১ থেকে ১০: ক্যাচ এবং অপমৃত্যু

টেস্ট ক্রিকেটে এটি অবশ্য বিরল ঘটনা নয়। এটি সব খেলোয়াড়ের ক্যাচ আউট হবার ৭৮তম ঘটনা। এই ঘটনার আগের ঘটনাটাও খুব বেশি আগের নয়। এই কিছুদিন আগেই চেন্নাইতে ভারতের প্রথম ইনিংসের সব ব্যাটসম্যান আউট হয়েছিলেন ইংলিশ ফিল্ডারদের হাতে ক্যাচ দিয়ে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ নিজেদের সবকয়টি উইকেট হারিয়েছে ক্যাচ আউটে। টেস্ট ক্রিকেটে এটি অবশ্য বিরল ঘটনা নয়। এটি সব খেলোয়াড়ের ক্যাচ আউট হবার ৭৮তম ঘটনা। এই ঘটনার আগের ঘটনাটাও খুব বেশি আগের নয়। এই কিছুদিন আগেই চেন্নাইতে ভারতের প্রথম ইনিংসের সব ব্যাটসম্যান আউট হয়েছিলেন ইংলিশ ফিল্ডারদের হাতে ক্যাচ দিয়ে।

কিন্তু, বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানেরা যেভাবে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়েছে তাতে উইন্ডিজ বোলারদের কৃতিত্ব খুব কমই আছে। বরং দশ উইকেটের দশটিই আমরা হারিয়েছি নিজের ভুলে আর এ দায় আমাদের ব্যাটসম্যানেরা কোনভাবেই এড়াতে পারেন না!

অবশ্য, তাঁরা এসব গোণায় ধরেন কিনা কে জানে!

আরো পড়ুন

১.

শ্যানন গ্যাব্রিয়েল বলটা করলেন  গুড লেংথে, অফ স্ট্যাম্পে। ক্রিজে ছিলেন সৌম্য সরকার। সাদা পোশাকের হিসেবে বলটাকে ডিফেন্ড করার কথা ছিল তাঁর, যেহেতু তিনি একজন ওপেনার। কিন্তু না, কিসের যেন রান করার একটা তাড়া আছে তাঁর।

সোজা আসা লাইনের বলটাকে ঠেলে দিলেন সিলি মিড অনে। আর এমন অফার সেখানে দাঁড়ানো মেয়ার্স লুফে নেবেন না তা তো হয়না; আর যাই হোক তিনি তো আর বাংলাদেশী ফিল্ডার নন। ক্যাচ তুলে নিলেন, সৌম্য ফিরে চলেছেন প্যাভিলিয়নে।

২.

নাজমুল শান্তর ওপর বিসিবির বিশাল বিনিয়োগ আছে। সেই বিনিয়োগের কিছুটা ফল হিসেবেও তো আমরা দাবি করতে পারি যে শান্ত অন্তত বলের লাইন মিস করবেন না, তাইনা? শান্তর সেসব ফল দিতে বয়েই গেছে।

গ্যাব্রিয়েলের বলটা ছিল অফ স্ট্যাম্পের অনেক বাইরে। শান্তও ছিলেন তিন নম্বর ব্যাটসম্যান। টেস্ট ক্রিকেটের তিন নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে এমন একটা বল শান্তর ছেড়ে দেবার কথা। কিন্তু নাহ, অফ স্ট্যাম্পের অনেক অনেক বাইরের বলটা তিনি খেলতে গেলেন। তা খেলতে পারলেও তো হত, তিনি বলের লাইনই বুঝতে পারলেন না। আর এতে? গালিতে দাঁড়ানো বোনারের ক্যাচ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন ড্রেসিংরুমে, ব্যাটিং ইনিংসে শান্ত মাঠের চাইতে যেখানে বেশি সময় কাটান আরকি!

৩.

