সাকিব বীরত্বে সিরিজ জয়

অবশেষে দীর্ঘ রান খরার পর সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে দলের বিপর্যয়ে দারুণ এক ইনিংস খেললেন সাকিব। অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যানের ১০৯ বলে ৯৬ রানে ভর করেই জিম্বাবুয়েকে ৩ উইকেটে হারিয়ে সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। বলতে গেলে এই ম্যাচটি এক হাতেই জিতিয়েছেন এই অলরাউন্ডার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৮ রান করে দলের জয়ে অবদান রেখেছেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।

নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ক্রিকেটে ফিরে ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে একটি হাফ সেঞ্চুরি করলেও এরপর থেকেই বড্ড অচেনা ছিল সাকিব আল হাসানের ব্যাট। আইপিএল, শ্রীলঙ্কা সিরিজ ও ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগের ব্যর্থতা সাকিব টেনে এনেছিলেন চলতি সিরিজেও। এই অলরাউন্ডার ব্যাট হাতে ব্যর্থ ছিলেন একমাত্র টেস্টে ও প্রথম ওয়ানডেতেও।

অবশেষে দীর্ঘ রান খরার পর সিরিজের দ্বিতীয়  ওয়ানডেতে দলের বিপর্যয়ে দারুণ এক ইনিংস খেললেন সাকিব। অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যানের ১০৯ বলে ৯৬ রানে ভর করেই জিম্বাবুয়েকে ৩  উইকেটে হারিয়ে সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। বলতে গেলে এই ম্যাচটি এক হাতেই জিতিয়েছেন এই অলরাউন্ডার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৮ রান করে দলের জয়ে অবদান রেখেছেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।

তবে জিম্বাবুয়ের দেওয়া ২৪১ রানের লক্ষ্যটা খুব বড় ছিলো না। কিন্তু চ্যালেঞ্জিং ছিলো অবশ্যই। সিরিজ জয় নিশ্চিত করতে সাকিব ছাড়া সেই চ্যালেঞ্জই নিতে পারেননি অন্য কোন  ব্যাটসম্যান। ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় প্রায় হারতে বসা ম্যাচে অস্টম উইকেটে  সাইফউদ্দিনের সাথে ৬৯ রানের জুটি গড়ে জয় নিশ্চিত করেন সাকিব । সিরিজ জয়ের সাথে বিশ্বকাপের সুপার লিগে পয়েন্ট হারানো থেকেও রক্ষা পেয়েছে সাকিব তামিমরা।

তবে লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে সাবধানী শুরু করেছিলেন দুই ওপেনার লিটন দাস ও তামিম ইকবাল। রান রেট নিয়েও তেমন চাপ ছিলো না। তবে দেখে শুনে খেলে উইকেটে থিতু হয়েও বেশি দূর যেতে পারেননি দুই ওপেনার। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে লুক জঙ্গির বলে পয়েন্টে ড্রাইভ করে সিকান্দার রাজার দারুণ ক্যাচ হয়ে ফিরে যান তামিম।

৩৪ বলে ২০ রান করে তামিম ফিরে গেলে ভাঙে ৩৯ রানের উদ্বোধনী জুটি। তামিমের বিদায়ের এক ওভার পরেই রিচার্ড এনগারাভার শর্ট বল পুল করতে গিয়ে ব্রেন্ডন টেইলরের হাতে ধরা পড়েন লিটন। ৩৩ বলে ২১ রান করে লিটন ফিরে যাওয়ার পরের ওভারেই জঙ্গির দ্বিতীয় শিকার হয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন মোহাম্মদ মিথুন। অফ স্টাম্পের বাইরের গুড লেংথ বলে  আলগা শটে কাভারে ধরা পড়েন তিনি।

৩ বলে ২ রান করে মিথুন ফিরে যাওয়ার পর মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত রান আউটের ফাঁদে পড়লে ৭৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। পঞ্চম উইকেটে দলের হাল ধরেন সাকিব ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ৫৫ রান যোগ করে দুজন প্রাথমিক বিপর্যয়ও সামাল দেন। দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের ব্যাটে যখন এগিয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশ তখনই আঘাত হানেন ব্রেসিং মুজারবানি।

এই পেসারের বাড়তি লাফানো বল কাট করতে গিয়ে উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিয়ে ৩৫ বলে ২৬ রান করে ফিরে যান মাহমুদউল্লাহ। সঙ্গী হারিয়েও দমে যাননি সাকিব। দীর্ঘ রান খরা কাটিয়ে ৫৯ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন এই অলরাউন্ডার। সাকিব হাফ সেঞ্চুরি করার এক ওভার পরেই মাধেভেরাকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ৬ রান করা মেহেদী হাসান মিরাজ সীমানায় ধরা পড়লে আবার চাপে পড়ে বাংলাদেশ।

এরপর ১৫ রান করে আফিফ ফিরে গেলে অস্টম উইকেটে ৬৯ রান যোগ করে পাঁচ বল হাতে রেখেই জয় নিশ্চিত করেন সাকিব ও সাইফউদ্দিন। সাকিব ১০৯ বলে ৯৬ রান করে ও সাইফউদ্দিন ৩৪ বলে ২৮ রান করে অপরাজিত থাকেন। জিম্বাবুয়ের বোলারদের ভিতর দুটি উইকেট শিকার করেন জঙ্গে।

