একজন কার্ড বিক্রেতার স্বপ্নপূরণ

প্রতিদিনকার মতোই দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ক্রেডিট কার্ড বিক্রি করছিলেন ১৭ বছর বয়সী এক আফগান বালক খাইবার ওয়ালি। সারাদিনে বিক্রি হয়েছে মাত্র একটি কার্ড! মনটাও খুব ভালো নেই। কার্ড বিক্রিই যে তাঁর পেশা। তবে নেশাটা ক্রিকেট। দিনের বেলায় ক্রিকেট খেলেন আর ক্রিকেট শেষেই নির্দিষ্ট এক দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে রাত পর্যন্ত ক্রেডিট কার্ড বিক্রি করেন। অভাব অনটনের সংসারে ক্রিকেট তো এক বিলাসিতার নাম।

প্রতিদিনকার মতোই দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ক্রেডিট কার্ড বিক্রি করছিলেন ১৭ বছর বয়সী এক আফগান বালক খাইবার ওয়ালি। সারাদিনে বিক্রি হয়েছে মাত্র একটি কার্ড! মনটাও খুব ভালো নেই। কার্ড বিক্রিই যে তাঁর পেশা। তবে নেশাটা ক্রিকেট। দিনের বেলায় ক্রিকেট খেলেন আর ক্রিকেট শেষেই নির্দিষ্ট এক দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে রাত পর্যন্ত ক্রেডিট কার্ড বিক্রি করেন। অভাব অনটনের সংসারে ক্রিকেট তো এক বিলাসিতার নাম।

ক্রেডিট কার্ড বিক্রি করেই ক্রিকেটের খরচ আর পরিবারের খাবারের সন্ধান করতে হবে। একটা ক্রেডিট কার্ড বিক্রি যেনো তাঁর জন্য অনেক বড় কিছু। তবে, সেদিন রাতে খাইবারের জন্য অপেক্ষা করছিলো খুব বড় কিছু।

দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে কার্ড বিক্রির সময় তাঁর সাথে দেখা করতে গেলো আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (এসিবি) একটি টিম। তাঁরা গিয়েই খাইবারকে খবরটা জানিয়ে বললো, ‘তোমাকে আসন্ন অনূর্ধ্ব ১৯ এশিয়া কাপ ও অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপের জন্য দলে নির্বাচন করা হয়েছে।’

খবর শুনেই যেনো খুশিতে আত্মহারা খাইবার। যিনি খবরটি দিলেন সাথে সাথেই তাঁকে ৫০ আফগানি রুপির একটি কার্ড গিফট করলেন খাইবার। মূহুর্তের মধ্যেই আশেপাশের সবাই মিলে অভিনন্দন জানানো সহ চললো মিষ্টি খাওয়ানোর পর্ব। সেদিন মাত্র একটি কার্ড বিক্রি হলেও খাইবার জানালেন এই খবর তার জন্য এতোই মূল্যবান যেনো তিনি ২০ লাখ আফগানি রুপির কার্ড বিক্রি করে ফেলেছেন এক মূহুর্তে! যে দোকানের সামনে নিয়মিত কার্ড বিক্রি করতেন সেখানের মালিক সহ কর্মচারীরাও এই খবরে বড্ড খুশি। বাড়ি ফিরে এই খবর দিতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন খাইবারের মা। চোখ ভেজা আনন্দের অশ্রুতে মা যে সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছেন ছেলের এই অর্জনে।

২০১৪-১৫ সাল থেকেই কার্ড বিক্রি করেন খাইবার। দিনের বেলা ক্রিকেট খেলা আর রাতে কার্ড বিক্রি – এই ছিলো খাইবারের ডেইলি রুটিন। অল্প কিছু দিন আগেই অনূর্ধ্ব ১৯ দলে খেলার জন্য ট্রায়াল দিয়েছিলেন তিনি। তাঁর ব্যাটিং কোচের মনে ধরতেই তাঁকে ক্যাম্পে ডাকলেন কোচ।

এমনও দিন গেছে রাত এগারোটা পর্যন্ত রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকেও কোনো কার্ড বিক্রি করতে পারেননি খাইবার। কার্ড বিক্রিও হয়নি, তাই ফাঁকা পকেটেই ফিরেছিলেন বাড়ি! আফগান অনূর্ধ্ব ১৯ দলে জায়গা পেতেই কেক কেটে উদযাপন করেন যে দোকানের সামনে কার্ড বিক্রি করতেন সেই দোকানের কর্মীরা। দোকান মালিকের ভাষ্যমতে ‘ব্যবহার আর পরিশ্রমে সবার মন জয় করে নিয়েছিলেন খাইবার। ‘

খাইবার জানান, ‘এসিবি দলে নেওয়ায় আমি এখন বেশ আনন্দিত।’ দলে ডাক পাওয়ার পরদিন সকালেই দেখা গেলো নেটে অনুশীলন করছেন খাইবার। জানালেন আগের রাতে দলে সুযোগ পাওয়ার খবরে ঘুমই আসেনি তাঁর! এতোটাই উচ্ছ্বসিত ছিলেন যে রাতভর নিজের স্বপ্ন নিয়ে ভেবেছেন। আফগানিস্তানের হয়ে খেলবেন এটা ভাবলেও এভাবে স্বপ্ন সত্যি হবে সেটি কল্পনাও করেননি।

তিনি আরো জানান, ‘বাসায় সবাই খুব খুশি ছিলো। মা এই খবর শুনতেই খুশিতে বেশ কান্না করেন। আমি নিজেও ইমোশনাল হয়ে পড়ি। এসিবিকে ধন্যবাদ আমাকে সুযোগ দেওয়ার জন্য এবং টুর্নামেন্টর আগে এক মাস আমাদের জন্য অনুশীলন ক্যাম্প করার জন্য। এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপকে সামনে রেখে কোচরাও অনেক পরিশ্রম করছেন আমাদের জন্য। আমি ভালো প্রস্তুতি নিচ্ছি এবং ইন শা আল্লাহ আমি আমার দলের জন্য সেরাটা দিবো।’

খাইবারের বড় ভাই শাকির। অটো রিক্সায় যাত্রী তুলে দেওয়াই তাঁর কাজ। প্রতিটি অটোতে যাত্রী তুলে দিলেই পান ৫ আফগানি রুপি। ভাইয়ের এমন অর্জনের খবরে অশ্রসিক্ত হন শাকিরও। অভাব-অনটনের মাঝে ছোট ভাইয়ের এমন সাফল্যে বেশ উচ্ছ্বসিত বড় ভাই। শাকির জানান, ‘এই খবর আমাদের জন্য ঈদের মতো।’

আট বছর আগে ২০১৩ সালে ক্রিকেট খেলা শুরু করেন খাইবার। বড় ভাই তাকে বলেছিলেন পরিবারের অবস্থা চিন্তা করে ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়াতে। কারণ খেলার সময় প্রায়ই ইনজুরিতে পড়তেন খাইবার। বাড়ি ফিরলে মা অথবা শাকির নিজেই ভাইয়ের সেবা করতেন। খাইবারের দলে সুযোগ পাওয়ার খবরে পুরো পরিবারে যেনো নেমে এসেছে আনন্দ-উচ্ছ্বাস। বড় ভাই জানালেন, ‘আমরা গরিব হলেও, ভাগ্য আমাদের সহায় হয়েছে।’

হ্যাঁ, জীবন এভাবেই কখনও কখনও পাল্টে যায়!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...