ওপেনার শচীন ও জুটিকাব্য

শচীন টেন্ডুলকার, তিনি কী শুধুই একজন ক্রিকেটার কিংবা একজন ব্যাটসম্যান? না, ভারতের ব্যস্ততম শহর মুম্বাইও থমকে যেত তাঁর একটি স্ট্রোকে। বাইশ গজে তিনি থাকা মানে কোটি কোটি ক্রিকেট প্রেমীর চোখ আঁটকে থাকা।

শচীন টেন্ডুলকার, তিনি কী শুধুই একজন ক্রিকেটার, কিংবা একজন ব্যাটসম্যান? না, ভারতের ব্যস্ততম শহর মুম্বাইও থমকে যেত তাঁর একটি স্ট্রোকে। বাইশ গজে তিনি থাকা মানে কোটি কোটি ক্রিকেট প্রেমীর চোখ আঁটকে থাকা।

ঘরোয়া, আন্তর্জাতিক সবমিলিয়ে যার ব্যাট থেকে এসেছে ৫০ হাজারের বেশি রান। দুই যুগের ক্যারিয়ারে শুধু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেই আছে ৩০ হাজারের বেশি রান। এই অবিশ্বাস্য সব সংখ্যা গুলোকে নিজের ব্যাগে পুড়েছেন ভারতের এই কিংবদন্তি ওপেনার। যাকে শুধু বলা যায়, ক্রিকেট ঈশ্বর।

তবে, এই বিশ্বসেরা ওপেনার ঠিক কী করে ওপেনার হলেন?

১৯৮৯ সালে ১৬ বছরের একটা ছেলের ভারতের ক্রিকেটে আসেন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে। ঐ ছোট্ট ছেলেটাই পাকিস্তানের কিংবদন্তি স্পিনার আব্দুল কাদিরের এক ওভারে নিলেন ২০ রান। তারপর আরও ৫ বছর ওই ৪,৫,৬ পজিশনেই ব্যাট করে গেছেন শচীন। সেই সময়ে খেলা ১১৯ ম্যাচে ৩৩ গড়ে করেছিলেন ৩১১৬ রান। তবে ক্রিকেট বিশ্ব তখনও দেখেনি শচীনের আসল রূপ। কারও তখনো ধারণাই ছিল না, কী করে শচীন হয়ে উঠবেন সেরাদের সেরা।

১৯৯৪ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে হঠাৎই ইনজুরিতে পড়েন দলের নিয়মিত ওপেনার নভোজত সিং সিদ্ধু। ভারতীয় দল তখন দুশ্চিন্তায় তাঁদের ওপেনার নিয়ে। আজহারউদ্দিনের সেই দলে কে ওপেন করবেন তা নিয়ে ভাবছেন অধিনায়ক ও কোচ। সেই সময়েই অধিনায়ক মোহম্মদ আজহারউদ্দিন ও কোচ অজিত ওয়াদেকারের কাছে ওপেন করতে চান শচীন টেন্ডুলকার।

তাঁরা প্রথমে রাজি না হলে শচীন কথা দেয় সে সফল না হলে আর কখনো এই আবদার করবে না। তিনি শুধু একটা সুযোগই চাইছিলেন। ওপেন করতে গিয়ে সফল না হলে দলে তাঁর জায়গাও হারাতে পারতেন তিনি। তবে শচীন তাঁর ব্যাটিং নিয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। আসলে চ্যাম্পিয়নরা তো এমনই হন। তাঁরা নিজেদের শক্তি খুব ভালো করে বোঝেন। তাঁরা জানেন তাঁদের শক্তির জায়গা পৃথিবীর সবকিছুকেই হারানো সম্ভব।

শচীনও তা প্রমাণ করে দেখিয়েছেন। নিউজিল্যান্ডের সেই বিরুদ্ধ কন্ডিশনে প্রথম ১৫ ওভারে ওখানকার পেসারদের মুখে পড়া অনেকটা আত্মহত্যা করার মত। তাছাড়াও ওই সময় দল গুলোর স্ট্রাটিজিই ছিল প্রথম ১৫ ওভার বোলারকে উইকেট না দেয়া। তবে শচীন মাঠে নেমেছিলেন তাঁর নিজের স্ট্র্যাটেজি নিয়ে। সেদিন ওপেন করতে নেমে শচীন ব্যাট করেছিলেন ১৬৭ স্ট্রাইকরেটে। খেলেছিলেন ৪৯ বলে ৮২ রানের এক ইনিংস।

সেদিনের পর থেকে ক্রিকেট দুনিয়া দেখেছিল এক নতুন শচীনকে। তাঁর ক্যারিয়ারের বাকি প্রায় দুই দশক ভারতের হয়ে ওপেন করেছেন তিনি। ওপেনার হিসেবে খেলেছেন মোট ৩৪৪ ওয়ানডে ম্যাচ। সেখানে প্রায় ৪৯ গড়ে করেছেন ১৫৩১০ রান। তাঁর ওয়ানডে ক্রিকেটে সেঞ্চুরি আছে মোট ৪৯ টি। যার ৪৫ টিই এসেছে ওপেন করতে নেমে।

তবে শচীন তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা ওপেনিং পার্টনারশিপ গুলো করেছেন সৌরভ গাঙ্গুলির সাথে। এমনকি পুরো বিশ্বক্রিকেটেরই অন্যতম সেরা ওপেনিং জুটি হয়ে ওঠে এই দুইজন। তাঁরা দুইজন প্রথম ওপেন করতে নেমেই করেছিলেন ১২৬ রানের জুটি। এছাড়া ওয়ানডে ক্রিকেটে এই দুইজন মোট ১৩৬ বার একসাথে ওপেন করেছেন। তাঁদের জুটিতে প্রায় ৫০ গড়ে রান এসেছে ছয় হাজারেরও বেশি। এছাড়াও তাঁদের দুজনের আছে একুশটি শতরানের জুটি।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...