নিয়তি কমলায় রাঙা

যে শহরে এক সময়ে তাঁর অবাধ বিচরণ ছিল সেই শহরেই এবার খেলতে এসেছেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। জন্মসূত্রে অস্ট্রেলিয়ান, কিন্তু ক্রিকেট এডওয়ার্ডসকে নিয়ে গিয়েছে সুদূর নেদারল্যান্ডসে। বাবা ডন, মা ক্যাথি, বড় ভাই ক্রিস, এমনকি দাদা গ্রাহাম -সবাই অস্ট্রেলিয়ান, তাঁরা অস্ট্রেলিয়াতেই থাকেন। কিন্তু এডওয়ার্ডসের দাদী ভ্যান ডার ওক আবার নেদারল্যান্ডসের। তাহলে এডওয়ার্ডসের দাদা-দাদীর এই মেলবন্ধন কিভাবে হল? 

শৈশবে বেড়ে উঠেছিলেন মেলবোর্ন থেকে ২৫ মিনিট দূরত্বের ব্ল্যাকবার্ন শহরে। বক্সিং ডে টেস্ট দেখার অভ্যাস সেই ছোটবেলা থেকেই। আর ক্রিকেট দেখার নেশা থেকে নিজেও এক সময় ক্রিকেটকে পেশা বানিয়ে নিলেন। শুরুটা রিচমন্ড ক্রিকেট ক্লাব থেকে। এই ক্লাবের হয়েই তিনি খেলেছেন নয় বছর। ভিক্টোরিয়ার প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে একবার সেরা খেলোয়াড় হওয়ার জন্য পেয়েছিলেন রাইডার মেডেল। রাইডাল মেডেল কিন্তু কোনো যেন তেন পুরস্কার নয়। এই সম্মানসূচক সম্মাননা তাঁর আগে পেয়েছিলেন পাকিস্তানের আব্দুল কাদির, ওয়েস্ট ইন্ডিজের কার্ল হুপার, ইংল্যান্ডে পল কলিংউডের মত ক্রিকেট গ্রেটরা।

বলছি এবারের বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডসের কথা। যে শহরে এক সময়ে তাঁর অবাধ বিচরণ ছিল সেই শহরেই এবার খেলতে এসেছেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। জন্মসূত্রে অস্ট্রেলিয়ান, কিন্তু ক্রিকেট এডওয়ার্ডসকে নিয়ে গিয়েছে সুদূর নেদারল্যান্ডসে। বাবা ডন, মা ক্যাথি, বড় ভাই ক্রিস, এমনকি দাদা গ্রাহাম -সবাই অস্ট্রেলিয়ান, তাঁরা অস্ট্রেলিয়াতেই থাকেন। কিন্তু এডওয়ার্ডসের দাদী ভ্যান ডার ওক আবার নেদারল্যান্ডসের। তাহলে এডওয়ার্ডসের দাদা-দাদীর এই মেলবন্ধন কিভাবে হল? 

স্কট এডওয়ার্ডসের দাদা গ্রাহাম এডওয়ার্ডস তাঁর পেশাগত জীবনে ছিলেন প্রকৌশলী। একবার তাঁর কোম্পানি তাকে নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে পোস্টিং দিয়েছিল। আর সেখানেই পরিচয় হয় ভ্যান ডার ওকের সাথে। এরপর তাঁরা বিয়ে করেন এবং মেলবোর্নে এসে স্থায়ী হন। স্কট এডওয়ার্ডসের দাদা-দাদীর পরিণয়ের গল্পটা ঠিক এমন।

দাদার মতো স্কট এডওয়ার্ডসের বাবাও ছিলেন প্রকৌশলী। কাকতালীয়ভাবে, এডওয়ার্ডসের বাবাকেও দুই বছরের জন্য কর্মস্থল হিসেবে হেগ শহরে পাঠানো হয়। আর এ কারণেই নেদারল্যান্ডস ক্রিকেট নিয়ে বেশ জানাশোনা হয়ে যায় স্কট এডওয়ার্ডসের। 

২০১৫ সালে স্কট এডওয়ার্ডস ক্রিকেট থেকে এক বছরের বিরতি নেন। তখন পর্যন্ত রিচমন্ডের হয়ে প্রথম গ্রেড ক্রিকেট খেলা হয়নি তাঁর। এ সময়েই নেদারল্যান্ডসের রটারডাম ক্রিকেট ক্লাবে খেলা শুরু করেন এডওয়ার্ডস। কিন্তু তেমন লাইমলাইটে আসতে পারছিলেন না। যে উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি খেলতে গিয়েছিল, তা বলতে গেলে একপ্রকার বিফলেই গিয়েছিল। 

