অবিকশিত তারকা: মুছে যাওয়া দিন ও অবিবেচক ট্রল

রোকনদের প্রজন্মে ফিটনেস নিয়ে কড়াকড়ি ছিলো না, কোড অব কনডাক্ট নিয়ে প্রফেশনালিজম ছিলো না, আজকের তিনি যদি বিপিএল খেলার সুযোগ পেতেন, হয়তোবা কনফিডেন্সের জোরেই পারফরম করে ফেলতেন। সাকিব আল হাসান যেমন। তার ব্যাটিং, বোলিং কোনোটাতেই আলাদা করে মুগ্ধ হবেন না, কিন্তু তিনি চ্যাম্পিয়ন পারফরমার, কারণ কনফিডেন্সের জোরেই তিনি কিছু একটা করতে পারেন।

বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের কয়েকজন ক্রিকেটারের নাম বলতে বললে উত্তর যদি হয় আল শাহরিয়ার রোকন, মোহাম্মদ আশরাফুল, আফতাব আহমেদ, অলক কাপালী, তুষার ইমরান, আতহার আলী খান, তালহা জুবায়ের, মোহাম্মদ শরীফ এবং সাইফুল ইসলাম, তাহলে ধরে নিতে হবে কোথাও একটা খটকা আছে।

বিশেষত, এই লিস্টে আশরাফুলের নাম দেখে আরও কনফিউশন বাড়তে পারে। আশরাফুল হলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রথম ইন্টারন্যাশনাল সুপারস্টার, তার সাথে তালহা জুবায়ের বা তুষার ইমরানের নাম আসে কোন যুক্তিতে। নাম আরও অনেকেরই আসবে ক্রমান্বয়ে , লিমিটের কারণে নমুনা হিসেবে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে স্রেফ।

আলশাহরিয়ার রোকনের ক্যারিয়ার স্ট্যাট হলো ১৫ টেস্ট, ২২ ওয়ানডে, ওয়ানডে গড় ১৩-এর আশপাশে, আর টেস্ট গড় ২২-এর একটু বেশি। এরকম একজন ব্যাটসম্যানকে নিয়েই সবচেয়ে বেশি কথা বলতে চাই। আমি সেই সার্ক ক্রিকেট যুগ থেকে বাংলাদেশের খেলা ফলো করি, এবং এখনো করছি। বর্তমানের তামিম বা সাব্বিরকে মাথায় রেখেই বলছি, আমার দেখা এযাবৎকালের বাংলাদেশের সবচাইতে স্টাইলিস্ট ব্যাটসম্যান আল শাহরিয়ার রোকন।

তার মতো রিস্ট প্লেয়িং অদ্যাবধি বাংলাদেশের কারো মাঝে তো দেখিইনি, ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেটেও মার্ক ওয়াহ বা আজহারউদ্দিন ছাড়া এতো নিখুঁত রিস্ট প্লেয়ার পাওয়া দুরূহ। সাম্প্রতিককালে সাব্বির রহমানের মাঝে রোকনসুলভ এলিগেন্স বা চোখজুড়ানো তৃপ্তি কিছুটা পাওয়া যায়, তবু মাঠে বসে রোকনের বেশ কিছু ইনিংস দেখার সুবাদে সাব্বিরকেও স্টাইলের দিক থেকে তার পিছনেই রাখবো, যদিও প্রতিভা বা সামর্থের বিচারে সাব্বির তার চাইতে বহুলাংশে এগিয়ে থাকবেন। যে ট্যালেন্ট কনসিসটেন্ট পারফরম্যান্সে ট্রান্সলেটেড হয় না, সেই ট্যালেন্ট একটা টিমের জন্য বারডেন, কিন্তু দর্শকের চোখে তো স্টাইল বিরাট ব্যাপার হতেই পারে। সেই স্টাইল প্রশ্নে আল শাহরিয়ার এই এতোবছর পরেও ইউনিক একজন।

রোকনের সমসাময়িক তরুণ ব্যাটসম্যান ছিলেন বিদ্যুৎ, অপি, হাবিবুল বাশার, দুর্জয়। এদের প্রায় প্রত্যেকেই নিজেদের ইন্টারভিউয়ে তাদের প্রজন্মের সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে রোকনকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম ফার্স্ট ক্লাশ সেঞ্চুরিয়ান তিনি (৯৭-৯৮ মৌসুমে নিউজিল্যান্ড সফরে ১০২ করেছিলেন), অনুর্ধ্ব১৯ এর অধিনায়ক ছিলেন, বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টে ৭ নম্বরে ব্যাটিং করেছিলেন। এরকম যার সম্ভাবনা ছিলো সেই ব্যাটসম্যানটি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেটে কিছুই করতে পারলেন না, বরং বাংলাদেশের প্রতিভাবানদের নিয়ে নিয়মিত টিটকারি করতে উদাহরণ হিসেবে দর্শক তাকে বেছে নেয়, এর অন্তর্নিহিত কারণটা কী আসলে?