এর আগে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি জিম্বাবুয়ে। নতুন বলে উইকেট থেকে সুবিধা নিয়ে দারুণ শুরু করেন তাসকিন আহমেদ। এই পেসারের প্রথম ওভারেই অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের শর্ট অব লেংথ বল কাট করতে গিয়ে পয়েন্টে আফিফ হোসেনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ৫ বলে ১ রান করে ফিরে যান তিনাশে কামুনহুকাম্বে।

তিনাশে ফিরে যাওয়ার পর উইকেটে বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি জিম্বাবুয়ের আরেক ওপেনার তাদিওয়ানাশে মারুমানিও। ষষ্ট ওভারের পঞ্চম বলে মেহেদী হাসান মিরাজের বাক নিয়ে একটু ভেতরে ঢোকা বলে লাইন মিস করে বোল্ড হয়ে যান মারুমানি। ১৮ বলে ১৩ রান করা মারুমানি অবশ্য ফিরে যেতে পারতেন আগের ওভারেই।

কিন্তু তাসকিনের করা ঐ ওভারের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বলে দুই বার ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান এই ওপেনার। মিড অনে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ক্যাচ ছাড়ার পর থার্ড ম্যানে ক্যাচ ছাড়েন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। ৩৩ রানে দুই উইকেট হারানোর পর দলের হাল ধরেন মিডল অর্ডার থেকে তিনে উঠে আসা গত ম্যাচের হাফ সেঞ্চুরিয়ান রেগিস চাকাভা ও অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেইলর।

তৃতীয় উইকেট জুটিতে স্বাচ্ছন্দ্যেই ব্যাট করতে থাকেন দুজন। বাংলাদেশের বোলারদের তেমন সুযোগই দেননি দুই ব্যাটসম্যান। তবে এই জুটি বেশি বড় হতে দেননি সাকিব আল হাসান। ৩২ বলে ২৬ রান করা চাকাভা মিডল স্টাম্পে থাকা বল ক্রস ব্যাটে খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়ে গেলে ভাঙে ৪৭ রানের জুটি। চাকাভার বিদায়ের পর  ভালো শুরু পেয়েও নিজের ইনিংস বড় করতে পারেননি টেইলর।

দূর্ভাগ্যজনক ভাবে আউট হয়েছেন জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক। শরিফুলের ইসলামের বল আপার কাট করতে গিয়ে ব্যর্থ হন টেইলর। সেই শটের শ্যাডো করতে গিয়েই স্ট্যাম্পে লাগে তাঁর ব্যাট। ৫৭ বলে ৪৬ রান করে হিট উইকেট হয়ে ফিরে যান টেইলর। এরপর ভালো শুরু পেয়ে ইনিংস বড় করতে পারেননি ডিয়ন মেয়ার্স। সাকিবের দ্বিতীয় শিকার হয়ে তিনি ফিরে যান ৩৪ রান করে।

১৪৫ রানে ৫ উইকেট হারানো জিম্বাবুয়ের হাল ধরেন ওয়েসলি মাধেভেরে ও সিকান্দার রাজা। ষষ্ট উইকেটে দুজন যোগ করেন ৬৩ রান। হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে মাধেভেরে ফিরে গেলে ভাঙে এই জুটি। ৬৩ বলে ৫৬ রান করে শরিফুলের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফিরে যান তিনি। এরপর শরিফুলের জোড়া আঘাতে লুক জঙ্গে ও ব্লেসিং মুজারাবানি ফিরে গেলে বেশি দূর যেতে পারেনি জিম্বাবুয়ে।

শেষ পর্যন্ত রাজার ৩০ রানে ভর করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৪০ রান সংগ্রহ করে জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশের বোলারদের ভিতর চার উইকেট শিকার করেন শরিফুল ইসলাম। এছাড়া সাকিব আল হাসান দুটি এবং মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, তাসকিন আহমেদ ও মেহেদী হাসান মিরাজ একটি করে উইকেট শিকার করেন।

  • সংক্ষিপ্ত স্কোর

জিম্বাবুয়ে: ২৪০/৯ (ওভার: ৫০; কামুনহুকাম্বে- ১, মারুমানি- ১৩, চাকাভা- ২৬, টেইলর- ৪৬, মাধেভেরে- ৫৬, (তাসকিন- ১০-০-৩৮-১, সাকিব- ১০-০-৪২-২, শরিফুল- ১০-০-৪৬-৪, মিরাজ- ৭.২-০-৩৪-১, সাইফউদ্দিন- ১০-০-৫৪-১)

বাংলাদেশ: ২৪২/৭ (ওভার: ৪৯.১; তামিম- ২০, লিটন- ২১, সাকিব- ৯৬*, মিথুন- ২, মোসাদ্দেক- ৫, মাহমুদউল্লাহ- ২৬, মিরাজ- ৬, আফিফ- ১৫, সাইফউদ্দিন- ২৮*) (জঙ্গে- ৮-০-৪৬-২)

ফলাফল: বাংলাদেশ ৩ উইকেটে জয়ী।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...