ক্রিকেটের ঐতিহ্যবাহী সব্যসাচী

শনের বাবা এবং চাচা হলেন দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটের দুই ‘স্টলওয়ার্ট’। ষাটের দশকে বিখ্যাত ‘স্প্রিংবক’ দলটার বোলিং আক্রমণের নেতৃত্বে ছিলেন শনের বাবা পিটার পোলক। আর চাচা গ্রায়েম পোলককে বলা হয় ‘ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা, অন্তত বাঁহাতিদের মধ্যে সেরা তো বটেই’।এমনকি শনের দাদু অর্থাৎ গ্রায়েম ও পিটারের বাবা এন্ড্রু পোলকও একজন প্রভাবশালী ক্রিকেটার ছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটে এই ‘পোলক’ পরিবারের মত এতটা প্রভাব আজ পর্যন্ত কেউ বিস্তার করতে পারে নি। তাই বলা যায়, যার রক্তে মিশে আছে ক্রিকেট তিনি ক্রিকেটার না হয়ে যাবেন কোথায়!

১৯৯৬ সালের ৯ জানুয়ারি। সেদিন কেপটাউনের লিউল্যান্ডসে চলছিল দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ডের মধ্যকার একদিনের ম্যাচ। ১০৭ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা প্রোটিয়াদের খাদের কিনারা থেকে টেনে তুললেন ওই ম্যাচ দিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখা এক আনকোরা তরুণ যার পরিচয় মূলত বোলিং অলরাউন্ডার। ৮ নম্বরে নেমে খেললেন ৬৬ বলে ৬৬ রানের হার না মানা এক ইনিংস (অভিষেকে ৮ নম্বরে নামা কোন ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ রান এটাই) অসামান্য দৃঢ়তা দেখিয়ে দলকে এনে দিলেন ২১১ রানের লড়াকু পুঁজি।

আশ্চর্যের বিষয় হল, সেদিন বল হাতেও দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেন এই ২২ বছরের তরুণ। ‘সাদা বিদ্যুৎ’ খ্যাত অ্যালান ডোনাল্ডের সাথে জুটি বেঁধে আগুনঝরা ফাস্ট বোলিংয়ে রীতিমতো ছারখার করে দিলেন ইংলিশ ব্যাটিং লাইনআপ। ৯.৫ ওভার বল করে ৩৪ রানের বিনিময়ে তুলে নিলেন ৪ উইকেট। ফলে ১ বল বাকি থাকতেই ৬ রানের রুদ্ধশ্বাস এক জয় পেল স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা। ইংলিশরা অলআউট হল ২০৫ রানে।

অভিষেকেই ব্যাটে বলে সবাইকে ছাড়িয়ে যাওয়া সেই তরুণের হাতেই শেষমেশ উঠেছিল ম্যাচসেরার পুরস্কার। এতক্ষণে নিশ্চয়ই সেই খেলোয়াড়টিকে চিনতে কারো বাকি থাকার নয়। হ্যাঁ, তিনি ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা বোলিং অলরাউন্ডারদের একজন, প্রোটিয়া কিংবদন্তী শন পোলক। যার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলার সূচনাটা ছিল এমনই অসাধারণ।

১৯৭৩ সালের ১৬ জুলাই পোর্ট এলিজাবেথের একটি স্বনামধন্য ক্রিকেট পরিবারে জন্মেছিলেন পোলক। তাঁর ক্রিকেটে হাতেখড়িটা হয়েছিল সেই ছোট্টবেলাতেই। শনের বাবা এবং চাচা হলেন দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটের দুই ‘স্টলওয়ার্ট’। ষাটের দশকে বিখ্যাত ‘স্প্রিংবক’ দলটার বোলিং আক্রমণের নেতৃত্বে ছিলেন শনের বাবা পিটার পোলক। আর চাচা গ্রায়েম পোলককে বলা হয় ‘ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা, অন্তত বাঁহাতিদের মধ্যে সেরা তো বটেই’।

এমনকি শনের দাদু অর্থাৎ গ্রায়েম ও পিটারের বাবা এন্ড্রু পোলকও একজন প্রভাবশালী ক্রিকেটার ছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটে এই ‘পোলক’ পরিবারের মত এতটা প্রভাব আজ পর্যন্ত কেউ বিস্তার করতে পারে নি। তাই বলা যায়, যার রক্তে মিশে আছে ক্রিকেট তিনি ক্রিকেটার না হয়ে যাবেন কোথায়!