এটা বুঝার জন্য বাংলাদেশের ক্রিকেটকে তিনটি ফেজ বা পর্যায়ে বিভক্ত করতে হবে, সেই সময়ের ক্রিকেটারদের মাইন্ডসেট বুঝতে হবে, ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেটের স্ট্যান্ডার্ড বুঝতে হবে। ২০০০ পূর্ববর্তী, ২০১০ পূর্ববর্তী এবং ২০১০ পরবর্তী। অর্থাৎ ২০১০ বাংলাদেশের ক্রিকেটে একটি মাহেন্দ্রক্ষণ বা পট পরিবর্তনের কনজাংশন পয়েন্ট। রোকনের ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল ২০০০ সালের বেশ কয়েকবছর আগে, তিনি বিকেএসপির স্টুডেন্ট ছিলেন।

তারা যখন বিকেএসপিতে ভর্তি হন তখন মোনেম মুন্না, কায়সার হামিদ, আসলামের মতো ফুটবলাররা জাতীয় তারকা, আবাহনী-মোহামেডানে ফুটবল ম্যাচ নিয়ে দেশ দুইভাগে বিভক্ত হয়ে যেতো (একটা ছড়া খুব চলতো তখন: ইলিশ মাছের তেরো কাঁটা, বোয়াল মাছের দাঁড়ি, আবাহনী (মোহামেডানের সমর্থক হলে) ভিক্ষা করে মোহামেডানের বাড়ি। আর আবাহনীর সমর্থক হলে নামের পজিশন অদল-বদল হতো), মারামারি বেঁধে যেত।

সেই সময়ে ক্রিকেট খেলার উদ্দেশ্যে বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়াটা একটু সাহসী সিদ্ধান্ত। ভারত, পাকিস্তান আর শ্রীলংকা জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা লিগ খেলতে ঢাকায় আসতো, তাদের সাথে ২-১টা ম্যাচ একই দলে বা বিপক্ষ দলে খেলাই আমাদের ক্রিকেটারদের বিরাট প্রাপ্তি ছিলো। সেই সময়ের একজন ক্রিকেটারের প্রতিভাবান বিবেচিত হওয়া মানে আসলে খ্যাপ খেলার বাজারে দর বেড়ে যাওয়া, আর তেমন কিছু নয়।

রোকনও নিশ্চয়ই প্রচুর খ্যাপ খেলেছেন তার ক্যারিয়ারে (শুধুমাত্র মানিকগঞ্জ শহরেই তো তার অনেকগুলো ম্যাচ দেখেছি, অন্য জেলাগুলোতেও আনুপাতিক হারে খেলার কথা)। তাদের সময়ে ক্রিকেট নিয়ে সুদুরপ্রসারী কোনো ভিশন ছিলো না, ক্যারিয়ার ছিলো না, ফলে অন্যদের মতো তারও কোনো স্ট্রং মাইন্ডসেট তৈরি হয়নি। তবু এই যুক্তিকে আমি পারফরম না করার কারণ হিসেবে মনে করতে চাই না, এটা তো বিদ্যুৎ, অপি বা হাবিবুল বাশারের জন্যও প্রযোজ্য। কিন্তু রোকন পারেননি সম্ভবত অতিপ্রতিভাবান তকমা পেয়ে যাওয়ায়।

যেহেতু অন্যদের চাইতে তিনি প্রতিভাবান, ইন্টারন্যাশনাল একজন বোলারের বোলিং খেলতে গিয়ে লোকাল বোলারদের এপ্রোচে খেলবেন, নাকি টাফ ক্রিকেট মে্ন্টালিটিতে খেলবেন এরকম একটা জট পাকিয়ে যাওয়ার কথা। হাবিবুল ব্যর্থ হলে কথা কম হবে, কারণ শোয়েব আখতারের বল খেলার মতো প্রতিভা হয়তো তার নেই, কিন্তু রোকন তো প্রতিভাবান, সে যদি না পারে তাহলে কিসের প্রতিভাবান!- এরকম একটা অদৃশ্য ‘Peer Pressure’ তাঁর মধ্যে কাজ করে থাকতে পারে হয়তো। কিন্তু ক্রিকেট খেলায় ব্যাটসম্যানের ডিসিশন মেকিংয়ের জন্য বরাদ্দ সময় তো কয়েক সেকেন্ড মাত্র, এই বলয় থেকে বের হওয়ার আগেই দেখা গেছে তার শট খেলা শেষ।

