জাতীয় দলকে কক্ষপথে ফেরাতে চাই
গত কয়েকটা বছর ধরে সামলাচ্ছিলেন বোর্ডের মিডিয়া কমিটি। এবার বোর্ডের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন কমিটি, ক্রিকেট অপারেশন্সের চেয়ারম্যান হলেন সেই জালাল ইউনুস। জাতীয় দল পরিচালনার এই কমিটির দায়িত্ব নিচ্ছেন অনেক গোছানো চিন্তা নিয়ে। অভিজ্ঞ এই সংগঠক দায়িত্ব পেয়েই কথা বলেছেন খেলা-৭১ এর সাথে।
বাংলাদেশের ক্রিকেটের এক অভিজ্ঞ সৈনিক জালাল ইউনুস। ছিলেন ফাস্ট বোলার। অবসরের পর আবাহনীর কর্মকর্তা হিসেবে নাম করেছেন। বোর্ডে আছেন লম্বা সময় ধরে।
গত কয়েকটা বছর ধরে সামলাচ্ছিলেন বোর্ডের মিডিয়া কমিটি। এবার বোর্ডের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন কমিটি, ক্রিকেট অপারেশন্সের চেয়ারম্যান হলেন সেই জালাল ইউনুস। জাতীয় দল পরিচালনার এই কমিটির দায়িত্ব নিচ্ছেন অনেক গোছানো চিন্তা নিয়ে। অভিজ্ঞ এই সংগঠক দায়িত্ব পেয়েই কথা বলেছেন খেলা-৭১ এর সাথে।
বিস্তারিত সাক্ষাতকারে নিজের লক্ষ্য, চাওয়া এবং মিশন সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দিয়েছেন জালাল ইউনুস।
জালাল ভাই এই দায়িত্বটা কিভাবে দেখছেন?
অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। আমাদের জাতীয় দলের পারফরম্যান্স এখন যেমন, তাতে এই ক্রিকেট অপারেশন্সের দায়িত্ব অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং। এটা আমাদেরকে সঠিক দিকে রাখতে হবে। আমি সেটা চেষ্টা করবো। সে জন্য সবার সাপোর্ট দরকার। ক্রিকেটটা যেভাবে চলা উচিত, সেভাবেই যাতে চলতে পারে, সেটা আমাকে নিশ্চিত করতে হবে।
জাতীয় দলের পাইপলাইন নিয়েও তো আপনাকে কাজ করতে হবে?
অবশ্যই। জাতীয় দলের সাফল্যের জন্য শক্ত পাইপলাইন দরকার। পাইপলাইনের ব্যাপার আছে, এ দলের কথাও আছে। এখন আমাদের বেঙ্গল টাইগারস করা হয়েছে। তারা একটা ভূমিকা রাখবে। পাইপলাইন হিসেবে এখানে ‘এ’ দল, হাই পারফরম্যান্স, বেঙ্গল টাইগার্স; ভিন্ন ভিন্ন বিভাগ কাজ করবে। সেটার একটা সমন্বয় হবে। আমাকে দেখতে হবে কতটুকু ক্রিকেট অপারেশন্সের কাজ. কতটুক বেঙ্গল টাইগার্সের কাজ।
এখন আপনাকে আসলে খুব লোকজনের নজরে থাকতে হবে। ন্যাশনাল টিমের পারফরম্যান্সের উপর ভিত্তি করে আপনাকে নিয়ে প্রচুর আলোচনা-সমালোচনা হবে। এটা কি আপনি সামলাতে প্রস্তুত?
আমি গত বছর ধরে তো মিডিয়া ফেস করেছি। ফলে এটা আমার সমস্যা হবে বলে মনে করি না। এই ব্যাপারগুলো অবশ্যই ফেস করতে হবে। আসলে সাফল্য আসুক, সেটাই চাই। তবে ব্যর্থতা এলে তো জবাব আমাকেই দিতে হবে। এটা মেনে নিয়েই আসছি এখানে। ফলে এরকম জবাবদিহিতার জন্য আমি প্রস্তুত আছি।
আপনার প্রায়োরিটিটা কী হবে?