মুমিনুল হক খেলছিলেন ঘরের মাঠে; তাও শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। মোটামুটি, এ মাঠেই সব ধরণের খেলা হয়ে থাকে বাংলাদেশে। সে পিচেই রাকিম কর্নওয়াল বল ফেললেন অফ স্ট্যাম্পের অনেক সামনে, বল প্রয়োজনের চেয়ে বেশি বাউন্স নিয়ে লাফিয়ে উঠল, কিছুটা টার্নও পেল মনে হল।

মুমিনুল চাইলে বলটাকে ছেড়ে দিতে পারতেন, অন্তত লাফিয়ে ওঠা বল খেলার তো কোন মানে নেই। কিন্তু নাহ, তিনি ব্যাট চালালেন, আয়েশি ভঙ্গিতে ঠেলে দিতে চাইলেন অফ সাইডে আর বলাই বাহুল্য তিনি বল খেলবেন কি, লাইনই তো বুঝতে পারলেন না। ‘না বুঝিলাম লাইন, না বুঝিলাম টার্ন’- মুমিনুল চাইলে গাইতে গাইতেই প্যাভিলিয়নে ফিরে আসতে পারেন।

৪.

তামিম ইকবাল খেলছেন কত বছর ধরে? অনেক নিশ্চয়ই?

সেটা নিশ্চিত করে বলতে পারতাম যদি না তিনি এমন একটা কান্ড করে না বসতেন। এমনিতে পিচ আহামরি র‍্যাংক টার্নার না, তার ওপর দলের ওপর চাপ পড়ে গেছে দ্রুত উইকেট পতনে। এসব অবশ্য ধর্তব্যে আনতে তামিমের বয়েই গেছে। গায়ের সাদা পোশাকটা না দেখে তিনি খেলতে শুরু করলেন সীমিত ওভারের ক্রিকেটের মত। হ্যা, এত বছর ধরে ক্রিকেট খেলার পর একটা দলের একজন সিনিয়র ক্রিকেটার, যিনি কিনা দলটার একটা ফরম্যাটের অধিনায়কও তিনি ব্যাট চালিয়ে খেলতে চাইছেন। সেই ব্যাট চালাতে পারলেও কোন আপত্তি ছিল না, কিন্তু আলজারি জোসেফের বলে তিনি করলেন কি?

সৌম্যর আউটটা তিনি দেখেছিলেন নন-স্ট্রাইকে দাঁড়িয়ে। ঠিক সৌম্যর বলের লেংথেই একটা বল দেওয়া হল তামিমকে, অনুজকে সমর্থন করতেই যেন সেই সিলি মিড অন দিয়েই বল পাঠাতে চাইলেন তামিম। কিন্তু, মোসলে অমন একটা ক্যাচ কেন ছেড়ে দেবেন? তামিম ইকবাল খান- ফিরে যাচ্ছেন প্যাভিলিয়নে অহেতুক এক শট খেলে, যেটার কোন প্রয়োজনীয়তাই ছিল না। এখন, সৌম্য নাহয় টেস্ট খেলতে পারেন না বলে এমন করেছেন। তাহলে কি আমি বলব তামিমও পারেন না?

৫.

মিথুন বেশ ভালই খেলছিলেন। অন্তত বাকিদের তুলনায় তাঁর খেলাতেই যা একটু টেস্ট খেলার ছাপ পাওয়া যাচ্ছিল। কিন্তু, তিনিও যে অভিজাত টেস্ট ক্রিকেটের জন্যে যুতসই নন সেটা প্রমাণ দিতে ছাড়লেন না। রাকিম কর্নওয়ালের অফ স্ট্যাম্পের বলটা লেগ সাইডে টেনে খেলা ঠিক কতটা দরকার ছিল জানা নেই। লেগ সাইডে খেলোয়াড় থাকার পরও সেদিক দিয়েই রান বের করার কী প্রয়োজন সেটাও জানা নেই। কিন্তু মিথুন যেটা করেছেন – তামিম আর সৌম্যর মত সিলি মিড অনে থাকা ক্রেইগ ব্রাফেটের হাতেই ক্যাচ তুলে দিয়েছেন ।

মিথুন যে সময়ে এই শট খেলেছেন, তখন অন সাইডেই তিন তিনজন খেলোয়াড় ছিল। মিথুনের আউটের কারণ হিসেবে তাই বিচ্ছিরির চাইতেও নিম্নবর্গীয় শট সিলেকশন ব্যাতীত আর কোন ব্যাখ্যা দেওয়া যায়না।

৬.