রোকনকে নিয়ে আরেকটা সমস্যা ছিলো ব্যাটিং অর্ডার। তিনি মিডল অর্ডার, ওপেনিং- সব পজিশনে ব্যাটিং করেছেন। এতো ছোট্ট ক্যারিয়ারে ব্যাটিং পজিশন নিয়ে এতো এক্সপেরিমেন্ট নেয়ার মতো মেন্টাল স্মার্টনেস হয়তোবা তার ছিলো না। তিনি বরাবরই লেগ বিফোর অথবা স্লিপে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়েছেন, অর্থাৎ আউটসুইং বল খেলার ক্ষেত্রে সমস্যা ছিলো, ইনকামিং বল এ দুর্বলতা ছিলো।

তার মানে নতুন বল খেলার ক্ষেত্রে দক্ষতার কমতি ছিলো, সেটা তো তামীম ইকবাল আসার আগে বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের জাতীয় সমস্যা ছিলো। তাই রোকন হয়তোবা সমসাময়িকদের চাইতে স্কিলে এগিয়ে ছিলেন না, স্টাইলটাই তার একমাত্র সম্পদ ছিলো বোধকরি। শুধু স্টাইল দিয়ে তো জাতীয় দলে খেলা যায় না, রান করতে হবে, সেটা যদি চন্দরপালের মতো কুৎসিত স্টাইলেও আসে কারো আপত্তি নেই।

রোকনদের প্রজন্মে ফিটনেস নিয়ে কড়াকড়ি ছিলো না, কোড অব কনডাক্ট নিয়ে প্রফেশনালিজম ছিলো না, আজকের তিনি যদি বিপিএল খেলার সুযোগ পেতেন, হয়তোবা কনফিডেন্সের জোরেই পারফরম করে ফেলতেন। সাকিব আল হাসান যেমন। তার ব্যাটিং, বোলিং কোনোটাতেই আলাদা করে মুগ্ধ হবেন না, কিন্তু তিনি চ্যাম্পিয়ন পারফরমার, কারণ কনফিডেন্সের জোরেই তিনি কিছু একটা করতে পারেন।

এখন যখন সাব্বিরকে ব্যাটিং করতে দেখি, আমার বারবার রোকনের কথা মনে পড়ে, দীর্ঘদিন ধরেই তিনি নিউজিল্যান্ড প্রবাসী, যেখানে ডিসেম্বরে খেলতে যাচ্ছে আমাদের দল। সাব্বিরের সৌভাগ্য বলতে হবে, ২০-২৫ বছর আগে ক্যারিয়ার শুরু করলে তিনিও আরেকজন আলশাহরিয়ার রোকন হয়েই থাকতেন।

বাংলাদেশ ক্রিকেটের কোনো লিখিত ইতিহাসে রোকনের জন্য ২ লাইন বরাদ্দ থাকবে না, সেটা তার নিজের দোষেই। তবু বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে আগ্রহী এমন যে কোনো গবেষকের জন্যই জানা প্রয়োজন টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পূর্বেই কী মনোমুগ্ধকর স্টাইলিস্ট একজন ব্যাটসম্যান আমাদের ছিলো; একটু গাইডলাইন আর ভাগ্যের সামান্য ছোঁয়া পেলে আশরাফুল নন, রোকনই হতেন বাংলাদেশের প্রথম সুপারস্টার। সেটা হয়নি এটা ক্রিকেটের জন্যই ক্ষতি, তবু অন্তত আমি একজন এখনো আছি যে বিশ্বাস করে রোকন একজনই ছিলেন এবং থাকবেন। প্রতিভাবানের খেতাব, খ্যাতিগুলো নাহয় তামিম, সাব্বিদের জন্যই তোলা থাকুক।

আমাদের দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের মান খুবই জঘন্য, ক্রিকেট অবকাঠামো বলতে কিছু নেই, এসব কিন্তু পুরনো কথা। তবু এর মধ্য দিয়েই আমরা তামম ইকবালের মতো ব্যাটসম্যান পেয়েছি, মুস্তাফিজ, মাশরাফির মতো বোলার পেয়েছি, সাকিবের মতো অলরাউন্ডার তৈরি হয়েছে। এরকম হ-য-ব-র-ল অবস্থার মধ্যেও যেসব ক্রিকেটার বের হয়েছেন তাদের প্রতিভা অতুলনীয়; সামান্য পরিচর্যা পেলে এরা আরও কোন লেভেলে চলে যেতেন সেটা বলাই বাহুল্য।

