পিএসএলের সেরা একাদশ

নতুন চ্যাম্পিয়ন পাওয়া ছাড়াও পুরো আসর জুড়েই রানের ফোয়ারা বয়েছে সেই সাথে উইকেট শিকারেরে পসরা নিয়ে হাজির হয়েছিলেন বোলাররা। পারফর্মেন্সের ফুলঝুড়ি মুগ্ধ করেছে ভক্ত সমর্থকদের। সেই সব পারফর্মেন্সের ভিত্তিতে একটা একাদশ সাজানো গেলে মন্দ হয় না। সে প্রচেষ্টাই থাকছে আজ।

সপ্তম আসরে পুরো বিশ্ব ক্রিকেটে আলোড়ন সৃষ্টি করে ফেলেছে পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল)। ২০১৬ সাল থেকে শুরু হওয়া এই ফ্রাঞ্চাইজি ভিত্তিক টুর্নামেন্ট নিজেদের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে এখন অবধি। ২০২২ এ এসে নতুন এক চ্যাম্পিয়নের দেখা পেলো পিএসএল।

নতুন চ্যাম্পিয়ন পাওয়া ছাড়াও পুরো আসর জুড়েই রানের ফোয়ারা বয়েছে সেই সাথে উইকেট শিকারেরে পসরা নিয়ে হাজির হয়েছিলেন বোলাররা। পারফর্মেন্সের ফুলঝুড়ি মুগ্ধ করেছে ভক্ত সমর্থকদের। সেই সব পারফর্মেন্সের ভিত্তিতে একটা একাদশ সাজানো গেলে মন্দ হয় না। সে প্রচেষ্টাই থাকছে আজ, ক্রিকেট বিষয়ক গণমাধ্যম ইএসপিএন ক্রিকইনফোর সৌজন্যে।

  • ফখর জামান (পাকিস্তান)- লাহোর কালান্দার্স

নিজের খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে এসেছেন ফখর জামান। ধীর গতির ব্যাটারের তকমাটা ঝেড়ে ফেলে তিনি বনে গেছেন পুরোদস্তুর টি-টোয়েন্টি ব্যাটার। প্রায় ১৫৩ স্ট্রাইক রেটে তিনি রান করেছেন ৫৮৮।

সাতটি অর্ধশতকের পাশাপাশি একটি দূর্দান্ত সেঞ্চুরিও করেছিলেন ফখর। গড়ও ছিলো বেশ দারুণ ৪৫.২৩। এসব পরিসংখ্যান মিলিয়ে পিএসএলের এবারের আসরে তিনি ওপেনিং এর জন্যে যথার্থ। কেননা ফখর জামানই তো সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক।

  • মোহাম্মদ রিজওয়ান (পাকিস্তান)- মুলতান সুলতান্স 

ওপেনিং এ ফখর জামনকে সঙ্গ দেওয়ার জন্যে মোহাম্মদ রিজওয়ানের চেয়ে যোগ্য সঙ্গী খুঁজে পাওয়া দুষ্কর, অন্তত এবারের আসরের পারফর্মেন্স বিচারে। মুলতান সুলতানকে নেতৃত্ব দিয়ে ফাইনাল অবধি নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।

ছিলেন টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। দলকে একেবারে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া রিজওয়ান সাত হাফ সেঞ্চুরিতে করেছেন ৫৪৬ রান। ১২৬ এর আশেপাশের স্ট্রাইকরেট তাঁর গড় ছিলো ৬৮.২৫।

  • শাদাব খান (পাকিস্তান)- ইসলামাবাদ ইউনাইটেড

পিঞ্চ হিটার হিসেবে এবারের পিএসএলে বেশ ভাল পারফর্ম করেছেন শাদাব খান। ব্যাট হাতে যেমন দূর্দান্ত সময় পার করেছেন ঠিক বল হাতেও তিনি ছিলেন দারুণ। ১৬২ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করেছেন তিনি।

