জোসে অ্যাঞ্জেল সানচেজ, আধুনিক রিয়ালের সাফল্যের স্থপতি!

২০০০ সালে ফ্লোরেন্তিনা পেরেজ প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে, সানচেজকে ক্লাবের সাথে যুক্ত করেন। মাত্র ৩৩ বছর বয়সে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে মার্কেটিং ডিরেক্টর হিসেবে পদার্পণ করেন জোসে অ্যাঞ্জেল সানচেজ। ফিলোসোফির ছাত্র ছিলেন বিধায়, ‘টেবিল টক’ এ ছক্কা হাঁকাতে তিনি যেন অদম্য। বিশেষ করে ক্লাবের পরিস্থিতি ব্যাখ্যায় সাংবাদিকদের মোকাবেলা থেকে শুরু করে স্পন্সরশিপ যোগানো, খেলোয়াড় ভেড়াতে বিভিন্ন ক্লাবের সাথে যোগাযোগ ও সরাসরি আলোচনা ইত্যাদি সবদিক সামলান বেশ দুর্দান্তভাবে৷ এমনকি কথিত আছে, প্রথম মেয়াদ চলাকালে স্প্যানিশ মিডিয়ায় পেরেজের বিভিন্ন সমালোচনা বন্ধ করতে সানচেজ-ই মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন।

লিখতে বসছি, একজন জোসে অ্যাঞ্জেল সানচেজ-কে নিয়ে যখন রিয়াল মাদ্রিদের প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনা পেরেজের অনভিপ্রেত মন্তব্যের নানান অডিও ফাঁস, রামোস ও ভারানের ট্রান্সফার ইস্যু নিয়ে সমর্থকদের অসন্তোষ এবং গ্রীষ্মে নতুন কোনো বিগ সাইনিং হচ্ছে কিনা তা নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। তারপরও রিয়াল মাদ্রিদের জেনারেল ডিরেক্টর তথা ক্লাবের প্রধান অধিকর্তাকে নিয়ে কিছু লেখার ভাবনা যখন এসেছে তা লিখে ফেলায় উত্তম বলে মনে করি।

জোসে সানচেজ মূলত ছিলেন ফিলোসফির সাধারণ ছাত্র। ব্যবসায়িক শিক্ষা নিয়ে তার কোনো আগাম পড়ালেখা বা জ্ঞান কিছুই সেভাবে ছিল না৷ ফিলোসোফি পড়ে ভালো শিক্ষক হওয়ার কথা ছিল বা বড় দার্শনিক, বুদ্ধিজীবী বা আইন সংক্রান্ত কাজ করার কথা ছিল কিন্তু কোনো এক ক্ষুরধার মনোভাব থেকে কর্পোরেট দুনিয়ার সাথে জুড়ে গেলেন তিনি৷ তাত্ত্বিক পড়ালেখা না থাকলেও, ‘Marketing & Sales’-এ কিভাবে দাপট দেখাতে হয় তা যেন তার নখদর্পনে ছিল। পড়ালেখা শেষ করেই একটি কোম্পানিতে তিনি যোগ দেন সেলস প্রমোটার হিসেবে।

কিছুদিন পর তিনি বিখ্যাত ভিডিও গেম প্রোডাকশন কোম্পানি ‘Sega’-র মার্কেটিং বিভাগে যোগ দেন। জীবন বড় মোড় আসে এখান থেকেই। ক্যারিশমাটিক ব্যক্তিত্ব ও উদ্ভাবনী চিন্তার মাধ্যমে কর্পোরেট দুনিয়ায় তিনি দ্রুতই ওপরে উঠতে থাকেন। পরবর্তীতে ‘Southern Europe’ কোম্পানিতে প্রথমত মার্কেটিং ডিরেক্টর হিসেবে যোগ দেন, পরবর্তীতে ‘সিইও’ পদে উন্নীত হন।

২০০০ সালে ফ্লোরেন্তিনা পেরেজ প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে, সানচেজকে ক্লাবের সাথে যুক্ত করেন। মাত্র ৩৩ বছর বয়সে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে মার্কেটিং ডিরেক্টর হিসেবে পদার্পণ করেন জোসে অ্যাঞ্জেল সানচেজ। ফিলোসোফির ছাত্র ছিলেন বিধায়, ‘টেবিল টক’ এ ছক্কা হাঁকাতে তিনি যেন অদম্য।