অবশ্যই জাতীয় দলের পারফরম্যান্স। আমি কিন্তু বলছি না যে, সব জিততে হবে আমাদের। হারা-জেতার পেছনে আরও অনেক কিছু কাজ করে। কিন্তু আমি দেখতে চাই যে, আমরা সঠিক প্রসেসে পারফরম করতে পারছি কি না। এই পারফরম্যান্সটাই আমার প্রধাণ প্রায়োরিটি। সেই সাথে টিম ডিসিপ্লিন কিনা সেগুলো আমাকে খেয়াল রাখতে হবে। তারা পারফরম করতে পারছে কিনা, ভালো খেলতে পারছে কিনা সেসব দেখতে হবে। সাপোর্ট স্ট্যাফ যারা থাকে, তাদের আউটপুট পাচ্ছি কি না, দেখতে হবে। এরা সবাই যেনো একটা সুন্দর পরিবেশে খেলতে পারে, পারফরম করতে পারে এবং কাজ করতে পারে; সেটা আমাকে নিশ্চিত করতে হবে।
জাতি হিসেবে আমরা আসলে খুব দ্রুত রেজাল্ট চাই। এখন আমরা আছি একটা পরাজয়ের বৃত্তে। রারাতি এখান থেকে জয়ের ধারায় চলে আসার একটা চাপ তৈরি হবে। সেটা নিতে পারবেন?
তা তো নিতেই হবে। আমি মনে করি, আমাদের ভালো দল আছে। সবকিছু ঠিক আছে। ফলে ভালো ফল আশা করাটাকে আমি খারাপ ভাবে দেখছি না।
তাহলে কেনো আমরা প্রত্যাশামতো ফল পাচ্ছি না?
আসলে আমরা একটা ক্রান্তিকালের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের সিনিয়র প্লেয়াররা অনেকেই যেহেতু অনুপস্থিত থাকছে। সাকিব, তামিম, রিয়াদ সব ফরম্যাটে নিয়মিত না। মাশরাফিও অবসরে। এই জায়গা পূরণ করা বড় সমস্যা। অনেকে বলছে আমাদের পাইপলাইনে প্লেয়ার নাই। আমি সেটা মনে করি না। পাইপলাইনে অনেক প্লেয়ার ছিলো। কিন্তু ওরা তো জায়গা ধরে রাখতে পারে নাই। মোহাম্মদ মিথুন, মোসাদ্দেক সৈকত, সাব্বির রহমান, সাদমান, সাইফ, শান্ত যাই বলো, এরা তো সেকেন্ড সারির প্লেয়ার ছিলো। এরা সুযোগ পেয়েছে। এরা কিন্ত জায়াগা নিয়ে নেওয়ার কথা ছিলো। তা তারা পারেনি। তাই একটা সাময়িক ধাক্কা এসেছে।
তার মানে আপনাদের নতুন এক দল ভরসা করার মত খেলোয়াড় লাগবে?
নতুনই লাগেবে, তা নয়। কোয়ালিটি খেলোয়াড় লাগবে। তার মানে কোয়ালিটি প্লেয়ার হলেই হবে না; আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যারা বড় দলগুলার সাথে লড়াই করবে এমন প্লেয়ার লাগবে। ওই লেভেলের প্লেয়ার দরকার, যারা টিকতে পারে।
ঠিক কীরকম একটা জাতীয় দলের স্বপ্ন দেখেন?
লড়াই করতে পারার মত। শুধু জিম্বাবুয়েকে পেলে লড়াই করতে পারবো, তেমন দল নয়। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে গিয়ে তাদের সাথে লড়াই করে আসতে পারতে হবে। অস্ট্রেলিয়ার সাথে লড়াই করতে হবে। দুনিয়ার যে কোনো প্রান্তে লড়তে পারতে হবে। ফল নয়, লড়াইটা দেখতে চাই।
অনেকদিন মিডিয়া নিয়ে কাজ করলেন। কেমন ছিলো সেই সময়টা?
আমি এই কাজটা খুব উপভোগ করেছি। আমার সাথে মিডিয়ার সম্পর্ক খুব ভালো ছিলো। মাঝে মাঝে একটু আধটু মনমালিন্য হতেই পারে। তবে সেটাও আমি দ্রুত ভুলে যাই। তবে আমি তো এখনো আছি মিডিয়ার সাথেই। আমি তো ভাইস প্রেসিডেন্ট মিডিয়া কমিউনিকেশনের। একেবারে তোমাদের ছেড়ে যাচ্ছি না। আমি মিডিয়া থেকে অনেক কিছু শিখেছি। আমার সাথে সবার সম্পর্ক বেশ ভালো। আমি মিডিয়াকে ধন্যবাদ জানাই আমাকে সেভাবে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য।
আপনি কয়েক প্রজন্মের সাংবাদিকের কাছে বন্ধুর মতো ছিলেন বা আছেন। এই যে সবার সাথে মেশার ক্ষমতা, এটা ক্রিকেট অপারেশন্সে কাজে দেবে?
অবশ্যই। আমাকে তো সব প্রজন্মের ক্রিকেটারকে বুঝতে হবে। কথা হলো, আমি কমিউনিকেশন্স নিয়ে কাজ করেছি। এখানেও আমাকে বোর্ড, খেলোয়াড়, নির্বাচক, কোচ, মিডিয়ার সাথে যোগাযোগটা ভালো রাখতে হবে। ফলে এটা মিল তো আছেই।