তবে এরই মাঝে ২০১৬ সালে রিচমন্ডের হয়ে প্রথম গ্রেড ক্রিকেট খেলার সুযোগ পান স্কট। আর এর ঠিক এক বছর পরেই নেদারল্যান্ডের কোচ সাবেক অজি উইকেটরক্ষক রায়ান ক্যাম্পেলের কাছ থেকে ডান পান তিনি। নেদারল্যান্ডস জাতীয় দলের হয়ে খেলার সুযোগ। তাই সেটি হাতছাড়াও করেননি স্কট এডওয়ার্ডস। পুরোপুরি ডাচম্যানের মতই নেদারল্যান্ডস ক্রিকেটকে হৃদয়ে লালন করতে শুরু করলেন তিনি। 

২০১৭ সালে নামিবিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয় এডওয়ার্ডসের। এর এক বছর বাদেই, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অভিষেক হয় তাঁর। 

স্কট এডওয়ার্ডস নিজে একবার বলেছিলেন, সে স্ব-প্রতিষ্ঠ ক্রিকেটার। ক্যারিয়ারের শুরুতে তেমন টেকনিক্যাল কোনো কোচের সান্নিধ্য সে পায়নি। পুরোটাই নিজের শ্রম আর চেষ্টায় হয়েছে। আর উইকেট কিপিংটা তাঁর সহজাত প্রতিভা। এমনিতে অন্যান্য ক্রিকেটারদের চেয়ে লম্বা হওয়ায় উইকেটকিপিংটা তাঁর জন্য সহজই হয়েছিল। 

স্কট এডওয়ার্ডস হঠাৎ করেই সবার নজরে আসেন এ বছরের আফগানিস্তান সিরিজে। তিন ম্যাচের সে সিরিজে স্কট টানা তিন ম্যাচেই করেছিলেন ফিফটি। রশিদ, মুজিবদের বিপক্ষে  বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেই চালিয়েছিলেন ব্যাট। আর তাঁর শক্তির জায়গা হল- স্পিন বলে নিখুঁত সুইপ শট খেলতে পারা। 

পিটার সিলারের অধিনায়কত্বের সময় নেদারল্যান্ডসের সহ-অধিনায়ক ছিলেন স্কট এডওয়ার্ডস। দুই বছর পর এ বছরেই পেয়েছেন অধিনায়কত্বের দায়িত্ব। নেদারল্যান্ডসের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ অধিনায়ক হিসেবে অবশ্য প্রথম দুই সিরিজেই বেশ চ্যালেঞ্জের  মুখে পড়েছিলেন এডওয়ার্ডস। অধিনায়ক হিসেবে ইংল্যান্ড সিরিজের পর পাকিস্তানের বিপক্ষেও সিরিজ খেলতে হয়েছিল তাকে। 

এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডস কে নিয়ে বেশ আশাবাদী স্কট এডওয়ার্ডস। কারণ তাঁর মতে, ডাচ ক্রিকেটারদের কন্ডিশনের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার বেশ ভাল সক্ষমতা রয়েছে। এ ছাড়া কোচিং প্যানেলে আছেন রায়ান কুক। কুক গ্যারি কার্স্টেন, ক্রিশ্চিয়ানের সাথে বিগ ব্যাশে কাজ করেছেন। সেই অভিজ্ঞতাটা নেদারল্যান্ডসের জন্য এবারের বিশ্বকাপে নিশ্চিতভাবেই কাজে লাগবে। 

স্কট এডওয়ার্ডসের বয়সটা কেবল ২৬। এই ছাব্বিশেই ডাচ ক্রিকেটের নেতৃত্বের গুরুদায়িত্ব তাঁর কাঁধে। এখনো তাঁর অনেক পথচলা বাকি। ক্রিকেট নামক ট্রেনে চেপে এখনও তাকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে। এডওয়ার্ডস নিজেও হয়তো চাইবেন, সে যাত্রাপথে যেন কোনো বিরতির ছেদ না পড়ে। বিরামহীন, দুর্বার গতিতে চলতে থাকুক সে যাত্রা।

 

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...