বিশেষ করে ক্লাবের পরিস্থিতি ব্যাখ্যায় সাংবাদিকদের মোকাবেলা থেকে শুরু করে স্পন্সরশিপ যোগানো, খেলোয়াড় ভেড়াতে বিভিন্ন ক্লাবের সাথে যোগাযোগ ও সরাসরি আলোচনা ইত্যাদি সবদিক সামলান বেশ দুর্দান্তভাবে৷ এমনকি কথিত আছে, প্রথম মেয়াদ চলাকালে স্প্যানিশ মিডিয়ায় পেরেজের বিভিন্ন সমালোচনা বন্ধ করতে সানচেজ-ই মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন। সেই সময় জনপ্রিয় স্প্যানিশ সাংবাদিক জোসে মারিয়া গার্সিয়া প্রতিনিয়ত পেরেজকে স্পেন ফুটবলের সবচেয়ে দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি আখ্যা দিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু সানচেজ এর তৎপরতার কারণে গার্সিয়া তার অবস্থান থেকে সরে আসে। সানচেজ এর তৈরি বিশাল নেটওয়ার্ক প্রতিনিয়ত তার কাজগুলোকে সহজ করে তোলে।

সানচেজ বিশ্বাস করতেন, রিয়াল মাদ্রিদের যা সাফল্য তা ক্লাবকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফুটবল ব্র‍্যান্ডে পরিণত করেছে। কিন্তু তাতে ক্লাবের আয়ে খুব বড় পরিবর্তন আসেনি বা নতুন মাত্রা যুক্ত হয়নি। দীর্ঘদিন পর মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে দুইবার চ্যাম্পিয়নস লিগ শোকেসে তুলেও, নতুন ফ্যানবেজ তৈরিতে মাদ্রিদ ব্যর্থ হয়েছে সেটিও সানচেজের পর্যবেক্ষণে ধরা পড়ে৷ কিন্তু মার্কেটে প্রতিযোগিতা ক্রমাগত বাড়ছে, বড় বড় ব্যবসায়ীরা ক্লাব ফুটবলে বিনিয়োগে আগ্রহবোধ করছেন।

অনেক ক্লাবই ব্যক্তি মালিকানা বা লিমিটেড কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে এবং আরো হবে। এই ভাবনা থেকে ক্লাবকে টিকিয়ে রাখার জন্যে শুধু শিরোপা নয়, বিশ্বের জনপ্রিয় ফুটবলারদের দলে ভেড়ানোটাও অতীব জরুরি বলে মনে করলেন। ধীরে ধীরে পেরেজ-সানচেজ জুটি জিদান, রোনালদো নাজারিও, বেকহামদের মতো ফুটবলারকে দলে নিয়ে এসে প্রথম গ্যালাক্টিকোর সূচনা করেন।

বিষয়টি খুবই স্পষ্ট যে এসকল বড় বড় ট্রান্সফারের পেছনে মূল কারিগর ছিলেন সানচেজ নিজেই। ২০০১ সালে মাদ্রিদের বার্ষিক আয় ছিল ১৩৮ মিলিয়ন ইউরো। কিন্তু মাত্র চার বছরের ব্যবধানে ২০০৫ সালে বার্ষিক আয় দাঁড়ালো ২৭৬ মিলিয়ন ইউরো অর্থ্যাৎ দ্বিগুণ! বলে রাখা ভালো, শুধু ডেভিড বেকহামকে দিয়েই রিয়াল মাদ্রিদের আয় এসেছিলো ৬০০ মিলিয়ন ইউরো, যার কৃতিত্ব সানচেজের ওপর বর্তায়।

এভাবে মার্কেটিং নিয়ে নানান কনসেপ্ট ও এর সফল বাস্তবায়নের কারণে ক্লাবে পেরেজের নির্ভরতার বড় প্রতীক হলেন সানচেজ এবং ক্রমশ: তাঁর অবস্থান বার্নাব্যুতে অপরিহার্য হয়ে উঠলো। তাছাড়া পেরেজের প্রথমবার দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই ৪০০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে পুরোনো ট্রেনিং মাঠ বিক্রি করে ঋণ শোধ করা এবং নতুন ট্রেনিং মাঠে স্থানান্তরের প্রক্রিয়ার সাথেও তিনি যুক্ত ছিলেন।