উইজডেনের ভাষ্যমতে, ‘Shaun has bits of both in his makeup, but it is as an immaculate, Hadlee-esque, line and length seamer that he has established himself.’

আট শতাধিক আন্তর্জাতিক উইকেটের মালিক শন পোলককে বলা হয় দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসের সফলতম ফাস্ট বোলার। তাঁর এক্সপ্রেস গতি ছিল না। ছিল না ব্যাটসম্যানের বুকে কাঁপন ধরানো বাউন্সার কিংবা টো ক্রাশিং ইয়র্কার। তবে সব বোলারই তার নিজের মতো করে একটা পথ খুঁজে নেয়। ডানহাতি মিডিয়াম পেসার পোলকের বেলাতেও তার ব্যতিক্রম ছিল না।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সীমিত দক্ষতা দিয়ে হাতে গোনা যে কজন বোলার নিজেদের কার্যকারিতার প্রমাণ দিয়েছেন তাদের মধ্যে পোলক ছিলেন অন্যতম। তাঁর বোলিংয়ে একটা সহজ সরল ব্যাপার ছিল। লাইন-লেংথ ঠিক রেখে ধারাবাহিকভাবে একই জায়গায় বল ফেলে যাওয়া যেখানে গ্লেন ম্যাকগ্রার সঙ্গে পোলকের ছিল দারুণ মিল। নিখুঁত সিম প্রেজেন্টেশনের কারণে সহায়ক কন্ডিশনে বলকে সুইং করাতে পারতেন উইকেটের দুপাশেই। উইজডেনের ভাষ্য অনুযায়ী, ‘Perhaps the straightest bowler ever in world cricket.’

অ্যাকুরেসি এবং কন্সিস্টেন্সির পাশাপাশি শন পোলকের ছিল ইস্পাতকঠিন মনোবল, অদম্য সাহসিকতা, দুর্দান্ত স্ট্যামিনা, এবং কঠোর পরিশ্রম করার ক্ষমতা। লম্বা স্পেলে একটানা বোলিং করে যেতে পারতেন ঘন্টার পর ঘন্টা, সহজে ক্লান্ত হতেন না। তাঁর ক্যারিয়ার সেরা বোলিং স্পেলটাও ছিল অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল। ১৯৯৮ সালে অ্যাডিলেডের ফ্লাট ব্যাটিং পিচে ৪১ ওভার বল করে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন মাত্র ৮৭ রান খরচায়।

পোলকের বোলিংয়ে বৈচিত্র্য কম ছিল তবে একেবারেই যে ছিল না তা কিন্তু নয়। ওয়ানডে ফরম্যাটে নিজের কার্যকারিতা আরও বাড়িয়ে তুলতে উইকেটের আচরণ বুঝে চেঞ্জ অব পেসের ব্যবহার, ডেথ ওভারে ইয়র্কার, স্লোয়ার বাউন্সার, অফ কাটার এসব ভ্যারিয়েশনও বেশ ভালভাবেই রপ্ত করেছিলেন তিনি। পোলকের একটা বৈশিষ্ট্য ছিল যে তিনি ব্যাটসম্যানকে খুব ভাল রিড করতে পারতেন।

ক্রিকেটের সব সংস্করণ মিলিয়েই দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি (৮২৯ উইকেট) হলেন শন পোলক। প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকান এবং বিশ্বের দশম বোলার হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে ৪০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি ১৩ বার নিয়েছেন শচীন টেন্ডুলকারের উইকেট! এছাড়া অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, সনাথ জয়াসুরিয়া এবং সৌরভ গাঙ্গুলিকে আউট করেছেন ১২ বার করে।

সীমিত ওভারের ক্রিকেটে মিতব্যয়ী বোলার হিসেবে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন শন পোলক। কিপ্টে বোলিংয়ের জন্য সতীর্থরা তাঁকে ডাকতেন ‘দ্য মাইজার’ নামে। ওয়ানডেতে কমপক্ষে ৯০০০ বল করেছেন এমন বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে কম ইকোনমি রেটের মালিক ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান গ্রেট কার্টলি অ্যাম্ব্রোস (৩.৪৮); ঠিক তার পরেই আছেন শন পোলক (৩.৬৭)।

