ভদ্রলোকের মেজাজ নষ্ট

ক্রিকেটারও আবেগের বশে মাঠে অনেক সময় উগ্র আচরণ করে ফেলেন। ম্যাচের খুব উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে অনেক সময় ক্রিকেটাররা মাঠে অনেক সময় নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। মাঠে অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

খেলার মাঠে আবেগ! খুবই সাধারণ ঘটনা। আর এই আবেগ থেকেই অনেক সময় দেখা যায় খেলোয়াড়রা মাঠে উগ্র আচরণ করে বসেন। অন্য সব খেলার মত ক্রিকেটও ব্যতিক্রম নয়। ক্রিকেটেও এই রকম ঘটনা ঘটে থাকে।

ক্রিকেটারও আবেগের বশে মাঠে অনেক সময় উগ্র আচরণ করে ফেলেন। ম্যাচের খুব উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে অনেক সময় ক্রিকেটাররা মাঠে অনেক সময় নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। মাঠে অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) এর ব্যতিক্রম নয়। আইপিএল বিশ্বের অন্যতম সেরা ফ্রাঞ্চাইজি লিগ, যেখানে খেলার সময় প্রচুর চাপ থাকে। এই মঞ্চে ক্রিকেট বিশ্বে ঠাণ্ডা মাথার ক্রিকেটার বলে পরিচিত অনেক ক্রিকেটার মাঠে নিজেদের খারাপ ব্যবহারের জন্য তিরস্কারের শিকার হয়েছেন।

‘ভদ্রলোক’ বলে পরিচিত অনেক ক্রিকেটারই আইপিএলের মঞ্চে মেজাজ হারিয়েছেন। আইপিএলের ইতিহাস ঘেটে তেমনই কয়েকটি ঘটনা নিয়েই এবারের আয়োজন।

  • জস বাটলার, ক্ষোভ রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ওপর

জস বাটলার, ইংলিশ উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যান। যদিও তিনি বোলারদের উপর চড়াও হয়ে খেলতে ভালোবাসেন, তবে সেটা শুধুই ব্যাটে – মুখ দিয়ে নয়। যদিও, আইপিএলে তার ব্যতিক্রম হয়েছে।

কিন্তু আইপিএল মঞ্চে তর্কে জড়িয়েছিলেন অশ্বিনের সাথে। ঘটনাটি ২০১৯ সালে আইপিএলের ১২ তম আসরে। পাঞ্জাবের মুখোমুখি হয়েছিলো রাজস্থান। এই ম্যাচে রাজস্থানের হয়ে খেলছিলেন ইংলিশ ব্যাটসম্যান জস বাটলার। অশ্বিনের বোলিংয়ের সময় বোলিং প্রান্তের পপিং ক্রিজ থেকে বের হয়ে এসেছিলেন তিনি। এই সময়ে ম্যানক্যাডিং করে বাটলারকে আউট করেন অশ্বিন।

ম্যানক্যাড আউটের পর অশ্বিনের সাথে উত্তপ্ত বাগ বিতণ্ডা করেন জস বাটলার। কারণ অনেকেই মনে করে ম্যানক্যাড আউট হলো ক্রিকেটের নীতি বিরুদ্ধ। আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে প্যাভিলিয়নে ফেরত যান জস বাটলার।

  • মহেন্দ্র সিং ধোনি, কবলে আম্পায়ার

মহেন্দ্র সিং ধোনির নামই বাইশ গজে ‘ক্যাপ্টেন কুল’। তবে, ধোনিও নিজের নামের সুনাম রাখতে পারেননি আইপিলে। ২০১৭ সালে তিনি মেজাজ হারিয়ে বসেন।

২০১৭ সালের আইপিএলে জয়পুরের সাওয়াই মানসিং স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয়েছিলো চেন্নাই সুপার কিংস এবং রাজস্থান রয়্যালস। ম্যাচে ছিলো প্রচুর উত্তেজনা। শেষ ওভারে ম্যাচ জয়ের জন্য চেন্নাইয়ের প্রয়োজন ছিলো ১৮ রান। প্রথম তিন বলে ১০ রান তুলে আউট হন অধিনায়ক ধোনি।

ওই ওভারে বোলিং করছিলেন ইংলিশ অলরাউন্ডার বেন স্টোকস। তিনি চতুর্থ বলটি করেন ফুল টস বল। বোলিং প্রান্তের আম্পায়ার সেটিকে নো বল ডাকেন। কিন্তু স্কয়ার লেগ আম্পায়ার ব্রুস অক্সেনফোর্ড বলটিকে সঠিক বল বলে ঘোষণা দেন। এটি দেখে মাঠে এসে বিপক্ষ দলের ক্রিকেটার এবং আম্পায়ারদের তর্কে জড়ান ধোনি।

পরবর্তীতে অভিজ্ঞ আম্পায়ার ব্রুস অক্সেনফোর্ডের সিদ্ধান্তই সঠিক বলে বিবেচিত হয়। এছাড়াও ম্যাচ জিতে নেয় চেন্নাই সুপার কিংস। ম্যাচ শেষে সবার কাছে ক্ষমা চান মহেন্দ্র সিং ধোনি।

