মিরপুর অ্যাকাডেমি মাঠে দেখা গেল এক বিরল দৃশ্য। স্বীকৃত উইকেটকিপার ব্যাটার বিজয় এদিন হাতে তুলে নিলেন বল। বল হাতে তিনি করেছেন অফ স্পিন, ক্রিজে থাকা ব্যাটারকেও করেছেন পরাস্ত। তবে, এর আগে বল হাতে দেখা গিয়েছিল বিজয়কে। গেল বারের ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে, বিকেএসপির চার নম্বর মাঠে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের বিপক্ষেও তাকে বোলারের ভুমিকায় দেখা গিয়েছিল। তবে সেবার অফ স্পিন নয়, মিডিয়াম পেস বোলিং করেছিলেন বিজয় এবং বল হাতে শেখ জামাল ব্যাটার পারভেজ রাসূলের উইকেট নিয়েছিলেন তিনি।
অক্টোবরে অনুষ্ঠিতব্য এনসিএলকে সামনে রেখে মিরপুর অ্যাকাডেমি মাঠে শুরু হয়েছে খেলোয়াড়দের আনাগোনা। যেখানে অন্যান্য ক্রিকেটারদের মত নিজেকেও ঝালিয়ে নেয়ার জন্য অনুশীলন করছিলেন বিজয়। কিছুক্ষণ বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাট হাতেও অনুশীলনে দারুণ সিরিয়াস ছিলেন তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তনের পর থেকে একটি জিনিস কারোই দৃষ্টির বাহিরে নয়, আর তা হল স্পিনের বিপক্ষে বিজয়ের দুর্বলতা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও বেশ কয়েকবার স্পিনের কাছে নিজের উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছিলেন বিজয়।
স্পিনের বিপক্ষে দুর্বলতা ছাড়াও, ইনিংসের শুরুতে বিজয়ের ফুটওয়ার্ক জনিত সমস্যার ব্যাপারে সকলেরই জানা রয়েছে। আজ মিরপুরে অ্যাকাডেমি মাঠে তাই তো নিজের ডিফেন্স নিয়ে অনেকক্ষণ কাজ করলেন আনামুল হক বিজয়। শুরুর দিকে স্পিনের বিপক্ষে বেশ মনোযোগের সাথে ব্যাটিং করেছেন বিজয়। মাঠের অন্যান্য ব্যাটারদের মধ্যে যখন ছিল আক্রমণাত্মক শট খেলার প্রবণতা সেখানে বিজয়কে দেখা গিয়েছে অনেকটাই রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে ব্যাটিং করতে। শুরুর দিকে স্পিনের বিপক্ষে বেশ লম্বা সময় ধরে ব্যাটিং করেছিলেন তিনি।
এরপর , আবার অ্যাকাডেমি মাঠের কংক্রিট উইকেটেও পেস বোলিংয়ের বিপক্ষেও বেশ কিছুক্ষণ ব্যাটিং করেছেন বিজয়। তবে, এদিন শুধু ব্যাট হাতে নয়; বরং বল হাতেও দেখা গিয়েছে বিজয়কে। ব্যাটিং করার পর বেশ কিছুক্ষন তাকে দেখা গিয়েছে বোলিং করতে। এই সময়ে একাধিকবার ক্যাচও মিস করেছেন তিনি। দেশের ক্রিকেটে সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম আলোচিত নাম আনামুল হক বিজয়। দীর্ঘদিন জাতীয় দলের বাহিরে ছিলেন বিজয়। এ বছর ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে লিস্ট এ ক্রিকেটে এক টুর্নামেন্টে সর্বাধিক রান সংগ্রহের পর জাতীয় দলের দরজা খুলে যায় তাঁর।
তবে, জাতীয় দলের জার্সি গায়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তনের পর নিজের জাত ঠিকমতো চেনাতে পারেননি বিজয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের পর সদ্য শেষ হওয়া এশিয়া কাপেও ছিলেন ব্যাট হাতে একেবারেই ফিকে। তবুও, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে রান পাওয়ার পর অন্ততপক্ষে ওয়ানডে ফরম্যাটে তাঁর পারফরমেন্স বিবেচনায় বাংলাদেশ দলে সুযোগ তিনি আশা করতেই পারেন। ২০১২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল বিজয়ের। সে সময় যেকোনো প্রতিপক্ষকেই ব্যাট হাতে ছাড় দিতেন না বিজয়।
২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপে কাধের ইনজুরির পর দল থেকে বাদ পড়ার পরেও কয়েকবার দলে কামব্যাক করার সুযোগ থাকলেও জাতীয় দলের জার্সি গায়ে আর থিতু হতে পারেননি তিনি। তবে, ২০২২ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের সর্বোচ্চ রান স্কোরার হওয়ার ফলে জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া বিজয়ের সামনে হয়ত ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজেকে প্রমাণের আরও সুযোগ থাকছে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে দলের সর্বোচ্চ রান স্কোরার ছিলেন বিজয়। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলে জায়গা না পেলেও সামনেই ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ। যার কারণে সেই দলের নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করার চেষ্টা করতেই পারেন বিজয়। আর সেক্ষেত্রে, আসন্ন এনসিএল হতে পারে তার জন্য এক আদর্শ মঞ্চ।