অবশ্য ওয়ানডেতে কমপক্ষে ৩০০ উইকেট নেয়া বোলারদের মধ্যে সেরা ইকোনমি রেটটা আবার পোলকেরই। ৩.৮৮ ইকোনমি রেট নিয়ে দ্বিতীয় সেরা গ্লেন ম্যাকগ্রা। ক্রিকেটে বিশেষ করে পেস বোলারদের জোড়া বেঁধে উইকেট শিকারের একটা চল রয়েছে। ক্যারিয়ারের শুরুতে পোলক তেমনি জুটি বেধেছিলেন কিংবদন্তি ফাস্ট বোলার অ্যালান ডোলাল্ডের সাথে। ডোনাল্ড-পোলক জুটির রসায়নটাও জমে উঠেছিল বেশ। বিশেষ করে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে দারুণ সফল ছিলেন তাঁরা।

‘সাদা বিদ্যুৎ’ নামে পরিচিত ডোনাল্ড এক প্রান্ত থেকে গতির ঝড় তুলতেন। আক্রমণাত্মক শরীরী ভাষা আর ভয়ংকর গতি দিয়ে ব্যাটসম্যানদের নাস্তানাবুদ করে ছাড়তেন। অন্যদিকে নিখুঁত লাইন লেংথ ও আঁটোসাঁটো বোলিং দিয়ে ব্যাটসম্যানদের ক্রমাগত চাপে ফেলার কাজটা বেশ কৃতিত্বের সাথেই করতেন পোলক।

ক্রিকইনফোর এক আর্টিকেলে এ ব্যাপারে লিখেছিল, ‘His new-ball partnership with Allan Donald was the springboard of South Africa’s success during the latter half of the 1990s. The emergence of Pollock inspired Donald to greater heights as the latter found himself with a partner who both complemented and challenged him.’

পোলক পরিবারের মধ্যে শনই ছিলেন ইংলিশ কাউন্টিতে খেলা প্রথম ও একমাত্র ক্রিকেটার। কাউন্টিতে ওয়ারউইকশায়ার ও ডারহামের হয়ে খেলেছেন তিনি। ১৯৯৬ সালে ওয়ারউইকশায়ারের হয়ে লেস্টারশায়ারের বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচেই দারুণ এক কীর্তি গড়েছিলেন তিনি।

লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটের মাত্র দ্বিতীয় বোলার হিসেবে ‘ফোর ইন ফোর’ অর্থাৎ পর পর ৪ বলে ৪ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন তিনি। সেদিন ১০ ওভার বোলিংয়ে মাত্র ২১ রান খরচায় ৬ উইকেট নিয়ে দলকে জিতিয়ে তবেই মাঠ ছেড়েছিলেন তিনি।

ইনিংসের শুরুতে নতুন বলে দারুণ বোলিং করা পোলক লোয়ার মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবেও সমান কার্যকরী ছিলেন। দলের প্রয়োজনে ব্যাট হাতে বেশ কয়েকবারই ইনিংসের হাল ধরতে দেখা গেছে তাঁকে। একজন দক্ষ পিঞ্চ হিটার হিসেবেও তাঁর বেশ সুনাম ছিল। অল্প সময়ে দ্রুত রান তোলায় ছিলেন বিশেষ পারদর্শী। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্যামিও ইনিংস খেলেছেন পোলক।

২০০৭ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত আফ্রো-এশিয়া কাপে ইনজুরির কারণে শন পোলক খেলেছিলেন শুধুমাত্র একজন ‘ব্যাটসম্যান’ হিসেবে। ব্যাঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে এশিয়া একাদশের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে ৭ নম্বরে নেমে খেলেছিলেন ১১০ বলে ১৩০ রানের অনবদ্য এক ইনিংস। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে এটাই তাঁর একমাত্র সেঞ্চুরি।

কেবল সীমিত ওভারই নয়, টেস্ট ক্রিকেটেও লোয়ার মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে বেশ নির্ভরযোগ্য ছিলেন তিনি। ৯ নম্বরে নেমে টেস্টে দুটি শতরানের ইনিংস আছে তাঁর। শন পোলকই ইতিহাসের একমাত্র ব্যাটসম্যান যিনি ৯ নম্বরে নেমে দুটো সেঞ্চুরি করার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। তবে ব্যাটসম্যান হিসেবে শন পোলককে ‘আন্ডারপারফর্মড’ মনে করেন অনেকেই।

