সবাই তো স্বপ্ন দেখে বড় ক্রিকেটার হওয়ার, সবার স্বপ্ন কি পূরণ হয়? সবাই কি শীর্ষ পর্যায়ে যেতে পারেন? তাঁরা যাবেন কোথায়? তাঁরা আসবেন বিপিএলে। যার কেউ নেই, তাঁর বিপিএল আছে। কোথাও খেলেন না, বিশ্ব ক্রিকেটে কোনো নাম-ডাক নেই, নিজেদের ঘরোয়া ক্রিকেটেও বড় কোনো ইনিংস নেই – এমন সব ক্রিকেটারদের মিলন মেলা যেন এই বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) আছে। সিলেট স্টাইকার্স দলটাই যেমন অখ্যাত সব ক্রিকেটারদের আঁতুরঘর।
ক্যাডিম অ্যালিয়েন, ক্যারিবিয়ান এই ভদ্রলোকের ব্যাটিং স্ট্রাইক রেট এলিয়েনসুলভ – ১৫০ এর ওপরে। অথচ, বিপিএলে আসার আগে বা পরে টি-টোয়েন্টিতে একটাও হাফ সেঞ্চুরি নেই তাঁর। তবুও তাঁর ওপর অগাঁধ আস্থা সিলেট স্ট্রাইকার্সের। পাঁচ নম্বরে ব্যাট করেছেন। ব্যর্থ হয়েছেন টানা দ্বিতীয় ম্যাচে।
আরেকজন হলেন আহসান হাফিজ ভাট্টি। তিনি এতটাই অপরিচিত ক্রিকেটার যে ক্রিকেট বিষয়ক গণমাধ্যম ইএসপিএন ক্রিকইনফো তাঁর জায়গায় আরেক আহসান ভাট্টিকে দেখিয়েছেন। দুইজনই লাহোর কালান্দার্স দলের বলেই হয়তো এই কনফিউশন।
অবশ্য, পয়েন্ট টেবিলির তলানিতে থাকা সিলেটের অবশ্য এই ভাট্টিদের আনতে কোনো কনফিউশনে পড়তে হয়না। এই ভাট্টি বিপিএলে আসার আগে ছয়টি স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি খেলে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন। মানে সবগুলো ইনিংস মিলিয়ে ৫৬ রান করেছেন।
শেষ অবধি আউট হয়েছেন ২৯ বলে ২৮ রান করে। সেটাই টি-টোয়েন্টিতে তাঁর সেরা ইনিংস। সিলেটকে দোষ দিয়েই বা লাভ কি, বাংলাদেশের প্রিমিয়ার স্পিনার তাইজুল ইসলামকে তো এই ভাট্টিই অনায়াসে ছক্কা হাকালেন!
কাইরেন পোলার্ড কিংবা মাহেলা জয়াবর্ধনে এক সময় বিপিএলের ডাগ আউটে বসে থাকতেন দিনের পর দিন, সেই বিপিএলে এখন এমন অজানা মানহীন ক্রিকেটাররা আসেন, কখনও টুকটাক পারফরমও করেন। দক্ষিণ আমেরিকার অলিগলিতে ইউরোপিয়ান ফুটবল দলগুলোর স্কাউটরা বসে থাকেন, নতুন প্রতিভার সন্ধানে। আর বিপিএলের স্কাউটিং এমনই রহস্যময় যে তাঁদের কিছু দেখারই প্রয়োজন হয় না।
এই একই বিস্ময়কর ঘটনা অন্যান্য দলগুলোর ক্ষেত্রেও ঘটেছে। ঢাকা দলে শুভম রঞ্জন কিংবা রোন্সফোর্ড বিটনরা খেলেন। কিংবা রাজশাহী দলে খেলা মিগুয়েল কামিন্সের বিষয়টা তো ইতিহাসের পাতায় লেখা হয়ে গেছে, যিনি পাঁচবছর বাদে এই বিপিএল দিয়েই খেলতে নেমেছেন স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। সব শেষে ওটাই সত্যি কথা – যার কেউ নেই, তাঁর বিপিএল আছে।
আসলে ক্রিকেটে বিদেশি ক্রিকেটার নেওয়ার ক্ষেত্রে স্কাউটিংয়ের ক্ষেত্রে বেশি ভূমিকা রাখে এজেন্টশিপের। যার যে এজেন্ট বা এজেন্সি, তারা সেই খেলোয়াড়ের হয়ে দল খুঁজেন। দলগুলো এই সব এজেন্ট বা এজেন্সির দ্বারস্থ হন। সিলেট বা বিপিএলের কাজ করা এসব এজেন্টদের মান বুঝে নিন এবার। আসলে, তাঁদের বিপনণ দক্ষতার প্রশংসা করতেই হয় আসলে, তা নাহলে কি যাকে কেউ চিনে না তাঁদের বিক্রি করে দেওয়া সম্ভব!