হাইলাইন ডিফেন্স, যে কৌশলে ‍কুপোকাত আর্জেন্টিনা

ম্যাচের ৪০ মিনিটের ভেতরই সাতবার অফ সাইডের খড়গ নামে আর্জেন্টিনার ওপর। বিশ্বকাপের প্রথমার্ধে এটা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ২০০২ সালে স্পেনের ছিল নয়টি। এই সাতবারের মধ্যে তিনবারই গোল পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। একবার লিওনেল মেসি, আর দু’বার লাউতারো মার্টিনেজ লক্ষ্যভেদ করেন। কিন্তু, সেই লক্ষ্যভেদের কোনো ফল আসেনি।

আর্জেন্টিনার শক্তিশালী দলটার বিপক্ষে পেরে ওঠার জন্য আউট অব দ্য বক্স কিছু করতেই হত। আর সেটা বেশ দারুণ ভাবেই প্রথমার্ধে করতে পেরেছে সৌদি আরব। হাইলাইন ডিফেন্সকে তাঁরা নিয়ে গেছে একদম শিল্পের পর্যায়ে। বিষয়টা আর্জেন্টিনার জন্য হতাশার হলেও এটা সৌদি আরবের কৌশলগত সিদ্ধান্ত। ফলে, সাধুবাদ পেতেই পারেন দলের ফরাসী কোচ হার্ভ রেনার্ড।

এবার প্রশ্ন হল হাইলাইন ডিফেন্স কি জিনিস? সহজ ভাষায় মাঝ মাঠের সাথে রক্ষণ ভাগের দূরত্ব কমিয়ে পজিশন নেওয়া। এর কারণে, যেটা হয় আক্রমণভাগের খেলোয়াড়রা অফ সাইড ট্র্যাপের ভয়ে সহজে সামনে এগোতে পারে না। তাঁরা বাধ্য হয়ে মাঝমাঠেই ঘোরাফেরা করেন।

ম্যাচের ৪০ মিনিটের ভেতরই সাতবার অফ সাইডের খড়গ নামে আর্জেন্টিনার ওপর। বিশ্বকাপের প্রথমার্ধে এটা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ২০০২ সালে স্পেনের ছিল নয়টি। এই সাতবারের মধ্যে তিনবারই গোল পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। একবার লিওনেল মেসি, আর দু’বার লাউতারো মার্টিনেজ লক্ষ্যভেদ করেন। কিন্তু, সেই লক্ষ্যভেদের কোনো ফল আসেনি। বরং এই অ্যাপ্রোচে আর্জেন্টাইনদের খেলাই এলোমেলো হয়ে যায়।

মজার ব্যাপার হল, এই হাইলাইন ডিফেন্সের সূত্রপাত আবার ওই আর্জেন্টিনায়। ষাটের শেষে ও সত্তরের দশকের প্রথমদিকে সর্বপ্রথম অপ্রচলিত এই কৌশলটি ব্যবহার করে আর্জেন্টাইন ক্লাব লা প্লাটা। আর এর মাস্টার মাইন্ড ছিলেন ওসভালদো জুবেলদিয়া।

এই কৌশলের ভাল-মন্দ দু’টো দিকই আছে। মন্দটা হল এর ফলে ডিফেন্সে প্রচুর ফাঁকা জায়গা থাকে। কোনো ভাবে অফসাইড ট্র্যাপ কোনো ফরোয়ার্ড কাটিয়ে তুুলতে পারলে সামনে থাকবেন কেবল গোলরক্ষক।

ফরোয়ার্ড আর্লিং হাল্যান্ড কিংবা কিলিয়ান এমবাপ্পের মত দ্রুতগামী হলে তো কথাই নেই। তাঁরা সহজেই এই হাইলাইন ডিফেন্সকে ভাঙতে পারেন নিজেদের গতি দিয়ে। আর হাইলাইন ডিফেন্সের সাথে থাকতে হবে হাই প্রেসিং, যেটা সৌদির মধ্যে ছিল বলেই তাঁরা সফল হয়েছে।

হাইলাইন ডিফেন্সের ভাল দিকটা তো আর নতুন করে বলার কিছু নেই। ফলাফল সবার চোখের সামনে। এর ফলে প্রতিপক্ষের খেলার জায়গা অনেকটাই কমিয়ে দিতে পেরেছে সৌদি আরব। আর বারবার অফ সাইডের বাঁধায় পড়ে এলোমেলো হয়ে যায় আর্জেন্টিনার আক্রমণ।

অন্যদিকে, আর্জেন্টিনাকে আকাশ সমান স্নায়ুচাপে ফেলার সুফলটা দ্বিতীয়ার্ধে বেশ ভালভাবেই পেয়েছে সৌদি আরব। দ্বিতীয়ার্ধের আট মিনিটের মধ্যে দুবার লক্ষ্যভেদ করেছে তাঁরা। আর জোরদার ডিফেন্স ও গোলরক্ষক মোহাম্মদ আল ওয়াইজের সতর্কতায় আর গোল হজম করতে হয়নি। ফলে, আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ইতিহাস কাঁপানো জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পেরেছে হার্ভ রেনার্ডের দল।

এই ম্যাচের আগে চারবার মুখোমুখি হয়েছিল দু’দল। সেখানে আর্জেন্টিনা দু’বার জিতেছিল। ড্র হয় বাকি দু’টো ম্যাচ। দু’দলের ২০১২ সালের সর্বশেষ মোকাবেলাটা ড্র হয় গোলশূন্য ব্যবধানে। সেখান থেকে ১০ বছর পর মুখোমুখি হয়ে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে দিল সৌদি আরব, সেটাও আবার র‌্যাংকিংয়ে ৪৮ ধাপ পিছিয়ে থেকে। নিজেদের পারফরম্যান্স ও কৌশল নিয়ে তাই উৎফুল্ল হতেই পারে তাঁরা।

 

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...