২০০৬ সালে মাঠে দলের ক্রমাগত ব্যর্থতার কারণে পেরেজ একপ্রকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হলে, ক্লাব প্রেসিডেন্ট হিসেবে র‍্যামন ক্যালদেরন স্থলাভিষিক্ত হন। এসময় অনেকেই সানচেজ যুগের শেষ দেখে ফেলেছিলেন, কিন্তু ক্যালদেরনও সানচেজের দায়িত্বে সন্তুষ্ট হন এবং পেরেজের অনুগত হওয়া সত্ত্বেও তাকে মাদ্রিদেই রেখে দেন। তৎকালীন সময়ে স্প্যানিশ মিডিয়ায় কানাঘুঁষা চলতো যে ক্লাব ছাড়লেও পেরেজের প্রভাব এখনো ঠিকই রয়ে গেছে। এর একমাত্র কারণ জোসে এঞ্জেল সানচেজ এর তখনো ক্লাবের সাথে সম্পৃক্ততা।

গোপনীয়তার সাথে পেরেজের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করেন সানচেজ এমন খবরও প্রচারিত হতে থাকে। তবে সানচেজ এতে কখনো বিচলিত হননি, কারণ তিনি জানতেন তৎকালীন সময়ে মাদ্রিদের কাছে আর কোনো বড় বিকল্প ছিল না তাকে ছাড়া। ক্যালদেরন দায়িত্ব নিয়েছে বটে, কিন্তু সেবার নির্বাচন পদ্ধতির স্বচ্ছতা নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠায় তিনিও নানামুখী চাপে ছিলেন। তাই বরং আত্মবিশ্বাসের সাথে বোর্ড মিটিং থেকে শুরু করে সবখানেই পেরেজের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের পক্ষে জোর গলায় কথা বলতেন সানচেজ। এসময় ক্লাবে পেরেজ-পন্থী হিসেবেই সমধিক পরিচিত ছিলেন তিনি। ক্যালেদরন এর সময়কালীন মার্সেলো, গ্যাগো ও হিগুয়েনের ট্রান্সফারের সাথে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত ছিলেন।

২০০৯ সালে আবারো প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এবার দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হন পেরেজ। ফলে আবারো মাদ্রিদে সানচেজ অধ্যায় টিকে যায়। আর এবার ক্লাবের প্রেক্ষাপটে আরো বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠেন সানচেজ। পেরেজ দায়িত্ব নেয়ার পরপরই ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর সাইনিং করাতে সানচেজের তৎপরতা ছিল উল্লেখযোগ্য যাতে তিনি শতভাগ সফল।

এমনকি ২০১০ সালে সদ্য ট্রেবল জয়ী মরিনহোকে মাদ্রিদে নিয়ে আসার পেছনেও মূল অবদান তারই। কাকে ট্রান্সফারে আনা হবে, কে ডাগআউট সামলাবেন এভাবে ক্লাবের মার্কেটিং ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে খেলা সংশ্লিষ্ট বড় বড় সিদ্ধান্তগুলো সানচেজের কাছ থেকে আসতে থাকে বা সিদ্ধান্ত তৈরিতে তিনি শক্ত প্রভাব রাখতে শুরু করেন। এমনকি বিশ্ব ফুটবল ট্রান্সফার মার্কেটেও তখন সানচেজ একপ্রকার রাজা হয়ে উঠেন।

২০০৯ সালে রোনালদো, কাকা, বেনজেমা, জাভিকে একইসাথে দলে এনে তিনি তাই যেন প্রমাণ করেছিলেন। ২০১১ সালে হোয়ে ভালদানো ‘জেনারেল ডিরেক্টর’ এর পদ থেকে বরখাস্তের পর, পদোন্নতি হিসেবে তা গ্রহণ করেন সানচেজ। আর তাতেই আনুষ্ঠানিকভাবে মাদ্রিদের দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তিতে পরিণত হন তিনি। অবশ্য পদ যেমনই থাকুক অনেকের দৃষ্টিতে তিনি বরাবরই হলেন, ফ্লোরেন্তিনা পেরেজের ‘ডান হাত’!

তবে এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই, সানচেজ সবসময় সফল হয়েছেন। বরং ভুল করেছেন, যার খেসারত ক্ষুদ্র অর্থে হলেও ক্লাবকে দিতে হয়েছে। এটি যেমন সত্য ইউনাইটেড হতে বেকহাম বা রোনালদোর ট্রান্সফার সানচেজের কারণেই সম্ভবপর হয়েছিলো, আবার এটিও সত্য ২০১৫ সালে ডি গিয়া ট্রান্সফারে গণ্ডগোল পাকিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। ২০১৩ সালে কার্লো আনচেলত্তির মাদ্রিদে আসেন পেরেজের প্রত্যক্ষ যোগাযোগের মাধ্যমে।

