দ্য রেড কার্ড সাগা

নুনেজের লাল কার্ড, লুইজ দিয়াজের ম্যাজিকাল মোমেন্ট কিংবা ফাঁকা পোস্টে উইলফ্রেড জাহার মিস, ১-১ য়ে ড্র হওয়া ম্যাচটিতে দর্শকদের বুদ করে রাখার মত মুহূর্তের কোন কমতি ছিল না।

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে লিভারপুলের জার্সিতে প্রথমবার অ্যানফিল্ডে নেমেই লাল কার্ডের দেখা পেলেন অল রেডদের নতুন নাম্বার নাইন ডারউইন নুনেজ। ম্যাচের ৫৬ মিনিটে ক্রিস্টাল প্যালেসের ডিফেন্ডার অ্যান্ডারসেনের থুঁতনিতে মাথা দিয়ে গুতা মারার অপরাধে মাঠ ত্যাগ করতে হয় এই উরুগুয়ান ফুটবলারকে। 

নুনেজের লাল কার্ড, লুইজ দিয়াজের ম্যাজিকাল মোমেন্ট কিংবা ফাঁকা পোস্টে উইলফ্রেড জাহার মিস, ১-১ য়ে ড্র হওয়া ম্যাচটিতে দর্শকদের বুদ করে রাখার মত মুহূর্তের কোন কমতি ছিল না। 

তবে সবকিছু ছাঁপিয়ে ডারউইন নুনেজের লাল কার্ডটিই সবচেয়ে বড় খবর। খারাপ খবর তো বটেই। কারণ ইনজুরিতে জর্জরিত লিভারপুল দল অ্যাটাক লাইন থেকে আগেই রবার্তো ফিরমিনো এবং ডিয়েগো জতাকে হারিয়েছে এখন সরাসরি লাল কার্ড খেয়ে তিন ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ হলেন নুনেজ, আথচ সামনের সপ্তাহেই ওল্ড ট্রাফোর্ডে তাদের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে খেলতে হবে। 

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের মৌসুমের শুরুর আগে থেকেই দলের একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হারিয়ে কিছুটা চিন্তিত অল রেডদের ম্যানেজার ইউর্গেন ক্লপ। মৌসুমের প্রথম দুই ম্যাচে ৪ পয়েন্ট ড্রপ করে শিরোপা দৌড়ে কিছুটা পিছিয়ে পরেছে তারা।

ম্যাচ শেষে প্রেস কনফারেন্সে এসে নুনেজের লাল কার্ড সম্পর্কে ক্লপ বলেন, ‘প্রতিপক্ষের উসকানি ছিল তবে তার রিএকশনটা মোটেই ঠিক ছিল না, এটা একটা পরিস্কার লাল কার্ড এই ব্যাপারে আমি দ্বিমত পোষণ করছি না। সে এই ঘটনা থেকে শিখবে, দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হল সে কয়েক ম্যাচ দলের বাইরে থাকবে যা এই মুহূর্তে আমদের জন্য মোটেও ভাল কোন খবর না।’

গত মৌসুমে ক্রিস্টাল প্যালেসের ম্যানেজারের দায়িত্ব নিয়ে দলটিকে আমূলে বদলে দেন সাবেক আর্সেনাল কিংবদন্তি প্যাটট্রিক ভিয়েরা। ইজি, গয়েহি এবং অলিসের মত কিছু তরুণ প্রতিভাবান খেলোয়াড়কে দলে ভিড়িয়ে ঈগলদের খেলার ধরনটাই পাল্টে ফেলেন তিনি। ভিয়েরা জানতেন লিভারপুলের বিপক্ষে পজিশনাল এটাকিং ফুটবল খেলা আত্মহত্যার সামিল তাই তিনি এদিন ৫-৪-১ ফরমেসনে দলকে সাজান আর তারা কাউন্টার অ্যাটাকিং ফুটবল খেলেন। 

ক্রিস্টাল প্যালেসের কম্প্যাক্ট ডিফেন্সই লিভারপুলের বিপক্ষে তাদের পয়েন্ট পাওয়ার আশা বাঁচিয়ে রেখেছিল। নিজেদের ডি বক্সে অল রেডদের একের পর এক এট্যাক তারা প্রতিহত করেছেন নিজেদের শরীর দিয়ে। মিডফিল্ডে বল কেড়ে নিতে তারা ব্যাবহার করেছেন শারীরিক শক্তির আর অপেক্ষায় ছিল গোল করার একটি সুযোগের জন্য। 

ম্যাচের ৩২ মিনিটে এমনই একটি সুযোগ তারা পেয়েও যায়। মাঠের বাম প্রান্তে বল পান ইজি এবং তার স্কিলের কাছে পরাস্ত হন ফ্যাবিনহো, এরপর একটুও সময় না নিয়ে দুর্দান্ত এক থ্রু বলের মাধ্যমে ইজি বল পাঠিয়ে দেন লিভারপুলের ডি বক্সের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা স্টাইকার জাহার কাছে। দৌড়ের টাইমিং ঠিক রাখার কারণে অফ সাইড হননি জাহা, মাত্র দুই টাচে বল লিভারপুলের ডি বক্সের ভিতর নিয়ে বাম পায়ের এক পাওয়ারফুল শটে বল পাঠিয়ে দেন গোলপোস্টের বটম কর্নারে যা ভ্যান ডাইক এবং এলিসনের কেউই আটকাতে পারেননি।  

