জয়তু জয়সুরিয়া

তিন ম্যাচে তাঁর সংগ্রহ যথাক্রমে ১৩৪,৭ ও ৭৬ রান। আসরের তিন ম্যাচে ৭২.৩৩ গড়ে করেছিলেন মোট ২১৭ রান। এটুকু দেখে আপনি হয়তো ঠিক এর ভিতরের ঘটনাটা ধরতে পারছেন না। মজার বিষয় হচ্ছে এই রান তিনি করেছিলেন ২১২.৭৪ স্ট্রাইকরেটে মাত্র ১০২ বলে। এই কাণ্ড তিনি করেছিলেন সেই ১৯৯৬ সালে। যদিও আজকের দিনে দাড়িয়েও সংখ্যাগুলো রীতিমত অবিশ্বাস্য।

সনাথ জয়াসুরিয়া প্রথমে ছিলেন মূলত বাঁ-হাতি স্পিনার। লোয়ার মিডল অর্ডারে ব্যাটিং করতেন। তবে, কালক্রমে তাঁর এই পরিচয়ে আসে পরিবর্তন। তিনি হয়ে ওঠেন পুরোদস্তর ওপেনার।

তাঁর ওপেনার হয়ে ওঠাটা আসলে ওয়ানডে ক্রিকেটের বদলে যাওয়া পরিস্থিতির সাথে জড়িত। ফিল্ডি রেস্ট্রিকশনের সুযোগটা কাজে লাগানোর জন্য ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে পিঞ্চ হিটার হিসেবে ‍শুরুর দিকে মার্ক গ্রেটব্যাচকে খেলানো শুরু করে নিউজিল্যান্ড। সেই সাফল্য কালক্রমে অনেকেই অনুসরণ করে।

ওয়ানডে ক্রিকেটে দলগুলো নিয়ে আসেন একজন আক্রমণাত্মক ওপেনিং ব্যাটসম্যান। শ্রীলঙ্কা দলে সেই দায়িত্ব আসে সনাথ জয়াসুরিয়ার উপর। শ্রীলঙ্কান এই ব্যাটসম্যান পরবর্তীকালে ওয়ানডে ক্রিকেটে ওপেনিং এর সংজ্ঞাই পাল্টে দেন। তাঁর বিধ্বংসী ব্যাটিং তখনকার বোলারদের জন্য ছিল দু:স্বপ্নের মত।

১৯৯৩ সালে শ্রীলঙ্কার হয়ে ওপেন করা শুরু করেন এই ব্যাটসম্যান। কালক্রমে হয়ে উঠেন ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ওপেনার, এক পথদ্রষ্টা। ১৯৯৬ বিশ্বকাপেও সেই ধারা অব্যাহত থাকে। শ্রীলঙ্কাও সাফল্য পায়। প্রথমবারের মত শিরোপার স্বাদ পায় দেশটি।

তবে ওপেনিং এ জয়াসুরিয়ার সবচেয়ে বিধ্বংসী রূপ দেখে সিঙ্গাপুর। দেশটিতে ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত হয় সিঙ্গার কাপ। সেখানে অংশ নেয় ভারত,পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। ত্রিদেশীয় ওই টুর্নামেন্টে ক্রিকেট বিশ্ব যেনো এক অন্য রূপ দেখেছিল জয়াসুরিয়ার। ওই আসরে মোট তিনটি ম্যাচ খেলেছিলেন এই ওপেনার।

তিন ম্যাচে তাঁর সংগ্রহ যথাক্রমে ১৩৪,৭ ও ৭৬ রান। আসরের তিন ম্যাচে ৭২.৩৩ গড়ে করেছিলেন মোট ২১৭ রান। এটুকু দেখে আপনি হয়তো ঠিক এর ভিতরের ঘটনাটা ধরতে পারছেন না। মজার বিষয় হচ্ছে এই রান তিনি করেছিলেন ২১২.৭৪ স্ট্রাইকরেটে মাত্র ১০২ বলে। এই কাণ্ড তিনি করেছিলেন সেই ১৯৯৬ সালে। যদিও আজকের দিনে দাড়িয়েও সংখ্যাগুলো রীতিমত অবিশ্বাস্য। তাও বড় দুটি ইনিংসই এসেছে তখনকার পাকিস্তানি বোলিং অ্যাটাকের বিপক্ষে।

প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৬৫ বলে খেলেন ১৩৪ রানের ইনিংস। তাঁর এই ইনিংসে ভর করে ৩৪৯ রানের পাহাড়সম সংগ্রহ পায় শ্রীলঙ্কা। সেই ম্যাচে জয় পায় জয়সুরিয়ার এই কীর্তিতে জয় পায় শ্রীলঙ্কা। পরের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে জয়াসুরিয়া ৭ রান করে ফিরে গেলে মাত্র ১৮৭ রানের অল আউট হয়ে যায় দেশটি। তবে নেট রান রেটে এগিয়ে থেকে পাকিস্তানের সাথে ফাইনালে উঠে শ্রীলঙ্কা।

১৯৯৬ সালের ৭ এপ্রিল,  দুই যুগেরও বেশি সময় আগে অনুষ্ঠিত সেই ফাইনাল ম্যাচে আগে ব্যাট করে পাকিস্তান করে মাত্র ২১৫ রান। ২১৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শ্রীলঙ্কাকে উড়ন্ত শুরু এনে দেয় জয়াসুরিয়া। সেই ম্যাচে ব্যাট করেন ২৭১.৪২ স্ট্রাইকরেটে। ২৮ বলে ৭৬ রানের সেই ইনিংসে ছিল ৮ টি চার ও ৫ টি ছক্কা।

কিন্তু গল্প এখনো কিছুটা বাকি। ২১৬ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নামা একটি দলের ওপেনার ২৮ বলে ৭৬ রানের একটি ইনিংস খেলার পর তো খুব সহজ জয়ই পাওয়ার কথা। তবে সেই ম্যাচে মাত্র ১৭২ রানেই গুটিয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। জয়াসুরিয়ার সেই অসাধারণ ইনিংসের পরেও ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে হেরে যায় দেশটি।

তবে জয়াসুরিয়া ওই সময়টাতে ওয়ানডে ক্রিকেটে তৈরি করে গিয়েছেন নিজের একটি স্টাইল। যা পরবর্তীকালে দলগুলোকে তাঁদের ওপেনারদের নিয়ে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে। ওই ইনিংসগুলোই তো আজকের আধুনিক ক্রিকেটের ভিত্তি। জয়াসুরিয়ার সেই ইনিংস গুলোই তো আজকের ব্যাটসম্যানদের প্রথম বলেই ডাউন দ্য উইকেটে এসে খেলার সাহস জোগায়। ক্রিকেটের বিবর্তনে জয়াসুরিয়াদের এই অবদান আমরা অস্বীকার করি কী করে, জয়তু জয়াসুরিয়া।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...