কিন্তু, মাত্র দুই মৌসুম পরে, ট্রফিলেস মৌসুমের যুক্তি দেখিয়ে তাকে বরখাস্ত করার পেছনের সিদ্ধান্ত সানচেজেরই। আনচেলত্তির স্থলে রাফা বেনিতেজকে রিয়াল মাদ্রিদে আনা হয় সানচেজের পরামর্শে। কিন্তু মাত্র ২৫ ম্যাচ পরেই তাকে বরখাস্ত করতে বাধ্য হয় ক্লাব। কোপা দেল রে’র ম্যাচে নিষিদ্ধ ডেনিশ চেরাশিভকে স্কোয়াডে রাখা অতঃপর ম্যানেজার দ্বারা মাঠে নামার সিদ্ধান্তের ফলে মাদ্রিদকে সেই টুর্নামেন্ট থেকে শাস্তিস্বরূপ বহিষ্কার করা হয়। এধরনের লজ্জাজনক পরিস্থিতির দায়টা সানচেজকেই সরাসরি নিতে হয়েছিলো।

এমনকি তৎকালীন স্পন্সর ‘BWIN’ এর সাথে প্রকাশিত স্ক্যান্ডালের কারণে তাকে কড়া সমালোচনার শিকার হতে হয়। কিন্তু সৌভাগ্যবশত প্রতিবারের মতো তিনি সেবারও টিকে যান। ২০১৮ সালে জিদানের ম্যানেজার হতে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত, পেরেজ ও সানচেজের সম্পর্কে তিক্ততা দেখা দেয়। জিদানকে রাজি করাতে না পারার ব্যর্থতায় ক্লাবের সিইও এর প্রতি অখুশি হন পেরেজ। এমনকি পরবর্তীতে লোপেতেগুই অধ্যায়ের অপ্রত্যাশিত ও হতাশ সমাপ্তিও সানচেজের ক্যারিয়ারে বাজে উদাহরণ হয়ে থাকবে।

দিনশেষে সানচেজের ঝুলিতে ব্যর্থতার চেয়ে সফলতায় বেশি। পাঁচ বছরে চারটি চ্যাম্পিয়নস লীগ জয়ের পেছনে পেরেজের ন্যায় সমান কৃতিত্ব তার, তাতে কারোর কখনো দ্বিধা ছিল না। ২০১৪ সালে তার হস্তপেক্ষে হওয়া টনি ক্রুসের ট্রান্সফারটি আজো আধুনিক ক্লাব ফুটবলের ইতিহাসে খেলোয়াড় বেঁচা-কেনায় রীতিমতো আলোচিত বিষয়। তাছাড়া ২০১৪ সালে স্কাউট জুলি ক্যালিফাটকে ক্লাবে আনার ফলে ক্লাবের ট্রান্সফার পলিসিতে বিশাল পরিবর্তন নিয়ে আসেন।

ক্যালিফাটের রিপোর্টের ওপরেই মাদ্রিদ একের পর এক তরুণ প্রতিভাবান ফুটবলার যেমন মার্টিন ওডেগার্ড, ফেদে ভালবার্দে, এডার মিলিতাও, রদ্রিগো, ভিনিসিয়াস জুনিয়র, আন্দ্রে লুনিনকে সাইন করায়। এমনকি মাত্র চার মিলিয়নেরও কম অর্থ দিয়ে আসেন্সিও বা আঠারো মিলিয়নে সেবায়োস এর ট্রান্সফার হাল আমলে রিয়াল মাদ্রিদকে ট্রান্সফার মার্কেটে ভিন্নভাবেই উপস্থাপন করেছে এবং প্রশংসিত করেছে। ক্লাব সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বিশেষত খেলোয়াড়দের সাথে তার সম্পর্ক খুবই সামাজিক হিসেবে চিহ্নিত হয়।

পেরেজে প্রথম মেয়াদের অনেক কিংবদন্তি ও সাবেক তারকা ফুটবলারের ক্লাবে প্রত্যাবর্তন ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব তুলে দেওয়ার পেছনেও সানচেজের প্রভাব রয়েছে। কারণ এদের প্রত্যেকের সাথে সানচেজের ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভালো ও অনেকের মাদ্রিদ আগমণ তাঁর মাধ্যমেই হয়েছিলো।

