স্পিন বিষেই নীল বাংলাদেশ

সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের উপর আধিপত্য বিস্তার করলেও দলকে জেতাতে পারেননি আজাজ প্যাটেল ও কোল ম্যাককঞ্চি। আজ আবারো রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন এই দুই স্পিনার। দুই বার জোড়া আঘাতে চার উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকেই ছিটকে দেন প্যাটেল। আর তিন উইকেট শিকার করে তাকে দারুণ ভাবে সঙ্গ দেন ম্যাককঞ্চি।

মন্থর ও টার্নিং উইকেট বানিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ জয়ের পর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও একই ফাঁদ তৈরি করেছিল বাংলাদেশ। সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে সেটা কাজেও দেয়। কিন্তু তৃতীয় ম্যাচে এসেই বদলে গেলো হিসাব। এবার দৃশ্যপটে সফরকারী স্পিনাররা। কিউই স্পিনারদের স্পিন বিষেই সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে ৫২ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ।

সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের উপর আধিপত্য বিস্তার করলেও দলকে জেতাতে পারেননি আজাজ প্যাটেল ও কোল ম্যাককঞ্চি। আজ আবারো রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন এই দুই স্পিনার। দুই বার জোড়া আঘাতে চার উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকেই ছিটকে দেন প্যাটেল। আর তিন উইকেট শিকার করে তাকে দারুণ ভাবে সঙ্গ দেন ম্যাককঞ্চি।

চার ওভার বল করে মাত্র ১৬ রান দিয়ে চার উইকেট শিকার করেন প্যাটেল। আর চার ওভারে ১৫ রান দিয়ে তিন উইকেট শিকার করেন ম্যাককঞ্চি। আরেক স্পিনার রাচিন রবীন্দ্রও দারুণ বল করে পেয়েছেন এক উইকেট। আজ ব্যাটে বলে দুই বিভাগেই ব্যর্থ ছিলো বাংলাদেশ। বল হাতে নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি বোলাররা। আর ব্যাটসম্যানরা তো ছিলেন পুরোপুরি ব্যর্থ।

তবে রান তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালোই হয়েছিল বাংলাদেশের। ইনিংসের প্রথম ওভারের শেষ দুই বলে নাঈম শেখ টানা দুই চার মারার পর দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে চার মেনে রানের খাতা খোলেন লিটন দাস। পরের ওভারেও কোল ম্যাককঞ্চিকে জোড়া বাউন্ডারি মারেন লিটন। তবে আত্মবিশ্বাসী শুরু পেয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি লিটন।

টানা দুই বাউন্ডারি মারার পর একই ওভারের পঞ্চম বলে সুইপ করতে গিয়ে ব্যাটে বলে করতে না পেরে এলবিডাব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন এই ওপেনার। ১১ বলে ১৫ রান করে লিটন ফিরে যাওয়ার পর দ্রুত কিছু রানের আশায় আজ শেখ মেহেদী হাসানকে তিন নম্বরে ব্যাট করতে পাঠায় বাংলাদেশ। তবে সেই বাজি কাজে লাগেনি।

আজাজ প্যাটেলের লাফিয়ে ওঠা বলে মিড উইকেটে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান তিনি। ৪ বলে ১ রান করে মেহেদী ফিরে যাওয়ার এক বল পরেই বাংলাদেশের ইনিংসে দ্বিতীয় বারের মত আঘাত করেন প্যাটেল। এই স্পিনারকে ঝুঁকি নিয়ে ছয় মারার চেষ্টায় টাইমিং মিস করে লং অনে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান সাকিব। দুই বল খেলে রানের খাতায় খুলতে পারেননি সাকিব।

পাওয়ার প্লে শেষে ৩ উইকেট হারিয়ে ৩০ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। এরপর রাচিন রবীন্দ্রর বল স্টাম্পে টেনে নাঈম শেখ ১৯ বলে ১৩ রান করে বোল্ড হয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশের ইনিংসে আবার জোড়া আঘাত হানেন প্যাটেল। এবার এই স্পিনারের শিকার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও আফিফ হোসেন ধ্রুব। মাহমুদউল্লাহ তিন রান করলেও রানের খাতায় খুলতে পারেননি আফিফ।

৪৩ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর নুরুল হাসান সোহানকে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন মুশফিকুর রহিম। তবে দায়িত্ব নিতে পারেননি সোহান। ম্যাককঞ্চিকে ছক্কায় ওড়াতে গিয়ে ১১ বলে ৮ রান করে ফিরে যান এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। এরপর মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ১১ বলে ৮ রান করে, নাসুম আহমেদ শূন্য রানে ও মুস্তাফিজুর রহমান ৪ রান করে ফিরে গেলে ২ বল হাতে রেখেই ৭৬ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ।

এক প্রান্ত আগলে রেখে ৩৭ বলে ২০ রান করে অপরাজিত থাকেন মুশফিকুর রহিম। নিউজিল্যান্ডের বোলারদের ভিতর আজাজ প্যাটেল চারটি ও কোল ম্যাককঞ্চি তিনটি উইকেট শিকার করেন। এছাড়া রাচিন রবীন্দ্র পেয়েছেন একটি উইকেট।