তবু ব্যতিক্রম দিয়ে তো আর সিস্টেম চলে না, সিস্টেম বানাতে হয় মিডিওকার বা এভারেজদের জন্য। সেই সিস্টেম প্রশ্নে আমাদের ক্রিকেট কাঠামো বরাবরই নাজুক ছিলো, এবং এখানকার পারফরমাররা ইন্টারন্যাশনাল পর্যায়ে হাসির খোরাক যুগিয়েছে। এহসানুল হক সেজান, ফয়সাল হোসেন ডিকেন্স, সানোয়ার হোসেন, হান্নান সরকার, আনোয়ার হোসেন, মেহরাব জুনিয়র এরা বছরের পর বছর লীগে রান করে গেছেন, কিন্তু কম্পিটিটিভ ক্রিকেটে স্লিপে ফিল্ডারদের ক্যাচ প্র্যাকটিস করিয়েছেন। খুব খারাপ লাগে যখন দেখি একশ্রেণীর দর্শক সেজান আর রোকনকে একই পাল্লায় মাপছেন।

বাংলাদেশ ক্রিকেটে পালাবদলের শুরু হয় ২০১০ সালে হোম সিরিজে নিউজিল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করার মাধ্যমে। তবে ১৯৯৯-২০০৮ এই ১০ বছরের ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট পরিক্রমাটাও একটু মাথায় রাখতে হবে। এই সময়টা পুরোটাই অস্ট্রেলিয়ার একাধিপত্যের। ক্রিকেট খেলাটাকে তারা চরম বোরিং একটা পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল; খেলা শুরু হওয়ার আগেই যদি জানা থাকে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা বিপক্ষ দলের বোলারদের দুমড়ে-মুচড়ে দেবে, বোলাররা ব্যাটসম্যানদের নাস্তানাবুদ করে ছাড়বে- সেই ম্যাচ দেখার কোনো উত্তেজনা কি অবশিষ্ট থাকে!

এই একাধিপত্যের কারণে চরম সর্বনাশটা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার রিজার্ভ বেঞ্চ পোক্ত হয়নি, অন্য দেশগুলোও হতাশায় পড়ে কম্পিটিশনের মোটিভেশন হারিয়ে ফেলেছে। ফলে ২০০৮ এ সর্বজয়ী অস্ট্রেলিয়া সাম্রাজ্যের পতনের সাথে সাথে সামগ্রীক ক্রিকেটের স্ট্যান্ডার্ডও নিচে নেমে যাওয়া শুরু করে। এখন ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট একটা ট্রানজিশন পিরিয়ড পার করছে, যেটা শেষ হতে হয়তোবা আরও ৪-৫ বছর সময় লাগবে।

এর মধ্যে টি-টোয়েন্টি লিগগুলোর ব্যাপক জনপ্রিয়তা আর অর্থ-বিত্তের হাতছানি ক্রিকেট খেলাটাকে স্কিলের পরিবর্তে পাওয়ার লিফটিং এর জায়গায় নিয়ে গেছে, যে কারণে ৯০ এর দশকে বা সর্বজয়ী অস্ট্রেলিয়ান যুগে যেরকম ম্যাজিশিয়ান ক্রিকেটার দেখা যেত প্রতিদলেই, সেটা এখন কমতে কমতে বিলুপ্তির পথে। ভিরাট কোহলি ছাড়া এখনকার সময়ে সব ফরম্যাটে সমান সফল এরকম কোনো ব্যাটসম্যান নেই, মুরালিধরন/ওয়ার্নের মতো স্পিনার নেই, ওয়ার্কার ইউনিস/ম্যাকগ্রা এর মতো সব ফরম্যাটে ইফেকটিভ পেস বোলার নেই। ব্যাটিং প্যারাডাইস, ফ্রি হিট, ৬০ মিটার বাউন্ডারি এসবের মধ্যে চার-ছক্কা আছে হয়তো, বিমোহিত হওয়ার এলিমেন্টের পর্যাপ্ত অভাব রয়েছে নিঃসন্দেহে।

ঠিক এই ট্রানজিশন পিরিয়ডটাই বাংলাদেশের উত্থানের জন্য অপরটুনিটি, অন্তত ওয়ানডে ক্রিকেটে।

এবং অনেকটা একই কারণেই বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে আশরাফুলের ইনফ্লুয়েন্সকে কখনোই ভুলবার নয়। ক্রিকেট খেলাটা যখন অস্ট্রেলিয়া একপেশে বানিয়ে ফেলেছে, সেই দলকে বাংলাদেশ হারিয়ে দিয়েছিল আশরাফুলের কল্যাণে। অপির ৬ বছর পর ২য় বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান হিসেবে সেঞ্চুরি তাও অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর ম্যাচে, এবং পরের ম্যাচেই ৫২ বলে ৯৪ রানের সেই পাগুলে ব্যাটিং। মাত্র এই দুটো ইনিংসই আশরাফুলকে যে আসনে বসিয়ে দিয়েছে, সেখান থেকে তাকে টলানো যাবে না, এমনকি ম্যাচ ফিক্সিংয়ের কেলেঙ্কারিতে নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও।