২০০১ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেঞ্চুরিয়ন টেস্টে ক্যারিয়ার সেরা ১১১ রানের ইনিংসটি খেলার পথে নিল ম্যাকেঞ্জিকে নিয়ে ৮ম উইকেটে গড়েছিলেন ১৫০ রানের রেকর্ড জুটি।

ওয়ানডে ক্রিকেটে ৩০০০ রান এবং ৩০০ উইকেটের ‘ডাবল’ রয়েছে মাত্র ৪ জন ক্রিকেটারের। আবার টেস্ট ক্রিকেটে এই কীর্তির অংশীদার হলেন ৮ জন ক্রিকেটার। তবে এঁদের মধ্যে শন পোলক হলেন একমাত্র ব্যক্তি যিনি টেস্ট এবং ওয়ানডে দুই ফরম্যাটেই দেখিয়েছেন ৩০০০ রান ও ৩০০ উইকেটের ‘ডাবল’ অর্জনের কৃতিত্ব।

ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলায় এসে বয়সের ভারে বোলিংয়ের ধারটাও বেশ কমে এসেছিল পোলকের। ২০০৬ সালে কলম্বোতে শ্রীলংকার বিপক্ষে একটি টেস্ট ম্যাচে বোলিং উদ্বোধন করেছিল ডেল স্টেইন-মাখায়া এনটিনি জুটি। পোলক খেলেছিলেন তৃতীয় সিমার হিসেবে। পি সারা ওভালে সেদিন রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছিলেন সনাৎ জয়াসুরিয়া।

জয়াসুরিয়ার হাতে বেধড়ক পিটুনি খেয়ে দিশেহারা পোলক শেষমেশ পেস বোলিং বাদ দিয়ে কিনা শুরু করলেন অফ স্পিন! যেখানে ৩ ওভার পেস বোলিং করে খরচ করেছিলেন ২৫ রান সেখানে ১৪ ওভার অফ স্পিন করে দিয়েছিলেন মাত্র ৩৫ রান! শেষ পর্যন্ত তুমুল উত্তেজনায় পরিপূর্ণ ম্যাচটা এক উইকেটের ব্যবধানে হেরে যায় সাউথ আফ্রিকা!

দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটের ঘোর অন্ধকারাচ্ছন্ন একটা সময়ে অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়েছিলেন শন পোলক। নিয়মিত অধিনায়ক হানসি ক্রনিয়ের ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার ঘটনা ফাঁস হবার পর সহ-অধিনায়ক পোলকের কাঁধে চাপিয়ে দেয়া হয় ক্যাপ্টেন্সির গুরুভার। ক্রনিয়ের আজীবন নিষিদ্ধ হওয়ার ওই ঘটনা দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট কাঠামোর ভিতটাই নড়িয়ে দিয়েছিল।

এরকম অনিশ্চয়তায় ভরা কঠিন একটা সময়ে দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করাটা ছিল পোলকের ক্যারিয়ারের সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ। পোলকের আসল চ্যালেঞ্জটা ছিল সবকিছু পেছনে ফেলে হতাশাগ্রস্ত এবং উদ্যমহীন একটা দলকে টেনে তোলা। এই দায়িত্ব পালনে অবশ্য তিনি বেশ ভালভাবেই উতরে গেছিলেন।

২০০০ সালের এপ্রিলে দায়িত্ব নেওয়া পোলক প্রায় তিন বছরের টানা অধিনায়ক জীবনে বেশ সফলই ছিলেন বলা যায়। তাঁর নেতৃত্বে খেলা ২৬ টেস্টের ১৪টিতেই জিতেছে দক্ষিণ আফ্রিকা, হেরেছে মাত্র ৫টি। সাফল্যের শতকরা হার ৫৩.৮৪% যা তাঁর পূর্বসূরি হ্যান্সি ক্রনিয়ে এবং উত্তরসূরি গ্রায়েম স্মিথের চাইতে বেশি।