সেই সাথে ১৯ উইকেট নিয়ে তিনি হয়েছেন দ্বিতীয় সেরা উইকেট শিকারি। দুইটি অর্ধশতকের সাথে তিনি মোট ২৬৮ রান করেছেন। অলরাউন্ড পারফর্মেন্স ও পিঞ্চ হিট করতে পারার জন্যে তিন নম্বরে তিনিই থাকছেন আজকের একাদশে।

  • রাইলি রুশো (দক্ষিণ আফ্রিকা)- মুলতান সুলতান্স

মুলতান সুলতানের ফাইনালের পদযাত্রায় সঙ্গী ছিলেন রাইলি রুশো। তিনি মুলতানের হয়ে খেলেছেন ১১টি ম্যাচ। তিনটি ফিফটিও করেছেন রুশো। ১৬৭.৬৮ স্ট্রাইক রেট ছিলো রুশোর। ২৭৫ রান করেছেন।

তাছাড়া মিডল অর্ডারে তিনি বেশ কার্যকরী তবুও মারকুটে ব্যাটার থাকছেন আজকের একাদশের ব্যাটিং অর্ডারের চতুর্থ ব্যাটার। গড় ৩৯.২৮। প্রথম বিদেশি খেলোয়াড় হিসেবে তাকেই রাখা হচ্ছে আজকের পিএসএলের সেরা একাদশে।

  • টিম ডেভিড (সিঙ্গাপুর/অস্ট্রেলিয়া)- মুলতান সুলতান্স 

মুলতান সুলতান এবারের টুর্নামেন্টের লিগ পর্বে ছিলো টেবিলের শীর্ষে। তাতে ব্যাটারদের হাতটাই ছিলো বেশি। সেই ব্যাটারদের তালিকায় থাকছেন সিঙ্গাপুরের ক্রিকেটার টিম ডেভিড। তিনি দুইটি অর্ধশতকের দেখা পেয়েছেন এবারের আসরে। তাছাড়া ১৯৪ স্ট্রাইক রেট ছিলো তাঁর।

এক কথায় অসাধারণ তাঁর স্ট্রাইকরেট। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দলের প্রত্যাশা মিটিয়ে খেলেছেন তিনি। ২৯.৭১ গড়ে ২৭৮ রান করেছিলেন ডেভিড।

  • খুশদিল শাহ (পাকিস্তান)- মুলতান সুলতান্স 

মুলতান সুলতান্সের আরো একজন খেলোয়াড় জায়গা করে নিয়েছেন এই একাদশে। অলরাউন্ডার খুশদিন শাহ তাঁর অলরাউন্ড পারফর্মেন্সের বদৌলতে জায়গা পাচ্ছেন লোয়ার মিডেল অর্ডারে।

১৫৩ রান করেছেন তিনি ১৮২ এর খানিকবেশি স্ট্রাইক রেট ব্যাট করে রান করেছেন ১৫৩। তবে তাঁর থেকেও বেশি ছড়ি ঘুরিয়েছেন বল হাতে। তিনি ১৩.৯৩ গড়ে উইকেট নিয়েছেন ১৬ টি। মুলতানের ফাইনাল যাওয়ার যাত্রায় খুশদিলের অলরাউন্ড পারফর্মেন্স দারুণভাবে সহয়তা করেছে।

  • রশিদ খান (আফগানিস্তান)- লাহোর কালান্দার্স

বিশ্বে চলমান ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটে আকর্ষণীয় এক খেলোয়াড়ের নাম রশিদ খান। আফগানিস্তানের এই তরুণ তুর্কি বল হাতে জাদু দেখাতে পারেন বাইশ গজে। তিনি এবার খেলেছেন শিরোপা জেতা দল লাহোর কালান্দার্সের হয়ে। তবে জাতীয় দলের খেলা থাকায় ফাইনাল খেলা হয়নি তাঁর।

তবে, নয়টি ম্যাচ খেলে তাঁর আগেই তিনি বাগিয়ে নিয়েছিলেন ১৩টি উইকেট। টুর্নামেন্ট শেষ করতে পারলে নিশ্চিতরুপে তাঁর এই ট্যালিটা আরেকটু সমৃদ্ধ থাকতো। তাঁকে ছাড়া ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের সেরা একাদশ সাঁজানো দুষ্কর।