সুতরাং এই বিষয় খুবই পরিষ্কার যে পেরেজের ‘ডান হাত’ হিসেবেই অনেকে তাকে মূল্যায়ন করলেও, সানচেজ নিজস্ব স্বকীয়তা নিয়েই কাজ করে গেছেন। এতে কখনো সফল হয়েছেন, কখনো ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছেন। এমনকি কখনো কখনো পেরেজের ওপরে সিদ্ধান্ত গ্রহণে ছড়ি ঘুরিয়েছেন৷ আর পেরেজও তাকে যথেষ্ট স্বাধীনতা দিয়েছেন। সানচেজ যেখানে মাদ্রিদকে প্রাইভেট কোম্পানি বানানোর পক্ষে, সেখানে পেরেজের ভাবনা সম্পূর্ণ বিপরীত। এভাবেই পারস্পরিক কর্মে ও শ্রদ্ধায় রিয়াল মাদ্রিদকে এই জুটি ক্রমান্বয়ে এগিয়ে নিয়ে গেছেন।

মার্কো আসেন্সিও এর সাইনিং এরপরে, বায়ার্ন মিউনিখ ও স্টুটগার্টের সাবেক টেকনিক্যাল ডিরেক্টর মাইকেল রাশকে বলেছিলেন, ‘রিয়াল মাদ্রিদের উচিত বার্নাব্যুতে সানচেজ এর ভাষ্কর্য নির্মাণ করা!’ তাছাড়া তিনি আরও বলেছিলেন, ‘আমাকে সবসময়ই তার শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব, অসাধারণ জ্ঞান, সহানুভূতিশীল মনোভাবের মিশ্রণ মুগ্ধ করে। তার মধ্যে বন্ধুপরায়ণ আচরণ, পেশার প্রতি কর্মদক্ষতা ও সহজাত নেতৃত্বগুণ রয়েছে। যেকোনো আলোচনা তিনি বিশ্বাস ও শ্রদ্ধার মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন।’

ফাঁকে ফাঁকে অনেক গুঞ্জন উঠেছিল তিনি মাদ্রিদ ছাড়ছেন। আলোচনায় গন্তব্য কখনো ওল্ড ট্রাফোর্ড, কখনোবা জর্হে মেন্ডিসের প্রতিষ্ঠান, কখনোবা অন্যকিছু। কিন্তু বাস্তবে তা কখনো হয়নি। ধারণা করা হয় মাদ্রিদ হতে তার আয় বর্তমানে তিন মিলিয়নের বেশি।

জোসে এঞ্জেল সানচেজ, রিয়াল মাদ্রিদের আধুনিক সাফল্যের পেছনে যার অবদান অনস্বীকার্য তো বটেই। বরং অনেকে তাকে এই শতাব্দীর মাদ্রিদ সাফল্যের স্থপতি বলতেও দ্বিধা করেন না! গত পাঁচটি চ্যাম্পিয়ন লীগ জয়ে তার প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে, যার চারটিই জিতেছেন ক্লাবের জেনারেল ডিরেক্টর পদে আসীন হয়ে৷ বলা হয়ে থাকে, পেরেজের দায়িত্ব কেবল প্রেসিডেন্ট হিসেবে তত্ত্বাবধান করা। ক্লাব তো চালান সানচেজই!

অবশ্য তার পদ এর দায়িত্বও মূলত তাই। পেরেজ তার নিজস্ব ব্যবসা নিয়ে ব্যতিব্যস্ত সময় পার করেন, যেখানে ক্লাবের ট্রেনিং গ্রাউন্ডে নিজ অফিসে বসে সার্বিকভাবে সব পরিচালনা করতে হয় সানচেজকে। অনেকেই বলেন, পেরেজের মতো একইভাবে সানচেজ মাদ্রিদের বিগত কয়েক বছরের সকল অর্জনের সমান দাবিদার। বরং গত দুই দশকে সানচেজ একপ্রকার নিরবিচ্ছিন্ন ও নিভৃতভাবে মাদ্রিদের জন্য কাজ করে গেছেন। অথচ আলোচনা বোধহয় তাকে নিয়ে খুব কমই হয়। পর্দার আড়ালে থেকে নিজের দায়িত্ব ঠিকঠাক করে এগিয়ে নিতে তার জুড়ি নেই।

সানচেজ বরাবরই ইতিবাচক ও প্রাণবন্ত মানুষ এবং যেকোনো পরিস্থিতিতে চমক দেখাতে পারেন। মাদ্রিদ সমর্থকদের বহুল প্রতিক্ষিত ‘এমবাপ্পে সাইনিং’ অনেকটাই হয়তো নির্ভর করছে সানচেজ এর কারিশমার ওপরেই!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...