এরপর লিভারপুল একের পর এক আক্রমণ করতে থাকে আর ক্রিস্টাল প্যালেসও তাদের লো ব্লক ডিফেসিভ খেলা চালিয়ে যেতে থাকে এতে লিভারপুলের খেলোয়াড়েরা ফ্রাস্টেটেড হতে থাকে। ম্যাচের ৫৭ মিনিটে প্যালেসের ডিফেন্ডার অ্যান্ডারসেন তর্জনী উচিয়ে তেড়ে যান লিভারপুলের স্টাইকার ডারউইন নুনেজ বরাবর যা এই উরুগুইয়ান ফুটবলারের মোটেও ভাল লাগেনি ফলে রেগে গিয়ে অ্যান্ডারসেনের থুঁতনি বরাবর মাথা দিয়ে আঘাত করেন তিনি আর এতেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ড্যানিস এই ডিফেন্ডার। নুনেজের এহেন আচরণ রেফারি পল টিয়ারনির নজর এড়ায়নি, ফলাফল সরাসরি লাল কার্ড। 

১০ জনের দল হয়ে যাওয়ার পরও লিভারপুল তাদের খেলার ধরন পাল্টে ফেলেনি বরং একের পর এক আক্রমণ করতেই থাকে। ম্যাচের ৬১ মিনিটে মাঠের বাম প্রান্তে টাচ লাইনের খুব কাছ থেকে বল নিয়ে একাই ড্রিবলিং করে ডিফেন্ডারদের কাঁটিয়ে প্যালেসের ডি বক্সের কাছে আসেন লুইস ডিয়াজ। বল যেন তার পায়ে চুম্বকের মত লেগে রয়েছে, প্যালেসের এক এক জন ডিফেন্ডার পা বাড়িয়ে দিচ্ছেন বল কেড়ে নিতে আর তিনি তার পায়ের জাদু দিয়ে তাঁদের বোকা বানাচ্ছেন। 

ডি বস্কের ভিতর ঢুকে একবার শট নেয়ার জন্য পা তুললেও তিনি তা করেননি বরং বল নিয়ে আরেকটু ড্রিবলিং করে আবার ডি বক্সের বাইরে আসেন তিনি এবং এবার ডান পায়ের এক দুর্দান্ত শটে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা প্যালেসের তিন ডিফেন্ডার এবং গোলরক্ষক গুইতাকে পরাস্ত করে বল পাঠিয়ে দেন জালের ভিতর। এই কলম্বিয়ান ফুটবলারের জাদুকরি গোলের কারণে ম্যাচে ফিরে আসে লিভারপুল। 

ম্যাচের ৭৮ মিনিটে পুরো ৩ পয়েন্ট নিজেদের করে নেওয়ার সুযোগ পায় ক্রিস্টাল প্যালেস। লিভারপুলের ডি বস্কের ভিতর বল পেয়ে যান জাহা। তাকে মার্ক করা লিভারপুলের ডিফেন্ডার আলেকজান্ডার আর্নল্ডের চোখকে ফাঁকি দিয়ে গোলপোস্টের ফাঁকা অংশ বরাবর শট নেওয়ার সুযোগ পেয়ে যান আইভরিকোস্টের এই ফরওয়ার্ড, তবে ভলিটা ঠিক মত কন্ট্রোল করতে ব্যর্থ হন তিনি আর বল বার পোস্টে লেগে মাঠের বাইরে চলে যায়।  

যদিও গোলটি হয়নি তবে আবারো রাইট ব্যাক আলেকজান্ডার আর্নল্ডের ডিফেন্সিভ দুর্বলতা সবার সামনে এসেছে, এক্ষেত্রে অবস্থার উন্নতি না করলে বলাই যায় পুরো মৌসুম ধরেই প্রতিপক্ষরা এই পকেট অফ স্পেসকে টার্গেট করে নিজেদের আক্রমণ সাজাবে।

নুনেজের লাল কার্ড এবং ডিয়াজের দুরপাল্লার গোলের পর সবাই আশায় ছিল মিসরীয় রাজা খ্যাত মোহাম্মদ সালাহ গোল করে দলকে জেতাবেন। প্রিমিয়ার লিগে প্যালেসের বিপক্ষে সর্বশেষ  আট ম্যাচে সাতটি গোল এবং ছয়টি অ্যাসিস্ট আছে তার, এছাড়া অ্যানফিল্ডে প্যালেসের বিপক্ষে বরাবরই গোল পেয়েছেন তিনি তবে এই ম্যাচে তার ফিনিশিং তাকে হতাশ করে। 

ইনজুরির কারণে মিডফিল্ডের সবচেয়ে মোক্ষম অস্ত্র থিয়াগোকে হারানোর পর, ডিফেন্সে মাতিপ এবং অ্যাটাকে ফিরমিনো, জেতার পর লাল কার্ডের কারণে এবার নুনেজকে হারাল লিভারপুল। এদিকে আগামী সোমবার বাংলাদেশ সময় রাত একটায় মৌসুমের প্রথম ডার্বি ম্যাচে প্রবল প্রতিপক্ষ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাথে খেলা অথচ এদিকে একাদশ সাজাতেই হিমশিম খাচ্ছেন অল রেডদের ম্যানেজার ইউর্গেন ক্লপ। 

মৌসুমের শুরু থেকেই ধুঁকতে থাকা রেড ডেভিলরা কি পারবে লিভারপুলের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে এই ম্যাচে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন আনতে? নাকি শিরোপা দৌড়ে পিছিয়ে পরা লিভারপুল এদিন তাদের ডিফেন্সের ভুল গুলি কাঁটিয়ে উঠে পারফেক্ট খেলা দেখিয়ে প্রমান করবে প্রথম দুই ম্যাচের ভুল সাময়িক হোঁচট ছিল মাত্র।    

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...