এছাড়া পোলকের নেতৃত্বে ৯৮টি ওয়ানডে ম্যাচের ৬০টিতেই জিতেছে প্রোটিয়ারা, হেরেছে ৩৪টি। সাফল্যের শতকরা হার ৬৩.৮৩% যা দক্ষিণ আফ্রিকাকে অন্তত ২০টির বেশি ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দেয়া যেকোন অধিনায়কের চেয়ে বেশি।

তবে ২০০৩ সালে ঘরের মাটিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে সুপার সিক্সে উঠতে ব্যর্থ হয় পোলকের নেতৃত্বাধীন দক্ষিণ আফ্রিকা। বিশ্বকাপে প্রোটিয়াদের ভরাডুবির দায়ে টুর্নামেন্টের পরপরই তাঁকে অধিনায়কত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

এক নজরে শন পোলকের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার পরিসংখ্যান

  • টেস্ট

১০৮ ম্যাচে ৩২.৩১ গড়ে করেছেন ৩৭৮১ রান। ১৬টি ফিফটি ও ২টি সেঞ্চুরিসহ সর্বোচ্চ ১১১ রান। এছাড়া ২৩.১১ গড়ে উইকেট নিয়েছেন ৪২১ টি। ইনিংসে ৫ উইকেট ১৬ বার এবং ম্যাচে ১০ উইকেট লাভ করেছেন ১ বার। সেরা বোলিং ৭/৮৭ এবং সেরা ম্যাচ ফিগার ১০/১৪৭। ম্যাচসেরা হয়েছেন ৮ বার।

  • ওয়ানডে

৩০৩ ম্যাচে ২৬.৪৫ গড়ে তাঁর সংগ্রহ ৩৫১৯ রান। স্ট্রাইক রেট ৮৬.৭০। ১৪টি ফিফটি ও ১টি সেঞ্চুরিসহ সর্বোচ্চ ১৩০ রান। এছাড়া ২৪.৫০ গড়ে উইকেট নিয়েছেন ৩৯৩ টি। ৪ উইকেট ১২ বার এবং ৫ উইকেট নিয়েছেন ৫ বার। ইকোনমি রেট ৩.৬৭ আর সেরা বোলিং ৬/৩৫। ম্যাচসেরা হয়েছেন ১৬ বার।

  • টি-টোয়েন্টি

১২ টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে ১২.২৮ গড়ে ১২২.৮৫ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন ৮৬। সর্বোচ্চ ৩৬ রান। এছাড়া ২০.৬০ গড়ে উইকেট নিয়েছেন ১৫ টি। ইকোনমি ৭.৬২ আর সেরা বোলিং ৩/২৮। ম্যাচসেরা হয়েছেন ২ বার।

দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে তিনটি বিশ্বকাপ খেলা এই কিংবদন্তী অলরাউন্ডারের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় আক্ষেপ বোধ হয় কখনো বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলতে না পারা। ১৩ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অবশ্য ব্যক্তিগত অর্জনের তালিকাটাও কম লম্বা নয়।

আইসিসি র‍্যাংকিংয়ে সর্বোচ্চ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে একবার করে টেস্ট এবং ওয়ানডে দুই ফরম্যাটেই বোলারদের তালিকার শীর্ষস্থান দখল করেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, একটা সময় তিনি সব সংস্করণের ক্রিকেটেই সেরা অলরাউন্ডারের এক নম্বর জায়গাটি অর্জন করেছিলেন। ২০০৩ সালে ক্রিকেটের বাইবেল খ্যাত জনপ্রিয় ম্যাগাজিন ‘উইজডেন’ মনোনীত বর্ষসেরা ক্রিকেটারের মর্যাদায় ভূষিত হয়েছিলেন তিনি।

শেষ করব একটি ইন্টারেস্টিং ফ্যাক্ট দিয়ে। টেস্ট ক্রিকেটে পিতা-পুত্র হিসেবে সবচেয়ে বেশি উইকেটের মালিক শন পোলক আর পিটার পোলক জুটি। ১০৮ ম্যাচে শনের ৪২১ আর ২৮ ম্যাচে পিটারের ১১৬ উইকেটের যোগফল দাঁড়ায় ৫৩৭ উইকেট যা টেস্ট ক্রিকেটে পিতা-পুত্রের জুটি হিসেবে সর্বোচ্চ।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...