বার্সেলোনার জাভি, জাভির বার্সেলোনা

কয়েকটা দশক ধরে ইনিয়েস্তা ও মেসির সাথে গড়ে তুলেছিলেন ভয়ানক এক ট্রায়ো। জাভি সাদামাটা থেকে হয়ে উঠেছিলেন মাঝমাঠের প্রাণ। সেই সাদামাটা কিন্তু অত্যন্ত কার্যকরী জাভি আবার কোচ বেশে ফিরেছেন শৈশব থেকে বেড়ে ওঠা ক্লাব বার্সেলোনার বিপদে পাশে দাঁড়াতে।

তিনি লিওনেল মেসির মত জাদুকর নন। এমনকি আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার মত দার্শনিকও নন। তারপরও তিনি অনেক জাদু দেখিয়েছেন, অনেক দর্শন তৈরি করেছেন। তিনি এক ও অনন্য জাভি হার্নান্দেজ।

কয়েকটা দশক ধরে ইনিয়েস্তা ও মেসির সাথে গড়ে তুলেছিলেন ভয়ানক এক ট্রায়ো। জাভি সাদামাটা থেকে হয়ে উঠেছিলেন মাঝমাঠের প্রাণ। সেই সাদামাটা কিন্তু অত্যন্ত কার্যকরী জাভি আবার কোচ বেশে ফিরেছেন শৈশব থেকে বেড়ে ওঠা ক্লাব বার্সেলোনার বিপদে পাশে দাঁড়াতে।

১৯৮০ সালের ২৫ জানুয়ারি, স্পেনের অঙ্গরাজ্য কাতালুনিয়ার তেরেসা নামক স্থানে জন্ম জাভিয়ার হার্নান্দেজ ক্রিয়াস নামক বালকের। বাবা স্থানীয় জোয়াকিম ছিলেন সাবাদেল নামক ক্লাবের খেলোয়াড়। প্রথম বিভাগ ফুটবল খেলা বাবার ডিএনএ মিউটেশন হয়ে ধুরন্ধর এক নতুন ডিএনএ হয়ে স্থানান্তরিত হয়েছে জাভির কাছে। তাইতো মাত্র ১১ বছর বয়সেই, অঙ্গরাজ্যের সবচেয়ে বড় ক্লাবের নজরে এসে যান তিনি। তারপর তো এক রুপকথা, তারপরের পুরোটুকুই আসলে রুপকথা।

১১ বছর বয়সে বার্সেলোনার যুব ফুটবল উন্নয়ন কেন্দ্র লা মাসিয়াতে ডাক পান জাভি। সেখানেই নিজের ভেতরে থাকা ফুটবলীয় ডিএনএ-র প্রতিফলন দেখতে থাকেন আর দেখাতে থাকেন সকলকে। বার্সেলোনার যুব দলে নিয়মিত হতে খুব বেশি সময় নেননি জাভি।

আর মূল দলে জায়গাটাও যে তাঁর জন্যে ছিলো অবধারিত তা আর বিশেষভাবে বলার কিছু নেই। ১৯৯৮ সালে, নিজের জীবনের ১৮ তম বসন্তের আগেই তিনি সুযোগ পেয়ে যান বার্সেলোনার মূলদলে। ৫ মে মূল দলের জার্সি গায়ে জড়ালেও লা লিগা অভিষেক হতে হতে লেগে যায় প্রায় ছয় মাস। ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে তিন অক্টোবর লা লিগার প্রথম ম্যাচ খেলেন জাভি।

ধীরেধীরে জাভি নিজেকে মেলে ধরতে থাকেন মিডফিল্ডে। নিজের অসামান্য দূরদর্শিতার প্রমাণ দিতে থাকেন ক্রমশই৷ খেলার পরিস্থিতি চট করে বুঝে ফেলে গতির তারতম্য কি করে ঘটাতে হবে, কখন কোথায় হাজির হতে সবে সতীর্থকে সাহায্যে তার যেন একটা নীলনকশা মাথায় নিয়েই জাভি নেমে পড়তেন মাঠে।

কতশত ট্যাকটিক্যাল চিন্তার মাঝেও কি সাবলীল জাভি সবুজ ঘাসে। আর ইনিয়েস্তার সাথে তাঁর যুগলবন্দী তো ট্রেনের দু’ধারের দুই চাঁকা। সেই চাঁকায় ভর করেই তো বার্সেলোনা পেয়েছিলো প্রথম বারের মতো ট্রেবেল জয়ের স্বাদ। প্লেমেকার, না ডিপলাইং প্লেমেকার। একদম রক্ষণ থেকে খেলা গুছিয়ে আক্রমণ সাঁজানোর মূল কারিগর ছিলেন জাভি। ইয়োহান ক্রুইফের অল ফুটবল নীতির যথার্থ ধারক ও বাহক।

বার্সেলোনার হয়ে এমন কোন শিরোপা নেই যে জাভি ছুঁয়ে দেখেননি। হোক সেটা লা লিগা কিংবা চ্যাম্পিয়নস লিগ অথবা কোপা ডেল রে এবং ক্লাব বিশ্বকাপ। মোদ্দাকথা সবকিছুই জিতেছেন জাভি কাতালান ক্লাবটির হয়ে। ক্লাব ক্যারিয়ারে ৫০৫টি ম্যাচ খেলে ছিলেন সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলা খেলোয়াড়। তাঁর রেকর্ডটি ভেঙেছেন তাঁরই সতীর্থ লিওনেল মেসি। এই ৫০৫ ম্যাচে অগণিত অ্যাসিস্টের পাশাপাশি করেছিলেন ৫৮টি গোল।

আর দেশের হয়ে টানা তিন আন্তর্জাতিক শিরোপা জয়ের দুই ইউরো ফাইনালে অ্যাসিস্ট করে বনে গিয়েছিলেন ইতিহাসের প্রথম ব্যক্তি। ২০০৮ থেকে ২০১২ এই ক’বছরে দু’বার উয়েফা ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ ও একবার বিশ্বকাপ জিতেছিলো স্পেন। সেই দলে জাভি ছিলেন ওই যে প্লে-মেকিং রোলে। তারপর ২০১৪ তে তিনি বিদায় জানালেন আন্তর্জাতিক ফুটবলকে। আর ২০১৫ সালে অশ্রুজলে বার্সেলোনাকে। আরব আমিরাতের ক্লাব আল সাদের হয়ে চার শিরোপা জিতে শুরু করেন কোচিং ক্যারিয়ার।

অপ্রতিরোধ্য এক দলে পরিণত করেন আমিরাতের আল সাদ ক্লাবটিকে। তাঁর এমন অভাবনীয় কোচিং সাফল্য যেন তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছিলো ঘরে ফেরার জন্যে। তাঁর ঘরটা যে খুব ভাল নেই। ফিরলেন জাভি আবার বার্সেলোনার। ডুবে যাওয়া রণতরীকে টেনে তুললেন। মেরামত করছেন তরুণদের নিয়ে। জাভি আর বার্সেলোনার এক অমর প্রেমকাব্য হলো বলে। অপেক্ষা, অপেক্ষা আর অপেক্ষা৷

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...