নতুন ছকে নতুন লড়াই

২০০৬ সালে এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপের ম্যাচে ১-১ গোলে ড্র করেছিল। পরের ম্যাচগুলোতে আর জয় তো নয়ই ড্রও করতে পারেনি জাতীয় দল। গত বছর সর্বশেষ বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবলে বাংলাদেশের পরাজয় ব্যবধানটা ছিল ০-২ গোলের। তার দু’বছর আগেও একই আসরে কক্সবাজারে পরাজয়ের ব্যবধান ছিল একই। বাকি দুটি ম্যাচে ২০১১ সালে ০-২ আর ২০১৩ সালে ০-১ গোলে পরাজিত হয়েছে বাংলাদেশ দল। তাই অধরা জয়ের কথা মনে করলেও প্রকাশ্যে বলছেন না খেলায়াড়রা।

নতুন নতুন স্বপ্ন দেখলেও বাংলাদেশের ফুটবলে যেন সমস্যার কোন শেষ নেই। নিজেরা চেষ্টা করে র‌্যাংকিং এ উন্নতির কোন পথই খুজে পাচ্ছেনা। নিয়মিত আন্তর্জাতিক ম্যাচ না খেলাই যে এর বড় কারণ সেটি অনেকটা বিলম্বে এসে বুঝেছেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কর্মকর্তারা।

সে কারণেই ফিফা উইন্ডোতে এবার কিরগিজস্তানে একটি ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টে খেলছে জেমি ডে’র শীষ্যরা। আজকে প্রথম ম্যাচে ফিলিস্তিনের মুখোমুখি হবে জামাল ভুইয়ারা। র‌্যাংকিং এ অনেকটা তফাৎ থাকায় জয়ের আশা না করেই মাঠে নামার অপেক্ষায় রয়েছে লাল সবুজ প্রতিনিধিরা। কারণ এখন পর্যন্ত প্রতিনিয়ত লড়াই করে বেঁচে থাকা এই দলের বিপক্ষে এখনো জয়ের দেখা নেই।

২০০৬ সালে এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপের ম্যাচে ১-১ গোলে ড্র করেছিল। পরের ম্যাচগুলোতে আর জয় তো নয়ই ড্রও করতে পারেনি জাতীয় দল। গত বছর সর্বশেষ বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবলে বাংলাদেশের পরাজয় ব্যবধানটা ছিল ০-২ গোলের। তার দু’বছর আগেও একই আসরে কক্সবাজারে পরাজয়ের ব্যবধান ছিল একই। বাকি দুটি ম্যাচে ২০১১ সালে ০-২ আর ২০১৩ সালে ০-১ গোলে পরাজিত হয়েছে বাংলাদেশ দল। তাই অধরা জয়ের কথা মনে করলেও প্রকাশ্যে বলছেন না খেলায়াড়রা।

বিশেষ করে প্রথম ম্যাচে স্বাগিতক কিরগিজস্তানের কাছে ০-১ গোলে পরাজয় দিয়ে আসর শুরু করে ফিলিস্তিন। যদিও ২০১৮ সালে প্রথমবার বাংলাদেশে কোন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলতে এসে শিরোপা জিতেছিল। কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তাঁরা। এবার অনেকটা নতুন ছকে পুরনো এই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে মাঠে নামতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

ত্রিদেশীয় এই আসরটি মূলত সাফ ফুটবলের জন্য প্রস্তুতির একটা মঞ্চ হিসেবে দেখছেন ফুটবল বিশ্লেষকরা। মালদ্বীপে অনুষ্ঠিত সাফের আগে আর কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ নেই দলের। সে হিসেবে সাফের প্রস্তুতির মঞ্চ হিসেবে ধরা হয়েছে কিরগিজস্তানকে। ২০২০ সালের সর্বশেষ সাফ থেকেও বাংলাদেশের বিদায় নিতে হয় গ্রæপ পর্ব থেকে। এবার অনেক কারণেই দক্ষিণ এশিয়ার ’বিশ্বকাপ’ খ্যাত এই আসরে ভাল কিছু করতে চাইছে। সাফ ফুটবল শুরুর আগে তিনটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ পাচ্ছে বাংলাদেশ।

