দেশের ক্রিকেটে রিশাদ-বিপ্লব

চলতি বছরে ২৪টা টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ১৯ গড়ে নিয়েছেন ৩৫টি উইকেট, ইকোনমি রেটটা মোটে আট। বনে গেছেন টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে এক বছরে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারিও।

একজন খাঁটি লেগ স্পিনার, দেশের ক্রিকেটের ইতিহাসে এক অনন্তকালের হাহাকার। টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার ২৪ বছর পরেও যা ছিল এক অমীমাংসিত প্রশ্ন। আধুনিক ক্রিকেটে আধুনিক একজন লেগ স্পিনারের গুরুত্ব যে অপরিহার্য। অবশেষে হয়ত সেই শূন্যতা এবার পূর্ণতা পেল।

আবির্ভাব হল নব্য এক লেগ স্পিন প্রতিভা- রিশাদ হোসেন। চলতি বছরে ২৪ টা টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ১৯ গড়ে নিয়েছেন ৩৫ টি উইকেট, ইকোনমি রেটটা মোটে আট। বনে গেছেন টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে এক বছরে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারিও।

২০২৩ সালে মাত্র ২১ বছর বয়সেই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে পা রাখেন রিশাদ। তবে প্রথম বছরে খেলেছিলেন মাত্র ৬টি ম্যাচ । সে বছর আর সেভাবে নজর কাড়তে পারেননি তিনি। কিন্তু ২০২৪ সালে যেন নিজের প্রতিভার সবটুকু নিঙরে দিলেন রিশাদ। একের পর এক ম্যাচে ঝলসে উঠতে থাকল তার প্রতিভা। ঘূর্ণি জাদুতে মুগ্ধ করতে থাকলেন এতকাল আক্ষেপে ভরা দেশের ভক্ত-সমর্থকদের চাহনি।

বছরের শুরুতেই শ্রীলঙ্কা, জিম্বাবুয়ের পরে আমেরিকা সিরিজে ধারাবাহিক ভালো পারফর্ম করে নজরে আসেন রিশাদ।  তবে, সবচাইতে বড় অর্জনটা এল ২০২৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে, যেখানে তিনি সত্যিই নিজের জাত চেনালেন। জানান দিলেন হারিয়ে যেতে আসেননি তিনি। বড় মঞ্চেও স্পিন বিষে প্রতিপক্ষকে  ঘায়েল করতে প্রস্তুত তিনি।

বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচেই রিশাদ যেন এক নতুন যুগের সূচনা করলেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪ ওভারে মাত্র ২২ রান দিয়ে নিয়েছিলেন তিনটি উইকেট। পরবর্তী ম্যাচগুলোতেও তার পারফরম্যান্স প্রত্যাশার কুড়েঘর তৈরিতে সহয়তা করেছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১/৩১, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৩/৩৩, নেপালের বিপক্ষে ০/১৫, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২/২৩, আর আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৩/২৬।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটির মোড় প্রায় একাই ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। চার ওভারে ২৬ রান তুলে নিয়েছিলেন আফগানিস্তানের সেরা তিন ব্যাটারের উইকেট। খুলে দিয়েছিলেন সেমিফাইনালের দ্বারও। ব্যাটাররা সেদিন সমীকরণটা মিলিয়ে ফেলতে পারলেই প্রথমবারের মত সেমিতে ওঠার স্বাদ পেত বাংলাদেশ।

বিশ্বকাপে সাতটি ম্যাচে মাত্র ৭.৭৬ ইকোনমিতে নিয়েছিলেন ১৪টি উইকেট। তার স্পিনের কৌশল যেন প্রতিপক্ষের নাভিশ্বাস তুলে দিয়েছিল। সেখানেই শেষ নয়, সম্প্রতিই ওয়েস্ট ইন্ডিজেও ঘূর্ণি জাদু ছড়িয়ে এসেছেন তিনি।

উইন্ডিজদের ঘরের মাঠে টি-টোয়েন্টির পরাশক্তিদের হোয়াইটওয়াশে তার ভূমিকাও কম নয়। বছরের শেষ টি-টোয়েন্টিতেও ২১ রানে ৩ উইকেট নিয়ে উইন্ডিজদের কফিনে শেষ পেরেকটা তিনিই মেরে দেন। রিশাদ বুঝিয়ে দিলেন, বাংলাদেশে এক নতুন লেগ স্পিনিং অধ্যায় শুরু হতে যাচ্ছে।

প্রবাদে আছে, সবুরে নাকি মেওয়া ফলে। অবশেষে হয়ত দেশের ক্রিকেটে সেই বহু কাঙ্ক্ষিত মেওয়া ফলেছে। লেগ স্পিন বিপ্লবে এবার দেশের ক্রিকেটে যেন নতুন সূর্য উদিত হয় সেই কামনায় এখন ক্রিকেট পাগল জাতি।

Share via
Copy link