যে ইনিংসের ভিতে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট

মনি-সাইফুলদের সঙ্গে করে এরপর আকরাম খান যে দৃঢ়চেতা বীরোচিত ইনিংস খেললেন, তা আমাদের নিয়ে গেল ধীরে ধীরে জয়ের বন্দরে। তার ৬৮ রানের মধ্যে বাউন্ডারি ছিল কয়টি জানেন? মাত্র তিনটি। আমরা ম্যাচটি তিন উইকেটে জিতলাম আকরাম খানের অপরাজিত ৬৮ রানের কালজয়ী ইনিংসের কল্যাণে।

আমরা সেদিন পাড়ার দোকানে রেডিওতে কান খাড়া করে শুনছিলাম।

সে যে কী দিন গেছে আমাদের, এই প্রজন্ম কল্পনাও করতে পারবে না বোধহয়। বাংলাদেশের ক্রিকেট তখন অপেশাদার। বিদেশে যাবে খেলতে, বিমান ভাড়া করার টাকাটাও ছিল না। খেলোয়াড়গুলোও তাই, কিন্তু তাদের বুকে খেলাটির প্রতি ছিল গভীর মমতা আর নিখাঁদ দেশপ্রেম!

বলছি আইসিসি ১৯৯৭ এর কথা। যেভাবেই হোক, সেমিতে যাওয়া চাইই চাই। ’৯৪ তে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল। এবার আর তা ঘটতে দেয়া যাবে না। সেকেন্ড রাউন্ডের শেষ ম্যাচ। নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে খেলা। তৎকালীন হল্যান্ড দল প্রথম ইনিংসে ১৭১ রান করে। ইনিংস বিরতিতে বৃষ্টির হানা। আমাদের বুকে ধুকপুক ‘ঢাক’ বাজছিল। ৩৩ ওভারে বাংলাদেশের টার্গেট দাঁড়ায় ১৪১ রান, যা ঐ সময়ের প্রেক্ষাপটে প্রায় অসম্ভব। তার উপরে আউটফিল্ডের বেজায় দশা। বল যেন ছুটতেই চায় না। জমে যায় কাদায়। বারবার।

১৫ রানে পড়ল ৪ উইকেট। স্যাঁতস্যাঁতে স্লো পিচে ব্যাটসম্যানদের অবস্থা ত্রাহি ত্রাহি। এই ম্যাচ হারলে সোজা বাদ! আবার কত বছরের অপেক্ষা করতে হয় কে জানে! আকরাম খান হাল ধরলেন। নান্নুর সাথে জুটি গড়লেন। দলের সবচেয়ে ভরসার নাম নান্নু, তিনি রান আউট হলেন। ৮৬ রানে উইকেট পড়ল ৬ টা। আস্কিং রান রেট ছয়ের ওপরে। আবার বৃষ্টির হানা। আবার স্বপ্নভঙ্গের আশংকা।

খেলার নিষ্পত্তি না হলেও টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিতে হবে। কী করা যায়? মাঠের আনাচকানাচ তো ডোবার মতো পানি জমে গেছে! তখন আমাদের ক্রিকেট কর্তা, প্লেয়ার উপায়ান্তর না দেখে পানি সরাতে নিজেরাই মাঠে নেমে পড়লেন! আমরা স্তব্ধ হয়ে শুনছি রেডিওতে। শিহরিত হয়ে শুনছি সেসব বর্ণনা ধারাভাষ্যকারদের কণ্ঠ থেকে।

একেকজন যেন সাক্ষাৎ মাঠকর্মী হয়ে গেলেন সেদিন!

মনি-সাইফুলদের সঙ্গে করে এরপর আকরাম খান যে দৃঢ়চেতা বীরোচিত ইনিংস খেললেন, তা আমাদের নিয়ে গেল ধীরে ধীরে জয়ের বন্দরে। তার ৬৮ রানের মধ্যে বাউন্ডারি ছিল কয়টি জানেন? মাত্র তিনটি। আমরা ম্যাচটি তিন উইকেটে জিতলাম আকরাম খানের অপরাজিত ৬৮ রানের কালজয়ী ইনিংসের কল্যাণে।

সেদিন রেডিও ছেড়ে এক মুহূর্ত কোথাও যায়নি একটি কিশোর। কান পেতে ছিল খেলার শেষ পর্যন্ত। তার বুকের ধুকপুকানি আনন্দের বন্যায় রুপান্তরিত হয়েছিল আকরাম খানের অবিস্মরণীয় আটষট্টির অবদানে। আমরা বিরুদ্ধ কন্ডিশন পেরিয়ে চলে গেলাম সেমিতে। বাকিটা হয়ে রইল ইতিহাস।

আমার মতে, বাংলাদেশ ক্রিকেট দাঁড়িয়ে আছে আকরাম খানের এই ঐতিহাসিক ইনিংসটির উপরে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...