হয়েছেন ঋষাভ পান্ত। শুধু টেস্টে ফ্রন্ট ফুট ডিফেন্স করতে গিয়ে স্রেফ ১৫ দফা সাজঘরে ফিরেছেন ঋষাভ পান্ত। অতএব রক্ষণাত্মক শট বেশ নিয়ন্ত্রণের সাথে খেলতে পারেন।
লাল বলের ক্রিকেটে আগ্রাসী শট খেলার সময় খুব একটা অসুবিধাতে পড়তে হয় না ঋষাভকে। ৭২টি ইনিংস খেলেছেন তিনি টেস্টে। এর মধ্যে আক্রমণাত্মক শট খেলে ২৩০৬ রান নিয়েছেন তিনি। যার মধ্যে ৭৯.০৫ শতাংশ সময়ে নিয়ন্ত্রণের সাথে শট খেলেছেন বা-হাতি এই ব্যাটার। আউট হয়েছেন ৩৭ দফা।
বাকি দুই ফরম্যাটে নিয়ন্ত্রিত আগ্রাসী শটের শতাংশ কম। এটাই বরং দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। সাদা বলটা খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে খেলতে পারছেন না ঋষাভ। পরিসংখ্যান অন্তত তেমনটিই ইঙ্গিত করছে। এমনকি সাদা বলে তার ভাগ্যও খুব একটা সহয়তা করছে না।
একটু খোলাসা করা প্রয়োজন নিশ্চয়ই। টেস্টের ত্রিশ গজের বাইরে বহুবার ক্যাচ মিস হয়েছে ঋষাভের। কিন্তু ওয়ানডেতে এমনটা কখনোই ঘটেনি। টি-টোয়েন্টিতে পাঁচবার বেঁচে গেছেন তিনি ত্রিশ গজের বাইরে ক্যাচ আউট হওয়া থেকে। ভাগ্য তার সুপ্রসন্ন হচ্ছে না সত্য। কিন্তু তার অদক্ষতাও একটা বড় কারণ।
স্লগ করতে ভীষণ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন ঋষাভ। লং অন কিংবা মিড উইকেট অঞ্চল দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকানোর প্রবণতা তার রয়েছে। পুল শট ও সুইপ শট খেলতেও পছন্দ করেন তিনি। ওয়ানডে ক্রিকেটে ডিম মিড উইকেট থেকে লং অন, এই অঞ্চলের মধ্যে নয় বার ক্যাচ আউট হয়েছেন ঋষাভ। ওয়ানডেতে তার ক্যাচ আউট হওয়ার ঘটনা ঘটেছে ১৮বার।
টি-টোয়েন্টিতে ফাইন লেগ থেকে লং অন পর্যন্ত সীমারেখার মধ্যে তিনি আটক হয়েছেন ১৬ বার। টি-টোয়েন্টিতে ৪০ বার ক্যাচ আউট হয়েছেন ঋষাভ পান্ত। এই যে পছন্দের শট খেলেও আউট হচ্ছেন তিনি। তার মূল কারণ শটে নিয়ন্ত্রণ না থাকা।
ওয়ানডেতে পুল শট খেলে ১১৮ রান নিয়েছেন। ৫৯.৩ শতাংশ রান এসেছে বাউন্ডারি থেকে। আউট হয়েছেন ৪ বার। প্রতি ২০ বলে একবার আউট হয়েছেন তিনি। টি-টোয়েন্টিতে সংখ্যাটা আরও শোচনীয়। ১৬৫ রান নিতে গিয়ে আট বার আউট হয়েছেন পুল শটে। ৫৭ শতাংশ রান বাউন্ডারিতে নিয়েছেন, কিন্তু নিয়ন্ত্রিত শট খেলেছেন ৬৮.৯ শতাংশ।
টেস্টে এই সংখ্যাটা তুলনামূলক ভাল। ৩১৭ রানের বিপরীতে আউট হয়েছেন চার বার। ৭৭.২ শতাংশ সময়ে ব্যাটের সাথে সংযোগ হয়েছে ঠিকঠাক। ওয়ানডে স্লগের ক্ষেত্রে ২৬.৩ শতাংশ সময়ে নিয়ন্ত্রিত শট খেলেছেন। টেস্টে সংখ্যাটা ৩০.২ শতাংশ।
এই পরিসংখ্যানগুলো জানান দিচ্ছে ঋষাভের দূর্বলতার জায়গা। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির একাদশে তিনি নিয়মিত সুযোগ পাবেন কি-না এমন একটা সন্দেহ প্রকাশ করা যায় চাইলেই। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির স্কোয়াডের জন্যে ঋষাভ ছাড়া বিবেচনায় ছিলেন সাঞ্জু স্যামসন ও ঈশান কিষাণ। সাঞ্জু ২০২৩ সালের পর থেকে ওয়ানডে ক্রিকেট খেলেননি।
ঘরোয়া ক্রিকেটে ঈশানের কাটছে বেজায় বাজে দিন। তাইতো দ্বিতীয় উইকেটরক্ষক ব্যাটার হিসেবে ঋষাভকে অন্তর্ভুক্ত করেছে ভারত। দলে লোকেশ রাহুল থাকাকালীন একাদশে ঋষাভের সুযোগ পাওয়ার সম্ভবনা ক্ষীন। আর এই ধারা অব্যাহত থাকলে, রঙিন পোশাক ক্রমশ দূরে সরে যাবে ঋষাভে কাছ থেকে। তেমনটি নিশ্চয়ই চান না খোদ ঋষাভ পান্ত।