গিলক্রিস্ট ও ‘ঐতিহাসিক’ ফতুল্লা টেস্ট

সেটা ছিল ২০০৬ সাল। ক্রিকেট বিশ্বে তখন অবিসংবাদিত সেরা দল অস্ট্রেলিয়া। বাংলাদেশ সফরে এসে টেস্ট ম্যাচে বিপর্যয়ের মুখ দেখতে শুরু করেছিল রিকি পন্টিংয়ের দল। তবে, সেই ম্যাচটা বাঁচাতে পেরেছিলেন অ্যাডাম গিলক্রিস্ট। তাঁর ইনিংসটা না হলে ফলো অনের মুখ যে পরাক্রমশালী অস্ট্রেলিয়া দেখতো - সে নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানকে? – এই প্রশ্নের জবাবে বড় একটা অংশের কাছ থেকে শোনা যাবে অ্যাডাম গিলক্রিস্টের নাম। সেই অ্যাডাম গিলক্রিস্ট তাঁর টেস্ট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ইনিংস খেলেন বাংলাদেশের মাটিতে।

সেটা ছিল ২০০৬ সাল। ক্রিকেট বিশ্বে তখন অবিসংবাদিত সেরা দল অস্ট্রেলিয়া। বাংলাদেশ সফরে এসে টেস্ট ম্যাচে বিপর্যয়ের মুখ দেখতে শুরু করেছিল রিকি পন্টিংয়ের দল। তবে, সেই ম্যাচটা বাঁচাতে পেরেছিলেন অ্যাডাম গিলক্রিস্ট। তাঁর ইনিংসটা না হলে ফলো অনের মুখ যে পরাক্রমশালী অস্ট্রেলিয়া দেখত – সে নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

‘বাঁজপাখি’ খ্যাত এই উইটেকরক্ষক ব্যাটসম্যান সেবার জ্বলে না উঠলে হয়তো বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাস একটু অন্যভাবে লেখা হত তখন। অ্যাডাম গিলক্রিস্ট বাংলাদেশ সফরের স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে বলেন, ‘আমাদের ধারনা ছিল-বাংলাদেশে যাব, ওদেরকে স্রেফ উড়িয়ে দিব। কিন্তু তারা আমাদের সব ধারনা পাল্টে দিয়েছিল প্রথম টেস্টের পারফরম্যান্স দিয়ে। প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে যখন আমি ব্যাট করতে নামি, তখন দল চরম বিপর্যয়ে।’

২০০৬ সালের এপ্রিল মাসে ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত প্রথম টেস্টে শাহরিয়ার নাফিসের সেঞ্চুরির সুবাদে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ৪২৭ রান করে। জবাবে ব্যাট করতে নেমে এক পর্যায়ে অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ দাড়ায় ৬ উইকেটে ৯৩ রান।

মারকুটে ব্যাটসম্যান সমাদৃত গিলক্রিস্ট সেদিন খেলেছিলেন তার স্বভাব বিরুদ্ধ ইনিংস! তার ২১২ বলে ১৪৪ রানের ইনিংসের কল্যানে অস্ট্রেলিয়া সেদিন ২৬৯ রানের সম্মানজনক স্কোর করতে পেরেছিল।

এই ইনিংস খেলার পথে গিলক্রিস্ট ব্রেট লি’র সাথে ১৮.৩ ওভার, গিলেস্পির সাথে ২৬.৫ ওভার এবং শেষ দুই ব্যাটসম্যান স্টুয়ার্ট ক্লার্ক ও স্টুয়ার্ট ম্যাগগিলের সাথে ১২ ওভার ২২ গজের ক্রিজে কাটিয়েছিলেন। ১৫ চার ও ছয় ছক্কার সাহায্যে গিলক্রিস্টের সাহসী ১৪৪ রানের কল্যানে দারুণ ফর্মে থাকা অস্ট্রেলিয়া সেদিন ফলো অনের লজ্জা এড়াতে সক্ষম হয়।

৯৬ টেষ্টের ক্যারিয়ারে গিলক্রিস্টের শতক ১৭ টি; এই ১৭ ইনিংসে এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যানের স্ট্রাইক রেট ৯৬.৬৪! অথচ বাংলাদেশের বিপক্ষে ইনিংসটির স্ট্রাইক রেট ৬৭.৯২! ফতুল্লায় খেলা দলের চরম বিপর্যয়ে এই ইনিংসটি এখনো স্মরনীয় মারকুটে গিলক্রিস্টের।

অ্যাডাম গিলক্রিস্ট বলেন, ‘লেজের দিকের ব্যাটসম্যানরা তাকে দারুণ সঙ্গ দিয়েছিল, যার কারণে আমি শতক হাঁকাতে পেরেছি। আমার ক্যারিয়ারে এটাই সবচেয়ে কষ্টকর ও ধীরগতির সেঞ্চুরি।’

অবশ্য দ্বিতীয় ইনিংসে ওয়ার্ন এবং গিলেস্পির কল্যানে বাংলাদেশকে ১৪৮ রানে গুটিয়ে দিয়ে অস্ট্রেলিয়া দারুনভাবে খেলায় ফিরে আসে। ৩০৭ রানের জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে বাংলাদেশের কঠিন প্রতিরোধের মুখে পড়ে সফরকারীদল।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত অধিনায়ক রিকি পন্টিংয়ের হার না মানা শতকের কল্যানে তিন উইকেটে জয় অস্ট্রেলিয়া। চতুর্থ ইনিংসেও বড় একটা অংশ জয়ের লক্ষ্যে বাংলাদেশই এগিয়ে ছিল। কিন্তু, পন্টিংয়ের সেঞ্চুরিই সব হিসাব নিকাশ পাল্টে দেয়।

তবে, এটা ঠিক যে টেস্ট ক্রিকেটে সেই আমলে বাংলাদেশের বিপক্ষে এমন কঠিন লড়াইয়ের প্রত্যাশা ছিল পন্টিং বাহিনীর কল্পনারও অতীত! দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়াকে টেস্টে হারানোর জন্য বাংলাদেশ এরপর আরো ১১ বছর অপেক্ষা করে।

অধরা সেই জয় আসে ২০১৭ সালে। সেবার আগস্টে মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে স্পিনারদের দাপটে ২০ রানে অস্ট্রেলিয়াকে হারায় বাংলাদেশ দল।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...