মোহাম্মদ আল ওয়াইজ – আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ম্যাচের আগে ফুটবল দর্শকদের কাছে নামটা ছিল ভীষণ অপরিচিত। তবে, এক ম্যাচ দিয়েই পুরো ফুটবল বিশ্বের নজরটা কেড়ে নিলেন নিজের দিকে। সার্চ ইঞ্জিন গুগলে মুহর্মুহ তাঁর নাম সার্চ করা হচ্ছে। ফুটবল স্কাউটরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন তাঁর ঠিকুজি। আর আর্জেন্টাইন সমর্থকরা তাঁকে মনে মনে অভিশাপ দিলেও তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
কারণ, তাঁর সুবাদেই বেন লুসাইল স্টেডিয়াম সাক্ষী হয়ে থাকল অঘটনের এক ইতিহাসের। যেখানে আর্জেন্টিনা কুপোকাত হল সৌদি আরবের কাছে। ফুটবল দুনিয়া চাক্ষুষ করলো আনপ্রেডিক্টেবল এক ম্যাচের। সৌদি আরব এখন গ্রুপ ‘সি’ এর শীর্ষে অবস্থান করছে।
টানা ৩৬ ম্যাচে অপরাজিত থাকা স্কালোনির শিষ্যরা, সৌদির মতো কম শক্তিমত্তার দেশের কাছেই ২-১ গোলে হারলো। আর সৌদির এই দুর্দান্ত জয়ে অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন দেশটির গোলরক্ষক মোহাম্মদ আল ওয়াইজ। ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়ও নির্বাচিত হলেন তিনিই।
‘নোবডি ফ্রম সৌদি আরাবিয়া’ সেভড গোল ফ্রম লিওনেল মেসি। যদিও ম্যাচের দশ মিনিটের মাথায় পেনাল্টির শিকার হয়েছিলেন এই সৌদি গোলরক্ষক। কিন্তু, পরবর্তীতে তিনি ছিলেন দুর্দান্ত। গোলপোস্টের অতন্দ্র এই প্রহরীকে ডিঙিয়ে আর কোন গোল করতে পারেনি টিম আর্জেন্টিনা। আজকের ম্যাচের আগ অবধি ফুটবল বিশ্ব হয়তো তাঁর নামও শোনেনি। অথচ আজ দুর্দান্ত পারফর্মেন্স দিয়ে তিনি ফুটবল বিশ্বের মুগ্ধতা বনে গেলেন।
আর্জেন্টিনার বিপক্ষে পুরো ম্যাচে সাতটি সেভ করেছেন এই গোলরক্ষক। ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই জোড়া গোল করে যখন সৌদি এগিয়ে যায়, আর্জেন্টিনা তখন গোলের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। ঠিক সেই মুহুর্তে দুর্গের মতো গোলবার আগলে রেখেছিলেন আল-ওয়াইস। লাউতারো মার্টিনেজ, ডি মারিয়া ও মেসিরা তাঁকে পেরিয়ে গোটা ম্যাচে আর গোল করতেই পারেনি। যতবার চেষ্টা করেছেন, আল ওয়াইজ তা আটকে দিয়েছিলেন।
মোহাম্মদ আল ওয়াইজ জন্মগ্রহণ করেছেন সৌদি আরবের আল-হাসায়। এই গোলরক্ষকের বয়স এখন একত্রিশ বছর। জাতীয় দলের পাশাপাশি খেলে থাকেন আল-আহলি ক্লাবে। ছয় ফুট এক ইঞ্চি উচ্চতার এই গোলকিপার ঘরোয়া পেশাদার ফুটবলে সৌদি লিগ, কিংস কাপ ও সুপার কাপের শিরোপা জয়ী দলের সদস্যও ছিলেন।
২০১২ সাল থেকে ২০১৭ পর্যন্ত যুব পর্যায়ে খেলেছেন আল-শাবাব ক্লাবের হয়ে। তারপর ২০১৭ থেকে বর্তমান অবধি জেদ্দার আল-আহলি ক্লাবের গোলরক্ষকের ভূমিকা পালন করে থাকেন। তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারটা শুরু হয় ২০১৫ সালে।
এর আগে আল-ওয়াইস ২০১৮ সালের ফিফা বিশ্বকাপের বাছাই পর্বেও খেলেছেন সৌদি আরবের হয়ে। সেবার কেবল পূর্ব তিমুরের বিপক্ষে একটি ম্যাচেই খেলেছিলেন তিনি। তারপর ২০২২ বিশ্বকাপ এলো, সেই বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই আল-ওয়াইস তারকা বনে গেলেন।
ম্যাচের পর গোটা বিশ্ব মোহাম্মদ আল-ওয়াইসকে একটু ভিন্নভাবেই মনে রাখতে বাধ্য হবে। মেসিদের রুখে দেয়া এ তো আর চাট্টিখানি কথা নয়। কে জানে পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে হয়তো ক্যারিয়ারের গতিবিধিই পাল্টে যেতে পারে এই ‘সবুজ বাজপাখি’র।