তবে আশরাফুলকে নিয়ে মিডিয়াতে যে মাত্রায় মাতামাতি হয়েছে তাতে কেবলমাত্র বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে স্মরণীয় হয়ে থাকাতে তুষ্ট হওয়া তার প্রাপ্য না। ক্রিকেট ইতিহাসেই তিনি অন্যতম কিংবদন্তী হতে পারতেন হয়তোবা। কিন্তু টেস্ট আর ওয়ানডেতে যথাক্রমে ২৪ আর ২২ গড়ের একজন ব্যাটসম্যানকে খোদ বাংলাদেশেরই সর্বকালের একাদশে রাখবে না অনেকে, ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেটের প্রসঙ্গ তো আলোচনাতেই আসবে না।

তার সমসাময়িক যুবরাজ সিং ভারতের ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে কিংবদন্তী হয়ে গেছেন, একই সাথে এজ লেভেলে খেলা ইংল্যান্ডের অ্যালিস্টার কুক টেস্টে টেন্ডুলকারের সেঞ্চুরির রেকর্ড কবে ভাঙবেন – এ নিয়ে কথা উঠেছে হরহামেশাই, সেই সময়ে কোথায় আশরাফুল? আশরাফুলের অনেক অনেক জুনিয়র বিরাট কোহলি এখন বিশ্ব মাতাচ্ছেন, সেই আশরাফুল কোথায়? ক’দিন আগেই এক বন্ধুর কাছে শুনলাম – তিনি মানিকগঞ্জে টেপ টেনিস ক্রিকেটের খ্যাপ খেলতে গেছেন। আর ইউ কিডিং মি?

আশরাফুল কেন পারেননি? সবাই বলেন, সমস্যাটা সাইকোলজিকাল। তিনি পেপার-পত্রিকা নিয়ে বেশি মেতে থাকতেন, নিজের সামর্থ্য নিয়ে বেশিমাত্রায় কনফিডেন্ট ছিলেন, কিন্তু সে অনুপাতে নিজের সীমাবদ্ধতা নিয়ে কাজ করেন নি। রেসলিং দেখার সময় ট্রিপল এইচ এর একটা কথা খুব মনে ধরেছিল, ‘Either you evolve, or extinct’; আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেকে ইভোলভ করার বিকল্প নেই। প্রতিটি শট নিয়ে এনালাইসিস হয় এখানে, নিজের দুর্বলতা নিয়ে কাজ না করলে কিসের টিকে থাকা!

আশরাফুলের ব্যর্থ হওয়ার পেছনে ক্রিকেটিয় কারণও যথেষ্ট। তিনি ব্যাটিংয়ে নামার আগেই ড্রেসিংরুম থেকে মুড ঠিক করে আসতেন। কোনোদিন বলের পর বল ডিফেন্স করতেন, আবার কোনোদিন শুরু থেকেই পিঞ্চ হিটিং। ফলে গ্যাপ বের করে সিঙ্গেলস নেয়া, স্ট্রাইক রোটেট করার মতো বেসিক ব্যাপারগুলো তার ব্যাটিংয়ে কম দেখা যেত। তিনি হয় চিকি শট খেলতেন, অথবা শর্ট বল পেলেই পুল/হুক করতে গিয়ে টপ এজ হতেন, ড্রাইভ খুব একটা ভালো খেলতেন না, যে কারণে আউটসুইং বল এ নিয়মিত স্লিপে আউট হতেন। স্পিন বলটা খুব ভালো খেলতেন, বিশেষ করে মুরালিধরনকে। কিন্তু অধিকাংশ সময়ই তো স্পিন বল আসার আগেই তিনি আউট। ১৪-১৫ রান যদি পার করতে পারতেন, তাহলে ইনিংসটা বড় হতো, কিন্তু সেটাতেই বেগ পেতে হতো বেশি।

ওয়ানডেতে তাঁর স্কোরিং জোন বলতে পেস বল এ লেট কাট করে থার্ডম্যানে সিঙ্গেলস। সেটা করতে গিয়ে বহুবার প্লেইড অন বা কট বিহাইন্ড হয়েছেন, তবু অন্য কিছু চেষ্টা করেছেন খুব কম। তার এইসব দুর্বলতা নিয়ে কাজ করার বদলে বারবার প্রতিপক্ষের পাঁতা সহজ ফাঁদেই বোকার মতো ধরা দিয়েছেন।