  • ইমরান তাহির (দক্ষিণ আফ্রিকা)- মুলতান সুলতান্স

পাকিস্তানের জন্ম হওয়া ক্রিকেটার ইমরান তাহির এবারের পিএসএল খেলেছেন বিদেশি খেলোয়াড় কোটায়। দক্ষিণ আফ্রিকা জাতীয় দলে খেলা অভিজ্ঞ এই লেগ স্পিনার ছিলেন মুলতান সুলতান্স ডেরায়। ফ্রাঞ্চাইজিটির হয়ে ১২টি ম্যাচ খেলেছেন তাহির।

এই ১২ ম্যাচে নিয়েছেন ১৬টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। ৬.৪৭ ইকোনমি রেটটা দারুণ ভাবে বজায় রেখেছেন টুর্নামেন্টের একেবারে শেষ অবধি। তাঁর এমন অনবদ্য পারফর্মেন্সে চতুর্থ বিদেশি খেলোয়াড় হিসেবে আজকের একাদশে থাকছেন ইমরান তাহির।

  • শাহিন শাহ আফ্রিদি (পাকিস্তান)- লাহোর কালান্দার্স

চ্যাম্পিয়ন অধিনায়ক শাহিন শাহ আফ্রিদি। সর্বকনিষ্ঠ অধিনায়ক হিসেবে যেকোন ফ্রাঞ্চাইজি ভিত্তিক ক্রিকেটে শিরোপা জেতার রেকর্ডটা নিজের আয়ত্ত্বে নিয়ে নিলেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। তাছাড়া দলকে শিরোপা জেতাতে একেবারে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন শাহিন আফ্রিদি।

তিনি ছিলেন লাহোর কালান্দার্সের প্রধান বোলিং অস্ত্র। নিরাশ করেননি। ১৯.৭০ গড়ে নিয়েছেন ২০টি উইকেট। যা কিনা এবারের আসরের সর্বাধিক উইকেট সংগ্রহের রেকর্ড। শাহিন আফ্রিদিকে বাদ রেখে পিএসএলের সেরা একাদশ চিন্তা করা প্রায় অসম্ভব। তাছাড়া একাদশের অধিনায়কের দায়িত্বও পালন করছেন তিনি।

  • জামান খান (পাকিস্তান)- লাহোর কালান্দার্স

অধিনায়ক শাহিন শাহ আফ্রিদির সাথে জুঁটি বেঁধে প্রতিপক্ষের নাভিশ্বাস তুলে দিয়েছেন জামান খান। ডান হাতি এই পেসার এবারের পিএসএলের সপ্তম আসরের তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি জামান।

তিনি নিয়েছেন ১৮ উইকেট। ১১৩ ম্যাচ খেলেছেন জামান। গড় ছিলো ২১.৫০। তাছাড়া ইকোনমি রেটটাও ছিলো সন্তোষজনক। ৮.২৬ ইকোনমি রেট বজায় রেখে লাহোর কালান্দার্সকে শিরোপা জেতাতে সহয়তা করেছেন জামান খান।

  • নাসিম শাহ (পাকিস্তান)- কোয়েট্টা গ্ল্যাডিয়েটর্স

২০২২ পাকিস্তান সুপার লিগে একমাত্র ফাইফার নেওয়া বোলার নাসিম শাহ। মাত্র ২০ রান দিয়ে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন তিনি করাচি কিংসের বিপক্ষে। তাছাড়া পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই দারুণ ছন্দে ছিলেন তিনি। তাঁর দল খুব একটা ভাল সময় যে পার করেছেন তা বলার অবকাশ নেই।

রান রেটের মারপ্যাঁচে তাঁর দল যেতে পারেনি প্লে অফে। তবে নাসিম শাহ নিজের কাজটি করেছেন ঠিকঠাক। নিয়েছেন মোট ১৪টি উইকেট। ১০ ম্যাচ খেলা নাসিম শাহের গড় ছিলো ২১.৮৫। তরুণ এই বোলার তাই  আজকের এই একাদশে জায়গা করে নিলেন।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...