ক্রিকেটে চূড়ান্ত পেশাদারিত্ব আসার দিন

অ্যামেচার ক্রিকেটার আর প্রফেশনাল ক্রিকেটার- এ দুই শ্রেণিভেদে বহু বছর ধরেই ক্রিকেট খেলা হয়ে আসছিল। ১৯৬২ সালে ইংল্যান্ডের ১৭ টি কাউন্টি দল মিলে ঠিক করলো, শতবর্ষেরও বেশি সময় ধরে চলমান এ শ্রেণি ভেদাভেদ আর ক্রিকেটে থাকা উচিত না। যারা ক্রিকেট খেলবেন তারা সবাই ক্রিকেটার নামে অভিহিত হবেন। খেলোয়াড়কে আলাদাভাবে অ্যামেচার কিংবা প্রফেশনাল শ্রেণিভুক্ত করার কোনো যৌক্তিকতা নেই।

অ্যামেচার ক্রিকেটার আর প্রফেশনাল ক্রিকেটার- এ দুই শ্রেণিভেদে বহু বছর ধরেই ক্রিকেট খেলা হয়ে আসছিল। ১৯৬২ সালে ইংল্যান্ডের ১৭ টি কাউন্টি দল মিলে ঠিক করলো, শতবর্ষেরও বেশি সময় ধরে চলমান এ শ্রেণি ভেদাভেদ আর ক্রিকেটে থাকা উচিত না। যারা ক্রিকেট খেলবেন তারা সবাই ক্রিকেটার নামে অভিহিত হবেন। খেলোয়াড়কে আলাদাভাবে অ্যামেচার কিংবা প্রফেশনাল শ্রেণিভুক্ত করার কোনো যৌক্তিকতা নেই।

মূলত ক্রিকেট খেলে যারা কোনো অর্থ উপার্জন করতো না তাদের অ্যামেচার ক্রিকেটার বলা হতো। আর যারা ক্রিকেট খেলে অর্থ আয় করতো তাদের বলা হতো প্রফেশনাল ক্রিকেটার৷ ক্রিকেটের এই শ্রেণিভেদ শুরু হয়েছিল ১৭০৯ সালে। যদিও এর আগে অ্যামেচার ক্রিকেটারদের বলা হতো ‘জেন্টেলম্যান’ আর প্রফেশনাল ক্রিকেটারদের বলা হতো ‘প্লেয়ার্স’।

১৭৭০ সাল থেকে হ্যাম্বলডন ক্লাব তাদের খেলোয়াড়দের খেলার বিনিময়ে অর্থ দেওয়া শুরু করে। আর ১৭৮৭ সালে জেন্টেলম্যানস ক্লাব নামে ক্লাব শুরু করে লর্ডস যেখানে শুধু জেন্টেলম্যানদেরই যাওয়ার অনুমতি ছিল। যদিও, এমসিসি প্রায় প্রথম থেকেই পেশাদার কিছু ক্রিকেটারদের নিয়োগ দেয় এবং তাদের সাথে চুক্তি করে। এটি প্রফেশনাল ক্রিকেটার তথা সে সময়ের টার্ম প্লেয়ার্সদের মধ্যে কিছুটা ক্ষোভের সৃষ্টি করেছিল। কারণ জেন্টেলম্যানস ক্লাবে পেশাদার, অপেশাদার- দুই ধরনের ক্রিকেটারই ছিল।

সময়ের সাথে সাথে ক্রিকেটের শ্রেণিভেদ আরো শক্তিশালী হয়ে উঠল। ক্রিকেট খেলা তখন ভদ্রলোক, বেশিরভাগ উচ্চ এবং উচ্চ-মধ্যবিত্ত থেকে আগত মানুষদের খেলা হিসেবে বিবেচিত হতো। ট্যুরের সময় তারা সবধরনের ফ্যাসিলিটিজ, এমনকি আলাদা ড্রেসিং-রুমও পেতেন। যেখানে প্রফেশনাল ক্রিকেটাররা বেশিরভাগই এসব সুযোগ পেতেন না।

৭ জুলাই, ১৮০৬। এ দিন লর্ডসে জেন্টেলম্যানস ক্লাবের সাথে প্রথমবারের মতো মুখোমুখি হয় প্লেয়ার্স ক্লাব। সপ্তাহ দুয়েকের ব্যবধানে তারা আবারও মুখোমুখি হয়। দুটি ম্যাচেই বড় ব্যবধানে জয়ী হয় জেন্টেলম্যানস ক্লাব।
অবশ্য ১৮১৯ সালের পর থেকে আধিপত্য বিস্তার করতে থাকে প্লেয়ার্সরাই। পরবর্তীতে ২১ বারের দেখায় ২০ বারই জেতে তারা। বাকি একটি ম্যাচ হয় ড্র।

যাই হোক, ফাদার অফ ক্রিকেট যাকে বলা হয় সেই ডব্লিউ জি গ্রেস নিয়মিত ক্রিকেট অনুশীলন করলেও তিনি খেলতেন অপেশাদার দলের হয়ে। কারণ তার ব্যবসা থেকে তিনি যা আয় করতেন তা প্রফেশনাল ক্রিকেটারদের চেয়েও বেশি ছিল।