তাঁর ব্যাটিং পজিশন, ব্যাটিং স্ট্যান্স এসব নিয়েও বহু এক্সপেরিমেন্ট চলেছে। এজ লেভেলে ছিলেন ওপেনার, কিন্তু জাতীয় দলে খেলেছেন মিডল অর্ডারে, সেখান থেকে বিভিন্ন সময়ে বিচ্ছিন্নভাবে ওপেনও করেছেন। কিন্তু আমি বলবো, সময়ের সাথে সাথে ইভোলভ না হয়ে নিজের মতো থাকতে চাওয়াই আশরাফুলের ব্যর্থ হওয়ার প্রধানতম কারণ। এর সঙ্গে খুচরো হিসেবে যোগ করা যেতে পারে, মিডিয়াপ্রীতি এবং স্টারডম।

আরেকটা বড় ভুল ছিলো অভিষেকেই সেঞ্চুরি করে ফেলা। ফলে বাংলাদেশের মানুষ তাকে নিয়ে অতিমাত্রায় আশাবাদী হয়ে উঠেন। ক্রিকেট বিশ্লেষক রঞ্জিত বিশ্বাস ২০০১ সালেই এক টিভি অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেছিলেন, ‘যে ইনিংসটা তার ২০ বা ২৫ তম ম্যাচে খেলা উচিত ছিলো সেটা তিনি অভিষেকেই খেলে ফেলেছেন’। এরকম প্রাজ্ঞ মতামত খুব বেশি শোনা যায় না। এখনো তার বয়স ৩৫ হয়নি, অথচ জাতীয় দলে ১২ বছর খেলে ফেলেছেন, অধিনায়কত্বও করেছেন।

যদি ৩০ তম ম্যাচ পর্যন্ত গড়পড়তা পারফরম্যান্স দিয়ে টিকে থাকতেন কোনোরকমে, তারপর হঠাৎ করে সেঞ্চুরি করতেন, হয়তোবা বিশ্বক্রিকেটেই তিনি একজন লিডিং ক্রিকেটার ইমেজ তৈরি করতে পারতেন। ভারতের বিপক্ষে টেস্টে ১৫৮ রানের যে ইনিংসটা খেলেছিলেন, আমার দেখা সুন্দর ইনিংসগুলোর লিস্ট করলে সেট অবশ্যই বেস্ট ১‌১-এ থাকবে, আর ২০০৭ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে যেভাবে ৮৭ করেছিলেন, আমার বিবেচনায় সেটা এখনো কোনো বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানের বেস্ট ইনিংস। আমার ধারণা, বাউন্সি পিচে তিনি হয়তো আরও সফল হতেন। যেহেতু তার হাতে স্ট্রোক কম, টাইমিং আর রিফ্লেকশনই তার বড় শক্তি, উপমহাদেশের স্লো পিচে ভালো করাটা তার জন্য একটু কঠিন। তবু এইসব এক্সকিউজ দিতে চাই না, উইকেটনির্ভর খেলা দিয়ে একজন ব্যাটসম্যানের কিংবদন্তী হওয়ার প্রশ্নই আসে না।

আশরাফুলকে নিয়ে বলতে গিয়ে আফতাব আহমেদ, আলক কাপালী, শাহরিয়ার নাফিস, নাফিস ইকবাল, মার্শাল আইয়ুব যেমন বাদ পড়েছে, তেমনি জুনায়েদ সিদ্দিকী, নাজিম উদ্দিন, শামসুর রহমান শুভ, নাঈম ইসলাম, জিয়াউর রহমান প্রমুখও যে তাদের সাথে একই কাতারে পড়েন না এটাও সত্যি কথা।

আফতাব আহমেদের পতনের জন্য সে নিজেই দায়ী। অলক কাপালী বোলার থেকে স্টাইলিস্ট ব্যাটসম্যান হয়ে উঠেছিলেন, ভারতের সাথের সেঞ্চুরিটা যারা দেখেছেন তারামাত্রই বুঝবেন তাঁর মতো এমন আয়েশ করে ফ্রিহিট করার এবিলিটি খুব বেশি বাংলাদেশীর নেই। তিনি এখনো খেলে যাচ্ছেন, সেটা না খেলার মতোই। নাফিস ইকবালের হারিয়ে যাওয়াটা খুবই রহস্যজনক। তামীম ইকবাল উঠে এল যখন তার আগে থেকেই তিনি দৃশ্যপট থেকে উধাও।

