নেটে একের পর এক ছক্কা মারছেন। খুবই দর্শনীয় এক দৃশ্য। অন স্লট, হিটিং অন দ্য মিডল, অ্যান্ড ইটস ম্যাক্সিমাম। হোল্ড ইট ফর ক্যামেরা সাব্বির! সেই দৃশ্য মাঠে থাকা যে কারোই চোখে পড়তে বাধ্য। আর যার দিকে চোখ যায়, তাঁকে সাধারণ কেউ ভাবার সুযোগ নেই।
সাব্বির রহমান তেমনই একটা চরিত্র। মাঠে তিনি থাকলে হাজারো ক্যামেরার লেন্স তাঁকে খুঁজে নিতে চাইবে বারবার। ক্ষণিক আলোকে আঁখির পলকে তোমায় যবে পাই দেখিতে!
বাংলাদেশ ক্রিকেটও নিশ্চয়ই তাঁকে বারবার ফিরে পেতেই চাইবে। কিন্তু, চাইলেও তাঁকে বারবার ফিরে পাওয়া যায় না। তিনি একেবারে হারিয়েও যান না। কিন্ত সর্বদা তাঁকে ঘিরে কাজ করে অজানা এক ভয়। সদা ভয় হয়, হারাইয়া ফেলি চকিতে।
সাব্বির আসেন, টুকটাক রান করেন, কখনও ঝড় তোলেন। আবারও হারিয়েই যান। মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না। কেন পাই না? সেই উত্তর সাব্বিরও সম্ভবত জানেন কি না সন্দেহ! জানলেও মানেন যে না, সেটা নিশ্চিত। নিজেকে নিয়ে তাঁর গাফিলতি আছে, শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে পাওয়া যায় প্রায়শই। হৃদয় না জুড়াতে হারাইয়া ফেলি চকিতে।
স্যোশাল মিডিয়াতে যারা কাজ করেন, তাঁরা জানেন সাব্বির নামটা দর্শক মহলে কত বড়। তাঁর দুইটা ছক্কার একটা রিল, একটা হাফ- সেঞ্চুরির একটা ভিডিও মানেই কত লাখ লাখ রিচের নিশ্চয়তা। কিন্তু, সাব্বিরের রান করার নিশ্চয়তা তো তাঁর হাতেও নেই। জাতীয় দল তো বহুত দূর কি বাত! কেন মেঘ আসে হৃদয়-আকাশে তোমারে দেখিতে দেয় না!
অথচ, ছন্দে থাকা সাব্বির একটা ফেনেমেনা! তাঁর প্রতিটা ছক্কা চোখের জন্য আরামদায়ক। আর কারো পানে চাহিব না আর! ঘুরে ফিরে অবশ্য সমস্যা ওই ধারাবাহিকতা আর শৃঙ্খলায়! তিনি ভুলে যান, খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, যখন তাঁর মধ্যে বিরাট কোহলির ছায়া দেখেছিলেন ন্যাথান লিঁও। এই সাব্বিরই তো এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টির সেরা খেলোয়াড় ছিলেন। তিনি ভুলে গেলেও দর্শক কি করে ভুলে যায়, কী করিলে বলো পাইব তোমারে রাখিব আঁখিতে আঁখিতে!
কোনো শৃঙ্খলে বাঁধা যায় না তাঁকে, বাংলাদেশ ক্রিকেটে এমনই আক্ষেপের যুবরাজ তিনি। এই বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগেও (বিপিএল) ১৫০-৬০ রান করেছেন। ব্যাটিং গড় ৪০-এর ওপর। স্ট্রাইক রেট ১৭৬। ধারাবাহিকতা নিয়ে খুব বেশি আক্ষেপও থাকার কথা নয়।
তবে, একটা বড় ইনিংস খেলার পর অন্তত সাব্বির-সুলভ কিছু করতে পারেননি তিনি। কিন্তু, এক ৯২ রানের একটা ইনিংস খেলেই যে লাইমলাইট পেয়েছেন তিনি তাতে বোঝা যায়, কতটা ফ্যান-ফেবারিট তিনি।
আর যে জায়গাটাতে খেলেন, সেখানে সত্যিকারের এফোর্টলেসলি পাওয়ার হিটার বাংলাদেশ ক্রিকেটে আর আছেনই বা ক’জন! নিজের দিনে যেভাবে বিনোদন দেন, সেটা বাংলাদেশে কে পেরেছে কবে! আফতাব আহমেদ কিংবা মোহাম্মদ আশরাফুলের মত কয়েকজন যা একটু পেরেছিলেন, তাঁরা হারিয়ে গেছেন কালের গহ্বরে। সাব্বিরও কি হারাবেন? এটাই তো শেষ সুযোগ। আভি নেহি তো কাভি নেই!