কিরগিজস্তানের বিশকেকে ত্রিদেশীয় সিরিজে ফিলিস্তিনের পাশাপাশি স্বাগতিক দল ও অলিম্পিক দলের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সময় আজ রাত সাড়ে ৮টায় বিশকেকে জাতীয় স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হবে। সর্বশেষ অনুশীলন শেষে কোচ জেমি ডে বলেন, ‘শক্তি-সামর্থে ফিলিস্তিন খুবই ভালোমানের দল। কিরগিজস্তানের বিরুদ্ধে তাদের ম্যাচটা আমি দেখেছি। ফিলিস্তিন ও কিরগিজস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ বাংলাদেশের সাফ প্রস্তুতিতে বড় সহায়ক হবে।’

এদিকে বাংলাদেশ দলে ২৩ সদস্যের মধ্যে চারজন নতুন খেলোয়াড় রয়েছেন। তাদের মধ্যে দুজন আবার প্রবাসী ফুটবলার। তাদের কি আজ অভিষেক হবে কিনা এ বিষয়ে জেমি বলেন, ‘আমি সব সময়ই নতুনদের খেলার সুযোগ দেওয়ার পক্ষে। এই সিরিজেও সেটি অব্যহত থাকবে। নতুনরা কম করে ঞলেও অন্তত একটি করে ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবে।’

অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া বলেন আজকের ম্যাচ নিয়ে বলেন, ‘ফিলিস্তিন অবশ্যই আমাদের চেয়ে শক্তিশালী দল। র‌্যাংকিং ৮৬ ধাপ এগিয়ে থাকা দলটি সেটপিসে বেশ ভালো। আমরা নতুন কৌশলে খেলার চেষ্টা করব এখানে’। নতুন কৌশল কী, তা পরিষ্কার করে না বলার কারণেই কৌতুহল বাড়ছে। সামনে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ হওয়ায় বেশি সময় নেই বাংলাদেশের হাতে। কোন জায়গায় উন্নতি করতে হবে তা এই ম্যাচগুলো খেলে একটা স্পষ্ট ধারনা নিতে চায় দল। স্বাগতিক কিরগিজস্তানের র‌্যাংকিং যেখানে ১০১, সেখানে একধাপ নিচে অবস্থান করা ফিলিস্তিনের ১০২। আর বাংলাদেশের অবস্থান সেই ১৮৮।

নতুন একটি টুর্নামেন্ট বিধায় নতুন বাংলাদেশের দেখা মিলবে সেই অপেক্ষায় আছে দেশের অগণিত ফুটবলপ্রেমীরা। আজকের ম্যাচের পর ৭ সেপ্টেম্বর কিরগিজ জাতীয় দল ও ৯ সেপ্টেম্বর অনূর্ধ্ব-২৩ অলিম্পিক দলের সঙ্গে লড়বেন জেমি ডের শিষ্যরা। টুর্নামেন্টটি তাই নানা কারণেই বাংলাদেশের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য সাফ চ্যাম্পিয়নশীপ সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্ট হলেও পরিসংখ্যান কিন্তু সে কথা বলছেনা। কারণ সর্বশেষ পাঁচটি সাফের আসর থেকেই বিদায় নিতে হয়েছে গ্রুপ পর্ব থেকে। সবগুলো আসরই বাফুফের বর্তমান সভাপতি কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের সভাপতি থাকার সময়ে। অথচ তিনিই কিনা ২০২২ কাতার বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। যদিও এখন আর সে কথা স্বীকার করেন না টানা চতুর্থ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করা দেশের এই কিংবদন্তী ফুটবলার।

