ওভাল টেস্টে মোহাম্মদ সিরাজের অগ্নিঝরা বোলিং। প্রথম ইনিংসে চার এবং দ্বিতীয় ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিয়ে শেষ টেস্টের নায়ক তিনি। জাসপ্রিত বুমরাহর ছত্রছায়ায় ঢাকা পড়া সিরাজ বুঝিয়ে দিলেন কারো ছায়াতলে থাকার মতো চরিত্র তিনি নন।
প্রথম ইনিংসে সিরাজের প্রথম শিকার হ্যারি ব্রুক। ব্রুককে কট বিহাইন্ডের ফাঁদে ফেলেন। উইকেট তুলে নিয়ে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর আইকনিক সেলিব্রেশনে মেতে ওঠেন তিনি। এই উচ্ছ্বাস কেবল সিরিজে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হওয়ার আনন্দে নয়, বরং জাসপ্রিত বুমরাহর অনুপস্থিতিতে পেস ইউনিটের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেওয়ার।
তাঁর দক্ষতা এতটাই ক্ষুরধার যে, রোদ হোক বা বৃষ্টি, ব্যাটিং সহায়ক উইকেট হোক কিংবা বোলারদের দুর্গ—তিনি একের পর এক বল করে যান পূর্ণ উদ্যমে। যেন তার মনোবল ভাঙা এক কষ্টসাধ্য কাজ।
গুজরাটের ‘ওয়ান্ডার বয়’ খ্যাত বুমরাহর উপস্থিতি ভারতীয় দলে এক অন্যরকম আবহ সৃষ্টি করে। সিরাজও তাতে কম যান না। বুমরার অনুপস্থিতিতে সিরাজ পেস ইউনিটের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। ভারতীয় দলের বোলিং ইউনিটকে দেন নেতৃত্ব। বুমরার অভাবনীয় সাফল্যের পেছনে সিরাজের বড় অবদান। তা খোদ বুমরাহ স্বীকার করেছেন অকপটে।
স্বাভাবিকভাবেই দলের প্রধান বোলার জাসপ্রিত বুমরাহ। তবে মোহাম্মদ সিরাজও পারফর্ম করেন সমান তালে। বুমরাহর সাথে সিরাজ টেস্ট খেলেছেন ২৫টি। যেখানে উইকেট নিয়েছেন ৭৪টি। দলের প্রধান পেসার হিসেবে তিনি ১৬ ম্যাচে ৪৯ টি উইকেট নিয়েছেন।
বুমরাহর এক স্পেলে পাঁচ ওভার করার পর ষষ্ঠ ওভার করার আগে ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্টের কথা ভাবতে হয়। তবে সিরাজ অনেকটা ব্যতিক্রম। তাঁর অসাধারণ ফিটনেসের জন্য এক স্পেলে আট ওভার করেও খুব বেশি ক্লান্ত হন না। তাই তো কম সময়ের ব্যবধানে আবারও বোলিং করতে প্রস্তুত হয়ে যান এই ডানহাতি পেসার।
ওভাল টেস্টের প্রথম স্পেলের চার ওভারে সিরাজ একটু খরুচে ছিলেন। পরে আট ওভারে ৩৫ রান দিয়ে তিনটি উইকেট তুলে নেন। মোট ১৬ ওভার বল করে ৫.৩০ ইকোনমিতে ৮৬ রানে নেন চার উইকেট। যার ফলশ্রুতিতে ইংলিশরা মাত্র ৫১.২ ওভারে ২৪৭ রানে গুটিয়ে যায়।
তবে শেষ ইনিংসে তিনি যেন আরও অপ্রতিরোধ্য। ইংল্যান্ডের নিশ্চিত জয় ছিনিয়ে এনেছেন একা হাতে। পাঁচ উইকেট শিকার করে ধসিয়ে দিয়েছেন ইংলিশদের ব্যাটিং অর্ডার, হয়েছেন ম্যাচ জয়ের নায়ক।
গত মাসে বার্মিংহামে বুমরাহ যখন বিশ্রামে ছিলেন, সিরাজ তখন প্রথম ইনিংসে ছয় উইকেট নিয়ে ভারতের জয় নিশ্চিত করেন। ওভালে যেন সেটাই করে দেখালেন, বুঝিয়ে দিলেন দায়িত্ব কাঁধে তিনিও এক বাজির ঘোড়া।