বিংশ শতাব্দীতে এসেও ক্রিকেটে এই শ্রেণিভেদের তখনো কোনো পরিবর্তনের দেখা মেলেনি। ১৯১৩ সালে স্যার হোম গর্ডন লিখলেন, ‘কাউন্টি দলের একাদশে ন্যূণতম ৬ জন অ্যামেচার ক্রিকেটার যুক্ত করা প্রয়োজন।’ তার আগের বছরে ক্রিকেটার সি বি ফ্রাই লেখেন, ‘কাউন্টি দলগুলো যদিও ভাল ক্রিকেট খেলছে কিন্তু তারা দক্ষতা আর নৈতিক প্রতিপত্তির সংমিশ্রণ ঘটাতে পারেনি।’

এরপর থেকে কাউন্টি দলগুলোতে কিছু অ্যামেচার যুক্ত করা হয়৷ কিন্তু তারা ক্লাবভেদে আয় করতেন প্রফেশনালদের চেয়েও কম। ১৯২০ সালের দিকে কাউন্টি ক্রিকেট বেশ প্রতিযোগিতা পূর্ণ হতে থাকে। কাউন্টি দলগুলো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্যে তখন প্রফেশনালদের দিকে নজর দিতো বেশি। এ কারণে অবহেলিত হতে থাকেন অ্যামেচার প্রতিভাবান বেশ কিছু ক্রিকেটার।

১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কাউন্টি ক্রিকেটে কর আরোপ করা হয়। যার ফলে অ্যামেচার ক্রিকেটারদের জন্য সেটা এক প্রকার জুলুমই হয়ে যায়। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অনেক প্রফেশনাল ক্রিকেটার মারা গেলে অ্যামেচার ক্রিকেটারদের কাউন্টি ক্রিকেটে বেশ ভালই সুযোগ মেলে।

১৯৫৮ সালে এমসিসি অ্যামেচারদের ক্রিকেটে রাখার ব্যাপারে বেশ একমত ছিল। এমনকি তারা ঐতিহাসিক ভাবে ক্রিকেটে যুক্ত এই ‘অ্যামেচার’ টার্মটিকে ধরে রাখাতেও জোরালো ভাবে একমত ছিলো। কিন্তু বছর চারেকের মধ্যে এমসিসি তাদের আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাঁড়ায়। তারা অ্যামেচার নামটিকে ক্রিকেট থেকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে।

১৯৬০ কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপে দেখা গেল ১৭ টা দল মিলিয়ে প্রায় ৫০ জন ক্রিকেটার অ্যামেচার ক্রিকেটার। এর মধ্যে আবার ১২ জন ১২ টা কাউন্টি দলের অধিনায়ক।

আর এর ঠিক ২ বছর পর ১৯৬২ সালে বহু মতামতের উপরে ভিত্তি করে এমসিসি ক্রিকেটের এই শ্রেণিভেদ বাদ দিয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে। বিবৃতিটা ছিল ঠিক এরকম-

The wish to preserve in first-class cricket the leadership and general approach to the game traditionally associated with the Amateur player.
The Committee rejected any solution to the problem on the lines of abolishing the distinction between Amateur and Professional and regarding them all alike as ‘cricketers.’

They considered that the distinctive status of the amateur cricketer was not obsolete, was of great value to the game and should be preserved.

১৯৬২ সালের ২৬ নভেম্বরে গৃহীত হওয়া সে সিদ্ধান্তে ক্রিকেটে ‘অ্যামেচার’ নামক ঐতিহাসিক সে টার্মটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

কিংবদন্তি ক্রিকেটার জ্যাক হবস অবশ্য সে সিদ্ধান্তে দু:খই প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘ক্রিকেট থেকে অ্যামেচারদের বিলুপ্তি হওয়া দেখে বেশ দুঃখই হচ্ছে। কারণ এটি ক্রিকেটে একটি যুগের সমাপ্তির ইঙ্গিত দেয়। তারা ক্রিকেটের দুর্দান্ত এক সম্পদ ছিল।’
হবসের সাথে তাল মিলিয়ে ক্রিকেট সাময়িকী উইজডেন লিখেছিল –

It seems strange that within four years the opinions of some people appear to have been completely reversed. We live in a changing world. Conditions are vastly different from the days of our grandparents; but is it wise to throw everything overboard?

We have inherited the game of cricket. The story of its development during the last hundred years is appropriately given full treatment in this edition of Wisden. Right through these hundred years the amateur has played a very important part.” It added: “By doing away with the amateur, cricket is in danger of losing the spirit of freedom and gaiety which the best amateur players brought to the game.

জেন্টেলম্যানস আর প্লেয়ার্সদের মধ্যকার শেষ ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৬২ সালের ৮ সেপ্টেম্বরে। এর পরের বছর থেকে চালু হয় ৬৫ ওভারে নক আউট টূর্ণামেন্ট। আর এরপর থেকেই ক্রিকেট জনসাধারণের খেলায় পরিণত হয়।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...