Social Media

Light
Dark

কঠিন, কিন্তু বাস্তব

১.

খুব কঠিন ছিল সিদ্ধান্তটা। তবে সহজ বিষয়টাকে নির্বাচকদের জন্য কঠিন করে তুলেছিলেন মাশরাফি নিজেই।

প্রতিটি মানুষেরই তার ব্যক্তিগত প্রফেশনাল ক্যারিয়ার নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবার অধিকার রয়েছে। সেই দিক থেকে বিবেচনা করলে অবসর নেয়া কিংবা না নেয়াটা একান্তই মাশরাফির ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। তবে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে মাশরাফিকে কি কেবলই একজন খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচনা করা যায়? সমকালীন সময়ে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় মানুষদের তালিকায় প্রথম দিকেই থাকবেন তিনি। পুরো বিষয়টাকে আরেকটু সুন্দর ভাবে কি শেষ করা যেত না?

দল দেখে মনে হচ্ছে নির্বাচকদের ভাবনায় পরবর্তী বিশ্বকাপটাই প্রাধান্য পেয়েছে, সেটাই হওয়া উচিত। প্রশ্ন হচ্ছে পারফর্মেন্স কিংবা ফিটনেস বিবেচনায় মাশরাফি কি পরবর্তী বিশ্বকাপের জন্য বিবেচিত হতে পারেন? বিশেষ করে গত বিশ্বকাপের পারফর্মেন্স দলে তার অবস্থানকে আরো প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।

প্রশ্ন হচ্ছে তিনি যদি গত বিশ্বকাপে দুর্দান্ত কিছুও করতেন তাহলেও কি মাশরাফিকে দলে রাখা উচিত হতো?

এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার জন্য আমরা একটা কেস স্ট্যাডি করতে পারি।

২.

একজন খেলোয়াড় মাত্রই বিশ্বকাপ জিতলেন, ১১ ম্যাচে ১৩.৭৩ গড়ে ২৬টি উইকেট নিয়ে কাপ জয়ে অবদান রাখার সাথে সাথে টুর্নামেন্ট সেরা। অথচ প্রশংসা না শুনে সবার কাছে প্রশ্ন শুনতে হচ্ছে , ‘এখনই কেন?’ স্মিত হেসে তার উত্তরটাও সুন্দর ছিল,

‘এই প্রশ্নটা করবেন বলেই। আমি শুনতে চাই না, আমাকে নিয়ে কেউ বলুক এখনো অবসর নিচ্ছে না কেন?’

বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি উইকেট, এক বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি উইকেট, এক ইনিংসে সবচেয়ে ভালো বোলিং পারফরম্যান্স, তখন পর্যন্ত সবচেয়ে ভালো বোলিং গড় (পরবর্তীতে এই রেকর্ড ভেঙ্গেছেন স্টার্ক), সবচেয়ে বেশি মেইডেন ওভার করার রেকর্ড; এত অর্জন থাকায় ৩৭ বছরে অবসর নেয়ার পরও ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে তাই আক্ষেপ জড়িয়ে থাকে, ‘আহা, আর কিছুদিন যদি খেলতেন।’

আক্ষেপ জাগানো সেই ক্রিকেটারের নাম গ্লেন ম্যাকগ্রা।

এত দুর্দান্ত অর্জন থাকার পরেও অবসর নেবার মূল কারণ কি ছিল?

মাশরাফিও যদি বিশ্বকাপে এমন পারফর্ম করতেন তাহলে তাকে বাদ দেবার পর বিপক্ষে দাবি আসলেও ক্রিকেটিও দৃষ্টিকোণ থেকে অবসর নেওয়াটাই যুক্তি্যুক্ত হতো।

এখন কি সেই সুযোগটুকুও আছে?

৩.

গত বিশ্বকাপের পারফর্মেন্স, বয়স, পাইপলাইনে নতুন খেলোয়াড় – সব কিছু মিলিয়ে এই মুহুর্তে দলে মাশরাফির জন্য জায়গা পাওয়াটা সত্যিকার অর্থেই কষ্টকর। মাশরাফি নিজেও হয়তো স্বীকার করবেন যে ব্যাটিং এ তার পারফর্মেন্স আগের চাইতে বাজে। তরুণ কাউকে সুযোগ দিলে ফিল্ডিং এও বাড়তি কিছু পাবার কথা। যে বোলিংটা তার মুল কাজ সেটাতেও তিনি আপাতত আহামরি তেমন কিছু করতে পারছেন না। বাকি থাকে একমাত্র অভিজ্ঞতা।

মাশরাফিকে যদি দলের জন্য বিবেচনা করা হয় তাহলে নির্বাচক এবং মাশরাফি দুই পক্ষেরই নিজেদের কাছে পরিষ্কার থাকতে হবে যে তাকে কেন দলে রাখা হয়েছে। পারফর্মেন্সের কথা বিবেচনা করলে ম্যাশ এর জায়গায় নতুন কাউকে সুযোগ দেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। আর দল যদি ম্যাশ এর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে চায় তাহলে ভিন্ন কথা।

আর শুধুমাত্র অভিজ্ঞতা সবসময় বেটার রেজাল্টও নিয়ে আসে না। ১৯৯৬ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের জাভেদ মিয়াদাদ কিংবা ১৯৯৯ বিশ্বকাপে শ্রীলংকার অর্জুনা রানাতুঙ্গাও এর উদাহরণ।

আমার মতে সবচাইতে বেটার হতো আপাতত জাতীয় দল থেকে ম্যাশ এর অবসরে চলে যাওয়া। তবে পাশাপাশি ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলা চালিয়ে যাওয়া। বিশ্বকাপ আসার সময় যদি দল যথেষ্ট ম্যাচিউরড না হয় তখন বিশেষ বিবেচনায় ম্যাশকে দলে ডাকাই যেত।

আপাতত সামনের দিকে তাকানোটাই সবচাইতে বেস্ট অপশন। নির্বাচকরা সেদিকেই তাকিয়েছেন বলে তাদেরকে সাধুবাদ। তবে আফসোস যে মাশরাফি আর নির্বাচকদের বোঝাপড়ায় যে জিনিসটার সুন্দর সমাধান হতো সেটা না হয়ে কিছুটা অপ্রত্যাশিত ভাবে হলো।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link