অথচ, এজ লেভেলে নিয়মিত ক্যাপ্টেন্সি করা এই তরুণটিকেই ভাবা হচ্ছিল বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অধিনায়ক। ২০০৬ সালে শাহরিয়ার নাফিস নিজের জাত চিনিয়েছেন। নিন্দুকেরা যতই বলুক তার ভালো খেলার জন্য জিম্বাবুইয়েকে লাগে, তারা বোধহয় ইংল্যান্ডের মাটিতে ৭৫ আর দেশের মাটিতে টেস্টে পূর্ণশক্তির অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৩৮ রানের ইনিংসটা মনোযোগ দিয়ে দেখেননি। আইসিএল রাজনীতিতে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সত্যিকার যদি কোনো অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে থাকে সেটা হলো শাহরিয়ার নাফিসকে হারানো।

তাঁর কথা-বার্তাও বেশ ভালো লাগে আমার, খুব করে চাই অবসর নেয়ার পর তিনি কমেন্ট্রিতে ক্যারিয়ার গড়ুন। আতহার আলি বা শামীম আশরাফ চৌধুরিকে দিয়ে কাজ চলছে, কিন্তু স্মার্টনেস-স্ট্যান্ডার্ড প্রশ্নে তারা নির্দ্বিধায় পিছিয়ে পড়বেন। শাহরিয়ার নাফিসকে দিয়ে এই ঘাটতি খুব ভালোমতোই পূরণ করা সম্ভব। তিনি এখনো খেলছেন, এবং চলমান বিপিএলে দারুণ পারফরম করছেন, নিকট ভবিষ্যতে জাতীয় দলে ফিরতেও পারেন আবার, কিন্তু আইসিএল পূর্ববর্তী নাফিসকে বোধহয় সময় গহ্বর গিলে খেয়েছে। তবু হাল ছাড়ছেন না, এই স্পিরিটকে সাধুবাদ জানাই।

ব্যাটসম্যানদের নিয়ে অনেক কথা হলো। দুজন বোলারের কথা বলতে চাই, দুজনের ক্যারিয়ারই খুব সংক্ষিপ্ত। কিন্তু তাদের খুবই সম্ভাবনাময় মনে হয়েছিল। তালহা জুবায়ের এবং মোহাম্মদ শরীফ। অনুর্ধ্ব ১৭ আসরে মাশরাফির বোলিং পার্টনার ছিলেন তালহা। সুন্দর একশন আর বলের নিয়ন্ত্রণ দেখে তখনই বুঝে গিয়েছিলাম অচিরেই জাতীয় দলে দেখবো। সেটা সত্যি হলো। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ক্রিস গেইলকে বোল্ড করা ডেলিভারিটা এখনো চোখে ভাসে।

দারুণ সুইং করাতে পারতেন। ইনজুরি আর উশৃঙ্খলতার কারণে এই বোলারটির অমিত সম্ভাবনা অংকুরেই হারিয়ে গেল। মোহাম্বদ শরীফ পুরনো বল এ রিভার্স সুইং করাতে পারতেন, এয়ার সুইংও ছিলো হালকা। জিম্বাবুইয়ে সফরে এলিস্টার ক্যাম্পবেলের স্ট্যাম্প ছত্রখান করে দেয়া সেইমানের ডেলিভারি খুব কম বাংলাদেশি বোলারই দিতে পেরেছেন। শরীফ এবার বিপিএলেও খেলছেন, কিন্তু নাম আর মানুষটিই কেবল এক, খেলোয়াড়ি দক্ষতা অনেকদিন আগেই প্রশ্নের মুখে পড়েছে। এই দুজন বাদে আর কোনো পেস বোলার নেই যাকে নিয়ে আফসোস জাগে মনে। আলমগীর কবির, আনোয়ার হোসেন মুনির, তাপস বৈশ্য প্রমুখ বোলারগণ আমাদের রুগন ক্রিকেট কাঠামোকেই প্রস্ফূটিত করেছে। মনজুরুল ইসলাম অভিষেকে ৬ উইকেট পেয়েছিলেন, কিন্তু কোয়ালিটি প্রশ্নে তাকে বিবেচনায় নেয়া যায় না।

আরও ২ জন সাবেক ক্রিকেটারের কথা উল্লেখ করতে চাই, আমি মনে করি তারা এখনকার বাংলাদেশ দলেও চান্স পাওয়ার যোগ্যতা রাখেন। প্রথমজন, আতহার আলী খান, দ্বিতীয়জন পেসার সাইফুল ইসলাম। আতহার আলীর বড় এডভান্টেজ তিনি স্লো মিডিয়াম পেস বোলিং করতেন যা ওয়ানডের জন্য হাইলি ইফেকটিভ। সেই যুগে তিনি শ্রীলংকার বিপক্ষে ৭৮ রান করার পথে তিনটি ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন, যা সময়ের বিচারে দুঃসাহসই বলবো।

