হঠাৎ থমকে গেলেন সৌম্য

বাংলাদেশের জার্সি গায়ে চাপানোর সুযোগটা ভাগ্য তাঁকে প্রায় আটমাস পর আরেকবার দিল। কিন্তু তা জাতীয় দলের না হলেও বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে।


রোজকার মতই চলছিল সব কিছু। বরাবরের মতই মাঠে পরিশ্রমের কমতি রাখছিলেন না সৌম্য সরকার। এরমধ্যেই ঘটনাটা ঘটলো। দেখা গেল অনুশীলনের মাঝেই হুট করেই বাম হাতটা অন্য হাত দিয়ে চেপে বসে পড়লেন তিনি। কি ঘটলো এমন?

সৌম্যকে দেখা গেল মাটিতে বসেই ব্যাথায় কুকড়ে উঠলেন! হাতে ব্যাথা পেয়েছেন সৌম্য সরকার। সকাল থেকেই মিরপুর ইনডোর মাঠের নেটে ব্যাটিং প্র্যাকটিস করছিলেন সৌম্য। বোলিংয়ে ছিলেন স্থানীয় একজন নেট বোলার। কিন্তু বলটি গিয়ে ব্যাটের বদলে লেগে যায় সৌম্যের বাঁ-হাতে। নিছক, অনিচ্ছাকৃত দুর্ঘটনা হলেও ঘটনাটা খালি চোখে গুরুতরই মনে হচ্ছিল।

সৌম্যের এ অবস্থা দেখে দৌড়ে আসলেন তাঁর গুরু বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিম সহ আরও কয়েকজন। তৎক্ষণাৎ আনা হলো বরফ। আঘাতের জায়গায় বরফ দিয়ে নাজমুল আবেদীন ফাহিম মাঠের এক কোণে সৌম্যকে নিয়ে বসালেন। নিজেও বসে ছিলেন শিষ্যের পাশের চেয়ারে। সৌম্য এদিন আর মাঠে ফেরেননি। ইনজুরি কতটা গুরুতর, সেটা হয়তো দ্রুতই জানা যাবে।

সৌম্য সরকার এখন বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রায় ঝরে পড়া এক নক্ষত্রের নাম। ক্যারিয়ারের শুরুটা করেছিলেন নজর কাড়া পারফরম্যান্স দিয়ে। সৌম্য সরকার ২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশের ক্রিকেটে আলো ছড়িয়েছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এসেই এমন সব ইনিংস খেলেছিলেন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যা ছিল অবিশ্বাস্য। বাংলাদেশ ভক্তদের বড্ড প্রত্যাশার জায়গায় ছিলেন সৌম্য। ভালো খেলে যাচ্ছিলেন। একের পর এক অসাধারণ ইনিংস খেলে বার্তা দিয়েছিলেন পাওয়ার ক্রিকেটটা খেলতে জানেন তিনি।

কিন্তু কালের বিবর্তনে সেই সৌম্য হারিয়েই গেলেন। সৌম্যের সেই স্টাইল, সেই বিধ্বংসী রূপ কোথায় যেন মিইয়ে গেছে। টানা ব্যর্থতায় জাতীয় দল থেকে ছিটকে পড়লেন। এখন আর জাতীয় দলের ভাবনাতেও থাকেন না সৌম্য। বাংলাদেশের ক্রিকেটে স্রেফ একজন আক্ষেপ হয়েই রইলো সৌম্যের নাম।

সৌম্যেরও নিজেকে নিয়ে হয়তো আক্ষেপ কাজ করে! তাঁরও নিশ্চয়ই স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশের সেরা ব্যাটারের তকমা নিয়ে বিশ্বক্রিকেটে রাজ করার। কিন্তু হাল ছেড়ে দেননি সৌম্য। চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন নিজের চিরচেনা রূপটি আবার আয়ত্ত্বে এনে জাতীয় দলে আরেকবার জায়গা করে নেয়ার। বাংলা টাইগার্সের ক্যাম্পে সুযোগ পেয়েছিলেন, সেখানে নিজেকে ফিরে পাওয়ার লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন। 

তবে বাংলাদেশের জার্সি গায়ে চাপানোর সুযোগটা ভাগ্য তাঁকে প্রায় আটমাস পর আরেকবার দিল। কিন্তু তা জাতীয় দলের না হলেও বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে। আসন্ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে দুটি চার দিনের টেস্ট এবং তিনটি ওয়ানডে খেলতে ৩১ জুলাই ওয়েস্ট ইন্ডিজের গিয়েছে এ দলের টেস্ট স্কোয়াডটি।

এই সফরে টেস্টে জায়গা না পেলেও ওয়ানডে দলে রাখা হয়েছে সৌম্য সরকারকে। আগস্টের ১৬, ১৮ ও ২০ তারিখের তিনটি ওয়ানডে খেলতে খুব শীঘ্রই তাই দেশ ছেড়ে যাওয়ার কথা সৌম্যের। আসন্ন ওয়ানডে সিরিজটির প্রস্তুতির জন্যই নিয়মিত মাঠে ঘাম ঝরাচ্ছিলেন সৌম্য। অনেকদিন পর ভাগ্যদেবী জাতীয় দলে যেই সুযোগটা দিয়েছে, সেই সুযোগটাকে যথার্থভাবে কাজে লাগাতে বদ্ধপরিকর ছিলেন সৌম্য।

সেই প্রস্তুতির অংশস্বরূপ আজও ঘাম ঝরাচ্ছিলেন যখন আজকের দুর্ঘটনাটি ঘতে। তবে আপাতত হাফ ছেড়ে বাঁচার মতো ব্যাপার হলো হাতের আঘাতটি অতোটা গুরুতর নয়। আশা করা যাচ্ছে খুব শীঘ্রই সেরে উঠবেন তিনি। এই চোটে অন্তত ওয়েস্ট ইন্ডিজে যাওয়াটা এই দফায় আটকাচ্ছেনা।

সৌম্য সরকারের সামনে এখন ডু অর ডাই’ অবস্থা। আসন্ন তিনটি ওয়ানডেতে ভালো ব্যাটিংশৈলী তাঁকে দেখাতেই হবে। ড্যারেন স্যামি স্টেডিয়ামটি সৌম্যের জন্য হতে যাচ্ছে অগ্নিপরীক্ষার মঞ্চ। খুব সম্ভবত বাংলাদেশ এ দলের হয়ে ভালো ফর্ম দেখাতে পারলে, জাতীয় দলে আরেকবার নিজেকে প্রমাণের সুযোগটা পেয়েও যেতে পারেন। আর যদি এই দফায় ব্যর্থ হন, সামনে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে তাঁর জন্য। 

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...