২০০৩ সালে ঢাকায় সাফ চ্যাম্পিয়নের প্রথম ও একমাত্র শিরোপা জতোর পর আন্তর্জাতিক আসরে বাংলাদেশের কোনো শিরোপা নেই। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে ভুটানের নিচে নেমে যাওয়ায় জাতীয় দল ঘিরে আগ্রহও নেই খুব একটা। বাফুফে চাচ্ছে সমালোচনা সামাল দিয়ে সেরাটা দিয়ে এবার সাফে জ্বলে ওঠতে। ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্ট দিয়েই এরই মধ্যে বাংলাদেশের প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গেছে। যদিও প্রতিপক্ষ দলগুলোর কেউ সাফে খেলছেনা। কারণ তাদের সবারই অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ার বাইরে। ম্যাচ খেলার ঘাটতি কাটিয়ে তবুও নিজেদের ভুলত্রুটি শোধরানের সুযোগ তো থাকছে। যে কারণেই বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন ফুটবলারদের উৎসাহ দিতে কিরগিজস্তানে ছুটে গেছেন।

খেলোয়াড়দের জন্য হয়তো এটি টনিক হিসেবে কাজে দেবে, তবে কতটা দেবে এটা প্রশ্ন থেকেই যায়। নিজেদের সামর্থের বেশি তো আর দলের খেলোয়াড়দের কাছ থেকে আশা করাটা ঠিক নয়। এবার সাফের প্রস্তুতির পাশাপাশি শিরোপা জিততে চান বাফুফে বস। তাহলে আত্মবিশ্বাস নিয়ে সাফে নামার সুযোগ তৈরি হবে। বাংলাদেশের তুলনায় ফিলিস্তিনের পাশাপাশি কিরগিজস্থানও অনেক শক্তিশালী দল। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে তা প্রমাণ বগন করে। ত্রিদেশীয় সিরিজে খেলতে কিরগিজস্তানে গিয়ে প্রায় ছয় দিন মাঠের অনুশীলন করেছে বাংলার ফুটবলাররা।

নিজেদের ঝালিয়ে নিয়ে এখন ম্যাচের লড়াইয়ের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত জামাল ভুঁইয়ারা। নতুন এক পদ্ধতি নিয়ে অনুশীলনে সেরেছে বাংলাদেশ এবং সেটাই ফিলিস্তিনের বিপক্ষে বাস্তবায়ন করতে চায় দলের খেলোয়াড়রা। নতুন কোন এক পদ্ধতির প্রয়োগ করতে চায় লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা সেটা খোলাসা করেননি বাংলাদেশ কোচ জেমি ডে। পাশাপাশি প্রতিপক্ষ হিসেবে ফিলিস্তিনকে নিয়েও কাটা-ছেড়া করছে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট। ফিলিস্তিন-কিরগিজস্তান ম্যাচ দেখে প্রতিপক্ষের শক্তি ও দূর্বল জায়গা কি কি সেটার কিছুটা ধারণা পেয়েছে জেমি ডে এবং অনুশীলনে সে বিষয় নিয়েই কাজ করেছেন শিষ্যদের নিয়ে।

প্রতিপক্ষ হিসেবে শক্তিশালি দুই দলের বিপক্ষে খেলে নিজেদের আত্মবিশ্বাস এবং প্রস্তুতি আরো বাড়িয়ে নিতে চায় সাদ উদ্দিন, সোহেল রানা, রহমত মিয়া, রিয়াদুল হাসান রাফিরা। তবে আপাতত ফিলিস্তিন ম্যাচ নিয়েই পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন কোচ জেমি ডে। অনুশীলনে টেকনিক্যাল বিষয়গুলো নিয়েই বেশি কাজ করেছেন এই ইংলিশ ম্যান। সাম্প্রতিক সময়ে র‌্যাংকিংয়ের ১০০ বা এর আশেপাশে থাকা দল গুলোর সাথে খুব একটা ম্যাচ খেলার সুযোগ পায় না বাংলাদেশ দল। তাই বড় দলের সাথে লড়াই করার মানসিকতাও জন্ম নেয় না খেলোয়াড়দের। এবার সেটাই করতে চান কোচ ও অধিনায়ক। আজকের ম্যাচে কতটা করতে পারেন সেটা নিয়েই বেশি ভাবনা। কোন চমক যদি দেখানো যায় সেটিও অনেকটা কাজে দেবে সামনের ম্যাচগুলোতে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...