পাকিস্তানের সাথে ৮২ রানের সাহসী একটা ইনিংস আছে, যেখানে আকরাম খানের সাথে ১১০ রানের পার্টনারশিপ ছিলো। এবং ইনিংসের শুরুর দিকে চোট পেয়ে রানার নিয়ে খেলতে হয়েছে বাকিটা। তার ব্যাটিং স্টাইল মারকাটারি না হলেও এখনকার যুগের সাথে ভালোমতোই মানিয়ে যায়। ৯৮ সালে ভারতে একটি টুর্নামেন্ট হয়েছিল কেনিয়া আর বাংলাদেশকে নিয়ে। সেটা শেষে সেই যে দল থেকে বাদ পড়েন আর কখনোই ফিরে আসতে পারেননি। অপি, বিদ্যুতের উত্থান একটা কারণ হতে পারে, তবু জাভেদ ওমরের মতো একজন খেলোয়াড়কে যদি বছরের পর বছর বহন করা যায়, আতহার আলী কেন আর সুযোগ পেলেন না, সেই প্রশ্নটি রয়েই যায়।

বাংলাদেশ ক্রিকেটের রিটেন ইতিহাসে সাইফুল ইসলামেরও ঠাঁই হওয়ার সম্ভাবনা কম। মাশরাফি পূর্ব যুগে পেসার বললেই নাম আসবে গোলাম নওশের প্রিন্সের নাম, কিংবা হাসিবুল হোসেন শান্ত। সাইফুল ইসলাম এক অচেনা নাম। তবে আমি সাইফুল ইসলামের বোলিং এখনো মনে রেখেছি। তার মতো ন্যাচারাল ইনসুইংগিং বোলার এখনো আমরা পাইনি।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩৬ রানে ৪ উইকেট পেয়েছিলেন শারজাহতে, যেটা দীর্ঘদিন পর্যন্ত বাংলাদেশের পক্ষে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড ছিলো (বিস্ময়কর লাগলেও এই রেকর্ডটি যিনি ভেঙৈছিলেন, তিনি সমগ্র ক্যারিয়ারই প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান হিসেবে বিবেচিত ছিলেন। আফতাব আহমেদের কথা বলছিলাম)। ৯৭ এর আইসিসি ট্রফির পর সেবছরই জিম্বাবুইয়েকে সাথে নিয়ে ত্রিদেশীয় একটা টুর্নামেন্ট আয়োজন করে কেনিয়া। প্রথম ম্যাচে ইনজুরিতে পড়ার পর দল থেকে সেই যে ছিটকে পড়েন সাইফুল ইসলাম, আর কখনোই দলে ফিরতে পারেননি।

এরকম একজন উঁচুমানের বোলারের এরকম বিবর্ণ বিদায় সত্যিই বেদনাদায়ক। ইউটিউবে আইসিসি ট্রফির ফাইনালের হাইলাইটস এখনো পাওয়া যায়, সাইফুল ইসলামের কয়েকটা ডেলিভারি দেখলেই যে কেউ বুঝতে পারবেন এতোদিন পরেও কেন তাকে মনে রেখেছি। সাবেক ক্রিকেটাররা অনেকেই যখন বিভিন্ন কাজে ইনভলভ হয়েছেন তখন সাইফুল ইসলাম সম্ভবত কোচিংকেই পেশা হিসেবে নিয়েছেন। ক্রিকেট থেকে তার অর্জন হয়তো বেশি নেই, তবু ক্রিকেটকে পে-ব্যাক করার যে উদ্যোগ তিনি নিয়েছেন একে এপ্রিশিয়েট না করে উপায় কী!

ক্রিকেট এগিয়ে যাচ্ছে। তারকা উঠে আসছে, তারকা ঝরে যাচ্ছে। তবু তারকা হওয়ার সবরকম কোয়ালিটি থাকা সত্ত্বেও যারা মেঘের আড়ালে ঢাকা পড়েছেন, আমি তাদের বলি অবিকশিত তারকা।আমাদের অবিকশিত তারকাগুলো মেঘভেদ করে মিটিমিটি জ্বলুক সেটুকুই প্রত্যাশা।

দয়া করে অবিকশিত তারকাদের নিয়ে ট্রল করবার আগে তাদের সম্পর্কে আরেকটু গভীর চিন্তা করুন। ট্রলিং আর বুলিংয়ের মধ্যে পার্থক্য সামান্যই। নিভে যাওয়া তারকা মুছে যাওয়া দিনের আলোতে প্রোজ্জলিত থাকুক।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...