  • কেন উইলিয়ামসন, তোপ সতীর্থ প্রিয়াম গার্গের ওপর

২০১৯ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে হারার পর সেই ম্যাচ হারাটাকে বেশ সহজভাবে মেনে নিয়েছিলেন কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। এছাড়াও ক্রিকেটে মাঠে তাঁকে কখনোই মেজাজ হারাতে দেখা যায় নি।

কিন্তু ২০২০ সালে আইপিএলের ১৩ তম আসরে উইলিয়ামসনকে মেজাজ হারাতে দেখা গেছে। তিনি আইপিএলে খেলছিলেন সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের হয়ে। চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে এই ম্যাচে ক্রিজে সেট হয়ে থাকা দুই ব্যাটসম্যান ছিলেন প্রিয়াম গার্গ এবং কেন উইলিয়ামসন। ইনিংসের ১১ তম ওভারে উইলিয়ামসন বলকে মিড উইকেটে পাঠিয়ে প্রিয়াম গার্গকে দ্রুত এক রান নেওয়া সংকেত দেন। কিন্তু প্রিয়ম গার্গ তাতে সাড়া দেননি। বরঞ্চ ক্রিজের অর্ধেক আসার পর ফিরে যাবার সংকেত দেন প্রিয়াম গার্গ।

এই সময়ে মিড উইকেট থেকে বল সংগ্রহ করে বল উইকেট রক্ষকের কাছে পাঠান আম্বাতি রাইডু। আর এর ফলে রান আউটের শিকার হন কেন উইলিয়ামসন। আউট হবার পর নিজের মেজাজ হারিয়ে ফেলেন কেন উইলিয়ামসন। রাগান্বিত অবস্থায় প্যাভিলিয়নে ফিরে যান তিনি।

  • রাহুল দ্রাবিড়, প্রতিপক্ষ মিশেল জনসন

ক্রিকেটের সবচেয়ে ভদ্রলোক হিসেবে বিবেচনা করা হয় রাহুল দ্রাবিড়কে। আর অপরদিক মিচেল জনসন আগ্রাসী একজন পেসার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বহুবার এই দুই জন মুখোমুখি হলেও কখনোই বাগবিতণ্ডায় জড়াননি এই দুই ক্রিকেটার।

আইপিএলের ২০১৩ সালের আসরে দুই জন বাগবিতণ্ডায় জড়ান। এই আসরে মুম্বাইয়ের হয়ে খেলছিলেন মিচেল জনসন এবং রাজস্থানের হয়ে খেলেছিলেন রাহুল দ্রাবিড়। মিশেল জনসন ক্রিকেট মাঠে স্লেজিং করে বেশ সফল হতেন।

২০১৩ আইপিএলের কোয়ালিফায়ার ২ এ মুখোমুখি হয়েছিলো এই মুম্বাই এবং রাজস্থান। রাহুল দ্রাবিড়কেও স্লেজিং করার চেষ্টা করেছিলেন। এই ম্যাচের তৃতীয় ওভারে জনসনের একটি বলকে মিড অফ দিয়ে চার মারতে চেষ্টা করেছিলেন দ্রাবিড়। এই শটের পর মিশেল জনসন রাহুল দ্রাবিড়কে কিছু কথা শুনিয়ে আসেন।

পরের বলে ফ্লিক করে চার মারেন রাহুল দ্রাবিড় এবং জনসনকে বলেন, ‘তুমি কি কিছু বলতে চাও নাকি’। শেষে ৪৩ রনে আউট হন রাহুল দ্রাবিড় এবং মুম্বাই চার উইকেটে ম্যাচ জিতে নেয়।

  • জ্যাক ক্যালিস, আম্পায়ারের ওপর নাখোশ

আইপিএলের ষষ্ঠ আসরে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলছিলেন প্রোটিয়া পেসার জ্যাক ক্যালিস। পুনে ওয়ারিওর্স ইন্ডিয়ার বিপক্ষে একটি রান আউটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে তর্কে জড়ান ক্যালিস।

অ্যারন ফিঞ্চের বিপক্ষে বল করছিলেন জ্যাক ক্যালিস। ফিঞ্চের ব্যাটে লেগে বল লেগে সেটি নন স্ট্রাইকার প্রান্তের স্ট্যাম্পে আঘাত করে। ফিঞ্চ বোলার প্রান্তে পৌঁছানোর আগেই বল স্ট্যাম্পে লাগে। এই সময়ে ক্যালিস দাবি করেন বল তাঁর পায়ে লেগে স্ট্যাম্পে আঘাত করে।

কিন্তু টিভি আম্পায়ার সাইমন টোফেল জানিয়ে দেন এটি নট আউট ছিল। এই সময়ে মাঠের আম্পায়ার সুধীর আসনানীর সাথে তর্ক জড়ান ক্যালিস। তিনি বলেন, ‘আপনি কি আমাকে প্রতারক বলেন?’

জ্যাক ক্যালিসের এই আবেদন ছিলো বেশ কঠিন। আরো কাছ থেকে দেখার দরকার ছিলো টিভি আম্পায়ার সাইমন টোফেলের। কিছুটা অনিশ্চয়তা রেখে সিদ্ধান্ত দেন তিনি। পরে অ্যারন ফিঞ্চকে বোল্ড আউট করেন জ্যাক ক্যালিস।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...