মারকাটারি মিয়াঁদাদ

অ্যাডিলেডে ১৯৮৩-৮৪ মৌসুমের অস্ট্রেলিয়া বনাম পাকিস্তানের মধ্যকার টেস্ট। বল হাতে নিয়ে পপিং ক্রিজ থেকে দৌড়ের সময় জাভেদ অনুকরণ করে দেখালেন বব উইলিস, ডেনিস লিলি আর রডনি হগকে।

১.

এইরকম একটা তথ্য পড়েছিলাম ১৬ জুন ২০১৯ সালের ‘সংবাদ প্রতিদিন’ পত্রিকায় – ১৯৮৭ সালের মার্চ। ৯৬ রানে আউট হয়ে জীবনের শেষ টেস্ট ব্যাঙ্গালুরুতে (তখনো ব্যাঙ্গালোর) হেরে মনমরা হয়ে বসে সুনীল গাভাস্কার। ৩০ মিনিট পরে অধিনায়ক কপিল দেব তাঁকে জোর করে ধরে নিয়ে যান পাক ড্রেসিংরুমে, অভিনন্দন জানাতে।

যেতেই মিয়াঁদাদ বলেন, ‘সরি সানি ভাই।’

সানি বলেন ‘কেন?’

জাভেদ – ‘সিলিপয়েন্ট থেকে গালাগালি দেবার জন্য।’

সানি – ‘আমি তো শুনিনি কিছু।’

জাভেদ – ‘সিলিপয়েন্ট থেকে দেড়ঘন্টা টানা স্লেজ করলাম, শোননি?’

সানি – ‘এক একটা দিন একটা স্তরে চলে যাই ব্যাট হাতে। ব্যাটিং ছাড়া আর কিছু মাথায় থাকে না। সিরিয়াসলি কিছু শুনিনি আজ। তোমার মুখ নাড়ানো দেখেছি মাঝে মাঝে। ভেবেছিলাম ফিল্ডারদের কিছু বলছিলে।’

জাভেদ হাসলেন – ‘তাহলে আর সরি বললাম কেন!’

২.

১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে রাউন্ড রবিন লিগে ভারত বনাম পাকিস্তান ম্যাচ।

‘ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা’ এই প্রবাদে প্রবল ধাক্কা দিয়েছিলেন দুই ‘ভদ্রলোক’। তাদের সেই বিরল নৃত্যমুহূর্তের মাধ্যমে বিশ্বের ক্রিকেট অনুরাগীদের লজ্জিত করে।

আমার মতে ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে লজ্জাজনক মুহূর্তগুলির মধ্যে ১৯৯২-এর বিশ্বকাপের সেই মুহূর্তটি প্রথম সারিতেই থেকে যাবে। তারপরে আজ অবধি জাভেদ বলেননি ইয়ে দিল মাঙ্গে ‘মোর’। এবং কিরণও ‘মিয়াঁ, দাদ দেতা হুঁ তেরা’ বলেছেন, এমন অপবাদ কেউ দিতে পারেননি তারপরে কোনো দিন।

৩.

১৯৮১ পার্থ টেস্ট।

জাভেদ রান নিতে দৌড়লেন। পথ আগলে দাঁড়িয়েছিলেন লিলি। ধাক্কা লাগল দুজনের। জাভেদ তাঁকে সরিয়ে দিতে গেলেন। লিলি জাভেদকে লাথি মারলেন। আম্পায়ার চলে না এলে অনেক বড় ঘটনা ঘটতে পারত। বছর তিনেক পরে এই দুজন আবার একটি বিশ্রী ঘটনায় জড়ান কলকাতার সি সি এফ সি-তে একটি ডাবল উইকেট টুর্নামেন্টে।

৪.

অ্যাডিলেডে ১৯৮৩-৮৪ মৌসুমের অস্ট্রেলিয়া বনাম পাকিস্তানের মধ্যকার টেস্ট। বল হাতে নিয়ে পপিং ক্রিজ থেকে দৌড়ের সময় জাভেদ অনুকরণ করে দেখালেন বব উইলিস, ডেনিস লিলি আর রডনি হগকে।

৫.

এই ঘটনাগুলি দ্বারা নিজেকে হাসির খোরাক করে তোলার বাইরেও একজন জাভেদ ছিলেন, যিনি শারজায় চেতনের শেষ বলে ছক্কা মেরে ভারতকে হারিয়েছিলেন, অসংখ্য ম্যাচে পাকিস্তানকে জিতিয়েছিলেন, ছয়টি বিশ্বকাপে (১৯৭৫, ১৯৭৯, ১৯৮৩, ১৯৮৭, ১৯৯২ ও ১৯৯৬) খেলে (শচীন ছাড়া আর কারো সম্ভবত এই রেকর্ডটি নেই) একবার চ্যম্পিয়ন হয়েছিলেন, ৩৩ টি বিশ্বকাপ ম্যাচে ৩০ টি ইনিংসে একটি শতরান ও আটটি অর্ধশতরানসহ ১০৮৩ রান করেছিলেন।

১২৪ টি টেস্টে ২৩ টি শতরান ও ৪৩ টি অর্ধশতরানসহ ৮৮৩২ রান (সর্বোচ্চ অপরাজিত ২৮০), ৯৩ টি ক্যাচ, একটি স্ট্যাম্প ও ১৭ টি উইকেট ছিল তার ঝুলিতে। আর ২৩৩ টি ওডিআই-তে তার অর্জন ছিল আটটি শতরান ও ৫০ টি অর্ধশতরানসহ ৭৩৮১ রান (সর্বোচ্চ অপরাজিত ১১৯), ৭১ টি ক্যাচ, দু’টি স্ট্যাম্প ও সাতটি উইকেট। ক্রিকেটের ইতিহাসে বিতর্কিতদের মধ্যে অন্যতম সেরা জাভেদ ছিলেন একজন উৎকৃষ্ট মানের ব্যাটার, এই সত্যটা ভুলতে দেয়নি জাভেদের স্কোরকার্ড।

১৭ বছরে অভিষেক হয়েছিল তাঁর ওয়ানডেতে, বিশ্বকাপের মাধ্যমে আর ১৮ বছর বয়সে তিনি টেস্ট খেলেছিলেন প্রথমবারের জন্য, প্রথম টেস্টেই ১৬৩ রান করেছিলেন লাহোরে, নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে। অধিনায়ক হয়েছিলেন ২২+ বয়সে। ১৯৫৭ সালের ১২ জুন তাঁর জন্ম হয়েছিল সিন্ধ প্রদেশের করাচিতে। ব্যাট চালানোর সাথে সাথে যে মুখটাও চালাতেন তাঁর কিছু নজির তো আগেই দিলাম।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...