শান্ত ব্রহ্মাস্ত্রটার মতো চিরন্তন

ডিসেম্বরের পাতাঝরা মৌসুমে কদিন আগেই ৩৬ রানে গুঁড়িয়ে যাওয়া, দলের এক নম্বর তারকা ও অধিনায়কের দেশে ফেরা, অন্যতম পেস অস্ত্রের আঙুল ভেঙে বসে যাওয়া, দুটো বাচ্চা ছেলেকে অভিষেক করানো - সবকিছুর ভেতর থেকে লালছোপ লাগা ব্যাটটা ধরে ঠায় ক্রিজে দাঁড়িয়েছিলেন আজিঙ্কা রাহানে।

হোসে মরিনহোর সাক্ষাৎকারগুলো যাঁরা নিয়মিত ফলো করেন তাঁরা জানেন উনি একটা কথা বলেন যে আমার খেলাটা শুরু হয় ম্যাচের আগের দিনের সংবাদ সম্মেলন থেকে। খেলাটাকে দু’ভাগে ভেঙে দিই আমি, একটা টেকনিকাল গেম, একটা মেন্টাল গেম।

লড়াই-এর ময়দানে নামার আগে মেন্টাল গেমটাই খেলার রঙ পালটে দেয়। মানসিকতা, ইন্টেন্ট ফুটে বেরোয় মাঠের সবুজে পা রাখা খেলোয়াড়দের চেহারা থেকে। আদর করে আমরা যাকে বডি ল্যাঙ্গুয়েজ বলে ডাকি।

ডিসেম্বরের পাতাঝরা মৌসুমে কদিন আগেই ৩৬ রানে গুঁড়িয়ে যাওয়া, দলের এক নম্বর তারকা ও অধিনায়কের দেশে ফেরা, অন্যতম পেস অস্ত্রের আঙুল ভেঙে বসে যাওয়া, দুটো বাচ্চা ছেলেকে অভিষেক করানো – সবকিছুর ভেতর থেকে লালছোপ লাগা ব্যাটটা ধরে ঠায় ক্রিজে দাঁড়িয়েছিলেন আজিঙ্কা রাহানে।

খেলাটা ভদ্রলোক শুরু করেছিলেন ড্রেসিংরুম থেকে। বিরাট কোহলির রঙিন পৃথিবী, পূজারার সাদাকালো যাপনের দুটো ভিন্ন মেরুর মাঝখানে আজিঙ্কা রাহানে একেবারে পথচলতি বহমানতা, রাজপথ কিংবা লালমাটি নয় – আমআদমির মতো মফ:স্বলের রাস্তাদিয়ে বাস্তবের খুচরো হাতে খেলাটা শুরু করেছিলেন অ্যাক্সিডেন্টাল ক্যাপ্টেন।

প্যাট কামিন্সের প্রতিটা বলের পর তির্যক চাউনি, ত্রিশঙ্কু আক্রমণের চেনা অজি আগ্রাসন কিংবা উত্তপ্ত গ্যালারির সামনে বরফের মতো শান্ত একটা লোক যেন আগলে রাখলেন দলকে – ‘আমি ক্রিকেট খেলতে এসেছি, মন দিয়ে ক্রিকেটটাই খেলব, আর কিচ্ছু না…’

সেই পা বাড়িয়ে জমাট ডিফেন্সটাই আসলে মানসিকতা হয়ে গেল একটা দলের। অজি ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ড ভাঙতে লেগে তিন ফেল্ডার প্লেস করে ব্যাটের ফেস ঘোরানোর জায়গাটা ব্লক করে বাধ্য করে দিলেন সোজা ব্যাটে খেলতে, নিজের আপাত শান্ত সম্মোহনে মুড়ে দিলেন অজি ঔদ্ধত্যকে, দলের সিনিয়ারদের ভাগ করে দিলেন কাজ, জুনিয়রদের আগলে রাখলেন, কাম অ্যান্ড কম্পোজ অলিখিত স্টেটমেন্টটাই বদলে দিল সবকিছু – ‘হয়তো জিতবো, কিন্তু আমরা হারবো না।’

ভারতের টেস্ট ইতিহাসে আপনি থাকবেন মিস্টার রাহানে। ৩৬ রানে অলআউটের খিড়কি থেকে বক্সিং ডে জয়ের সিংহদুয়ারে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আপনি থাকবেন।

রাহুল দ্রাবিড়ের অ্যাডিলেড আমার, শচীন টেন্ডুলকারের সিডনি আমার। ৩৬ রানে অলআউটের লজ্জা আমার, মেলবোর্নের এই ঐতিহাসিক জয় আমার। দুটো বাচ্চা ছেলেকে দিয়ে অজি ঔদ্ধত্যকে চ্যালেঞ্জ জানানোর কলজে আমার। সবচেয়ে কষ্টের দিন থেকে আজকের এই মুহুর্ত অবধি জার্নিটাও আমার।

আর আমার দেশের ক্রিকেটের এই ওঠাপড়ার বহমানতাকে নিয়েই আমরা থেকে যেতে চাই। শ্রেষ্ঠ বোলিং লাইনআপের বিরুদ্ধে লালছোপ লেগে থাকা আপনার শান্ত ব্রহ্মাস্ত্রটার মতো, চিরন্তন হয়ে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...