প্রয়াণে অবহেলিত স্বপ্ন

 ১৯৭৫ সালের মে মাসের প্রথম দিনে জন্মগ্রহণ করা ভিভিয়ান ফো মারা গিয়েছিলেন ২০০৩ সালে। তাঁর সে মৃত্যুতে বিষন্নতার এক করুণ সুর যেন ছড়িয়ে পড়েছিল সমগ্র দুনিয়ায়। সবচেয়ে ভালবেসেছিলেন তিনি ফুটবলকে। আর সে ফুটবল খেলতে খেলতেই তিনি পারি জমিয়েছিলেন। মুহূর্তের মাঝে তাঁর সব স্বপ্নগুলো যেন হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে থাকে। মুখ থুবরে তিনি পড়ে গেলেন সে সবুজ গালিচায়।

একটা কোণে জরাজীর্ণ এক বিল্ডিং। জানালার লোহা খসে পড়ে যাচ্ছে, দেয়ালের রঙ তো একেবারেই ফিকে হয়ে গেছে। স্যাঁতস্যাঁতে একটা পরিবেশ, গুমোট একটা পরিস্থিতি। দালানের সামনের একটা মাঠমত জায়গা। সেখানের একটা দিকে একটা বিধ্বস্ত গোলবার। পুরো জায়গটাই এখন মাদক কারবারিদের আস্তানা।

অথচ এটা হওয়ার কথা ছিল একটা স্পোর্টস কমপ্লেক্স। পুরো প্রাঙ্গণ মুখোরিত থাকার কথা ছিল ছোটছোট ছেলে মেয়েদের আনাগোনায়। এখান থেকেই বের হবে বিশ্বসেরা এক একজন খেলোয়াড়। এমনটাই স্বপ্ন দেখেছিলেন ক্যামেরুনের সাবেক প্রয়াত ফুটবলার মার্ক ভিভিয়ান ফো। হায় নিয়তি! তা আর হতে দিল কই। স্বপ্নের মাঝে বাঁধা দু:স্বপ্নের এক মৃত্যু।

১৯৭৫ সালের মে মাসের প্রথম দিনে জন্মগ্রহণ করা ভিভিয়ান ফো মারা গিয়েছিলেন ২০০৩ সালে। তাঁর সে মৃত্যুতে বিষন্নতার এক করুণ সুর যেন ছড়িয়ে পড়েছিল সমগ্র দুনিয়ায়। সবচেয়ে ভালবেসেছিলেন তিনি ফুটবলকে। আর সে ফুটবল খেলতে খেলতেই তিনি পারি জমিয়েছিলেন। মুহূর্তের মাঝে তাঁর সব স্বপ্নগুলো যেন হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে থাকে। মুখ থুবরে তিনি পড়ে গেলেন সে সবুজ গালিচায়।

খেলছিলেন তিনি স্বদেশে হয়ে। কনফেডারেশন কাপের সেমিফাইনালে কলম্বিয়ার বিপক্ষে এক ম্যাচে তিনি সেন্টার সার্কেলের মাটিকে আঁকড়ে ধরে বিদায় নেন এই পৃথিবী ছেড়ে। এই একটা কারণেই তিনি মনে রাখার মত ব্যক্তি তা নয়। তিনি ছিলেন তাঁর সময়ের অন্যতম সেরা ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারদের একজন। তিনি ক্যামেরুনকে জিতিয়েছিলেন আফ্রিকান নেশন্স কাপ।

দীর্ঘ প্রায় একযুগ ধরে তিনি খেলেছনে ক্যামেরুনের হয়ে। এর মাঝে তিনি অবশ্য নিজের একটা সুখ্যাতি ছড়িয়ে ফেলেছিলেন ইউরোপের ফুটবলে। ফরাসি ক্লাব লিঁও এবং ইংলিশ ক্লাব ওয়েস্ট হাম ছাড়াও তিনি ছিলেন ম্যানচেস্টার সিটির একজন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তবে মাত্র ২৮ বছর বয়সেই তাঁকে থেমে যেতে হয়। থামবার এই চিরন্তন নিয়ম থেকে তো আর দূরে সরে থাকা যায় না। ফো-ও পারেনি। ক্যামেরুনের রক্ষণের প্রথম সেনানি তিনি ছিলেন। তবে নিজেকে রক্ষাটা করা হল না তাঁর।

প্রয়াণের আগে অবশ্য তিনি হতে পেরেছিলেন ক্যামেরুন ফুটবলের আশার অগ্রদূত। তিনি ক্যামেরুনের প্রতিটা মানুষের মনে আলাদা এক জায়গা করে নিয়েছিলেন। তাঁর শোকসভায় মানুষে ঢল সেটাই অন্তত প্রমাণ করছিল। ফিফা প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে ক্যামেরুনের প্রেসিডেন্ট অবধি তাঁর শেষকীর্তের আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন। ২৬ জুন ২০০৩ দিনটা নিঃসন্দেহে ফুটবলের ইতিহাসে অন্যতম বেদনাতুর একটা দিন হয়েই রইলো।

ক্যামেরুনের ক্রীড়া নিয়ে কত স্বপ্নই না দেখেছিলেন ভিভিয়ান ফো। তবে তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা আর বাস্তবের মুখ দেখেনি। নিজের মত করে আরও বেশকিছু মধ্যমাঠের কান্ডারি তিনি উপহার দিতে চেয়েছিলেন বিশ্ব ফুটবলে। কিন্তু এখন তাঁর নিথর দেহটা পৃথিবীর গর্ভে সমায়িত হয়ে আছে। অথচ একটা সময় তিনি দাপিয়ে বেড়িয়েছেন ইউরোপের মাঠ।

ইউরোপের বাঘাবাঘা খেলোয়াড়দের সাথে লড়াই করে গিয়েছিলেন সমানে সমান। রক্ষণে সহয়তা করেছেন, আবার দৌড়ে উঠে গিয়ে আক্রমণ সাজানোতে নিজেকে সপে দিয়েছেন। ক্লাব ক্যারিয়ারে ২০১ খানা ম্যাচ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ৬২টি ম্যাচে তিনি ক্যামেরুনে জার্সি গায়ে জড়িয়েছিলেন। পুরো মাঠ জুড়েই ছিল যার বিচরণ তিনি আজ অবহেলিত, তাঁর স্বপ্ন আজ অবহেলিত।

মৃত্যু বুঝি এমনই হয়। চোখের আড়াল করে দেয়। এরপর সবাই মন থেকে ঝেড়ে ফেলে দেয়।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...