বিক্রমপুরের রাজা ছিলেন শিশুপাল, একশোটা ভুল করা শিশুপাল। মুশফিক খুব সম্ভবত আদরের সুইপ শটের ভুলটাকে সেই পর্যায়েই নিয়ে যাবেন। অন্তত মুশফিকের সুইপ শট কাজে এসেছে আর কাজে আসেনির ভোটাভুটি করতে গেলে কাজে আসেনির পাল্লাই ভারী হবে। বড় বড় ম্যাচ আমাদের এই সুইপ শটই হারিয়েছে বেশ কয়েকবার। এ ম্যাচেই কিছুক্ষণ আগেই তিনি সুইপ খেলতে গিয়ে রিভিউ নিয়ে বেঁচে গেছিলেন, এরপর আবারও টেস্ট ম্যাচে তিনি রিভার্স সুইপ খেলতে গেলেন।

দেশের ক্রিকেটের টেকনিক্যালি সবচেয়ে ভাল ব্যাটসম্যানটাকে সেসময় মুখস্থ শটে সাদা পোশাকে খেলতে নামা কোন ব্যাটসম্যান ছাড়া আর কিচ্ছু মনে হয়নি। অন্তত ভুলভাল রিভার্স সুইপ তো সাদা পোশাকে অভিষিক্ত কোন ক্রিকেটারও এত কুৎসিতভাবে খেলে না।

৭.

লিটন দাস এক সামনে এগিয়ে দিয়ে বলটাকে ঠেলে দিতে চাইলেন পেছনে। এমন একটা শট তিনি খেলতে চাইলেন যেটা কিনা স্লগ ওভারেই বেশি খেলা হয়। আউটের ধরণ হিসেবে অবশ্য ক্যাচ আউট লেখা আছে, কিন্তু মিরপুরের পিচে একজন স্পিনারের ডেলিভারিতে এমন শট খেলার একটাই ব্যাখ্যা থাকতে পারে আর তা হল- ব্রেইনফেড।

ক্যাচ আউট না হলেও লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়তে পারতেন তিনি। বলটা ব্যাটে লেগে উঠে স্রেফ লিটনের আউটের ধরণটা বদলে দিয়েছে। এমন শট খেলার কোন কারণ কি লিটনের জানা আছে? থাকার কথা নয়!

৮.

নাঈম হাসানের ভুলটা ক্ষমা করে দেওয়া চলে। কারণ, তার ব্যাটসম্যান হিসেবে সেরকম স্বীকৃতি নেই। তারপরও সেই ক্যাচ তুলে দেওয়াই পরিণতি। আর সেটা করতে গিয়ে রাকিম কর্নওয়ালের ৫ উইকেট শিকার পূর্ণ হলো।

৯.

নাঈম হাসান অবশ্য ব্যাটসম্যান নন, তাই বলের লাইন মিস করে যাওয়ায় তাকে খুব বেশি দোষারোপ করা যায়না। কিন্তু মেহেদী হাসান মিরাজ? গ্যারিয়েলের ফুল লেন্থের একটু নিচের ডেলিভারিটার ঐ শট খেলার কি ব্যাখ্যা থাকতে পারে তাঁর কাছে? তিনি শুধু লাইন মিস করেছেন এমনই নয়, কাভার ড্রাইভে শট পাওয়ারও ঠিকঠাক দিতে পারেননি। এমন দ্বিধান্বিত কাভার ড্রাইভ খেলতে কি আগে কাউকে দেখা গেছে?

১০.

মিস টাইমিং, লেন্থ মিস, লাইন মিসের সিরিজটা শেষ করেছেন আবু জায়েদ রাহি। তবে একজন পেসার এমনভাবে আউট হলে তাকে খুব বেশি সমালোচনা করা যায়না। দলের হাতিঘোড়া ব্যাটসম্যানেরাই যেখানে তথৈবচ অবস্থা, সেখানে তিনি আর কীই বা করবেন? ভুল লাইনে ব্যাট রেখে স্লিপে আউট হবেন!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...