এর আগে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামা নিউজিল্যান্ডকে ভালো শুরু এনে দিয়েছিলেন দুই ওপেনার রাচিন রবীন্দ্র এবং ফিন অ্যালেন। ইনিংসের প্রথম ওভারে শেখ মেহেদী হাসানকে দুটি চার মারার পর দ্বিতীয় ওভারে নাসুম আহমদকে একটি চার মারেন সিরিজে প্রথম বারের মত খেলতে নামা অ্যালেন। তবে এরপর আর স্পিনার আনেননি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

জুটি ভাঙতে আক্রমণে আনা হয় মুস্তাফিজুর রহমানকে। তৃতীয় ওভারের প্রথম বলেই আস্থার প্রতিদান দেন এই পেসার। মুস্তাফিজের ফুল লেংথ ডেলিভারিতে বিভ্রান্ত্র হয়ে আগেই শট খেলে মিড অনে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান অ্যালেন। এই ওপেনার ১০ বলে ১৫ রান করে ফিরে গেলে ভাঙে ১৬ রানের উদ্বোধনী জুটি। তবে জুটি ভাঙলেও থেমে থাকেনি কিউইদের রানের গতি।

উইকেটে এসেই রবীন্দ্রকে সাথে নিয়ে দ্রুত রান তুলতে থাকেন উইল ইয়াঙ। প্রায় সাত করে রান তুলে পাওয়ার প্লে শেষ করে নিউজিল্যান্ড। পাওয়ার প্লেতে ১ উইকেট হারিয়ে ৪০ রান সংগ্রহ করে কিউইরা। ২৭ বলে ৩০ রান আসে এই জুটি থেকে। ক্রমেই যখন এই জুটি বিপজ্জনক হয়ে উঠছিল তখন প্রথম বারের মত আক্রমণে এসেই নিউজিল্যান্ডের ইনিংসে জোড়া আঘাত হানেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।

এই পেসারের দারুণ দুটি ডেলিভারিতে এলবিডাব্লিউয়ের ফাঁদে পড়ে ফিরে যান ইয়াঙ ও কলিন ডি গ্রান্ডহোম। দু’জনই রিভিউ নিয়ে ছিলেন। তবে অ্যাম্পেয়ারের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারেননি কেউই। ইয়াঙ করেন ২০ বলে ২০ রান আর গ্রান্ডহোম ফিরে যান রানের খাতা খোলার আগেই। ৪৭ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর উইকেটে এসে সুবিধা করতে পারেননি আগের ম্যাচের হাফ সেঞ্চুরিয়ান টম লাথামও।

মেহেদীকে বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান কিউই অধিনায়ক। ৯ বলে ৫ রান আসে তাঁর ব্যাট থেকে। এর আগের ওভারে এক প্রান্ত আগলিয়ে রাখা রবীন্দ্রকে ফিরিয়ে দেন মাহমুদউল্লাহ। এই স্পিনারকে এগিয়ে এসে মিড উইকেট দিয়ে খেলার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে লাইন মিস করে বোল্ড হয়ে যান রবীন্দ্র। এই ওপেনারের ব্যাট থেকে আসে ২০ বলে ২০ রান।

রবীন্দ্রর বিদায়ে ৬২ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে নিউজিল্যান্ড। তবে সেখান থেকে দারুণ ইনিংসে কিউইদের লড়াই করার পুঁজি এনে দেন হেনরি নিকোলস ও টম ব্লান্ডেল। ষষ্ঠ উইকেটে দু’জনের ৫৫ বলে ৬৬ রানের দারুণ এক জুটিতে নির্ধারিত ২০ ওভারে পাঁচ উইকেট হারিয়ে ১২৮ রান সংগ্রহ করে নিউজিল্যান্ড। নিকোলস ২৯ বলে ৩৬ রান করে ও ব্লান্ডেল ৩০ বলে ৩০ রান করে অপরাজিত থাকেন।

বাংলাদেশের বোলারদের ভিতর সবচেয়ে সফল ছিলেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। চার ওভারে ২৮ রান দিয়ে দুই উইকেট শিকার করেন এই পেসার। এছাড়া একটি করে উইকেট শিকার করেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মুস্তাফিজুর রহমান ও শেখ মেহেদী হাসান।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

নিউজিল্যান্ড: ১২৮/৫ (ওভার: ২০; রবীন্দ্র- ২০, অ্যালেন- ১৫, ইয়াঙ- ২০, লাথাম- ৫, ব্লান্ডেল- ৩০*, নিকোলস- ৩৬*) (মেহেদী- ৪-০-২৭-১, সাকিব- ৪-০-২৪-০, মাহমুদউল্লাহ- ২-০-১০-১, সাইফউদ্দিন- ৪-০-২৮-২, মুস্তাফিজুর- ৪-১-২৯-১)

বাংলাদেশ: ৭৬/১০ (ওভার: ১৯.২; নাঈম- ১৩, লিটন- ১৫, মেহেদী- ১, সাকিব- ০, মুশফিক- ২০*, মাহমুদউল্লাহ- ৩, আফিফ- ০, সোহান- ৮, (প্যাটেল- ৪-০-১৬-৪, ম্যাককঞ্চি- ৪-০-১৫-৩, রবীন্দ্র- ৪-০-১৩-১)

ফলাফল: নিউজিল্যান্ড ৫২ রানে জয়ী।
সিরিজ: বাংলাদেশ ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...