ভারতীয় জাতীয় শোকের রিভিউ
মওকা-মওকা বলে যতই ইমোশনে সুরসুরি দেয়া হোক, ক্রিকেট বিজ্ঞানই দিনের শেষে আসল কথাটা বলে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শুরুটায় ভারত জিতলেই অলৌকিক হতো। আর বাকি টুর্নামেন্টে হাল ছেড়ে দেবার মতো কিছু দেখছি না। অন্তত ক্রিকেট বিজ্ঞান সেরকমই বলছে। কিন্তু সেসব নাহয় আজকে থাক। আজ তো ভারতের জাতীয় শোক।
তাঁর ঠিক আগের অধিনায়কের জমানায় হয়নি। সৌরভ গাঙ্গুলির জমানায় হয়নি। মায়, ভিজি পরবর্তী ভারতের সবচেয়ে বিতর্কিত অধিনায়ক আজহারের জমানায়ও হয়নি। বিশ্বকাপে পাকিস্তানের কাছে ভারতের হারার কথা বলছিলাম। কাজেই তাঁকে ধেয়ে আসা সমালোচনার গোলাগুলি গুলো হজম করতেই হবে।
দল নির্বাচন থেকে শুরু। হার্দিক পান্ডিয়া ঠিক কোন কারণে দলে রয়েছেন? কেন প্রথম ম্যাচে রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে খেলানো হলো না? হেরেছি ঠিক আছে, তাই বলে ‘দশ’ উইকেটে? ‘ইনটেন্ট’ কই ? ইত্যাদি। তা সেসবের উত্তর নাহয় তিনিই দেবার চেষ্টা করুন। আমরা বরং একটু বৈজ্ঞানিক ভাবে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করি।
প্রথমেই ভারতের ব্যাটিং নিয়ে কিছু কথা বলে যাই। খ্যাতিমান ক্রিড়া সাংবাদিক গৌতম ভট্টাচার্য দেখলাম লিখেছেন, ভারত-পাকিস্তান সম্মিলিত একাদশ বানালে তিনি সেই একাদশে বাবার ছাড়া পাকিস্তানের আর কাউকেই দেখছেন না। অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে বলছি, বর্তমান টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট নিয়ে তিনি ওয়াকিবহাল নন। হলে শাহীন শাহ আফ্রিদির কথা তাঁর মনে আসতই।
বিশেষত ভারতীয়দের বাঁহাতি পেসার খেলার ক্রনিক ব্যারামের কথা মাথায় রাখলে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে প্রতিটা বল জরুরি। তা রোহিত শর্মা যে বলটা শুরুতেই পেলেন, তাতে তাঁর কিছুই করার ছিল না। সম্ভবত রাহুলেরটাও একই গোত্রের। ওখানেই তো খেলাটার বারোটা বেজে গেলো। আদর্শ ও পাটা টি-টোয়েন্টি উইকেটে কোহলির স্ট্রাইক রোটেশন খুব একটা উপযোগী নয়। সেটাই দরকার ছিল এবার।
১৭০ তাড়া করতে গেলে হয়তো প্রথম দিনের ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো অবস্থা হতো। আর যেটা মেনে নেয়া একান্ত প্রয়োজন, তা হলো এবারে পাকিস্তানের খেলা দাগহীন। কি ফিল্ডিং। কি বোলিং চেঞ্জ। অসম্ভব ভালো। আর রান তাড়া করার সময়ও সুন্দর খেললেন বাবার ও রিজওয়ান। বাবর দুবাইতে ৩১টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। রিজওয়ান ২৩টি।
জানেন ঠিক কখন শিশির টা জমিয়ে আসবে। ততক্ষণ অবধি অপেক্ষা করলেন। মোহাম্মদ শামি ও ভূবনেশ্বর কুমার প্রথম দিকে বেশ কিছু লোপ্পা বল দিয়ে সেই পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করতে সাহায্য করে দিলেন। মোটামুটি ৮ ওভার অবধি ঝুঁকিহীন ক্রিকেট। ৮ ওভারের পর শিশির এসে জাদেজা ও বরুনের কাজ মারাত্মক কঠিন করে দেয়।
নাহলে দুজনেই ওরকম হোলসেল রেটে লং-হপ দেন? টস ভাগ্য আপনার সাথে নেই, আপনার তাগড়া ওপেনার দ্বয় খেলা যায় না এমন দুটো বলে আউট, শিশির এসে আপনার সেরা বোলারদের তলোয়ার থেকে সেফটিপিনে পরিণত করছে, আপনার অলরাউন্ডার আধো-ফিট অবস্থায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন (অবশ্য আপনিও তাঁকে দলে রাখছেন, এই একটা জায়গাতেই মনে হলো কঠোর সমালোচনা করা উচিত), তাহলে আর আপনার কি করার থাকে?
মওকা-মওকা বলে যতই ইমোশনে সুরসুরি দেয়া হোক, ক্রিকেট বিজ্ঞানই দিনের শেষে আসল কথাটা বলে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শুরুটায় ভারত জিতলেই অলৌকিক হতো। আর বাকি টুর্নামেন্টে হাল ছেড়ে দেবার মতো কিছু দেখছি না। অন্তত ক্রিকেট বিজ্ঞান সেরকমই বলছে। কিন্তু সেসব নাহয় আজকে থাক। আজ তো ভারতের জাতীয় শোক।